ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৬ জুন ২০২৫, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

বিদেশ থেকে বছরে আনা যাবে একটি সোনার বার

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২২:১৮, ৪ জুন ২০২৫

বিদেশ থেকে বছরে আনা যাবে একটি সোনার বার

বিদেশ থেকে ফেরার সময় শুল্ক দিয়ে বছরে একটি সোনার বার আনা যাবে

বিদেশ থেকে ফেরার সময় শুল্ক দিয়ে বছরে একটি সোনার বার আনা যাবে। চোরাচালান বন্ধ এবং এ খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে নতুন বিধিমালায় বেশ পরিবর্তন আনা হয়েছে। সোনা চোরাচালান বন্ধে আরও কঠোর হয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। মঙ্গলবার জারি করা অপর্যটক যাত্রী ব্যাগেজ বিধিমালায় এ কথা বলা হয়েছে। এর আগে বিদেশ থেকে ফেরার সময় আগে প্রতিবার সর্বোচ্চ ১১৭ গ্রাম ওজনের একটি করে সোনার বার আনা যেত। তবে এখন কোনো যাত্রী বছরে একবারই শুল্ক দিয়ে একটি সোনার বার আনতে পারবেন। 
জানা গেছে, গত কয়েকবছর ধরে আন্তর্জাতিক বাজারে ধারাবাহিকভাবে স্বর্ণের দাম বাড়ছে। বাংলাদেশে রেকর্ড দাম বেড়েছে সোনার। দাম বাড়তে বাড়তে এখন প্রতিভরি সোনা বিক্রি হচ্ছে ১ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকার ওপরে। সোনায় এখন বিনিয়োগ বাড়াচ্ছেন বিত্তশালীরা। এ অবস্থায় কয়েকদশক ধরে দেশে সোনা চোরাচালান বেড়েছে। বাংলাদেশকে রুট হিসেবে ব্যবহার করছে কয়েকটি দেশ। দেশে গড়ে উঠেছে সোনা চোরাচালের শক্তিশালী সিন্ডিকেট। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিমান বন্দরে প্রতিমাসে বিপুল পরিমাণ চোরাই স্বর্ণ আটক করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে সোনা আমদানির বিষয়ে নীতিমালা থাকলেও অসাধু ব্যবসায়ীদের কারণে তা পরিপালন করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ছে। এ অবস্থায় বিদেশ থেকে সোনা আমদানিতে আরও কঠোর হচ্ছে বর্তমান সরকার। 
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নতুন বিধিমালা জারি হওয়ায় বিদেশ থেকে সোনা আনার ক্ষেত্রে সরকারের রাজস্ব আদায় বাড়বে। তাদের মতে, সারাবিশ্বের বিভিন্ন দেশে এক কোটি বেশি প্রবাসী রয়েছেন। তারা যখন দেশে আসেন সেই সময় স্ত্রী, কন্যা, বোন ও মায়েদের জন্য কিছুটা হলে স্বর্ণ নিয়ে আসেন। অনেকে আবার বানানো অলঙ্কার দেশে এনে আত্মীয় স্বজনকে উপহার হিসেবে দেন। এছাড়া প্রতিবছর দেশের বাইরে যারা বেড়াতে, ঘুরতে বা ব্যবসায়িক কাজে যান তারাও স্বর্ণ নিয়ে আসেন। ফলে এ খাত থেকে রাজস্ব আদায়ের বড়  সুযোগ রয়েছে। এদিকে, বিধিমালায় এবার সোনার বার আনার ক্ষেত্রে প্রতি ভরিতে (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) শুল্ক ৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এতে একটি সোনার বার আনার জন্য ৫০ হাজার টাকা শুল্ক দিতে হবে। আগে ভরিপ্রতি এই শুল্ক ছিল ৪ হাজার টাকা। কড়াকড়ি করা হয়েছে সোনার গহনা আনার ক্ষেত্রেও। আগে একজন যাত্রী বিদেশ থেকে দেশে ফেরার সময় যতবার খুশি ততবার ১০০ গ্রাম ওজনের সোনার গহনা বিনা শুল্কে আনতে পারতেন। এবার সেই সুযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এখন থেকে একজন যাত্রী বছরে মোট ১০০ গ্রাম ওজনের সোনার গহনা বিনা শুল্কে আনতে পারবেন।
এছাড়া মুঠোফোন আনার ক্ষেত্রেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। বিধিমালা অনুযায়ী, বিদেশ ফেরত একজন যাত্রী দুটি ব্যবহৃত মুঠোফোন ও প্রতিবছর একবারই একটি নতুন মুঠোফোন শুল্ক-কর পরিশোধ ছাড়া আনতে পারবেন। আগে দুটি ব্যবহৃত মুঠোফোনের পাশাপাশি শুল্ক-কর দিয়ে প্রতিবার একটি করে নতুন মুঠোফোন আনা যেত। ব্যাগেজ বিধিমালায় সুবিধা দেওয়ার কারণে গত পাঁচ বছরে যাত্রীদের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ সোনা আসে। 
ঢাকার শাহজালাল ও চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দর দিয়ে পাঁচ বছরে প্রায় ১৪২ টন সোনা আনেন যাত্রীরা। এসব সোনার বার পাচার হয়ে যায় বলে আলোচনা আছে। সীমান্ত পথে ভারতে পাচার হওয়ার সময় সোনার বার আটকের ঘটনাও ঘটছে। এ পরিস্থিতিতে এবার ব্যাগেজ বিধিমালায় পরিবর্তন আনা হলো। ব্যাগেজে নির্ধারিত পণ্যের বেশি পণ্য আনলে ন্যায় নির্ণয় অনুযায়ী শুল্ক-কর পরিশোধ, অর্থদ- ও জরিমানা গুণতে হতে পারে। অতিরিক্ত পণ্য খালাসের জন্য আমদানি-রপ্তানি নিয়ন্ত্রকের ছাড়পত্র লাগবে। তবে আমদানি নিষিদ্ধ বা আমদানি নিয়ন্ত্রিত পণ্যের ক্ষেত্রে এ সুযোগ নেই।

×