ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

প্রাথমিকে আবারও আসছে বদলি আবেদনের সুযোগ

প্রকাশিত: ১৯:০২, ৮ অক্টোবর ২০২২

প্রাথমিকে আবারও আসছে বদলি আবেদনের সুযোগ

প্রাথমিক শিক্ষক বদলি

দীর্ঘ আড়াই বছর পর চালু হয়েছে প্রাথমিক শিক্ষক বদলি কার্যক্রম। কিন্তু অনলাইনে বদলি নির্দেশিকার কিছু শর্তের কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন শিক্ষকরা। প্রাথমিকের হাজারো শিক্ষক বদলি নির্দেশিকার প্যাচে আবেদনই করতে পারেননি। 

তবে আশার কথা হচ্ছে ভোগান্তি নিরসনে নির্দেশিকার কিছু অংশ পরিমার্জনের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। ফলে পূণরায় বদলি আবেদনের সুযোগ পাবেন প্রাথমিকের প্রায় ৪ লাখ শিক্ষক।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষক পদে ২৫ হাজার ৩৭২টি আবেদন জমা পড়েছে। আবেদনের প্রেক্ষিতে বদলি চলমান আছে। তবে শিক্ষকদের সফটওয়্যার ও বদলি নির্দেশিকার  সে সমস্যা ছিল। তা সমাধানের উদ্যোগ নিচ্ছে মন্ত্রণালয়। শিঘ্রই বদলি নির্দেশিকার ৩ দশমিক ৩ ধারা পরিমার্জন করে দেশের শিক্ষকদের ভোগান্তি দূর করা হবে। 

শিক্ষক নেতা মাহবুবর রহমান বলেন, বদলিযোগ্য শিক্ষকের ৮০ ভাগই বদলি আবেদন করতে পারেননি। অধিদফতর যে ২৫ হাজার আবেদনের কথা বলছে তা খুবই কম। কারণ বদলি প্রয়োজন এমন শিক্ষকের সংখ্যা কম পক্ষে এক লাখ।

গত ৩০ জুন গাজীপুরের কালিয়াকৈরে অনলাইনে বদলি কার্যক্রমের পরীক্ষামূলক (পাইলটিং) উদ্বোধন করেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। পাইলটিং শেষে সারাদেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের উপজেলাভিত্তিক বদলির অনলাইন আবেদন শুরু হয় গত ১৫ সেপ্টেম্বর। যা শেষ হয় ৩০ সেপ্টেম্বর। শর্ত জটিলতার কারণে বদলি আবেদন ৬ অক্টোবর পর্যন্ত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর।

অন্যদিকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যে সব শিক্ষক পদে মামলা চলমান রয়েছে তাদের বদলির আবেদন গ্রহণ না করার নির্দেশনা দিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর। 

শনিবার বদলি সংক্রান্ত নতুন একটি নির্দেশনায় অধিদফতর জানায়, বদলি কার্যক্রমে যে সকল শিক্ষক পদে মামলা আছে বা স্থগিতাদেশ হয়েছে এমন পদে বদলি করা হলে পরবর্তীতে আইনগত জটিলতার সৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের যে সকল শিক্ষক পদে মামলা চলমান বা স্থগিতাদেশ রয়েছে এমন পদে বদলি কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।

সারাদেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে ৬৫ হাজার ৫৬৬। এসব বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক আছেন প্রায় ৩ লাখ ৮০ হাজার। নতুন করে আরও ৪৫ হাজার সহকারী শিক্ষক শিক্ষকতায় যুক্ত হবেন। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক বদলি নির্দেশিকায় কিছু সংশোধন আসায় বিপাকে পড়েছেন সাধারণ শিক্ষকরা
 
দেশের একাধিক সহকারী শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১:৪০ অর্থাৎ যেসব স্কুলের ৪০ শিক্ষার্থীর বিপরীতে একজন শিক্ষক আছেন, এমন শিক্ষকরা অনলাইনে বদলি আবেদন করতে পারেননি। অনলাইনে বদলি নির্দেশিকার এ শর্তে অনেক শিক্ষক প্রয়োজন অনুযায়ী পছন্দের বিদ্যালয়ে পোস্টিং পাননি।
 
বদলি নির্দেশিকার ৩ দশমিক ৩ ধারায় বলা হয়েছে যেসব বিদ্যালয়ে চার বা তার কম শিক্ষক কর্মরত আছেন, কিংবা শিক্ষার্থীর অনুপাত ১ : ৪০ এর বেশি রয়েছে, সেসব বিদ্যালয় থেকে সাধারণভাবে শিক্ষক বদলি করা যাবে না। নীতিমালার এই অংশ পূরণ না করার ফলে বেশিরভাগ শিক্ষক বদলির জন্য আবেদন করতে পারছেন না। 

এছাড়া নির্দেশিকায় কোনো শিক্ষকের স্বামী-স্ত্রী বেসরকারি চাকরিজীবী হলে তার স্বামী-স্ত্রী কর্মস্থলে বদলির সুযোগও রাখা হয়নি। ফলে অনলাইন বদলির সুফল পাচ্ছেন না শিক্ষকরা। আগের নির্দেশিকায় উপজেলার বাইরে থেকে ২০ শতাংশ শিক্ষক বদলির সুযোগ থাকলেও ২০২২-এর নির্দেশিকায় করা হয়েছে ১০ শতাংশ। যে কারণে বিপুল সংখ্যক শিক্ষক উপজেলার বাইরে থেকে বদলি হয়ে আসার সুযোগ হারাচ্ছেন। বদলির নির্দেশিকার এসব শর্তের কারণে শতকরা ৮০ ভাগ শিক্ষক বদলির আবেদন করতে পারছেন না বলে শিক্ষকদের অভিযোগ।

শিক্ষক নেতা সামছুদ্দিন মাসুদ বলেন, অনলাইনে বদলি নীতিমালার কারণে অনেক শিক্ষকের কান্না বেড়েছে। যে ৪০ কি.মি. দূর থেকে এসে শিক্ষকতা করতেন। তিনি নীতিমালার কারণে বদলি হতে পারেননি। অন্যকোন শিক্ষক পদটি পূরণ করেছে। অনেক শিক্ষিকার শুধুমাত্র বদলি জটিলতা সংসার ভাঙ্গার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

সরকারের এমন সিদ্ধান্তে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা নিরুৎসাহিত করা হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, ৪০ শিক্ষার্থীর অনুপাতে একজন শিক্ষক। এমন বিধি-নিষেধের কারণে অনেক স্কুলেই ৪০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে চাইবেন না শিক্ষকরা। এর ফলে স্থানীয় কিন্ডারগার্টেনগুলোতে শিক্ষার্থী বাড়বে। এই নীতিমালা দ্রুত অপসারণ করে শিক্ষক বান্ধব করার দাবি জানিয়েছেন একাধিক সহকারী শিক্ষক ও কর্মকর্তা। 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দীর্ঘ সময় ও অনেক টাকা খরচ করে সফটওয়্যারের মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষক বদলির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর প্রধান লক্ষ্য তদবির ও ঘুষ বাণিজ্য বন্ধ করা। কিন্তু প্রকৃত সুবিধাভোগীরা যদি সুযোগ না পান, তবে সরকারের কোটি টাকা বিনিয়োগ বৃথা যাবে।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের পরিচালক (পলিসি এবং অপারেশন) মনীষ চাকমা জনকণ্ঠকে বলেন, নির্দেশিকার কয়েকটি শর্তের কারণে অনেক শিক্ষক আবেদন করতে পারছেন না বলে আমাদের কাছে একাধিক অভিযোগ এসেছে। দ্বিতীয় ধাপে আবারও সুযোগ দেওয়া হবে। সেখানে ১:৪০ এই নিয়মটি সংশোধন করা হবে। তবে বদলি আবেদন চলবে শুধুমাত্র আন্তঃউপজেলা পর্যায়ে।

আসিফ কাজল

×