ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রাণ ফিরেছে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে 

সিফাত রাব্বানী 

প্রকাশিত: ০১:৩৫, ৫ মার্চ ২০২৩

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রাণ ফিরেছে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে 

বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি শিক্ষার্থীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি জায়গা যেখানে

বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি শিক্ষার্থীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি জায়গা যেখানে একাডেমিক পড়াশোনার সহায়ক বই ও যাবতীয় তথ্যের সমাহার থাকবে। শিক্ষার্থীরা স্বাচ্ছন্দ্যে  সেগুলো নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করবে, নিজের প্রয়োজন মেটাবে। কিন্তু বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিগুলোর চিত্র পুরো ভিন্ন। এখানে একাডেমিক বই পড়ুয়াদের থেকে অন্যান্য প্রতিযোগিতামূলক চাকরি-বাকরির পরীক্ষার বই পড়া হয় বেশি।

এইতো কয়েক মাস আগেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে বাইরের কোন বই, ল্যাপটপ কিংবা ব্যাগ নিয়ে প্রবেশের সুযোগ ছিল না। ২০২২ সালের আগস্টের ৭ তারিখে জানানো হয় বাইরের বই নিয়ে প্রবেশ করা যাবে। এর আগে শিক্ষার্থীরা সুযোগ পেতো লাইব্রেরির নিজস্ব বই পড়ার। সেই সময় হাতেগোনা কয়েকজন শিক্ষার্থী পাওয়া যেত যারা একাডেমিক বই পড়তো। অবশ্য একাডেমিক পড়াশোনার জন্য প্রয়োজনীয় সব বই যে পাওয়া যায় তা না। এখন এই গ্রন্থাগারের যথেষ্ট আধুনিকায়ন হয়েছে। ই-লাইব্রেরিতে ব্যাপক বই রয়েছে। তবুও শিক্ষার্থীদের আগ্রহ কেবল সাধারণ জ্ঞানের বই, চাকরির বাজারের সব বই নিয়ে প্রবেশ করার।

কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে কেনো শিক্ষার্থীদের এই ধরনের বাজে একটি চর্চা হচ্ছে? এতে করে যারা একাডেমিক বই পড়তে চান তাদের পড়াশোনায় বিঘœ ঘটে অনেক ক্ষেত্রে। এটাই দেখা যাচ্ছে গত আগস্টের পর থেকে। যারাই গ্রন্থাগারে নিয়মিত হচ্ছেন তাদের অধিকাংশই চাকরির পড়া পড়তে যাচ্ছেন। কেননা এখন বাইরের বই নিয়ে প্রবেশের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের হয়তো লক্ষ্য ছিল একাডেমিকভাবে শিক্ষার্থীদের জ্ঞানকে প্রসারিত করা। কিন্তু বর্তমান প্রজন্ম শিক্ষার এক ভয়াল সংস্কৃতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বড় ভাই, বোনের প্রেরণায় একাডেমিক পড়াকে অবহেলা করে চাকরির পড়াকে জোর দিচ্ছে।

তাই আগে কেউ এখানে একাডেমিক পড়ার জন্য আসতো না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গ্রন্থাগারের আধুনিকায়ন নিয়ে সদা সচেতন বলেই ধারণা পাওয়া গিয়েছে। এখানে ফিল্টার স্থাপন করা হয়েছে, শিক্ষার্থীদের সুবিধার জন্য গ্রন্থাগারের সময় বাড়ানো হয়েছে। এখানে এখন শিক্ষার্থীরা শুধু লাইব্রেরি কার্ড প্রদর্শন করেই প্রবেশ করতে পারবে। কর্তৃপক্ষকে সচেতন থাকতে হবে বাইরের  কোনো ছাত্রছাত্রী যেন এখানে প্রবেশ না করে। তাহলে গ্রন্থাগারে নিজস্ব শিক্ষার্থীদেরই অসুবিধা হবে।

এসকল সমস্যা সমাধানে কি কি পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে এই সংক্রান্ত বিষয়ে একাধিক শিক্ষার্থী মতামত দিয়েছেন। ১৫তম ব্যাচের একজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে প্রবেশকালে প্রথমেই যাচাই করতে হবে শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসের কিনা। এক্ষেত্রে লাইব্রেরি কার্ড দেওয়ার সময় শিক্ষার্থীর ফিঙ্গার প্রিন্ট নেওয়া যেতে পারে। যখনই শিক্ষার্থী গেট দিয়ে প্রবেশ করবে তাকে সেন্সরে ফিঙ্গার প্রিন্ট দিয়েই প্রবেশ করতে হবে।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের নবীনদের মধ্যে একজন জানান, ‘এখন শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি দেখা যাওয়ার কারণ চাকরির বই নিয়ে প্রবেশের সুযোগ করে দেওয়া। আমরা যারা নবীন আছি, তারা তো এখনই চাকরির প্রস্তুতি নেব না, আমাদের একাডেমিক বইয়ের যাতে একটা বিশাল সংগ্রহশালা তৈরি করে দেওয়া হয়, এটাই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কাছে অনুরোধ।’

কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার থাকবে প্রাণবন্ত। হ্যাঁ এখানে যে শুধুই চাকরিপ্রার্থীদের আধিক্য থাকবে এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আরও সুন্দর হয় যদি চাকরিপ্রার্থীও একাডেমিক পড়াশোনার জন্য আলাদা শিফট কিংবা বসার জায়গা ভিন্ন করে বিন্যাস করে দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে ক্যাম্পাস টাইমে শুধুই একাডেমিক পড়াশোনার জন্য আসবে শিক্ষার্থীরা এবং বাস ছাড়ার পরে গ্রন্থাগার বন্ধ হওয়ায় আগ পর্যন্ত সবাই সুযোগ পাবে এমনটা করা যেতে পারে। যারা চাকরিপ্রার্থী তাদের বিকেলের পরে সুযোগ দিলে ভালো হয়। এতে একাডেমিক ও চাকরির প্রস্তুতি উভয় চাহিদার শিক্ষার্থীরাই লাভবান হবে।

দেশের প্রথম সারির একটি বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ায় প্রশাসনকে গভীরভাবে ভাবতে হবে। জায়গা সংকটের কারণে প্রসারণ বা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন অনেকটা সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। তবুও সাধ্যের মধ্যে সবটুকু চেষ্টা করলেই পরিপূর্ণতা পাবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ শিক্ষার্থীদের দক্ষ মানব সম্পদে পরিণত করা, বিশেষ করে প্রযুক্তিগত দিকে এবং গবেষণায়। এজন্য চাই পড়াশোনার উপযুক্ত পরিবেশ। গ্রন্থাগারকে কানায় কানায় পূর্ণ যেন চাকরি প্রার্থীদের নিয়েই না হতে হয়। তাহলে এটা দাঁড়াবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ বিসিএস ক্যাডার বানানো। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের আধুনিকায়নের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। এটা অব্যাহত থাকলে শিক্ষার্থীরা অবশ্যই গ্রন্থাগারমুখী হবে। 

×