
গতি ফিরেছে দেশের পণ্য রপ্তানিতে
এপ্রিলের ধীরগতির পর মে মাসে আবারও গতি ফিরেছে দেশের পণ্য রপ্তানিতে। চলতি অর্থবছরের (২০২৪-২৫) মে মাসে পণ্য রপ্তানিতে ১১ দশমিক ৪৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক কার্যকর হওয়ার পরও বাংলাদেশের রপ্তানিতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি। গত এপ্রিল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শীর্ষ পাঁচ তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশের মধ্যে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধিই সবচেয়ে বেশি। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি)- সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, মে মাসে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে এই আয় ছিল ৪ দশমিক ২৫ বিলিযন ডলার। এর আগের মাস এপ্রিলে রপ্তানি আয় ছিল ৩ দশমিক ৯২ বিলিয়ন ডলার। বিশ্লেষকদের মতে, মে মাসের এই প্রবৃদ্ধি দেশের বৈদেশিক আয় বৃদ্ধিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
ইপিবির তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে মে পর্যন্ত ১১ মাসে মোট পণ্য রপ্তানি দাঁড়িয়েছে ৪৪.৯৫ বিলিয়ন ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১০ শতাংশ বেশি। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-মে মাসে তৈরি পোশাক খাত থেকে রপ্তানি আয় ১০ দশমিক ২৫ শতাংশ বেড়ে ৩৬ দশমিক ৫৫ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। গতবছরের একই সময়ে এই আয় ছিল ৩৩ দশমিক ১৭ বিলিয়ন ডলার। ওভেন পণ্যের রপ্তানি আয় ৯ দশমিক ৩০ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ১৬ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আর নিটওয়্যার পণ্যের রপ্তানি আয় হয়েছে ১৯ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার। আগের বছরের তুলনায় এই আয় হয়েছে ১০ দশমিক ৯৮ শতাংশ বেশি।
ইপিবির তথ্যানুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে মে পর্যন্ত কৃষিপণ্যের রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ৯২৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই আয় আগের বছরের তুলনায় ৩ দশমিক ১৭ শতাংশ বেশি। এছাড়া হিমায়িত ও জীবন্ত মাছ রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ৪১০ মিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ১৭ দশমিক ৫৩ শতাংশ বেশি। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি আয় ১২ দশমিক ৫৫ শতাংশ বেড়ে ১ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, আর প্লাস্টিক পণ্যের রপ্তানি আয় ১৮ দশমিক ৬২ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭০ মিলিয়ন ডলারে। চামড়ার তৈরি জুতা রপ্তানিতে ২৮ দশমিক ৯৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে, যা আগের বছরের ৪৮১ মিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে হয়েছে ৬২০ মিলিয়ন ডলার।
তবে চামড়াজাত অন্য পণ্যের রপ্তানি ৩ দশমিক ৩৯ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৩১৭ মিলিয়ন ডলারে। পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি ৪ দশমিক ৭৭ শতাংশ কমে ৭৬৯ মিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। হোম টেক্সটাইল খাতে ৪ দশমিক ৭৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে, যেখানে রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ৮২৫ মিলিয়ন ডলার।
নন-লেদার ফুটওয়্যার খাত, যা দেশের একটি উদীয়মান খাত হিসেবে বিবেচিত, রপ্তানি আয় ৩০ দশমিক ২৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করে ৪৯৪ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে, যা আগেরবছর ছিল ৩৭৯ মিলিয়ন ডলার। ফার্মাসিউটিক্যালস খাত থেকে রপ্তানি আয় ৫ দশমিক ২৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯৭ মিলিয়ন ডলারে। এদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক কার্যকর হওয়ার পর বাংলাদেশের পণ্য, বিশেষ করে তৈরি পোশাকের রপ্তানি কমে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছিল। তবে গত এপ্রিল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শীর্ষ পাঁচ তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশের মধ্যে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধিই সবচেয়ে বেশি। গত জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ৪ মাসে বাংলাদেশ থেকে ২৯৮ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে।
এই রপ্তানি গতবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ বেশি। গত জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ৪ মাসে যথাক্রমে ৮০, ৭০, ৭২ ও ৭৬ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছেন বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বর্তমানে পাঁচ শীর্ষ তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হচ্ছে ভিয়েতনাম, চীন, বাংলাদেশ, ভারত ও ইন্দোনেশিয়া। এই ৫ দেশ থেকেই ৬০ শতাংশ পোশাক আমদানি করে থাকে মার্কিন ব্যবসায়ীরা। ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের আওতাধীন অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলসের (অটেক্সা) হালনাগাদ তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম চার মাসে (জানুয়ারি-এপ্রিল) ২ হাজার ৬২২ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক আমদানি করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
এই আমদানি গতবছরের একই সময়ের তুলনায় ১০ দশমিক ৬৭ শতাংশ বেশি। তবে এখন পর্যন্ত তৈরি পোশাক রপ্তানিতে উচ্চ প্রবৃদ্ধি থাকলেও বাংলাদেশের একাধিক রপ্তানিকারক বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আরোপ করা ন্যূনতম ১০ শতাংশ পাল্টা শুল্কের প্রভাব বাংলাদেশের রপ্তানিকারকদের ওপর পড়তে শুরু করেছে। অনেক মার্কিন ক্রেতা প্রতিষ্ঠান বাড়তি শুল্কের অর্ধেকটা রপ্তানিকারকদের কাছ থেকে কেটে নিচ্ছেন।
কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্কের পুরোটা নেওয়ার ঘটনাও আছে। রপ্তানিকারকেরা আরও বলছেন, পাল্টা শুল্ক কমিয়ে আনতে ভিয়েতনাম, ভারতসহ বিভিন্ন দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। আগামী মাসের মধ্যে তারা মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে চুক্তি সম্পন্ন করে ফেলতে পারে। সেটি হলে তারা এগিয়ে যাবে। কারণ, এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের দর-কষাকষিতে দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই।