ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

ক্যাম্পাসে চড়ুইভাতির আনন্দ ॥ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

প্রকাশিত: ০৭:৫৬, ৬ জানুয়ারি ২০১৯

ক্যাম্পাসে চড়ুইভাতির আনন্দ ॥ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

এই তো সেদিনই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলাম আর দেখতে দেখতে তিনটি বছর কেটে গেল। ভাবতেই যেন দম বন্ধ হয়ে আসছে। তৃতীয় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা শেষ করে ভাইভাও হয়ে গেল। আর মাত্র দুইটি বছর পরেই মধুর ক্যাম্পাস জীবন ফুরিয়ে যাবে; এই ভাবতেই এক শূন্যতা ভেসে উঠছে মনের কোণে। সবুজ ক্যাম্পাসের আলো-বাতাস, মানুষগুলো ভবনের প্রতিটি ইট-পাথর কিংবা প্রতিটি ঘাস-লতাপাতার সঙ্গেই যেন গড়ে উঠেছে নিবিড় সখ্য। তিনটি বছরে সবকিছু আত্মার সঙ্গে মিশে গেছে। তাই তো জীবনের রোমাঞ্চকর এই ক্ষণিক সময়টুকু দীর্ঘায়িত করতে নানা আয়োজন। টুকরো টুকরো স্মৃতির সঙ্গে ভিন্নমাত্রা যোগ করতে নিপার মাথায় এলো ‘চড়ুইভাতি’র কথা। ক্যাম্পাস লাইফে চড়ুইভাতি! শুনতেই যেন শিশুকালে ফিরে গেলাম! যেই কথা সেই কাজ। হুটহাট একটা মেসেঞ্জার গ্রুপ খুলে ফেলল লিসা। একে একে সবাইকে এ্যাড করে শুরু হলো আলাপন। হাতে সময় মাত্র এক দিন। এই অল্প সময়ে কি করা যায়? তখনই নিপা বলে উঠল ‘চড়ুইভাতি’। একদিনের মধ্যে যেহেতু বাইরে যাওয়ার আয়োজন সম্ভব নয় তাই সবাই মতও দিয়ে দিল। একদিনের মধ্যেই চাঁদা তোলা শেষ। পরদিন সকালে ক্যাম্পাস লেকে আমাদের ‘চড়ুইভাতি’। একটা সাউন্ড বক্স আর একটা বড় ত্রিপাল নিয়ে লেকের পাড়ে সবাই হাজির। খোলা আকাশের নিচে ঘাসের বিছানায় বিছানো হলো ত্রিপাল। সাদামাটা আয়োজন ঝলমলে হয়ে উঠল সারা দিনের নাচ, গান, খাওয়া-দাওয়া আর আড্ডায়। দুপুরের খাবার খেয়ে শুরু হলো সাংস্কৃতিক পর্ব। নাহিদ আর আরমানের হিন্দী গানে বাংলা ডান্স, নিপার হৃদয়কাড়া সুরে রবীন্দ্রসঙ্গীত, হুমায়ুনের দম ফাটানো জোকস, হ্যাপির আর নীলিমার ছন্দময় নাচ, কল্পর রোমান্টিক আবৃত্তি কিংবা টাটগ্যাইয়া ভাষায় সাইফের উপস্থাপনা। মিনি, নিপা, সাদিয়া, পায়রা, রুমপা, তনুদের বেসম্ভব রকমের সাজগোজ, জনির কুইজ পর্ব, মিজান ভাইয়ের নজরদারি, লাজুক আইনুন, শেফা, শাকিলা আর রহিমার মনোযোগী শ্রোতাসুলভ উপস্থিতি, কবি মুজাহিদ কিংবা গিটারিস্ট চঞ্চুর আড়াল থেকে টিপ্পনি কাটা সবকিছু মিলে যেন ষোলোকলায় ভরে উঠল দিনটি। আর ফাতেমা লিসার চিরচেনা চাঞ্চল্যে নাঈম, এনামুল, সজিব, শহিদুলদের জোরপূর্বক নাচিয়ে নেয়ার চেষ্টা টুকরো টুকরো ছবিগুলো স্মৃতির ক্যানভাসটাকে আরও রঙিন করে তুলল। সারা দিনের হৈ-হুল্লোড়ের মধ্যে বিকেলের সূর্যটা ঘুরতে ঘুরতে পশ্চিম আকাশে হাঁটতে শুরু করল। আমাদেরও ফেরার ঘণ্টা বেজে উঠল। শুরু হলো ফটোশুট। ফুলের পাপড়ির মতো গুচ্ছ হয়ে কেউ দাঁড়িয়ে আবার কেউ কেউ বসে পড়ল। সবার উপস্থিতিতে গোলাপের মতো এই ছবিটিই যেন টিকে রবে জীবনের এ্যালবামে ভালবাসার স্মৃতি হয়ে। ক্লিক.. ক্লিক.. শব্দে উঠে গেল ছবি। সূর্যটাও বিদায় জানিয়ে হারিয়ে গেল দিগন্তে। আবার কোন একদিন এভাবে আমাদের আলো দেবে বলে।
×