ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৩ মে ২০২৫, ৩০ বৈশাখ ১৪৩২

পাকিস্তানের মাথাপিছু ঋণ বাংলাদেশের ৪ গুণ

প্রকাশিত: ২১:৪১, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১

পাকিস্তানের মাথাপিছু ঋণ বাংলাদেশের ৪ গুণ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ প্রতিবছর লাফিয়ে বাড়ছে পাকিস্তানী নাগরিকদের মাথাপিছু ঋণের বোঝা। সবশেষ অর্থবছর শেষে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৭৫ হাজার রুপী, বাংলাদেশী টাকায় ৯২ হাজার ৮০০ টাকা। দুই দেশের অর্থনীতির তুলনায় বাংলাদেশের জনগণের চেয়ে চার গুণ বড় ঋণের বোঝা বয়ে বেড়াচ্ছে প্রত্যেক পাকিস্তানী। গত বছরের নবেম্বরে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ মন্ত্রিসভাকে জানায়, দেশের বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ৪ হাজার ৪০২ কোটি ডলার। সাড়ে ১৬ কোটি মানুষের মাথা পিছু ঋণ দাঁড়ায় ২৬৬ দশমিক ৮ ডলার, টাকার অঙ্কে যা ২২ হাজার ৬৭৮ টাকা। উন্নয়নের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে গত এক দশকে বাংলাদেশেও ধীরে ধীরে বেড়েছে মাথাপিছু ঋণ। কিন্তু পাকিস্তানে ঋণের বোঝা অল্প সময়ের ব্যবধানে যেভাবে বড় হচ্ছে তাতে দেশটির সামনে ঘোর অন্ধকারই বলা যায়। পাকিস্তানের জাতীয় সংসদে গত ৪ ফেব্রুয়ারি উপস্থাপিত অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে জানা যায়, গত অর্থবছর শেষে দেশটির প্রত্যেক নাগরিকের ঋণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৭৫ হাজার রুপী। দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন লিখেছে, দুই বছরের মধ্যে প্রতি পাকিস্তানী নাগরিকের ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ৫৪ হাজার ৯০১ রুপী, অর্থাৎ ৪৬ শতাংশ। ২০২০-২১ বছরের আর্থিক নীতি বিবরণীতে পাকিস্তানের অর্থ মন্ত্রণালয় স্বীকার করে জানিয়েছে, জাতীয় অর্থনীতির তুলনায় আর্থিক ঘাটতির পরিমাণ ৪ শতাংশে নামিয়ে আনতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার। এতে আর্থিক দায়বদ্ধতা এবং ঋণ সীমিত করে আনা-সংক্রান্ত আইন ২০০৫ লঙ্ঘিত হয়েছে। সবশেষ হিসাব অনুযায়ী, পাকিস্তানে ঋণ দাঁড়িয়েছে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৮.৬ শতাংশে। ঋণের এই পরিমাণ আইন দ্বারা নির্ধারণ পরিমাণের চেয়ে দ্বিগুণ। জাতীয় সংসদ সচিবালয়ে জমা দেয়া অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিবরণীতে বলা হয়েছে, ২০২০ সালের জুনের শেষে পাকিস্তানে মোট সরকারী ঋণ দাঁড়িয়েছে ৩৬.৪ ট্রিলিয়ন রুপী। এক বছরে মাথাপিছু ঋণের বোঝা বেড়েছে ২১ হাজার ৩১১ রুপী, শতকরার হিসাবে যা ১৩ শতাংশ। পাকিস্তান থেকে স্বাধীন হওয়ার ৪৯ বছরে তাদের থেকে সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রায় সব সূচকেই টপকে গেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের হাতে বৈদেশিক মুদ্রার সম্পদের পরিমাণ এখন পাকিস্তানের দ্বিগুণ। ৪৯তম বিজয় বার্ষিকীর প্রাক্কালে বাংলাদেশের বিদেশী মুদ্রার রিজার্ভ ৪ হাজার ৩০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। একই সময়ে পাকিস্তানের রিজার্ভ ২ হাজার কোটি ডলার। বাংলাদেশ স্বাধীনের সময় রিজার্ভ এক ডলারও ছিল না। যুদ্ধবিধ্বস্ত এই দেশ পাঁচ দশকেই উন্নীত হতে চলেছে উন্নয়নশীল দেশে। অথচ বাংলাদেশের যাত্রার শুরুতেই এটিকে বলা হয়েছিল ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’। এখন এ দেশ পরিচিতি পাচ্ছে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে। অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, স্বাধীনতা পরবর্তী আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে বাংলাদশের ঈর্ষণীয় সাফল্য অহংকার করার মতো। এই অগ্রগতির জন্য পাকিস্তান এখন ঈর্ষা করে বাংলাদেশকে। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু জাতীয় আয় ১ হাজার ৮৫৫ ডলার। একই সময়ে পাকিস্তানের মাথাপিছু আয় ১ হাজার ২৮৪ ডলার। গত অর্থবছরে পাকিস্তানের জিডিপি প্রবৃদ্ধি শূন্য দশমিক ৩৮ শতাংশ কমলেও করোনা মহামারীর মধ্যে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি বেড়ে দাঁড়ায় ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ।
×