ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১১ মে ২০২৫, ২৮ বৈশাখ ১৪৩২

গত চার মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ, রিজার্ভ শক্তিশালী হবে

অক্টোবরে রেমিটেন্স এসেছে ১৯৮ কোটি ডলার

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২১:৪৩, ১ নভেম্বর ২০২৩

অক্টোবরে রেমিটেন্স এসেছে ১৯৮ কোটি ডলার

প্রবাসীরা রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন ১৯৮ কোটি ডলার

অক্টোবর মাসে প্রবাসী বাংলাদেশীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন ১৯৮ কোটি ডলার। এই অংক গত চার মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এতে করে ডলার সংকট কেটে গিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ বাড়বে। ডলারের সংকটের মধ্যে অক্টোবরে রেমিটেন্স  প্রবাহ বেড়েছে। ডলারের বিনিময় দর ও রেমিটেন্সে প্রণোদনা বাড়ার কারণে  রেমিটেন্সের প্রবাহ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যাংকাররা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, প্রবাসীরা সেপ্টেম্বরের তুলনায় আক্টোবরে রেমিটেন্স বেশি পাঠিয়েছে ৬৪৩ মিলিয়ন ডলার, আগের মাসের তুলনায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪৮.২০ শতাংশ। 
সেপ্টেম্বরে রেমিটেন্সের পরিমাণ ছিল ১.৩৩ বিলিয়ন ডলার, যা ছিল গত ৪১ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগে ২০২২ সালের অক্টোবরে প্রবাসীদের রেমিটেন্স এসেছিল ১.৫৯ বিলিয়ন ডলার। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, প্রবাসীরা যে চ্যানেলে রেমিটেন্সে (ডলারের) দর বেশি পায় সে মাধ্যমেই রেমিটেন্স পাঠায়। আগে হুন্ডি বাজারে প্রবাসীরা ডলারের দাম বেশি পাওয়ায় ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্স কম এসেছিল। গত মাসের শেষের দিকে রেমিটেন্সের প্রণোদনা ২.৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করার ফলে রেমিটেন্স বেশি এসেছে।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বৈদেমুদ্রার সংকট কাটাতে লোকসান দিয়ে বেশি দামে ডলার কিনতে পারছে ব্যাংকগুলো। প্রবাসী আয়ে সরকারের আড়াই শতাংশ প্রণোদনার সঙ্গে ব্যাংকগুলো বাড়তি ২ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি দামে ডলার কিনতে পারছে। মোট ৫ শতাংশ প্রণোদনা পাচ্ছে। ফলে বৈধ পথে দেশে রেটেন্স আসছে। যার কারণে রেমিটেন্স প্রবাহ কিছুটা বেড়েছে। তবে রেমিটেন্সে প্রণোদনা দীর্ঘ মেয়াদি সুফল আসবে না। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ওমান বাংলাদে থেকে শ্রমিক নেবে না বলে ভিসানীতি দিয়েছে। রাজনৈসংকটসহ বেশ কিছু কারণে আকিছু দেশ থেকে এ ধরনের ভিসা নীআসতে পারে। ফলে আগামীতে প্রবাসী আয়ের এ ইধারা অব্যাহত না থাকার শঙ্কা রয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবমাসে দেশে রেমিটেন্স এসেছে ১৯৭ কোটি ৭৬ লাখ মার্কিন ডলার। এরমধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ১৫ কোটি ৪৫ লাখ ডলার, বিশেষায়িত একটি ব্যাংকের মাধ্যমে ৫ কোটি ৮২ লাখ ডলার, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ১৭৫ কোটি ৮৮ লাখ ৬০ হাজার ডলার এবং বিদেশী ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৬০ লাখ মার্কিন ডলার। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, রেমিটেন্স বাড়াতে হলে হন্ডি বন্ধ করতে হবে। আর হুন্ডি বন্ধ করতে হলে অর্থ পাচার বন্ধ করতে হবে। এখন প্রচুর অর্থ বিদেশে পাচার হচ্ছে এটা যে কোনো উপায় নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তাদের মতে, ব্যাংকগুলো যত বেশি প্রণোদনা দেবে হুন্ডির লোকজন তার চেয়ে বেশি প্রণোদনা দেবে। তাই হুন্ডি যতক্ষণ পর্যন্ত রমরমা থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত বৈধ পথে আশানুরূপ রেমিটেন্স আসবে না।

এদিকে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম তিন মাস রেমিটেন্স প্রবাহ ধারাবাহিকভাবে কমেছিল। ডলার সংকটের কারণে গত সেপ্টেম্বর মাসে প্রবাসী আয়ে বড় হোঁচট খায়। ওই মাসে গত সাড়ে ৩ বছর বা ৪১ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন প্রবাসী আয় আসে বাংলাদেশে, যা পরিমাণে ১৩৪ কোটি ডলার। এর আগে ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে ১০৯ কোটি ডলার রেমিটেন্স এসেছিল। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে রেমিটেন্স এসেছে ১৯৭ কোটি ৩১ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার এবং আগস্টে রেমিটেন্স এসেছে ১৫৯ কোটি ৯৪ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর গত বছরের মার্চ থেকে দেশে ডলার-সংকট প্রকট আকার ধারণ করে।

এ সংকট মোকাবিলায় শুরুতে ডলারের দাম বেঁধে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে সংকট আরও বেড়ে যায়। পরে গত সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের দাম নির্ধারণের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ায়। এ দায়িত্ব দেওয়া হয় এবিবি ও বাফেদার ওপর। এর পর থেকেই সংগঠন দুটি মিলে রপ্তানি ও প্রবাসী আয় এবং আমদানি দায় পরিশোধের ক্ষেত্রে ডলারের দাম নির্ধারণ করে আসছে। মূলত বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্ত কার্যকর করছে এই দুই সংগঠন। বর্তমানে রেমিটেন্স ও রপ্তানি আয়ে ডলারের দাম ৫০ পয়সা বাড়িয়ে পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। ১ নভেম্বর থেকে রেমিটেন্স ও রপ্তানিকারকদের থেকে প্রতি ডলার ১১০ টাকা ৫০ পয়সায় কিনে আমদানিকারকদের কাছে ১১১ টাকায় বিক্রি করবে ব্যাংকগুলো। আন্তব্যাংকে ডলারের সর্বোচ্চ দর হবে ১১৪ টাকা। এত দিন ১১০ টাকায় ডলার কিনে সর্বোচ্চ ১১০ টাকা ৫০ পয়সায় বিক্রির সিদ্ধান্ত ছিল।

×