ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

স্বাধীনতার স্বপ্নের পাখি সুজন হাজারী

প্রকাশিত: ০৮:৩৪, ৪ জানুয়ারি ২০১৯

 স্বাধীনতার স্বপ্নের পাখি  সুজন হাজারী

স্বাধীনতা অর্জনের ক্ষেত্রে মূল শক্তি বলতে ছিল চেতনা। বাঙালী জাতির মনোবল আর সৎ সাহস। অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার চিন্তাশক্তিই চেতনাকে জাগ্রত করে। চেতনা সমৃদ্ধ মানুষ দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে প্রাণে শক্তি সঞ্চয় করে। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর আমরা দীর্ঘদিন সংগ্রাম করেছি উপনিবেশিক পরাশক্তি আমেরিকার পদলেহি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। এ দেশের ৩০ লাখ মানুষ বুকের তাজা রক্ত ও দু’লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জন করেছি ১৯৭১ সালের এই মহার্ঘ্য দিনের স্বাধীনতা। স্বাধীনতা অর্জনে আমরা সফল হলেও আজও অর্থনৈতিক মুক্তি লাভ করতে পারিনি। স্বাধীনতার অব্যাহিত পরেই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে পট পরিবর্তন ঘটে। স্বাধীনতা ছিনতাই হয়ে যায় মূলত স্বাধীনতাবিরোধীদের হাতে। আন্তর্জাতিক চক্রান্তে দেশীয় স্বাধীনতাবিরোধীদের ষড়যন্ত্রের খেসারত দিতে হয়েছে ৩০ বছর। আমাদের স্বাধীনতা হয়ে পড়ে প্রশ্নবিদ্ধ। ভুয়া স্বাধীনতার ঘোষক আবিষ্কার, (জিয়ার আমলের প্রধানমন্ত্রী স্বাধীনতাবিরোধী শাহ আজিজের অবদান) ইতিহাস বিকৃতি, জাতীয়তার বদল (বাঙালী থেকে বাংলাদেশী) ইনডেমনিটি আইনে জাতির পিতাসহ জাতীয় চার নেতাকে নিষিদ্ধ, বিচারের নামে অজস্র মুক্তিযোদ্ধা নিধন, সংবিধানের উপর বলাৎকারসহ হেন কোন কাজ নেই যা করেনি সামরিক জান্তারা। পরবর্তীতে উচ্চ আদালতের রায়ে সামরিক জান্তার (জিয়া-এরশাদ) শাসনামলকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়। দীর্ঘ সময় সামরিক জান্তার যাতাকলে পিষ্ট ছিল দেশবাসী। তাৎপর্য বিবর্জিত বহুকাল লালিত মানুষের মুক্তি ও সংগ্রামে ভাস্বর স্বাধীনতার স্বপ্ন লুণ্ঠিত হয়ে বিস্বাদে পরিণত হয়। বাস্তবায়িত হয়নি স্বাধীনতার স্বপ্ন ও সাধ। একটি প্রজন্মের পর আর একটি প্রজন্ম গড়ে উঠেছে কুনীতি ও দুর্নীতি ভরা ভয়াবহ সামাজিক অসুস্থ পরিবেশে। হতাশা নৈরাশ্য অবক্ষয় ছাত্র ও যুবসমাজকে টেনে নিয়ে গেছে সর্বনাশা অন্ধকারের দিকে। আমাদের জাতীয় জীবনে অপমৃত্যুর ঘণ্টাধ্বনি বেজেছে সে সময়ে। অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন ব্যতীত পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতার স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে না। তাই রাষ্ট্রকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে বিতাড়িত করতে হবে অশিক্ষ কুশিক্ষা বেকারত্ব বুভুক্ষা দারিদ্র্য । বিশ্ব এখন পুঁজিবাদী এক ছাতার ছায়াতলে। পুঁজিবাদী আগ্রাসনের থাবায় বিপর্যস্ত বিশ্ববাসী মুখ থুবড়ে পড়েছে। হানাহানি খুনোখুনী যুদ্ধ বিগ্রহের মতো ধ্বংসাত্মক সর্বনাশের মুখোমুখি। সারা পৃথিবীতে বিরাজ করছে চরম অস্থিরতা। তথাপি আজ সারা বিশ্বে শুরু হয়েছে উন্নয়ন ও উৎকর্ষ সাধনের প্রতিযোগিতা। নিজকে ও দেশকে এগিয়ে নিতে হলে নতুন স্বপ্ন নিয়ে সমস্ত প্রতিক‚লতাকে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ ছাড়া গত্যন্তর নেই। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে বর্তমান বিশ্বের বিস্ময়। উদাহরণ দিয়ে নিবন্ধকে দীর্ঘায়িত করে পাঠকের সময়ের অপচয় করতে চাইনে। ষড়যন্ত্রকারীরা চুপচাপ বসে নেই। আমাদের চোখ কান খোলা রেখে সম্মুখে উজ্জ্বল সম্ভাবনার স্বপ্নের ফিনিক্স পাখিটাকে ধরতেই হবে।
×