ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

স্বর্ণ নীতিমালা

প্রকাশিত: ০৭:০৫, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৮

 স্বর্ণ নীতিমালা

শেখ হাসিনার সরকার যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছে স্বর্ণ তথা সোনার ক্ষেত্রে। প্রণয়ন করা হয়েছে স্বর্ণ নীতিমালা-২০১৮। ইতোমধ্যে এ খাতে সংস্কার শুরু হয়েছে। যুগের পর যুগ কোন নীতিমালা ছাড়াই স্বর্ণ ব্যবসা যেমন চলে আসছিল, তেমনি বৈধ আমদানির সুযোগও ছিল সীমিত। ফলে স্বর্ণ আসত চোরাই পথে। স্বর্ণ চোরাচালানের বিশাল সিন্ডিকেট গড়ে ওঠে এদেশে। সহায়তায় ছিল বিদেশী চোরাচালানকারীরা। দেশে স্বর্ণের বাজারে দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে অব্যবস্থাপনা। দেশে স্বর্ণের রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। যেহেতু চাহিদা রয়েছে তাই আমদানিরও যে প্রয়োজন, এমনকি রফতানিরও রয়েছে সম্ভাবনা, তাই তাকে কাজে লাগানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইচ্ছাতেই স্বর্ণ নীতিমালার খসড়া প্রণীত হয়। দেশে বাণিজ্যিকভাবে স্বর্ণ আমদানির পথ সুগম করতে এবং চোরাচালান সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করার লক্ষ্যে দুই মাস আগে গত অক্টোবরে মন্ত্রিপরিষদ এই নীতিমালার খসড়া অনুমোদন করে। নীতিমালার উদ্দেশ্য হিসেবে বলা হয়েছে, স্বর্ণ আমদানি সহজ করা, স্বর্ণশিল্পে জবাবদিহি নিশ্চিত করা, স্বর্ণালঙ্কার রফতানিতে উৎসাহ যোগানো ও স্বর্ণ খাতে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ বজায় রাখতে কার্যকর নিয়ন্ত্রণ, সমন্বয়, পরীবিক্ষণ ও তদারকি ব্যবস্থা গড়ে তোলাই এর লক্ষ্য। কিন্তু এই কাজ সুচারুরূপে সম্পন্ন করা সহজসাধ্য নয়। কিন্তু এই পথ ও পন্থার কোন বিকল্প নেই। এই খাতের স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহির কোন স্থান ছিল না এতকাল। নীতিমালার বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহি আসবে। স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের মধ্যে কর ফাঁকি দেয়ার যে প্রবণতা ছিল তা বিলোপ হবে। কারণ এটা এখন নজরদারির মধ্যে থাকবে। সর্বোপরি সরকারের একটা নিয়ন্ত্রণ আসবে এ খাতের ওপর। এতদিন ধরে এই খাতে যারা কর্মী তথা স্বর্ণকার অর্থাৎ গহনা তৈরির যে কারিগর রয়েছে, তাদের বিষয়টি ছিল সম্পূর্ণ উপেক্ষিত। নীতিমালায় তাদের সম্পর্কিত বিষয়ও তুলে আনা হয়েছে। এর মাধ্যমে তাদের জীবন মানের উন্নয়নে এক নয়া দিগন্ত উন্মোচিত হবে। নীতিমালা অনুযায়ী ‘দ্য ফরেন এক্সচেঞ্জ রেগুলেশন এ্যাক্ট, ১৯৪৭’-এর অধীনে বাংলাদেশ ব্যাংক স্বর্ণ আমদানির ডিলার অনুমোদন দেবে। অনুমোদিত ডিলার সরাসরি প্রস্তুতকারক বা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে স্বর্ণের বার আমদানি করবে এবং তা অলঙ্কার প্রস্তুতকারকদের কাছে বিক্রি করতে পারবে। দেশে স্বর্ণের মান যাচাই করার উপযুক্ত কোন প্রতিষ্ঠান নেই। এ ধরনের একটি প্রতিষ্ঠান গঠনের নির্দেশনা রয়েছে নীতিমালায়। এছাড়া ব্যাংকের মাধ্যমে ঋণপত্র খুলে স্বর্ণ আমদানির ক্ষেত্রে এর দামের ন্যূনতম পাঁচ শতাংশ অর্থ জামানত রাখার বিধান রয়েছে। স্বর্ণের মান যাচাইয়ে হলমার্ক ব্যবস্থার প্রবর্তন করা হচ্ছে। স্বর্ণ, স্বর্ণাঙ্কার ক্রয়-বিক্রিতে হলমার্ক বাধ্যতামূলক থাকছে। খাদের পরিমাণও সুনির্দিষ্ট করা হচ্ছে। ভোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য ক্যাশমেমোর সঙ্গে স্বর্ণালঙ্কারের হলমার্ক স্টিকার প্রদান বাধ্যতামূলক থাকছে। নীতিমালায় ব্যাগেজ রুল সম্পর্কে যে ব্যাখ্যা প্রদান করা হয়েছে, তাতে বিমানবন্দরে লাগেজে করে একশ’ গ্রাম পর্যন্ত স্বর্ণ বিনা শুল্কে আনা যাবে। এছাড়া শুল্ক পরিশোধ করে ২৩৪ গ্রাম পর্যন্ত স্বর্ণ আনা যাবে। নীতিমালা অনুমোদনের পর বড় একটি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, যার মাধ্যমে খাতের প্রথম সংস্কার শুরু হয়েছে। বাণিজ্য সচিবকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের যে কমিটি করা হয়েছে, তারা আমাদনি ও রফতানিতে কি পরিমাণ মূল্য সংযোজন কর আরোপ করা যায়। তা নির্ধারণ করবে। ব্যবসায়ীদের কাছে বর্তমানে যে পরিমাণ স্বর্ণ রয়েছে এর ওপর একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ভ্যাট বা কর নির্ধারণ করবে। তা প্রদান করে ব্যবসায়ীরা তাদের স্বর্ণ বৈধ করে নিতে যাতে পারে, সেজন্য কমিটি কাজ করছে। নীতিমালা বাস্তবায়নের শুরুতেই এ খাতের ব্যবসায়ীদের সংরক্ষিত স্বর্ণ নীতিগতভাবে বৈধতা পাবে নির্দিষ্ট ‘লেভি’ পরিশোধের মাধ্যমে। এতদিন ধরে যা ছিল অবৈধ। শুধু স্বর্ণের বার নয়, স্বর্ণের অলঙ্কারও আমদানি করা যাবে। এতে দেশীয় বাজারে স্বর্ণের দাম নির্ধারণে এক ধরনের প্রতিযোগিতাও তৈরি হবে। তাতে ক্রেতাদের লাভবান হওয়ার সুযোগ বেশি থাকবে। শুধু নীতিমালা নয়, প্রয়োজন পূর্ণাঙ্গ আইন। বর্তমান সরকারের পুনরায় ক্ষমতায় আসার ওপর নির্ভর করছে আইন প্রণয়ন।
×