প্রকৃতপক্ষে ১৯৭১-এর ১ মার্চ থেকেই অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়। সাতই মার্চ জাতির পিতা তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠ বক্তৃতার মধ্য দিয়ে একটি নিরস্ত্র জাতিকে সশস্ত্র জাতিতে রূপান্তরিত করেন। বক্তৃতায় তিনি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের যে নির্দেশনা দিয়েছিলেন একাত্তরের দিনগুলিতে আমরা অক্ষরে অক্ষরে সে-সব নির্দেশ পালন করেছি। এই বক্তৃতার মধ্য দিয়ে তিনি একটি জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বাঙালী জাতিকে এক মোহনায় দাঁড় করিয়েছিলেন। এই অসহযোগ আন্দোলনের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে আমরা ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তুলেছি। বাংলার মানুষ এক কাতারে দাঁড়িয়ে ‘আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সংগ্রাম পরিষদ’ গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছে।
মধ্য মার্চে ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে যখন বঙ্গবন্ধুর সংলাপ চলে, তখন প্রতিদিনই আমাদের চারজনকে- যারা আমরা পরবর্তী সময়ে মুক্তিযুদ্ধের কালপর্বে মুজিব বাহিনীর অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছি-মণি ভাই, সিরাজ ভাই, রাজ্জাক ভাই এবং আমাকে প্রতিরাতেই ব্রিফ করতেন যে কি হয়েছে, কি ঘটছে এবং কি হতে চলেছে। তিনি কখনোই মনে করেননি সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খান ক্ষমতা হস্তান্তর করবে। তিনি বলেছিলেন, ‘ইয়াহিয়া খানের সময় দরকার, আমারও সময় দরকার। তোমরা প্রস্তুতি নাও। আমি আক্রান্ত হবো। কিন্তু আক্রমণকারী হবো না। যখনই ওরা আক্রমণ করবে এবং আমরা আক্রান্ত হবো, তখনই পৃথিবীর মানুষ বুঝবে স্বাধীনতা ঘোষণা করা ছাড়া আমার আর কোন বিকল্প ছিল না।’ তেইশে মার্চ ছিল পাকিস্তান দিবস। সেদিন পাকিস্তানের পতাকা কোথাও ওড়েনি। শুধু ক্যান্টনমেন্ট ছাড়া। আসগর খান তার বইতে লিখেছেন, ‘পূর্ব পাকিস্তান সফরে গিয়ে আমি অবাক হয়েছি। কারণ, পাকিস্তানের চিহ্ন আমি পূর্ব পাকিস্তানের কোথাও দেখিনি। শুধু ক্যান্টনমেন্ট ছাড়া।’ ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে আলোচনা শুরুর আগে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে বৈঠকে আসগর খান জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘এরপর কি হতে পারে?’ বঙ্গবন্ধু উত্তর দিয়েছিলেন, ‘ইয়াহিয়া খান আসবে। তার সঙ্গে অর্থনীতিবিদ আসবে। প্ল্যানিং কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান এমএম আহমেদ আসবে। তার সঙ্গে বিচারপতি কর্নেলিয়াস আসবে। আরও কিছু লোক আসবে এবং এসে আমার সঙ্গে আলোচনা করবে। কিন্তু এ আলোচনা ফলপ্রসূ হবে না। একদিন সে বাঙালী জাতির ওপর আক্রমণ করবে এবং সেদিনই পাকিস্তানের সমাধি রচিত হবে।’ তেইশে মার্চ আমরা ঘরে ঘরে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়েছি।
’৭১-এর পঁচিশে মার্চ দিনটি ছিল বৃহস্পতিবার। মনে পড়ে, বাইশে মার্চ বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে প্রাক্তন বাঙালী সৈনিকদের সঙ্গে বৈঠকে কর্নেল ওসমানী সাহেব বঙ্গবন্ধুকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘ডু ইউ থিংক দ্যাট টুমরো উইল বি এ ক্রুসিয়াল ডে?’ বঙ্গবন্ধু জবাবে বলেন, ‘নো, আই থিংক, ইট উইল বি টুয়েন্টি ফিফথ্।’ তখন ওসমানী সাহেব পুনরায় তীক্ষè স্বরে তাঁর কাছে প্রশ্ন রাখেন, ‘কাল তো তেইশে মার্চ। পাকিস্তান দিবস। সে উপলক্ষে ওরা কী কিছু করতে চাইবে না?’ বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘ওরা যে কোন মুহূর্তে যে কোন কিছু করতে পারে। তার জন্য কোন দিবসের প্রয়োজন হয় না।’ কী নিখুঁত হিসাব বঙ্গবন্ধুর। হিসাব করেই তিনি বলেছিলেন পঁচিশে মার্চেই পাকিস্তানীরা ক্র্যাকডাউন করবে।
আমার স্মৃতির পাতায় সেই পঁচিশে মার্চের কথা মনে পড়ে। ’৭০-এর ২১ মার্চ ছাত্রলীগের সভাপতির পদ থেকে বিদায় নিয়ে আমি এবং রাজ্জাক ভাই ওই রাতেই হল ত্যাগ করে মাত্র ২০০ টাকা ভাড়ায় গ্রীন রোডে ‘চন্দ্রশীলা’ নামে একটি বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতে শুরু করি। অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে শিল্পপতি শ্রদ্ধেয় জহিরুল ইসলামের কাছ থেকে আমরা একটা গাড়ি চেয়ে নিয়েছিলাম। এই গাড়ির পেছনে আমাদের ব্যাগ থাকতো। কারণ, আমরা তৈরি থাকতাম, কোন সময় কি ঘটে। বঙ্গবন্ধু সবসময় বলেছেন, ‘প্রস্তুত থেকো।’ যুদ্ধ শুরু হলে কলকাতা গেলে আমরা কোথায় থাকব? ফেব্রুয়ারির ১৮ তারিখ বঙ্গবন্ধু আমাদের ঠিকানা মুখস্থ করিয়েছেন। সানি ভিলা, ২১ নম্বর রাজেন্দ্র রোড, নর্দার্ন পার্ক, ভবানীপুর, কলকাতা। পঁচিশে মার্চ বহু লোক বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে এসেছেন। অনেকেই অনুরোধ করে বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধু, ৩২ নম্বরের বাসভবন ত্যাগ করেন।’ বঙ্গবন্ধু বলেছেন, ‘ওরা যদি আমাকে না পায়, ঢাকা শহরকে ওরা তছনছ করবে। লাখ লাখ লোককে ওরা হত্যা করবে। আমি তো সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা। জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি। আমি এভাবে অন্য জায়গায় গিয়ে আশ্রয় নিতে পারি না। আমি আমার বাড়িতেই থাকব। কারণ, আমি আমার জীবন বাংলার মানুষের জন্য উৎসর্গ করেছি। জীবন এবং মৃত্যু একসঙ্গে। আমি আমার লক্ষ্যে পৌঁছার জন্য মৃত্যুকে বারবার আলিঙ্গন জানিয়েছি। এবারও আমি এখানেই থাকব। আমার দেশ যে স্বাধীন হবে এতে কোন সন্দেহ নাই।’ বঙ্গবন্ধু সকলের শুভ কামনা করে বিদায় জানিয়ে বলেছেন, ‘তোমরা যাও, আমার যা করার আমি করেছি।’ আমার মনে আছে ২৫ তারিখ তিনি বলেছিলেন, ‘সত্যিই আমার জীবন সার্থক। আমি যা চেয়েছিলাম আজ তাই হতে চলেছে। এই তো প্রথম বাঙালীরা বাংলার ভাগ্যনিয়ন্তা হতে পেরেছে। আজ আমার কথা মতো, আমার নির্দেশিত পথে বাংলাদেশ পরিচালিত হচ্ছে। আজ আমি যা বলি মানুষ তা পালন করে। আমার অসহযোগ আন্দোলন সার্থক ও সফল হয়েছে।’ আমরা যখন বঙ্গবন্ধুকে বলেছিলাম, ওরা তো আপনাকে গ্রেফতার করবে। আপনাকে হত্যাও করতে পারে। উত্তর দিয়েছিলেন, ‘আমাকে গ্রেফতার করে, হত্যা করে ওদের লাভ হবে না। ওরা আগেও আমাকে গ্রেফতার করেছিল। ওদের লাভ হয় নাই। এবারও আমাকে গ্রেফতার করুক, হত্যা করুক ওদের লাভ হবে না। আমার বাংলাদেশ স্বাধীন হবেই।
বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে যখন যাচ্ছি, তখন রাস্তায় রাস্তায় ব্যারিকেড। সেগুনবাগিচার একটি প্রেসে মণি ভাই লিফলেট ছাপতে দিয়েছিলেন। সেগুনবাগিচা গেলাম। জহিরুল ইসলাম সাহেবের গাড়িটা তার বাসায় পৌঁছে দিলাম। রাস্তায় গাড়ি চালানোর মতো অবস্থা নেই। আমরা হেঁটে মণি ভাইয়ের বাসায় গেলাম। এরপর রাত ১২টা ১ মিনিটে অপারেশন সার্চলাইটের মাধ্যমে শুরু হয় ইতিহাসের নৃশংসতম গণহত্যা। পঁচিশে মার্চ রাতে ঢাকা নগরীর নিরীহ-নিরস্ত্র মানুষের ওপর বর্বর পাকবাহিনী ট্যাংক ও ভারি অস্ত্রসহ ঝাঁপিয়ে পড়ে। কামানের গোলা, মর্টারের শেল আর মেশিনগানের ভয়াল গর্জনে রাত ১২টার পর পুরো নগরীই জাহান্নামে পরিণত হয়। চারদিকে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলে ওঠে। মুহুর্মুহু গোলাবর্ষণের মধ্য দিয়ে পাকিস্তান সামরিক বাহিনী শুরু করে ইতিহাসের পৈশাচিক হত্যাকান্ড। শুরু হয় বাঙালি নিধনে গণহত্যা। চারদিকে শুধু বিকট আওয়াজ। লক্ষাধিক লোককে এক রাতেই হত্যা করেছে পাকবাহিনী। রাতে ওখানেই ছিলাম আমরা। ২৬ মার্চ জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে ইয়াহিয়া খান বলেন, শেখ মুজিবকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ‘মুজিব ইজ এ ট্রেইটর। দিস টাইম হি উইল নট গো আনপানিসড।’ বক্তৃতায় তিনি আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে আরও আগেই আমার নিষিদ্ধ ঘোষণা করা উচিত ছিল। এদের নেতাদের আগেই আমার গ্রেফতার করা উচিত ছিল।’ পরদিন ২৭ মার্চে যখন ২ ঘণ্টার জন্য কারফিউ প্রত্যাহৃত হলো তখন আমরা ঢাকা থেকে কেরানীগঞ্জে আওয়ামী লীগ নেতা বোরহানউদ্দিন গগনের- যিনি পরে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন- বাড়িতে আশ্রয় নেই। কেরানীগঞ্জে ২ রাত থাকার পর ২৯ মার্চ আমি, মণি ভাই, জাতীয় নেতা ক্যাপ্টেন মনসুর আলী, কামারুজ্জামান সাহেব, এবং আমাদের বন্ধু ’৭০-এ নির্বাচিত প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য ডা. আবু হেনাসহ- যিনি অসহযোগ আন্দোলনের সময় যেপথে কলকাতা গিয়েছিলেন এবং এসেছিলেন, সেইপথে- আমরা প্রথমে দোহার-নবাবগঞ্জ, পরে মানিকগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, সারিয়াকান্দি, বগুড়া হয়ে বালুরঘাট দিয়ে ভারতে প্রবেশ করে ৪ এপ্রিল, সেই ‘সানি ভিলা’য় আশ্রয় গ্রহণ করি। মার্চের ২৫ থেকে ডিসেম্বরের ১৬ তারিখ পর্যন্ত কালপর্বে পাকিস্তান সেনাবাহিনী বাঙালি নিধনে ৯ মাসব্যাপী বর্বর গণহত্যা পরিচালনা করে। ‘অপরাশেন সার্চলাইট’-এর নীলনকশায় ঢাকার ৪টি স্থান পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মূল লক্ষ্য ছিল। এর মধ্যে বঙ্গবন্ধুর বাসভবন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, রাজারবাগ পুলিশ লাইন এবং তৎকালীন পিলখানা ইপিআর (বর্তমান বিজিবি)। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষকবৃন্দসহ ইকবাল হলের (বর্তমানে শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল) ছাত্রলীগ নেতা চিশতী হেলালুর রহমান ও বর্তমান ক্যাবিনেট সেক্রেটারির ভাই জাফর আহমদকে হত্যা করে। এছাড়াও জগন্নাথ হলের অনেক ছাত্রকে হত্যা করা হয়। ঢাকার ৪টি স্থান ছাড়াও রাজশাহী, যশোর, খুলনা, রংপুর, সৈয়দপুর, কুমিল্লা, সিলেট ও চট্টগ্রাম ছিল ‘অপারেশন সার্চলাইট’-এর আওতাভুক্ত এলাকা। ’৭১-এর গণহত্যা বিশ্বের ইতিহাসে বিরল। পৃথিবীতে অনেক দেশ স্বাধীন হয়েছে, কিন্তু এভাবে রক্ত দিয়ে একজন নেতার নেতৃত্বে সমস্ত বাঙালী জাতি এক কাতারে দাঁড়িয়ে সশস্ত্র জাতিতে রূপান্তরিত হয়ে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করে ৩০ লক্ষাধিক প্রাণ আর ৪ লক্ষাধিক মা-বোনের সুমহান আত্মত্যাগের বিনিময়ে ৯ মাসে মহান বিজয় অর্জন মানবজাতির ইতিহাসের নজিরবিহীন ঘটনা!
মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লক্ষাধিক মানুষ যে শহীদ হয়েছে তার অকাট্য প্রমাণ বহন করছে তৎকালে প্রকাশিত আন্তর্জাতিক পত্রিকাগুলো। অস্ট্রেলিয়ার পত্রিকা হেরাল্ড ট্রিবিউনের রিপোর্ট অনুসারে ২৫ মার্চ রাতে শুধু ঢাকা শহরেই ১ লাখ লোককে হত্যা করেছিল পাকবাহিনী। মার্কিন সিনেটর এ্যাডওয়ার্ড কেনেডি ভারতের শরণার্থী শিবিরগুলো পরিদর্শন করেন ’৭১ সালে। তিনি পাকিস্তানী সৈন্যদের বিরুদ্ধে সরাসরি গণহত্যা চালাবার অভিযোগ করেন। ‘গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস’-এ বাংলাদেশের হত্যাযজ্ঞকে বিশ শতকের পাঁচটি ভয়ঙ্কর গণহত্যার অন্যতম বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
স্মৃতির পাতায় ভেসে ওঠে দু’বছর আগে ১৫ ফেব্রুয়ারি ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির আলোচনা সভার কথা। সেই অনুষ্ঠানে আমি ছিলাম প্রধান অতিথি। সেখানে শাহরিয়ার কবির, মুনতাসির মামুন এই দিনটিকে কেন আমরা ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করি না সে প্রশ্ন তুলে দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন। সেদিন তারা এই দিনটির যে চিত্র তুলে ধরেছিলেন তাতে আমি বিব্রত ও লজ্জিত হয়েছি এই ভেবে যে- কেন আমরা এই দিনটিকে এতদিন ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করিনি। পাকিস্তানের জুনায়েদ আহমেদ নামে এক ব্যক্তি ‘ক্রিয়েশন অব বাংলাদেশ : মিথস্ এক্সপ্লোডেড’ শিরোনামে একটি বই লিখেছে। যে বইয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের দোষারোপ করা হয়েছে এই বলে যে, পঁচিশে মার্চের গণহত্যার জন্য মুক্তিযোদ্ধারা দায়ী। তারাই নিরীহ-নিরাপরাধ মানুষদের হত্যা করেছে। সভাস্থলে জুনায়েদ আহমেদ লিখিত বইটির পাতা উল্টে যখন দেখছিলাম তখন বিস্মিত হয়েছি এই ভেবে যে, কিভাবে মিথ্যাচার করা হয়েছে! ’৭১-এর গণহত্যাকে ভিন্ন খাতে চালিত করার জন্য দেশ-বিদেশের অনেকেই অপকর্ম করে থাকে। দুঃখজনক হলেও একথা সত্য যে, এজন্য আমাদের দেশের কতিপয় রাজনৈতিক নেতা দায়ী। বিশেষ করে বিএনপির নেতৃবৃন্দ।
বইটিতে ইতিহাসের এসব মিথ্যাচার দেখে আমার মন বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে এবং জাতীয় সংসদের অধিবেশনে পয়েন্ট অব অর্ডারে বিষয়টি উত্থাপন করি এবং উক্ত বই থেকে উদ্ধৃত করে বক্তৃতায় বলি পঁচিশে মার্চ ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় পালন করা হোক। সেদিন সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে উপস্থিত ছিলেন। তিনি প্রস্তাবটিকে সমর্থন করেন এবং একটি দিন নির্ধারণ করে আলোচনার প্রস্তাব করলে তা সর্বসম্মতিতে গৃহীত হয়। মাননীয় স্পীকার ১১ মার্চ শনিবার আলোচনার দিন নির্ধারণ করেন। নির্ধারিত দিনে পঁচিশে মার্চ ‘গণহত্যা দিবস’ প্রস্তাবের ওপর ৫৬ জন এমপি দীর্ঘক্ষণ আলোচনা করেন। সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তৃতার পূর্বে পিনপতন নীরবতার মধ্যে গণহত্যার ১৮ মিনিটের প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়। নৃশংসভাবে খুন হয়ে যাওয়া নারী-পুরুষ-শিশুর লাশ দেখে জাতীয় সংসদে এক শোকাবহ পরিবেশের সৃষ্টি হয়। মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে পাকিস্তানসহ বিভিন্ন গোষ্ঠীর অপপ্রচারের কঠোর সমালোচনা করে দীর্ঘ ২৫ মিনিট আবেগাপ্লুত বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যত অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্রই হোক না কেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আরও উন্নত হচ্ছে।’
আওয়ামী লীগ জেল-জুলুম-হুলিয়ার মুখেও অবিচল থেকে ইতিহাসের সত্যকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরে রেখেছে বলেই আজ প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশে গণহত্যায় লিপ্ত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারিক প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে এবং যথাযোগ্য মর্যাদায় শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে রাষ্ট্রীয়ভাবে পঁচিশে মার্চ ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালিত হচ্ছে।
লেখক : আওয়ামী লীগ নেতা, সংসদ সদস্য, সভাপতি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।
[email protected]
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: