ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পাখিমেলা

আশিক ইসলাম

প্রকাশিত: ০১:৩৯, ৫ মার্চ ২০২৩

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পাখিমেলা

আহার শেষে বেশ আরাম করে বিশ্রাম নিচ্ছে পানকৌড়ি

আহার শেষে বেশ আরাম করে বিশ্রাম নিচ্ছে পানকৌড়ি। পাশেই গাছ বেয়ে উঠে ওপরে উঠছে কাঠবিড়ালী আর ওপর থেকে আড়চোখে তাকিয়ে আছে পাতি কাক। মাছ ধরার জন্য চুপটি করে বসে আছে নিশি বক। আর পাশেই পেছনে মুখ লুকিয়ে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে হুতোম পেঁচা। চোখাচোখির সঙ্গে চোখ পড়তেই যেন লজ্জ্বায় মুখ লুকিয়ে নিল। দৃশ্যগুলো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) বৃদ্ধিজীবী চত্বরে অনুষ্ঠিত পাখি মেলার। 
হরেক রকমের পাখি মেলা বসেছে সেখানে। প্রথম দেখায় তাদের জীবন্ত মনে হলেও তারা জীবন্ত নয়। তাদেরকে রাসায়নিক দিয়ে সংরক্ষণ করা হয়েছে। আর মেলায় দর্শনার্থীদের পাখির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে এখানে নিয়ে আসা হয়েছে। ফলে কাছ থেকে পাখি দেখার সুযোগ পেয়েছেন দর্শনার্থীরা। 
পাখি সংরক্ষণে গণসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ‘পাখি প্রকৃতির সৌন্দর্য, আনন্দের সঙ্গী- এদের বাঁচতে দিন’ প্রতিপাদ্যে গত শনিবার (২৫ নভেম্বর) এই মেলার আয়োজন করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ড কনজারভেশন ক্লাব এই মেলার আয়োজন করে। সার্বিক সহযোগিতায় ছিল প্রাণিবিদ্যা বিভাগ ও ডিপ ইকোলজি অ্যান্ড স্নেক কনজারভেশন ফাউন্ডেশন, রাবি শাখা।
সরেজমিনে দেখা যায়, চারদিকে সাদা-লাল রঙের সালু ঘিরে ঘেরা একটি জায়গা। সেখানে রয়েছে বেশ কয়েকটি ছোট ছোট স্টল। এর মধ্যে একটি স্টলে রাজশাহী নগরী ও তার আশেপাশের এলাকা থেকে পাখিদের তোলা দুর্লভ কিছু ছবি রাখা হয়েছে। আর পাশেই আরেকটি স্টলে বড় এলইডি রয়েছে। সেখানে বিভিন্ন পাখির ছবি ও ভিডিও দেখানো হচ্ছে। পাখিদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হচ্ছে ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের। 
স্টলে পাখির ছবির মধ্যে রয়েছে- ধলাকোমর মুনিয়া, ইউরেশিয় চামচ ঠুঁটি, বুটপা ঈগল, রঙিলা চ্যাগা, খয়রা মাথার সুঁইচোরা, সাদাগলা মানিকজোড়, সবুজ চাপাখি, তিলা লাল পা, ছোট ডুবুরী, ডাহুক, নদী টি টি, বামুন শালিক, জল ময়ূর, কালোপিঠ গাংচিল, বাদামী ঝিল্লি, পালাসির গাংচিল, সাইবেরিয় শিলাফিদ্দা, লম্বাপা তিলাবাজ, নীল চটক, উইলসন্স স্টর্ম পেট্রল, লালঘাড় কাস্তেচোরা, তিলা লালবাটান, উল্টেঠুঁটি, ছোট বাবুবাটান, খুড়ুলে পেঁচা, কালোমাথা কাস্তেচোরা, উদয়ী গয়ারসহ আরো বিভিন্ন রকমের পাখি।
পাশের স্টলে রয়েছে পাখির প্রদশর্নী। সেখানে সারিবদ্ধভাবে সাজানো রয়েছে- পানকৌড়ি, জল কাক, পাতি তিলি হাঁস, ডোরা কাঠবিড়ালি, কোয়েল, পাঁতি কাক, নিশি বক, বালি হাঁস, তুর্কি বাজ, টিয়া, লক্ষী পেঁচা, হুতুম পেঁচা, গরিয়াল মাছরাঙা, চোখাচোখি, সাতভাই প্রভূতি। এইসব পাখিগুলো রাসায়নিক দিয়ে সংরক্ষণ করা।
পাখি মেলার মূল আকর্ষণ ছিল স্কুলের বাচ্চাদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। 
ক্যাম্পাসের আশেপাশের বিভিন্ন স্কুলের নার্সারি থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। লম্বা সাদা কাগজে তারা ফুটিয়ে তুলে টিয়া, মাছরাঙা, বক, শালিক, ময়নাসহ বিভিন্ন পাখির ছবি। প্রতিযোগিতায় প্রায় অর্ধশত শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে।  
মেলায় বাবার সঙ্গে ঘুরতে ও প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে এসেছেন শহিদ নজমুল হক বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী ফাতিহা নওশীন। তিনি বলেন, খুবই ভালো লাগছে। নতুন নতুন অনেক পাখি দেখেছি যা আগে কখনো দেখিনি। এমন আয়োজন সবসময় চান এ ক্ষুদে শিক্ষার্থী।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ড কনজারভেশন ক্লাবের আহ্বায়ক ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক অধ্যাপক ড. এ. এম. সালেহ রেজা বলেন, বাংলাদেশে এমন অনেক পাখি আছে যেগুলো সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানি না। এসব পাখিদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের পরিচয় করে দিতে, পাখির প্রতি তাদের মমত্ববোধ তৈরি এবং পাখি সংরক্ষণে সবাইকে সচেতন করতেই আমরা এই মেলার আয়োজন করেছি।

×