ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

শ্যামল রঙের কবিতায় ছবি

প্রকাশিত: ১২:২১, ২ আগস্ট ২০১৯

শ্যামল রঙের কবিতায় ছবি

সাহিত্যে প্রাণের অভিব্যক্তি কুসুমের কলির মতো সুগন্ধি ছড়িয়ে তা অন্তর্জগত থেকে বহির্জগতে ব্যক্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু প্রাণ যদি জড়ের মতো কেবল আসন পেতে বসে থাকে, সে প্রাণে আর যাই জাগুক সাহিত্য হয় না। ফুল ফুটে- সে না ফুটে থাকতে পারে না বলে। গোপনে আপন সৌন্দর্য ও সৌরভকে লুকিয়ে রেখে পরে প্রকৃতিকে মাতিয়ে তোলে, মানবের অতৃপ্ত আত্মাকে তৃপ্ত করে, দৃষ্টিকে জাগিয়ে তোলে, ক্রোধকে শান্ত করে, ঘ্রাণেন্দ্রীয়কে নাড়া দেয়। অসংখ্য প্রাণের প্রেম তার প্রাণে এসে লাগে। আপন বিকাশে ব্যাকুল হয়ে ওঠে। এই প্রাণের এক প্রকাশ। অন্যদিকে জড়ের চঞ্চলতা নেই, নেই প্রকাশের প্রত্যাশা। কঠিন ঝড়ের মুখেও- ও মুখ থুবড়ে পড়ে থাকতে চায়। এই চাওয়া তার নিরন্তর, সৃষ্টির আদিকাল হতে। ভেতরের কঠিন বন্ধনে আবদ্ধ, জড়িয়ে পেঁচিয়ে থাকাই তার স্বভাব। শুধু তাপে তেতে ওঠে, মাঝে মধ্যে পুড়িয়ে মারে। এই তার প্রকাশ। জরাগ্রস্ত জড়ধর্মী চিত্তের মানুষের সাহিত্যে হাত না দেয়াই ভাল, তাতে ভাষা ও সাহিত্য দুই-ই রক্ষা পায়। দড়ি ছেঁড়া ষাঁড়ের মতো যেখানে সেখানে গুতিয়ে একদিকে যেমন নিজের ছাল বাক্লা রক্তাক্ত করে, অন্যদিকে পাঠকের অহেতুক কষ্ট বাড়ে। সে সাহিত্যে বিমুখ হয়ে এর নিন্দা করতে থাকে। কিন্তু এত নিন্দার পাত্র নয়, এ হচ্ছে চিত্তহারী। এ সকল যুগের সকল মানুষের চিত্তকে আপন স্বভাব গুণে মাতিয়ে রেখেছে। বাংলা সাহিত্যের আদি নিদর্শন চর্যাপদ আর কালিদাসের কাল থেকে অদ্যাবধি। ভাষার বিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সাহিত্যেরও বিবর্তন ঘটেছে ব্যাপকভাবে। যেখানে বাধা পেয়েছে সেখানেই নিজের পথ তৈরি করে নিয়েছে। বসন্তে পালক পাল্টানো পাখির মতো সাহিত্যকে পাল্টিয়ে দিলেন রবি ঠাকুর এসে। সাহিত্য যেন মাঠের মেঠোপথ থেকে চৌরাস্তার মোড়ে পাকায় এসে ঠেকল। সেখান থেকেই শুরু হলো সাহিত্যের নতুন যাত্রা। অনেকের মধ্যে এ যাত্রা পথে সামিল হলেন ওমর আলী। অনেক পথ হেঁটেছেন। চলার পথে যা দেখেছেন, যা তাঁর চিত্তকে উত্তেজিত করেছে তা শব্দ বিন্যাসে মালার মতো গেঁথে ফেলেছেন। তাঁর শব্দ চয়নে যেমন স্বতন্ত্রতা লক্ষ্য করা যায় তেমনি বাক্য বিন্যাসেও রয়েছে ভিন্নতা। যে কারণে অন্যদের থেকে অনায়াসেই তাঁকে পৃথক করা যায়। কবিতার শরীর গঠনে তিনি অবলম্বন করেছেন ভিন্ন পথ। যা অন্যদের থেকে সহজেই তাকে পৃথক করা যায়। তিনি প্রয়োগ করেছেন মানুষের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত স্বল্প ওজনের চঞ্চল শব্দ। যা পাঠে পাঠকের চিত্ত সূক্ষè অনুভূতির জোয়ারে ভেসে যায়- আমি কিন্তু যামুগা। আমারে যদি বেশি ঠাট্টা কর। হুঁ, আমারে চেতাইলে তোমার লগে আমি থাকমু না। আমারে যতই কও, তোতা পাখি, চান, মনি, সোনা। আমারে খারাপ কথা কও ক্যান, চুল টেনে ধরো ... (আমি কিন্তু যামুগা) বাংলা সাহিত্যে একমাত্র জীবনানন্দ দাশকেই প্রকৃতির কবি বলা হয়। এক অর্থে- প্রকৃতির কবি সবাই। কারণ, সাধারণ মানুষ যেখানে প্রকৃতির সৌন্দর্যে অভিভূত হন- সেখানে শিল্পীমন কি করে এই নিসর্গের সৌন্দর্যকে উপেক্ষা করেন ! তবুও এই জাত-পাতের বিচার করা হয় তার রচনা শৈলীর বিষয় বস্তুকে লক্ষ্য রেখে। জীবনানন্দ দাশ প্রকৃতির ভেতর দিয়ে নর-নারীর হৃদয়ের উচ্ছ্বাসকে যত রকমভাবে ব্যক্ত করতে চেয়েছেন তা বাংলা সাহিত্যে বিরল। প্রকৃতি ছিল তার কাছে পরাধীন, তাই স্বাধীনভাবে প্রকৃতিকে তুলে এনেছেন তার বাকশৈলীতে, ছন্দের কারুকার্যে, উপমায়, রূপকে, অলঙ্কারে। তাঁর কবিতা মনকে যেমন আচ্ছন্ন করে, তেমনি আবার বর্জ্ররে মতো চম্কানি দেয়। জীবনানন্দের এই ধারাকে অব্যাহত রাখতে চেয়েছেন ওমর আলী। পদ্মাপাড়ের এই কবি পদ্মার পলির মতোই তাঁর নিসর্গ প্রীতি। তিনি যখন হেঁটে যান, প্রত্যক্ষ করেন- পথের দু’পাশে আম কাঁঠাল গাছের নিচে ঘাসে উজ্জ্বল রৌদ্রের দিনে এমন সুন্দর দুপুরের ছায়া যদি চিরকাল দেখতাম! দুপুরের আকাশে কয়েকটি কালো রেখার মতো চিল ওড়ে। নূপুরের... (চলার পথে) জীবনানন্দ দাশ কবিকে ‘কবিদ’ হতে বলেছেন। ‘কবিদ’ শব্দের অর্থ জ্ঞানী। অর্থাৎ কবিকে জ্ঞানী হতে হয়। তাঁকে পাড়ি দিতে হয় হাজার বছরের পথ। সে পথ নিশ্চয় অনায়াস লব্ধ নয়। একালের পাকা সড়কের মতো নয় যে, যানে চেপে বসলেই হলো। আবার হাওয়াই জাহাজের মতোও নয়, তাকে বাতাসে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে। তাঁকে মগজের চাষ করতে হয়, চিন্তার ঐশ্বর্য এবং বৈচিত্র্যের মধ্যে সন্তরণ করতে হয়। তাঁরা করেনও তাই। একজন সাধারণ মানুষের বাক্য বিন্যাসের সঙ্গে কবিকৃত বাক্য গঠনের ভিন্নতা রয়েছে। কবি উপমা, অলঙ্কারে বাক্যকে ঝল্মলে করে তোলেন, অন্যদিকে ভাবের দোলায় দুলিয়ে দেন। সেলুলয়েডের পর্দার মতো ভেসে ওঠে তার রূপ। কবি আবার শব্দ চাষী। তাঁকে উপযুক্ত শব্দের চাষ করতে হয়, শব্দ ফলাতে হয়। সাধারণের ব্যবহৃত অতি সাধারণ শব্দও অসাধারণ অর্থ ঘাড়ে করে ভোরের আলোর মতো উদয় হয়। তিনি সাধারণের মধ্যে বসবাস করেও চিন্তা, চেতনা ও অভিজ্ঞতায় অসাধারণ হয়ে ওঠেন। বুদ্ধদেব বসু জীবনানন্দের কবিতা সম্পর্কে বলেছেন, ‘তাঁর কবিতা বর্ণনাবহুল, বর্ণনা চিত্রবহুল, চিত্র বর্ণবহুল।’ একালে কবিদের মধ্যে ওমর আলীর কবিতাও অনেকটা সে রকম- আমি ওর বুক দেখি কী যে দুঃসাহসে উড়ে চলে নদীর ওপর দিয়ে দূরের পাহাড়ে, প্রবল ঝড়ের বিপরীতে ডানা নাড়ে... (বৃষ্টির বিপদে এক চড়ুই) একজন চিত্রশিল্পী রং ও রেখার মাধ্যমে তাঁর চৈতন্যে সাড়া জাগানো জগত সংসার ও তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার রসায়নে জারিত হয়ে যে ভাবোচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন তা দর্শনার্থীদেরও ভাবায়, তাঁর শৈল্পিক সৌন্দর্যে অভিভূত হন। পটের প্রলেপের মতো তার হৃদয় পটেও প্রলেপ পড়ে। প্রত্যক্ষে প্রদর্শিত বস্তু সমূহই ধরা পড়ে রঙের আলো-ছায়ায়। কিন্তু কল্পনাপ্রসূত যা ধরা পড়ে তা বানের জলের মতো ক্ষণস্থায়ী। ঠিক কবিতাও তাই। কবিতা শিল্প। এ শিল্পের নান্দনিকতা ও অন্তর্গত নিগূঢ়তম রহস্যের সূক্ষè সুতা বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত। এর চিত্রকল্প পাঠকের মানসপটে অনায়াসে ভেসে ওঠে, শব্দের কারুকার্য আমাদের কর্ণমূলকে আঘাত করে অনুরণন সৃষ্টি করে। কবি ওমর আলীও সে কাজটি সার্থকভাবে করে দেখিয়েছেন। তার কয়েকটি নমুনা- এদেশে শ্যামল রং রমণী, শুনাম শুনেছি।, লতার তার, ভালবাসার উপহার ইত্যাদি। ওমর আলী তাঁর কবিতায় যে ছবি এঁকে দেখিয়েছেন তা বাস্তবতার ছবি, এতটুকু কৃত্রিমতা নেই, বাহুল্যতা নেই- নীল গ্রাম। বহুদুর দিগন্তে কালো রেখার মতো। শস্যক্ষেত্র, বাড়িঘর, নদী সবই আছে সেই গ্রামে সেই গ্রামের সোনালি রৌদ্র, পরিষ্কার দিন। বৃষ্টি নামে কখনো কখনো । আছে উচ্চারিত পাখি শত: শত: কাক, চিল, চড়ুই, পায়রা, টিয়ে, ফিঙে ও শালিক... (নীল গ্রাম) যে বই কবি ওমর আলীকে খ্যাতি এনে দিয়েছে তা হলো ‘এদেশে শ্যামল রঙ রমণীর সুনাম শুনেছি।’ এদেশের গ্রামীণ মানুষের জীবন এবং প্রকৃতির নিখুঁত ছবি রয়েছে এতে। মানব জীবন বিভিন্ন সম্পর্কের সঙ্গে জড়িত। সে সম্পর্ক মানুষের সঙ্গে, সমাজের সঙ্গে, অর্থনীতি ও রাজনীতির সঙ্গে, সংস্কৃতির সঙ্গে এবং প্রকৃতির রূপ বৈচিত্র্যের সঙ্গে। কোন সম্পর্কই সে উপেক্ষা করে চলতে পারে না। তাই তার দৃষ্টিতে প্রসারিত করতে হয় নানা অনুষঙ্গে। মানুষের সব সম্পর্ক ছিন্ন হলেও প্রকৃতির সম্পর্ক কিছুতেই অস্বীকার করতে পারে না। আমাদের অস্তিত্বে তা আত্মার মতো মিশে রয়েছে স্পর্শে- অনুভবে, ঘ্রাণে- স্বাদে, শ্রবণে, দৃষ্টিতে । শ্যাম সুন্দর এই প্রকৃতি আমাদের পথের পাশে ক্ষণিক দাঁড় করিয়ে রাখে। শয্যার মতোন বিস্তৃর্ণ সবুজ ঘাসের বুকে একদ- শুয়ে থাকতে ইচ্ছে হয়। শিহরণে পুলকিত হয় মন। বুনোফুলের রঙে রঙিন হতে সাধ জাগে। আমাদের ক্লান্ত জীবনে খানিক স্বস্তি দেয়। মাঠের বাতাসে ঘাসের দুলুনিতে আমাদের হৃদয় দুলে ওঠে। সাধ হয়-শুয়ে থাকি সারাদিন সারারাত। কবি ওমর আলী সে কথাই আমাদের হয়ে বলেছেন- গ্রামে ওইখানে চলো শুয়ে থাকি সারাদিন, সারারাত যেখানে সুন্দর নদী। শেয়াল কাঁটার ঘনবন। বকুলের পাতা ঝরা মাঠ। কিংবা হাওয়ার আঘাত তৃণশীর্ষে... (গ্রামে) প্রায় ঊনষাট বছর (১৯৬০) পূর্বেকার এই কাব্যগ্রন্থটি অথর্ব হয়ে যায়নি, আজও নির্মল হাওয়ার মতো পাঠকের হৃদয় দোলা দেয়। মহাকালের তুলনায় ঊনষাট বছর অতি তুচ্ছ, কিন্তু মানব জীবনে বেশ দীর্ঘ সময়। বলতে গেলে, এক জীবনের পূর্ণ সময়। সময় আমাদের জীবনকে নষ্ট করলেও ওমর আলীর প্রথম কাব্যগ্রন্থটিকে নষ্ট করতে পারেনি। আজও বাংলা ভাষাভাষী মানুষের কাছে তা কিংবদন্তিতুল্য। তিনি যেমন প্রাণের আগুনে পুড়েছেন, তেমনি নতুন মুহূর্তের জন্মে ফের জেগে উঠেছেন। এই আত্মিক জন্মই তাঁকে স্বপ্ন দেখিয়েছে নতুন জীবনের, নতুন পথের, নতুন করে চলার। তিনি নিরন্তর প্রকৃতির ভেতর পায়ে হেঁটে চলেছেন, হেঁটে চলেছেন নতুন গন্তব্যের দিকে। একটি ভোরের আলোর রেখার সঙ্গে আঁধারকে স্পর্শ করে কোন এক মায়াবী স্বপ্নালোকে। তাঁর একটি দীর্ঘশ^াস, তাঁর বুকের বাতাসকে ভারি করে তোলে। এই শ^াস কোন কালে আর ফিরে পাবে না বলে। তাই বুকের ভেতর প্রদীপ জ্বেলে বসে থাকেন- তাহলে, কি হবে, যদি আমারও সময় শেষ হয়, কি হবে, হে প্রভু, পাব সে মুহূর্তে তোমার আশ্রয়? (সময়) তিনি একা একা নিঃশব্দে অনেক পথ হেঁটেছেন। হাঁটার পথে অতীতকে ফিরে পেয়েছেন নতুন করে, আবার প্রবেশ করেছেন নতুন অতীতের ভেতর। সময়কে মানুষ কখনও তার জীবন থেকে আলাদা করতে পারে না। তেমনি পারে না প্রেমকেও বিচ্ছিন্ন করতে। প্রেম নিত্যসঙ্গী, মানব জীবনের মৌল উপাদান। এ উপাদানের বিস্তৃতি প্রকৃতির সর্বত্র- ফুলে-ফুলে, বৃক্ষলতায়, পাহাড়ী ঝর্ণা ধারায়, বৃষ্টির ফোটায়, পাখির কলোতানে, ভোরের আলোর রেখায়। এ প্রেম মানব জীবনের অন্তর্গত রক্তের ভেতর মিশে আছে। কাম থেকে প্রেমের উৎপত্তি। তাই দৈহিক প্রেমকে অস্বীকার করারও উপায় নেই। এ যে স্বর্গীয় সুখ, প্রেম কাতুরে মানব মন তাই অসাধ্যকে সাধন করে চলেছে অনায়াশে। কিন্তু প্রেম যখন জীবনকে ক্ষয়ের মধ্যে ঠেলে দেয়, তখন ইন্দ্রীয়বোধ হারিয়ে প্রতি মুহূর্তে জীবনকে নতুন করে আবিষ্কার করে। এই বিরাট পৃথিবীর মধ্যে তার দীর্ঘশ^াস সমুদ্রের বিশাল ঢেউয়ের মতো তোলপাড় সৃষ্টি করে। আগ্নেয়গীরীর মতো জেগে উঠে সবকিছু পোড়াতে চায়। ওমর আলীও অদ্ভুদ সুন্দরীকে দহন করতে চান এভাবে- একদিন একটি লোক এসে বলল, ‘ পারো ?’ বললাম, ‘ কি?’ ‘একটি নারীর ছবি এঁকে দিতে, ’ সে বলল আরো, সে আকৃতি অদ্ভুদ সুন্দরী, দৃপ্ত, নিষ্ঠুর ভঙ্গিতে পেতে চাই নিখুঁত ছবিতে।’ ‘কেন?’ আমি বললাম শুনে। সে বলল, ‘ আমি সেটা পোড়াবো আগুনে।’ (একদিন একটি লোক) ওমর আলীর কবিতায় নারী চরিত্র চিত্রিত হয়েছে বিভিন্ন আঙ্গিকে। একদিকে তিনি শ্যামল রঙ রমণীর গুণে মুগ্ধ, অন্যদিকে পরীর সান্নিধ্যে শরমে আরক্ত হয়ে ওঠেন মধুর প্রীতির শিহরণে। আর তখন তিনি ভুলে যান অনাকাঙ্খিত দুঃখ, জীবনের সুতীব্র যন্ত্রণা, নিরাশার আশঙ্খাকে ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দেন। বিভিন্ন নারীকে তিনি কবিতার শিরোনাম করেছেন, তাদের অস্তিত্ব নিজের জীবন থেকে ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দিতে পারেননি। তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থে যেসব নারীর সন্ধান মেলে তারা হলেন- মিমোসা, হাসিনা, ছবি। এছাড়াও শিরোনামহীন নারীর সাক্ষাত পাই তাঁর এ গ্রন্থে- তোমাকে, এদেশে শ্যামল রঙ রমণীর সুনাম শুনেছি, পরীও সান্নিধ্যে আসে, সেই নারী তুমি, আমি কিন্তু যামুগা, জীবনে তোমাকে, একদিন তুমি, চিত্রমুখ, প্রেয়সী, তুমি সুন্দরী, তোমাকে দিলাম, বাঞ্জিতা, প্রেয়সীর কথা, কোন মানবীকে, সুসজ্জিতা, যদি তুমি মরে যাও। এসব নারী চরিত্রকে তিনি উপমা, অলঙ্কারে যেমন ভূষিত করেছে তেমনি বিশ্লেষণে বর্ণিল করে তুলেছেন- দেহ যেন ডালিম ফুলের, আর আঙ্গুল কাঁঠালি চাঁপার, অগ্রভাগ পা ছোঁয় চুলের, সারা দেহ জোছনার আঁধার। দুটো চোখ অমাবশ্যা কালো দু’ঠোঁট আরক্ত জবা লাল... (সুসজ্জিতা) ওমর আলী প্রকৃতই প্রেমের কবি। সে প্রেম স্বদেশ, প্রকৃতি, নারী। তাঁর চলার পথের দুঃখ সুখের সঙ্গী তারা। মূলত তাঁর কবিতার প্রধান আশ্রয় নারী। তাদের বিচিত্রভাবে দেখেছেন, এঁকেছেন, জয়গান গেয়েছেন, কখনো বা ক্রোধে পুড়িয়ে মেরেছেন। প্রাবন্ধিক ও গবেষক ড. আশরাফ পিন্টু ওমর আলী সম্পর্কে যথার্থই বলেছেন, ‘নারী প্রেমের সঙ্গে তাঁর স্বভাবের সাড়ার মিলনেই জাত হয়েছে তাঁর কবিত্ব ও কবি আত্মা।’
×