ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৫ জুন ২০২৫, ১ আষাঢ় ১৪৩২

১০ দিন ছুটির সময়ের স্টোরেজ ভাড়া মওকুফের দাবি

ঈদের ছুটিতে চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ে বিপর্যয়

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:০০, ১৪ জুন ২০২৫

ঈদের ছুটিতে চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ে বিপর্যয়

কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ে বিপর্যয়

ঈদুল আজহা উপলক্ষে টানা সরকারি ছুটির প্রভাব পড়েছে চট্টগ্রাম বন্দরের কন্টেইনার ডেলিভারি ও কন্টেইনার ওঠানামায়। শ্রমিক সংকটের কারণে বন্দরে জাহাজে কন্টেইনার ওঠানামায় অতিরিক্তি একদিন পর্যন্ত সময় লাগছে। ফলে ৩০ শতাংশ রপ্তানি শিপমেন্টের সিডিউল বিপর্যয় ঘটেছে। একইভাবে আমদানিকৃত  জরুরি খ্যাদপণ্য ও  মেশিনারিজ সামগ্রী খালাস হতে পারছে না। স্বাভাবিক সময়ে যেখানে দৈনিক গড়ে পাঁচ হাজারের বেশি আমদানি কন্টেইনার জাহাজ থেকে নামানো হয়, সেই সংখ্যা এখন নেমে এসেছে অর্ধেকে। ডেলিভারি কমেছে ৮০ শতাংশের বেশি।

সময়মতো কন্টেইনার বন্দরে না আসায় ঘটেছে রপ্তানি চালানের সিডিউল বিপর্যয়। ঈদের ছুটির আগে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ও কাস্টমস যৌথ সভা করেছিল বন্দর সচল রাখতে। সেখানে নেওয়া হয়েছিল ১০টি সিদ্ধান্ত।  কিন্তু ব্যবসায়ীরা বলছেন, এসব সিদ্ধান্তের সুফল আসেনি। উল্টো বন্দরের বিদ্যমান স্টোরেজ ভাড়া চারগুণ বৃদ্ধির ফলে তাদের ক্ষতি বেড়ে গেছে। এই পরিস্থিতিতে ঈদের ১০ দিন ছুটির সময়ের স্টোরেজ ভাড়া মওকুফের দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
ঈদুল আজহার টানা দশ দিনের সরকারি ছুটি শুরু হয় গত ৫ জুন, আগামী ১৪ জুন পর্যন্ত ছুটি অব্যাহত ছিল। চট্টগ্রাম বন্দরের কন্টেইনার ডেলিভারি ও হ্যান্ডলিংয়ের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ঈদের ছুটি চলাকালে অস্বাভাবিক কমে গেছে কন্টেইনার ডেলিভারির সংখ্যা। ৫ জুন বন্দরে কনটেইনার ডেলিভারি হয়েছিল ৪ হাজার ১২২ টিইইউ (বিশ-ফুট সমতুল্য ইউনিট)। এদিন জাহাজে কন্টেইনার ওঠা-নামা বা হ্যান্ডলিং হয়েছিল ৯ হাজার ৭২০ টিইইউ, আর আমদানি কন্টেইনার জাহাজ থেকে নামানো হয়েছিল ৫ হাজার ৪১১ টিইইউ।

কিন্তু এরপর থেকে বন্দরে কমতে থাকে ডেলিভারির সংখ্যা। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ গত ১০ মার্চ থেকে বিদ্যমান স্টোরেজ ভাড়া চারগুণ বাড়িয়েছে। জাহাজ থেকে নামানোর পর চারদিনের বেশি বন্দরে থাকা কন্টেইনারের ক্ষেত্রে এই বর্ধিত চার্জ প্রযোজ্য হয়। রমজান মাসে কৃত্রিম সরবরাহ সংকট রোধ করতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। এরপর থেকে স্টেকহোল্ডাররা এই চার্জ বাতিলের দাবি জানিয়ে এলেও বন্দর কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেনি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদের ছুটিতে কন্টেইনার ওঠা-নামা কিংবা ডেলিভারি কমে যাওয়ার ঘটনা প্রতিবছরের।

তবে এবারের টানা দশদিনের ছুটি এবং বিদ্যমান স্টোরেজ ভাড়ার চারগুণ জরিমানা এ সংকটকে অসহনীয় করে তুলেছে। এ প্রসঙ্গে এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক মো. সহিদুল হক মোল্লা জনকণ্ঠকে বলেন,  এ সংকটের জন্য তারা দায়ী নন। তাহলে চারগুণ স্টোরেজ ভাড়ার শাস্তি এ সময়ে চালু থাকা উচিত নয়। তারা চারগুণ স্টোরেজ ভাড়ার সিদ্ধান্ত বাতিলের পাশাপাশি ঈদের টানা ১০ দিনের স্টোরেজ ভাড়া মওকুফের দাবি জানান। ব্যবসায়ীদের ওপর চারগুণ স্টোর রেন্ট চাপিয়ে দেওয়া কোনোভাবেই উচিত হয়নি। কন্টেইনার ডেলিভারি কম হওয়ার অজুহতে সব ব্যবসায়ীর ওপর এর দায় চাপানো হয়েছে।

বন্দর কর্তৃপক্ষের উচিত অহেতুক চাপিয়ে দেওয়া এই সিদ্ধান্ত দ্রুত প্রত্যাহার করা। তিনি আরও বলেন, চারগুণ স্টোররেন্ট চাপিয়ে দেওয়া দেশের অর্থনীতির জন্য আত্মঘাতী। আমরা স্টোর রেন্ট মওকুফের জন্য ইতোমধ্যে একাধিকবার চিঠি দিয়েছি। বারবার  কাস্টমস কর্তৃপক্ষের নজরে আনা হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এর ফলে আমদানিকৃত সকল পণ্যের দাম আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। 
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, চারদিনের ফ্রি টাইমের পরে প্রথম সাতদিনের জন্য একটি ২০ ফুট কন্টেইনারের জন্য প্রতিদিন ৬ ডলার চার্জ করা হয়, আর ৪০ ফুট কন্টেইনারের জন্য ১২ ডলার খরচ হয়। এ চার্জ ধীরে ধীরে বাড়ে তৃতীয় সপ্তাহে ২০ ফুট ও ৪০ ফুট কন্টেইনারের জন্য যথাক্রমে ২৪ ডলার ও ৪৮ ডলার চার্জ দিতে হয়। নতুন আরোপিত চারগুণ ফি অনুসারে, আমদানিকারকদের ২০ ফুট কন্টেইনারের জন্য প্রতিদিন ২৪ থেকে ৯৬ ডলার এবং ৪০ ফুট কন্টেইনারের জন্য প্রতিদিন ৪৮ থেকে ১৯২ ডলার দিতে হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে বিকেএমইএ-র পরিচালক সামছুল আজম বলেন, ‘চারগুণ স্টোর রেন্টের কারণে রপ্তানিমুখী পোশাক শিল্পের কাঁচামাল ছাড় করতে অতিরিক্ত অর্থ গুণতে হচ্ছে। পোশাক শিল্পের বর্তমান সংকটকালীন সময়ে এই সিদ্ধান্ত দ্রুত প্রত্যাহার করা উচিত।

×