ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৪ জুন ২০২৫, ২১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

কি করে হলো মরুভূমি

প্রকাশিত: ২১:৩০, ৮ অক্টোবর ২০২১

কি করে হলো মরুভূমি

মরুভূমি । বাংলা মরু শব্দের অনেক অর্থ। যেমন বসতিহীন, ত্যাগ করা, পরিত্যক্ত। আর বাকি রইল- জলবিহীন বালুকাময় স্থল। মরুভ‚মি মানেই বালুর পাহাড়। এটিই প্রথম মাথায় আসে আমাদের। কিন্তু হঠাৎ করে জল, গাছপালা বিহীন এমন প্রান্তর পৃথিবীতে কি করে তৈরি হলো। যেখানে পৃথিবীর তিন ভাগের দুই ভাগ জল। সঙ্গে নেই গাছপালা। এমনকি প্রাণী শূন্য। যাই হোক, মোটের ওপর মরুভ‚মি কি করে তৈরি হলো। কেন মরুভ‚মি তৈরি হলো। সাধারণের ভাষায় শব্দের একটি অর্থ তৈরি করলেও ভ‚গোল এবং পরিবেশ বিদ্যার ভাষায় মরুভ‚মির একটি সংজ্ঞা আছে। মরুভ‚মি কাকে বলে কোন জায়গা, যেখানে পানির পরিমাণ কম এবং তার কারণে যেখানে গাছপালা কিংবা প্রাণীর বেঁচে থাকা কষ্টকর। তার মানে যেখানে বাতাস এবং মাটিতে পানি বা জলীয়বাষ্পের পরিমাণ কম, সে অঞ্চলের ভ‚মি শুকিয়ে গেলে তাতে অবশিষ্ট থাকা বালুকণা তৈরি করে মরুভ‚মি। পানির পরিমাণ কম হলেই কি মরুভ‚মি বলা যায়? মোটেও না। ধরা হয় যে সব অঞ্চলের বাৎসরিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ২৫০ মিলিলিটারের কম, তাদের বলা হয় মরুভ‚মি। তার মানে মরুভ‚মি তৈরি হওয়ার প্রথম শর্ত পানির অভাব। কিন্তু বাতাসে তো সব সময় জলীয়বাষ্প থাকে, তাহলে মরুভ‚মির বাতাসে জলীয়বাষ্প কোথায় যায়। অন্যভাবে বললে জলীয়বাষ্প থাকে না বলেই কি করে মরুভ‚মি তৈরি হয়। পৃথিবীর এক-পঞ্চমাংশ মরুভ‚মি মরুভ‚মি মানে পানি শূন্যতা এবং প্রচণ্ড গরম। অন্যভাবে বললে যেখানে বছরে ১০ ইঞ্চির চেয়ে বৃষ্টিপাত কম হয়। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মরুভ‚মি বলা হয় সাহারা মরুভ‚মিকে। কিন্তু অন্যভাবে কথাটি ভুল। কারণ, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মরুভ‚মি হলো এ্যান্টার্কটিকা। এ্যান্টার্কটিকা আসলে একটি মরুভ‚মি। এটিকে বলা হয় কোল্ড ডেজার্ট বা পোলার ডেজার্ট। ডেজার্ট দু’ধরনের। একটি কোল্ড, আরেকটি হট। পোলার ডেজার্টে শুধু বরফ আর হট ডেজার্টে শুধু বালি। হট ডেজার্টের দিক থেকে সাহারা সবচেয়ে বড়। আবার ব্যতিক্রম আছে। যেমন মঙ্গোলিয়ার গোবি মরুভ‚মি। এটি বালি কিংবা বরফ কোনটা দিয়েই তৈরি নয়। আবার এটি কোল্ড ডেজার্ট। গোবি মরুভ‚মির নব্বই ভাগ পাথর দিয়ে তৈরি। মাত্র পাঁচ ভাগ বালু। পৃথিবীর মরুভ‚মির মাত্র ২০ ভাগ বালু দিয়ে তৈরি। সর্বমোট মরুভ‚মি আছে প্রায় ২৩টি। বেশিরভাগ আসলে ঠাণ্ডা মরুভ‚মি বা বরফে তৈরি। বেশিরভাগ মরুভ‚মির আশে পাশে একটা দূরত্বে মাউন্টেইন থাকে। এই পাহাড়-পর্বতগুলোর কারণেই মরুভ‚মি তৈরি হয়। যখন বাতাস প্রবাহিত হয় ভ‚মি থেকে একটু উপরে, যেতে যেতে সর্বপ্রথম বাধা প্রাপ্ত হয় কোন উঁচু পর্বতে। বাতাসের মধ্যে থাকে জলীয়বাষ্প। এই জলীয়বাষ্প আসে সমুদ্র কিংবা যেখানে পানির উৎস, তাপমাত্রার কারণে পানি শুকিয়ে জলীয় বাষ্প হয়ে বাতাসে ভেসে বেড়ায়। তৈরি করে মেঘ। সেই মেঘ কিছুদূর গিয়ে ভারি হয়ে গেলে হয়ে যায় বৃষ্টি। এমন করে বাতাসে ভেসে বেড়ানো জলীয়বাষ্প এবং মেঘ ভাসতে ভাসতে পর্বতের গায়ে ধাক্কা লেগে খুব ঠাণ্ডা হয়ে বরফ হয়ে যায়, কিংবা বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ে । তার মানে পর্বতের ওপাশের বাতাসের মধ্যে পানি বা জলীয়বাষ্প একেবারেই কম থাকে। এই বাতাসে একদিকে জলীয়বাষ্প থাকে না, সঙ্গে খুব ঠাণ্ডা থাকে বাতাস। পর্বতের ওপাশে বৃষ্টি কম হওয়াতে বাতাস থাকে শুকনো, ভ‚মিতে থাকে না জল, ওপাশ থেকে আসা ঠাণ্ডা বাতাস ভ‚মির স্পর্শে হয়ে ওঠে গরম। তাতে ভ‚মিতে সামান্য জল থাকলে সেটাও শুকিয়ে যায়। একে জলহীন বাতাস, তার ওপর ভ‚মি থেকেও শুষে নেয় । সামান্য জল থাকলে, ধীরে ধীরে বাতাস আর মাটি এতই শুকিয়ে যায় যে, ধু ধু বালি ছাড়া কিছুই আর অবশিষ্ট থাকে না। মরুভ‚মিকে অন্যভাবে তাই অনেকে বলে বৃষ্টির ছায়া অঞ্চল। যেখানে বৃষ্টি এসে থেমে গেছে, যে মেঘ ছিল আকাশে, তা থেমে গেছে, শুরু হয় মেঘের ছায়া। আর এমন করে জলীয়বাষ্পহীন বাতাস ধীরে ধীরে ভ‚মিকে পরিবর্তন করে যে বিস্তীর্ণ ভ‚মির জন্ম দেয়, সেটাই হয়ে ওঠে মরুভ‚মি। বেশিরভাগ মরুভ‚মি এক সময় হয়ত গাছপালায় ভরা ছিল, বৃষ্টি হতো, শুকনো ছিল না। কোন কোন ডেজার্টে কখনও বৃষ্টি হয়, বাতাস আর্দ্র থাকে খানিক। ব্যতিক্রম চিলির আটাকামা মরুভ‚মি। বলা হয়, এই মরুভ‚মি তৈরি হয়েছিল ৪০ মিলিয়ন বছর আগে। তারপর থেকে কখনও আর বৃষ্টি হয়নি সেখানে। যদিও এমন বৃষ্টিপাতহীন অঞ্চলেও মানুষের বসবাস থেমে নেই। প্রায় দশ লাখের ওপর মানুষ বসবাস করে এই দুর্গম অঞ্চলেও। পৃথিবীর একপঞ্চমাংশ ভূমি হট মরুভ‚মি হলে হট এ্যান্ড কোল্ড মরুভ‚মি মিলে একতৃতীয়াংশ ভ‚মি। এ ক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের বিশাল অংশই আসলে এমন শুকনো মরুভ‚মি। কিংবা গ্রিনল্যান্ডের পুরোটাই কোল্ড মরুভ‚মি। এখনও পৃথিবীতে প্রতিবছর পঞ্চাশ হাজার মাইলের বেশি অঞ্চল মরুভ‚মি হয়ে যাচ্ছে। এর প্রধান কারণ বন জঙ্গল কমে যাওয়া। ডিফরেস্টেশনের কারণে আগামী পঁচিশ বছরে এক বিলিয়নের বেশি মানুষের জীবন বিপন্ন হবে পরিবেশগতভাবে। শুধু এক চায়নায় এমন বনভ‚মি কমে যাওয়াতে বছরে এক হাজার মাইলের বেশি অঞ্চল মরুভ‚মি হয়ে যাচ্ছে। লেখক : চিকিৎসক, লন্ডন [email protected]
×