ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

সরকারের সঙ্গে আমাদেরও সচেতন হতে হবে

প্রকাশিত: ২০:৫৪, ১১ মে ২০২১

সরকারের সঙ্গে আমাদেরও সচেতন হতে হবে

অক্সফোর্ড-এ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নিয়ে রয়েছে দুশ্চিন্তা। কারণ ভারত রফতানি বন্ধ করে দিয়েছে। তাই সরকার অন্য কোন দেশ থেকে টিকা কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটা অবশ্যই ভাল উদ্যোগ। সরকার বিভিন্ন দেশের পাঁচটি টিকা নিয়ে আলোচনায় রয়েছে। আলোচনা চলমান। তাদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের দুটি করে এবং রাশিয়ার একটি টিকা রয়েছে। আবার দেশের কয়েকটি কোম্পানি টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। কিন্তু অনেকেরই ২য় ডোজ টিকা নেয়া সম্পন্ন হয়েছে আর কেউ কেউ প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছে। যেহেতু টিকার মজুদে সঙ্কট রয়েছে, তাই আমি মনে করি যারা প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছে তাদের ২য় ডোজ টিকা নিশ্চিত করা উচিত। অন্যথায় প্রথম ডোজ টিকা গ্রহণকারীরা সমস্যায় পড়ে যাবে। কারণ যারা প্রথম ডোজ নিয়েছে তাদের ২য় ডোজ নিশ্চিত করতে এই কাজটি সরকারের গুরুত্বসহকারে ভাবা উচিত বলে মনে করছি। প্রথম ও ২য় ডোজের সঙ্গে সমন্বয় করে নিবন্ধন এর অনুমতি দেয়া উচিত। অন্য দেশের নতুন টিকা নিতে গেলে তাদের সমস্যা দেখা দিতে পারে। যদিও এই বিষয়ে চিকিৎসকগণ ভাল বলতে পারবেন। কিন্তু আমার বিশ্বাস কিছু ঝামেলা হবে। তাই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে খুব দ্রুত এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। সঙ্গে সঙ্গে অন্য দেশের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়া উচিত যাতে অন্য দেশের টিকা আমরা সহজে পেতে পারি। গণমাধ্যমে জানতে পারি সরকার যুক্তরাষ্ট্রের জনসন এ্যান্ড জনসন ও মডার্না, চীনের সিনোফার্ম ও ক্যানসিনো এবং রাশিয়ার স্পুটনিক-ভি- এই পাঁচটি টিকা নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে বাংলাদেশী একটি ওষুধ কোম্পানি জনসন এ্যান্ড জনসন ও মডার্নার টিকা বাংলাদেশে আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানা যায়। এজন্য কোম্পানিটির পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। দেশে ওই দুটি প্রতিষ্ঠানের টিকা সরবরাহকারী মাধ্যম হিসেবে কাজ করবে রেনাটা। বাংলাদেশ বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজ এ্যাসোসিয়েশন সিনোফার্ম ও ক্যানসিনো টিকা সরবরাহের প্রস্তাব করেছে, যা ভাল উদ্যোগ। আর স্পুটনিক-ভি টিকার বিষয়ে সরকারী পর্যায়ে আলোচনা চলমান। এই পাঁচটি টিকার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সরকার একটি কমিটি করেছে, যারা এই বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত সরকারকে জানিয়ে দিবে। পাঁচটি টিকার মধ্যে কোন্টি অধিকতর কার্যকর এবং দ্রুততম সময়ে পাওয়া যাবে তা পর্যালোচনা করতে কমিটিকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে করোনাভাইরাসের টিকার আন্তর্জাতিক জোট কোভ্যাক্স থেকে চিঠি দিয়ে বাংলাদেশের কত টিকা লাগবে তা জানতে চাওয়া হয়েছে। পাঁচটি টিকার মধ্যে জনসন এ্যান্ড জনসন ও মডার্না বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ঔষধ প্রশাসনের অনুমোদিত। দুটি টিকাই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রয়োগ করা হচ্ছে। তবে জনসন এ্যান্ড জনসনের টিকার জন্য যুক্তরাষ্ট্র সরকার আগস্ট মাস পর্যন্ত চুক্তি করেছে। এ সময়ের মধ্যে কোম্পানিটি যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া অন্য কোন দেশকে টিকা দিতে পারবে না। তাই এটি দ্রুততম সময়ের মধ্যে পাওয়া অসম্ভব। অন্যদিকে, মডার্নার টিকা সংরক্ষণের সুবিধা বাংলাদেশে নেই। মাইনাস ৭০ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এই টিকা সংরক্ষণ করতে হয়। একই সঙ্গে এই টিকার দামও বেশি। অন্যদিকে চীনের টিকা সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন পেলেও রাশিয়ার টিকা অনুমোদন পায়নি। তবে অনেক দেশে এই টিকার প্রয়োগ হচ্ছে। রাশিয়ার টিকার কার্যকারিতা ভাল বলেও প্রমাণিত হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে বাংলাদেশ সরকারকে আরও টিকা পেতে ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু করতে হবে, যাতে আরও কিছু টিকা পাওয়া যায়। তবে রাশিয়ার টিকা নিয়ে কাজ করতে হবে, যাতে এটা আমরা দ্রুত সময়ে পেতে পারি। রাশিয়ার টিকার একটি ডোজের দাম পড়বে ১২ ডলারের মতো। ওই টিকার দুটি করে ডোজ নিতে হবে। তাহলে জনপ্রতি টিকা দিতে সরকারের ব্যয় হবে ২৪ ডলারের মতো। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট উৎপাদিত অক্সফোর্ড-এ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দুই ডোজের দাম পড়ছে ১০ ডলার করে। তাই এই টিকা পেলে আমরা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হতাম। সুতরাং কার্যকারিতা ও প্রাপ্যতার বিবেচনায় রাশিয়ার টিকাকে এখন বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট উৎপাদিত অক্সফোর্ড-এ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার ওপর নির্ভরশীল ছিল বাংলাদেশ। ওই টিকার তিন কোটি ডোজ কিনতে সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে চুক্তি করে সরকার। কিন্তু চুক্তি অনুযায়ী টিকা সরবরাহ করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। এর মধ্যেই ভারতে করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় সে দেশের সরকার টিকা রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এরপর গত মার্চ মাস থেকে টিকা রফতানি বন্ধ হয়ে যায়। এতে বিপাকে পড়ে বাংলাদেশ। দেশে এখন প্রথম ডোজ নেয়া সবার জন্য দ্বিতীয় ডোজের মজুদ নেই। তাই আমি মনে করি যারা প্রথম ডোজ টিকা গ্রহণ করেছে তাদের ২য় ডোজ টিকা দেয়ার বিষয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া একান্ত প্রয়োজন। সরকার একটি উৎস থেকে টিকা গ্রহণ করে টিকাদান কর্মসূচী নিয়ে কিছুটা সমস্যায় পড়েছে। কারণ চুক্তি অনুযায়ী আমরা টিকা পাইনি। এ কারণে বিকল্প উৎস থেকে টিকা ক্রয়ের বিষয়ে সরকার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আশা করি খুব দ্রুত এই বিষয়ে ইতিবাচক ফল পাব বলে মনে করছি। করোনা টিকা ক্রয় নিয়ে যেসব পরিকল্পনা সরকার নিয়েছে তাকে সাধুবাদ জানাচ্ছি। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সম্প্রতি দেশে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। ঈদের সময় মানুষ বেশি ঘর থেকে বের হচ্ছে, কেনাকেটা করছে, বাড়ি যাওয়ার চেষ্টা করছে, যা করোনার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। তাই সরকারকে এই বিষয়ে আরও গভীরভাবে চিন্তা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। অন্যথায় করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। যারা করোনার টিকা নিয়েছেন তারা যেন মাস্ক ও অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেন এবং অনদের মাস্ক পরতে উৎসাহিত করেন। করোনা থেকে সুরক্ষিত থাকার জন্য সরকারের সঙ্গে আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে। করোনাভাইরাসের বিস্তার প্রতিরোধে চলমান লকডাউনে ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র, দুস্থ, অসচ্ছল ও ভাসমান মানুষকে সহায়তা দিতে সরকার ইতোমধ্যে পদক্ষেপ নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে ঐ সব মানুষকে আর্থিক সহায়তা প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়াও চলমান লকডাউনে যারা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন তাদের সহায়তায় বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। নগদ অর্থ, খাবার, টিসিবির মাধ্যমে সাশ্রয়ে নিত্যপণ্য বিক্রি, কৃষকদের সহায়তার মতো বেশ কিছু উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, যা খুবই প্রশংসনীয়। ত্রাণ বণ্টনে তদারকি বাড়াতে হবে, যাতে সরকারের টাকার নয়ছয় যেন না হয়। প্রকৃতপক্ষে যারা এই আর্থিক সেবা পাওয়ার অধিকার রাখে তারাই যেন পায়। অতীতে যারা আর্থিকভাবে সচ্ছল তারাও সরকারের ত্রাণ সুবিধা পেয়েছে। তাই এই অর্থ বরাদ্দ কঠোরভাবে মনিটরিং করে সরকারের লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে হবে। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঈদ উপহার হিসেবে ৩৬ লাখ ২৫ হাজার পরিবারকে আর্থিক সহায়তার ব্যবস্থা করেছেন। সর্বোপরি করোনার বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে সচেতনতার দুর্গ গড়ে তুলতে হবে। সবার সম্মিলিত প্রয়াসে করোনা মহামারীকে আমরা প্রতিরোধ করতে পারব বলে বিশ্বাস করি। লেখক : শিক্ষক, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়
×