ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

লকডাউনের কারণে দিনাজপুরে টমেটোর বাজারে বিপর্যয়

প্রকাশিত: ১৩:৫০, ২১ এপ্রিল ২০২১

লকডাউনের কারণে দিনাজপুরে টমেটোর বাজারে বিপর্যয়

স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর ॥ দিনাজপুর জেলায় চলতি মৌসুমে টমেটোর বাম্পার ফলন হলেও, করোনা ভাইরাসের কারণে ক্রেতা না পেয়ে হতাশ চাষিরা। লকডাউনসহ বিভিন্ন কারণে পরিবহন ভাড়া বেশি ও বাইরের ব্যবসায়ীদের সংখ্যা কমে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। প্রতিদিনই পাইকারী বাজারে দাম কমছে টমেটোর। দুদিন আগেও শহরতলীর গাবুরা হাটে যে টমেটো বিক্রি হয়েছে ৪০০-৬০০ টাকা মণ, সেই টমেটো মঙ্গলবার বিক্রি হয়েছে ১৫০ টাকা মণ। দিনাজপুর জেলার সদর, ফুলবাড়ী, চিরিরবন্দর, বিরল, কাহারোল ও বোচাগঞ্জসহ বিভিন্ন উপজেলায় বিপুল পরিমান টমেটোর চাষ হয়। জানুয়ারির শেষে টমেটো আবাদের পর, ক্ষেত থেকে তোলা হয় মার্চ মাসের শেষের দিকে। তাই বাজারে টমেটোর এখন ভরা মৌসুম। প্রতি মৌসুমে দিনাজপুর জেলার কাউগাঁ, গাবুড়া ও পাঁচবাড়ী বাজার থেকে প্রায় ৩০ কোটি টাকার টমেটো বেচাকেনা হয়। এসব টমেটো যায় ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়। গাবুড়ার হাটে টমেটোর প্রচুর আমদানি হলেও, করোনা ও লকডাউনের কারনে সেভাবে বিক্রি হচ্ছে না। একই কারনে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন অঞ্চলে আগের মতো টমেটোর গাড়ি যাচ্ছে না বলে জানান পাইকারী ব্যবসায়ীরা। টমেটোর বাজারে দামে ধস নামায় বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীসহ কৃষকরা। ঢাকার টমেটো ব্যবসায়ী অনিক ঘোষ জানান, গাবুড়া বাজার থেকে আগে প্রতিদিন ১৫০ থেকে ১৭০টি টমেটোর ট্রাক দেশের বিভিন্ন স্থানে যেতো। করোনার কারনে বর্তমানে ট্রাকের সংখ্যা নেমে এসেছে ৫০ থেকে ৬০টিতে। প্রতি ট্রাকে ১০ থেকে ১৫ টন টমেটো নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি জানান, লকডাউনের কারনে বেড়েছে পরিবহন ভাড়া। তবে সরকারীভাবে টমেটো সংরক্ষণ এবং বিপণনের সুষ্ঠু ব্যবস্থা থাকলে, সারা বছরই দিনাজপুরের টমেটো সারাদেশে ক্রেতাদের সরবরাহ করা যেত। দিনাজপুর সদর উপজেলার শেখপুরা ইউনিয়নের গাবুরা গ্রামের কৃষক রওশন আলী চলতি বছর ভাল লাভের আশায় এক বিঘা জমিতে টমেটোর আবাদ করেন। কিন্তু বর্তমানে টমেটোর দাম না থাকায় চরম বিপাকে পড়েছেন তিনি। খরচও হয়েছে অনেক। এক বিঘা জমিতে টমেটো আবাদে তার খরচ হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার টাকা। একই অবস্থা জেলার অন্যান্য টমেটো চাষিদেরও। টমেটো চাষিদের দাবি, অন্যান্য ফসলের মতো টমেটোর ক্রয়মূল্য নির্ধারণ করা হোক। দিনাজপুর সদরের শেখপুরা ইউনিয়নের গাবুড়া টমেটো বাজার ইজারাদার মমিনুল ইসলাম বলেন, করোনার এই চরম দুর্যোগপূন পরিস্থিতিতেও প্রতিদিন এখান থেকে ৯০০ মেট্রিক টন টমেটো দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়। কৃষকে বাচাঁতে এই এলাকায় টমেটো সংরক্ষণে কোল্ড স্টোরেজ নির্মান করতে সরকারসহ বিনিয়োগকারীদেও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি। এতে কৃষকরা যেমন লাভবান হবেন, তেমনি বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানও ঘটবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক তৌহিদুল ইকবাল জানান, চলতি মৌসুমে জেলায় ১ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে টমেটোর চাষ হয়েছে।
×