ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

পাশে দাঁড়ানোর সময়

প্রকাশিত: ২০:৩৯, ৫ আগস্ট ২০২১

পাশে দাঁড়ানোর সময়

মানুষ মানুষের জন্য; জীবন জীবনের জন্য। প্রাচীনকালে মানুষ একাকী ও গুহায় বসবাস করতো। তখন মানুষের পারস্পরিক সহমর্মিতা, সহধর্মীয়তার অভাব ছিল। একসময় মানুষ বাঁচার তাগিদে, জীবনের প্রয়োজনে দলবদ্ধভাবে বসবাস শুরু করে। কালের বিবর্তনে তৈরি হয় সমাজ, গোষ্ঠী, গ্রাম এমনকি জন্ম হয় রাষ্ট্রের। যার প্রতিটির উদ্দেশ্য হলো মানব কল্যাণ। মানুষকে উপকার করা, সেবা করা; অসহায়, নিপীড়িত মানুষকে বাঁচতে সকল ধরনের সহযোগিতা করা। আর এটিই হলো মানুষের প্রতি মানুষের ধর্ম। ধর্ম, মানুষের সুখ-শান্তি ও পথ প্রদর্শন এবং আলোর সন্ধান দিবার জন্য। ধর্মের মৌলিক অংশ দুটি। প্রথমটি হলো, সৃষ্টিকর্তার প্রতি মানুষের কর্তব্য। দ্বিতীয়টি হলো, মানুষের প্রতি মানুষের কর্তব্য। মানুষ সমাজবদ্ধভাবে বসবাস করতে ভালবাসে, জীবন ধারণের জন্য একে অপরের প্রতি নির্ভর করে। একে অপরের সহায়তা করবে, করে থাকে এটাই স্বাভাবিক। এটিই হলো মানবধর্ম। করোনাভাইরাসের প্রভাবে খেটে খাওয়া মানুষরা বড় বিপাকে পড়েছে। তাদের ঝুঁকিটা শুধু স্বাস্থ্যগত নয়, বরং তার চেয়ে অনেক বেশি জীবন ধারণের। যদিও স্বাস্থ্য হলো সবার উর্ধে, কিন্তু স্বাস্থ্য ভাল রাখার জন্য প্রয়োজন জীবিকার। নিম্ন আয়ের মানুষ, দিনমজুর, বিশেষ করে শহরের নিত্য আয়ের মানুষগুলো নিরন্তন পরিশ্রম করছে লকডাউনে বিধিনিষেধ মেনে নিজের ও পরিবারের ক্ষুধা নিবারণে। জীবন নাকি জীবিকা সেই প্রশ্নই যখন বড় করে দেখা দিয়েছে তখনই সমাজের অগ্রদূত হয়ে নিম্ন আয়ের মানুষের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে একদল মানুষ। কোন প্রকার প্রত্যাশা না করেই খাদ্য সহায়তা প্রদান করছে নিপীড়িত মানুষের মধ্যে। এটিই হলো জীবনের জন্য পরম ধর্ম। চাকরি সকল সেক্টরে করে কিন্তু চিকিৎসক-নার্সরা তাদের জীবন বাজি রেখে আমাদের জীবন রক্ষা করছে। আমরা যখন পরিবার-পরিজন নিয়ে সুন্দর সোফায় বসে টিভিতে নিউজ দেখছি, করোনা আক্রান্ত রোগী থেকে যখন মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে, অবহেলা করছি, রাস্তায় ফেলে যাচ্ছি ঠিক তখনই জীবনের সর্বোচ্চ ঝুঁকি নিয়ে চিকিৎসকরা দিন-রাত নিরন্তন পরিশ্রম করে এগিয়ে যাচ্ছে ছন্দের বাংলাদেশ উপহার দিতে। তাইতো যুগে যুগে চিকিৎসা সেবা মানুষের পরম ধর্ম হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। খেটে খাওয়া মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সময় এখনই। রাজনৈতিক ব্যক্তি, বিভিন্ন সংগঠন এবং প্রতিষ্ঠান স্বেচ্ছায় সেবামূলক কাজ করছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ও শুকনো খাবার নিম্ন আয়ের মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিচ্ছে। যা অবশ্যই প্রশংসাযোগ্য কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী হয়তো তা যথেষ্ট নয়। আমার আশপাশের প্রতিবেশীর দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। কোন প্রতিবেশী যেন না খেয়ে রাত যাপন করে সে বিষয়টি আমার নিশ্চিত করতে হবে। সৃষ্টির প্রতি যে কর্তব্য রয়েছে তা অবশ্যই আদায় করতে হবে। মানুষের অশ্রæ দর্শনে যার হৃদয় বিগলিত হয় না, মনুষ্যত্ব তার মধ্যে কতখানি? দুঃখীর দুঃখমোচন, বিপন্নকে উদ্ধার, শোকাতুরের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করা সৃষ্টি সেবার অন্তর্ভুক্ত। তাই আসুন, বর্তমান পরিস্থিতিতে যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী মানব সেবায় রত হই। উত্তর কাটিয়া, সাতক্ষীরা থেকে
×