ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৬ মে ২০২৪, ১২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

সাগর কোড়াইয়া

পালাবদলের প্রত্যাশা

প্রকাশিত: ১০:৪৪, ৪ এপ্রিল ২০১৯

পালাবদলের প্রত্যাশা

পৃথিবীর প্রতিটি শিক্ষাঙ্গনই জ্ঞান সৃষ্টি, প্রয়োগ ও বিকাশের যথোপযুক্ত স্থান। শিক্ষাঙ্গনে একজন শিক্ষার্থীকে শুধুমাত্র প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার মধ্যেই সীমাবদ্ধ করে রাখলে চলে না। বরং মানবিকতা, সংস্কৃতিবান ও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি অন্যান্য বহুবিধ শিক্ষার দ্বার উন্মোচন করতে হয়। জ্ঞানের বিকাশ সামাজিকতার মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয়। আর সামাজিকতার জীবন্ত উদাহরণ হচ্ছে সুষ্ঠু রাজনীতিকরণ। সুষ্ঠু রাজনীতিকরণের মধ্য দিয়েই ব্যক্তি জীবন থেকে শুরু করে সামাজ, দেশ ও বিশ্বের কাতারে পৌঁছানো যায়। শিক্ষাঙ্গনে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণের পাশাপাশি তাই সুষ্ঠু ছাত্র রাজনীতিও একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ অংশ। একটি দেশের ভবিষ্যত রাজনীতিকে সুপথে পরিচালিত করতে দেশপ্রেমী, পরিশ্রমী ও ত্যাগী রাজনীতিবিদের প্রয়োজন রয়েছে। আর সেই প্রয়োজনীয়তাকে মাথায় রেখে ভবিষ্যত রাজনীতিবিদ গড়ে তুলতে সুষ্ঠু ছাত্র রাজনীতির বিকল্প নেই। কারণ আজকের শিক্ষার্থীরাই আগামী দিনে দেশ পরিচালনা করবে। দেশের জাতীয় রাজনীতির প্রেক্ষাপট যে রকমই হোক না কেন ছাত্র রাজনীতির প্রয়োজনীয়তা সব দেশেই এক। ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসের দিকে দৃষ্টি রাখলে নানাবিধ আন্দোলন সুসংগঠিতকরণ ও দেশ-জাতি গঠনে ছাত্র রাজনীতির ইতিবাচক দিকগুলো অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতির ইতিহাস গৌরবময়। ছাত্র রাজনীতির সূতিকাগার হিসাবে তাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান অনস্বীকার্য। জ্ঞানের পরিধি সৃষ্টি ও বিকাশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান যেমন পাহাড়সমান; তেমনি হৃদয়বান ও সৃষ্টিশীল মানুষ গড়তেও রয়েছে এর বড় ভূমিকা। বাংলাদেশের ৫২ খ্রিস্টাব্দের ভাষা আন্দোলন, ৫৪ খ্রিস্টাব্দে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ৬২-তে কুখ্যাত হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে আন্দোলন, ৬৬-তে ঐতিহাসিক ৬ ও ১১ দফা, ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, ৭০-এর নির্বাচন ও ৭১ এর মহান স্বাধীনতা আন্দোলনসহ পরবর্তী রাজনৈতিক পট-পরিবর্তনের আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সক্রিয় ভূমিকা আন্দোলনকে করেছিল বেগবান। আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও সে সময় দেশের আরও বহু স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংগঠনগুলোর অবদানও ছিল অতুলনীয়। দেশের সোনালী ভবিষ্যতের জন্য একদল প্রাণবন্ত তরুণের প্রয়োজন। যাদের তেজোদীপ্ত নেতৃত্ব দেশকে উন্নতির শিখরে পৌঁছে দিবে; স্বাধীনতার চেতনায় দুর্নীতিমুক্ত অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়ার পথ দেখাবে। কিন্তু সুষ্ঠু ছাত্র রাজনীতির এই সংস্কৃতি যেন প্রায় বন্ধ হয়ে যেতে বসেছিল। অবশেষে আলোর মুখ দেখেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ (ডাকসু)। ১৭ জানুয়ারি ২০১৯ খ্রিস্টাব্দে মাননীয় হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের যে নির্দেশ দিয়েছেন তারপর থেকেই ছাত্র রাজনীতির সুবাতাস বইতে শুরু করেছে। ১৩ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পর পরই দেশের অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও ছাত্র সংসদ গঠিত হচ্ছে। সুষ্ঠু ছাত্র রাজনীতির এই ¯্রােত আমাদের অবশ্যই ধরে রাখতে হবে। ক্ষমতার অপব্যবহার যেন ছাত্র রাজনীতির উদ্দেশ্য না হয়ে উঠে। বরং অন্যায়-অন্যায্যতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-প্রতিরোধ গড়ে তোলাই যেন সুষ্ঠু ছাত্র রাজনীতির নীতি হয়। আবার অন্যদিকে জাতীয় রাজনীতি যেন কোনভাবেই ছাত্র রাজনীতিকে প্রভাবিত করতে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। এ ব্যাপারে ছাত্র রাজনীতিকে সঠিক নিয়মনীতির মধ্যে আনা একান্ত জরুরী। মনে রাখতে হবে ছাত্র রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে যারা আজকে নিজেকে গড়ে তুলছে তারাই আগামী দিনে দেশকে নেতৃত্ব দেবে। তাই ছাত্র রাজনীতির সুষ্ঠু পালাবদল প্রয়োজন। যাতে সম্ভাবনাময় সব ছাত্রই ইতিবাচক পালাবদলের মধ্য দিয়ে ছাত্র রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করতে পারে। ছাত্র সংসদ ও কমিটি যাতে সুষ্ঠুভাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় পরিচালিত হয় তা পর্যবেক্ষণে রাখা জরুরী। বনানী, ঢাকা থেকে
×