ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলা বিভাগ অ্যালামনাই

রাজু মোস্তাফিজ

প্রকাশিত: ০১:২৩, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

বাংলা বিভাগ অ্যালামনাই

‘মতিহার তোমার দ্বারে আসবো ফিরে বারে বারে

‘মতিহার তোমার দ্বারে আসবো ফিরে বারে বারে।’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষক আর শিক্ষার্থীদের দুই দিনব্যাপী অ্যালামনাই অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই দুদিন প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাস জীবনের স্মৃতিচারণসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান মতিহার চত্বরকে করেছে প্রাণবন্ত। সেই যৌবনের দিনগুলোর সহপাঠিদের পেয়ে প্রতিজন শিক্ষার্থীর কি যে উচ্ছ্বাস আর আবেগ যা মতিহার চত্বর মুখরিত হয়ে গিয়েছিল। প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা তাদের সহপাঠীদের পেয়ে হারিয়ে গিয়েছিল তারুণ্যের সেই দিনগুলোতে। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ক্লান্তহীনভাবে চলেছিল আড্ডা। তাদের কথা যেন শেষ হতেই চায় না। 
পদ্মাবিধৌত পলল ভূমিতে মতিহার সাক্ষী রেখে যাকে কথা দিয়েছিল শৈশবের মতোই কাটিয়ে দেবে তাদের জীবন, শেষাবধি কথা রাখতে পারে নাই ভেবেছিল মহুয়া, শিরিশ, দেবদারু, জারুল, আম, লিচু আর বাবলা গাছে আবৃত মায়াময় মতিহার, চিরকাল আনন্দের জোয়ারে ভাসাবে সকলকে। বয়সের ব্যবধান সব শিক্ষার্থীকে ক্রমান্বয়ে দূর থেকে বহু দূরে সরিয়ে দিয়ে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য করে দিচ্ছে নিরাপদ স্থান। অ্যালামনাই ২০২২ চতুর্থ সম্মেলন উৎসবে সারাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসেছে শত শত প্রাক্তন শিক্ষার্থী।

যারা চার দশক আগে বন্ধুত্বে¡ আবদ্ধ হয়ে আজও পদ্মার স্রোতের মতো কূল কূল বয়ে চলেছে বাধাহীনভাবে। প্রতি দুবছর পর পর নতুন ছন্দে নতুন ব্যঞ্জনায়, মায়াময়ী মতিহারের প্রতিটি ধূলিকণায় সকলের চরণের মূর্ছনা, প্রতিটি পল্লবে তাদের স্পর্শের দাগ, লাইব্রেরির প্রতিটি বইয়ের পাতায় তাদের হাতের স্পর্শ, কত কথা, কত স্মৃতি, কত অভিমান, প্রেম সকলকে এখনো কাঁদায়।

বাংলা বিভাগের অ্যালামনাই গত ২২ ডিসে¤¦র বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় শহীদুল্লাহ কলা ভবনের চত্বরে জাতীয় ও অ্যালামনাই সংগীত পরিবেশনের মাঝে চতুর্থ সম্মিলন উৎসব ও দ্বি-বার্ষিক সাধারণ সভা ২০২২ এর প্রধান অতিথি প্রফেসর ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার উপাচার্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রফেসর ড. আবদুল খালেক উপাচার্য নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

সভাপতিত্ব করেন প্রফেসর ড. পিএম সফিকুল ইসলাম সভাপতি বাংলা বিভাগ অ্যালামনাই। উদ্বোধনের পর প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষক আর শিক্ষার্থীদের নিয়ে একটি আনন্দ শোভাযত্রা শহীদুল্লাহ কলাববন থেকে বের হয়ে প্যারিস রোড হয়ে শহীদ জোহার সমাধি পার হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে আবারও শহীদুল্লাহ কলাভবনে এসে শেষ হয়।

এর পর অনুষ্ঠানে নাট্যশিল্পী আজিজুর রহমান স্মৃতি পুরস্কার, অধ্যাপিকা শাহিদা পারভীন স্মৃতিপদক, গ্রন্থপ্রেমী আবু বাকার স্মৃতিপদক, অধ্যক্ষ আবদুল জলিল মিঞা স্মৃতি পুরস্কার, আলহাজ আবদুল হাই স্মৃতি পুরস্কার, ফসির উদ্দিন প্রাং স্মৃতি পুরস্কার কবিতা, গল্প, সৃজনশীল লেখালেখির জন্য এবং ¯œাতক (সম্মান) পরীক্ষায় কৃতিত্ব অর্জনকারী ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে মেধাবৃত্তি প্রদান করা হয়। বিকেলে স্মৃতিচারণ ও উন্মুক্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান কবিতা পাঠ, আবৃত্তি নাটক পরিবেশিত হয় মধ্যরাত পর্যন্ত। কনকনে ঠান্ডায় সকলে উপভোগ করে এ অনুষ্ঠান।

দ্বিতীয় দিন ২৩ ডিসেম্বর আমতলায় আনন্দ আড্ডা অবস্থান ও আনন্দ বিচরণমুক্ত আলোচনা আনন্দ-বেদনার এবং স্মৃতিচারণ। এরপর কার্যকরী কমিটির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আগামী অ্যালামনাই কমিটির এর সভাপতি কবি জামিলুর রহমান ও সম্পাদক প্রফেসর ড. শহীদ ইকবাল নির্বাচিত হন। সন্ধ্যার পরেই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। ৩৩ ব্যাচের শিক্ষার্থী ব্যাংকার আরিফা মালা, প্রভাষক রেজাউল করিম রাজু, অভিনেত্রী সাবেরা ইয়াসমীন সীমা, শিক্ষক মিতা জাহান, প্রভাষক বেলী ও শ্রিপা, ড. তাসলিম উদ্দিন, কানিজ, নাসিমা জানায় অ্যালামনাইয়ের মাধ্যমে দুই যুগের বেশি সময় পর আমাদের সহপাঠীদের ফিরে পেয়েছি।

শিক্ষা জীবনের কত স্মৃতি আজ বারবার মনে পড়ছে। অ্যালামনাই এর মাধ্যমে অতীত বর্তমানের হারানো স্মৃতিকে ফিরে পেয়েছি। সকলের আবেগ উচ্ছ্বাস দেখে দারুণ খুশি প্রাক্তন ও নতুন শিক্ষার্থীরা।
বাংলা বিভাগ অ্যালামনাই সভাপতি প্রফেসর ড. পি এম সফিকুল ইসলাম জানান নতুন পুরাতনের মিলন মেলায় পরিণত হয় মায়াবী মতিহার। হারিয়ে যাওয়া সন্তানদের ফিরে পায় মতিহার। সাবেক শিক্ষার্থীদের জন্য জয় হোক বাংলা বিভাগ অ্যালামনাই। নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য প্রফেসর ড. আবদুল খালেক জানান- বাংলা বিভাগ অ্যালামনাইয়ের বিশেষত্ব আছে। ভাষা ও বাঙালি সংস্কৃতি আমাদের  জাতিসত্তার শিকার।

বাংলা বিভাগের সকল ছাত্র-ছাত্রী মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে। প্রগতি চিন্তার অধিকারী। অ্যালামনাইয়ে আসা সব শিক্ষার্থীরা মনে করে সকলেই একটি পরিবার। যাবার বেলায় সকলেই বলে ওঠে তোমরা বেঁচে থাক সুস্থ থাক ভালো থাক, আর আমাদের সঙ্গে ভালো থাকুক প্রাণের মতিহার। আর তার নাম না জানা অসংখ্য গুণধর সন্তান।

×