ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

জাতীয় পতাকা ফেরি করাটাও মর্যাদার

প্রকাশিত: ০৪:৩৭, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৮

জাতীয় পতাকা ফেরি  করাটাও মর্যাদার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আবদুল মোতালেব রাজধানীতে ঘুরে ঘুরে পতাকা বিক্রি করেন। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত পতাকা বিক্রি করে যা আয় হয় তা দিয়েই চলে তার পাঁচ সদস্যের সংসার। বছরের অন্যান্য সময় হাঁড়ি-পাতিল, প্লাস্টিকের সামগ্রী ফেরি করে বিক্রি করলেও মার্চ ও ডিসেম্বরে তিনি বিক্রি করেন জাতীয় পতাকা। আলাপকালে আবদুল মোতালেব বলেন, ‘স্বাধীনতার মাস মার্চ ও বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে জাতীয় পতাকার চাহিদা থাকে প্রচুর। তাই বিক্রিও হয় প্রচুর। আয় বেশি হওয়ায় এই দুই মাস পতাকা বিক্রি করি। এসময় জাতীয় পতাকা ফেরি করাটাও মর্যাদার।’ শুধু মোতালেব নয়, রাজধানীতে পতাকা বিক্রি করেন এমন আরও কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সারা বছর পতাকা বিক্রি না করলেও বছরে দুই মাস তারা পতাকা বিক্রি করেন। বিশেষ করে ২৬ মার্চ ও ১৬ ডিসেম্বরকে কেন্দ্র করেই পতাকার চাহিদা বাড়ে। ছোট বড় বিভিন্ন সাইজের পতাকা বিক্রি হয় এ সময়। সাইজ ও মানভেদে বিভিন্ন দামে বিক্রি হয় পতাকা। অনেকেই আছেন যারা এই সময় দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে রাজধানীতে ছুটে আসেন শুধু পতাকা বিক্রির জন্য। আবদুল মোতালেব বলেন, ছোট বড় বিভিন্ন সাইজের জাতীয় পতাকা বিক্রি করেন তিনি। ৫০ টাকা থেকে শুরু করে হাজার-বারোশ’ টাকা পর্যন্ত দামের পতাকা বিক্রি করেন তিনি। কেউ কেউ অর্ডার দেন বিশেষ সাইজের পতাকার। তাই ব্যবসা ভালো হয়। মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বরে এম এ রশিদ নামের আরেক পতাকা বিক্রেতার সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। রাজবাড়ীর বাসিন্দা আবদুর রশিদ বলেন, ‘সারা বছর পতাকা বেচি না। তবে ফেব্রুয়ারি, মার্চ ও ডিসেম্বর এই তিন মাস পতাকা বিক্রি করি। পতাকা বিক্রির করে লাভ হয় দুই প্রকার। প্রথমত ভালো আয় হয়। দ্বিতীয়ত দেশপ্রেম।’ তিনি বলেন, ‘সব ব্যবসায়ী কিন্তু পতাকা বেঁচে না। আমরা গরিব মানুষ, শুধু দেশপ্রেম দিয়ে তো আর পেট চলবে না। তাই মুনাফাটাও দেখতে হচ্ছে।’ সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, বাঁশের সঙ্গে বিভিন্ন সাইজের পতাকা লাগিয়ে হকাররা ঘুরে বেড়ান। কাঁধে থাকে একটি ব্যাগ। এর মধ্যেই থাকে বিভিন্ন সাইজ ও মানের পতাকা। সাইজ ও মানভেদে এসব পতাকার দামেও রয়েছে ভিন্নতা। স্বাধীনতার মাস মার্চ ও বিজয়ের মাস ডিসেম্বর শুরু হলেই এরা রাজধানীতে চলে আসেন পতাকা বিক্রির জন্য। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এরা কেউই বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার সঠিক সাইজ ও রঙ সম্পর্কে জানেন না। তবে যারা পতাকাটি তৈরি করেন তারা রং ও সাইজ জানেন। রাজধানীর ইসলামপুর ও কেরানীগঞ্জে বছরের এই সময় চলে জাতীয় পতাকা তৈরির কাজ। এখানকার কয়েকশ’ দোকান রয়েছে যারা এই সময় শুধু তৈরি পতাকাই বিক্রি করে। এ বিষয়ে ইসলামপুরের পতাকা ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন জানিয়েছেন, খুব বেশি না, ছোটবড় প্রতিটি পতাকা তৈরিতে যে খরচ হয়, তার থেকে ৫-১০ টাকা মুনাফা যুক্ত করেই বিক্রি করি। এসময় দিনে ৪০০-৫০০ পতাকা বিক্রি হয়। কাজেই অনায়াসে বলা যায় মুনাফা ভাল। তাই এই সময় অন্য কিছু না বানিয়ে পতাকা বানিয়ে বিক্রি করি। পতাকা বিক্রেতা নাটোরের রানা মোহম্মদ জানিয়েছেন, বছরের অন্য সময় হাঁড়ি-পাতিলের ব্যবসা করলেও এ মাসে জাতীয় পতাকা বিক্রি করতে তার ভাল লাগে। স্ত্রী সন্তানসহ ৫ জনের পরিবারে মাকে নিয়ে তার সংসার। স্বাধীনতার মাস ও বিজয়ের মাসে জাতীয় পতাকা এবং মাথার ব্যান্ড, ব্যাজ নিয়ে চলে আসি রাজধানীতে। রানা বলেন, ‘ছোট ছোট শিশু থেকে বড় মানুষরা যখন আমাকে পতাকা বিক্রেতা বলে ডাক দিয়ে কাছে ডেকে একটি পতাকা কেনেন তখন আমার খুব ভাল লাগে। নাটোর থেকে এখানে আসার মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে জাতীয় পতাকা প্রতিটি মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া। এতে পতাকা বিক্রিতে আমার লাভই হয়। কখনও লোকসান হয়নি। মুনাফা হয়তো অন্য কিছু বিক্রি করলেও পেতাম। তবে পতাকা বিক্রি করার মর্যাদাটাই অন্যরকম।’ এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘যারা রাস্তায় ঘুরে ঘুরে পতাকা বিক্রি করেন তাদের মর্যাদাটাই আসলে ব্যতিক্রম। আমার মনে হয়, তারা মুনাফার চেয়ে দেশপ্রেমের কারণেই এই সময় পতাকা বিক্রির কাজটি বেছে নেয়। যেহেতু তাদের বিক্রি করা পণ্যটি বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা, সেহেতু এই পতাকার সঠিক সাইজ ও সঠিক রঙের ব্যবহার হচ্ছে কিনা তা গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে। এ দু’টি বিষয় ঠিক থাকলে আসলেই এসব পতাকা বিক্রেতারা পৃথক সম্মান পাওয়ার যোগ্য।
×