ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জিকো-নৈপুণ্যে প্রতিশোধ নিয়ে ফাইনালে বসুন্ধরা

প্রকাশিত: ০৬:৩৫, ২১ ডিসেম্বর ২০১৮

জিকো-নৈপুণ্যে প্রতিশোধ নিয়ে ফাইনালে বসুন্ধরা

রুমেল খান ॥ এটাই হতে পারতো স্বাধীনতা কাপ ফুটবলের ফাইনাল ম্যাচ। কারণ দুটি দলই এ আসরের সেরা ও শক্তিশালী। ২৭ দিন আগে এই বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামেই দলদুটি ফেডারেশন কাপের ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল। সেবার ৩-১ গোলে জিতেছিল ‘দ্য স্কাই ব্লু ব্রিগেড’ খ্যাত ঢাকা আবাহনী লিমিটেড। তবে বৃহস্পতিবার তাদের টাইব্রেকারে (সাডেন ডেথে) ৭-৬ গোলে হারিয়ে (নির্ধারিত ও অতিরিক্ত সময়ের খেলা শেষ হয় ১-১ গোলে) কড়ায়-গ-ায় প্রতিশোধ নিয়ে ফাইনালে নাম লেখালো নবাগত দল বসুন্ধরা কিংস। দলের এই জয়ে সবচেয়ে বড় অবদান তাদের গোলরক্ষক কক্সবাজারের সন্তান আনিসুর রহমান জিকো। তিনি টাইব্রেকারে আবাহনীর একটি শট ঠেকিয়ে দেয়ার পাশাপাশি নিজেও একটি শট নেন এবং দলকে জিতিয়ে ফাইনালে নিয়ে যান। এর কৃতিত্বস্বরূপ ম্যাচসেরার পুরস্কারটিও জোটে তারই ভাগ্যে। এর আগে কোয়ার্টার ফাইনালেও এই টাইব্রেকারেই রহমতগঞ্জের তিনটি শট আটকে দিয়ে জয়ের নায়কে পরিণত হয়েছিলেন তিনি (ওই ম্যাচেও ম্যাচসেরা হন জিকো)। ‘দ্য কিংস’ খ্যাত বসুন্ধরা ফাইনালে মুখোমুখি হবে ২০১৩ আসরের চ্যাম্পিয়ন শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্রের। তবে ফাইনালের পূর্ব নির্ধারিত তারিখ পিছিয়ে গেছে। ২৪ ডিসেম্বরের পরিবর্তে এখন ফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে ২৬ ডিসেম্বর বিকেল সাড়ে ৪টায়। বাফুফে জানিয়েছে ২৪ তারিখে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে বঙ্গবন্ধু অনুর্ধ-১৭ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল খেলা। আর এ কারণেই দু’দিন পেছানো হয়েছে স্বাধীনতা কাপের ফাইনাল ম্যাচটি। বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় সেমির ম্যাচে নির্ধারিত সময়ে ফলাফল ১-১ গোলে অমীমাংসিত থাকায় ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত ৩০ মিনিটে। সেখানেও একই ফল থাকায় টাইব্রেকারে নির্ধারিত হয় ভাগ্য। সেখানেও প্রথম পাঁচটি শটে ফল অমীমাংসিত থাকে (৪-৪)। এরপর খেলা গড়ায় টাইব্রেকারের দ্বিতীয় পর্ব ‘সাডেন ডেথ’-এ। সেখানে এবার বাজিমাত করে বসুন্ধরাই (৩-২)। সার্বিকভাবে তারা ম্যাচে জেতে ৭-৬ (১-১) গোলে। টাইব্রেকারে আবাহনীর হয়ে গোল করেন সাইঘানী, ওয়ালী ফয়সাল, রুবেল মিয়া ও সানডে চিজোবা। গোল মিস করেন বেলফোর্ট। বসুন্ধরার হয়ে গোল করেন বখতিয়ার, মার্কোস, হেমন্ত ভিনেসেন্ট বিশ্বাস, নাসির উদ্দিন। ব্যর্থ হন রাশিয়া বিশ্বকাপে খেলা কোস্টারিকান ফরোয়ার্ড ড্যানিয়েল কলিন্ড্রেস। সাডেন ডেথে গোল করেন আবাহনীর রায়হান হাসান এবং টুটুল হোসেন বাদশা। মিস করেন ইমতিয়াজ সুলতান জিতু। বসুন্ধরার হয়ে গোল করেন কাঞ্চন, মাসুক মিয়া জনি এবং জিকো। ম্যাচে বসুন্ধরার জয়ের নায়ক গোলরক্ষক জিকো। সাডেন ডেথে তিনি আবাহনীর জিতুর শট ঠেকান। এরপর নিজেই টাইব্রেকারের শট নেন। তার নেয়া শট আবাহনী গোলরক্ষক শহীদুল আলম সোহেল ফেরাতে পারেননি। গোল ও জয় নিশ্চিত হতেই জিকো ডান হাত ওপরের দিকে তুলে আবেগ প্রকাশ করেন। তাকে কোলে নিয়ে উল্লাসে মাতোয়ারা হন বসুন্ধরার খেলোয়াড়-কর্মকর্তারা। খেলার ১২০ মিনিটের মতো টাইব্রেকারও হয়েছে রোমাঞ্চকর। প্রথম পাঁচ শটে দু’দলই চার গোল করে। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় পেনাল্টি শট মিস করেন রাশিয়া বিশ্বকাপে খেলা কোস্টারিকান ফরোয়ার্ড কলিনড্রেস। তার নেয়া পঞ্চম শটটি ঠেকিয়ে আবাহনীকে ম্যাচে ফেরান গোলরক্ষক সোহেল। সাডেন ডেথে পার্থক্য গড়ে দেন জিকো। সাডেন ডেথে ব্যতিক্রমধর্মী গোল করেন বসুন্ধরার বর্ষীয়ান-বদলি ফুটবলার রোকনুজ্জামান কাঞ্চন। বল বসিয়ে সোহেলের দিকে না তাকিয়ে উল্টো দিকে ফিরে দাঁড়ান। সেই অবস্থায় কয়েক গজ পিছিয়ে এসে দৌড় দিয়ে বাঁ পায়ের শটে গোলে করেন। আবাহনী গোলরক্ষক বুঝতেই পারেননি। টাইব্রেকারের স্নায়ুর চাপ সামলাতে না পেরে ডাগআউট ছেড়ে মাঠের এক কোণায় এ্যাথেটেলিক ট্র্যাকের ওপরে গিয়ে অস্থির হয়ে পায়চারী করতে থাকেন বসুন্ধরার স্প্যানিশ কোচ অস্কার ব্রুজেন। জিকোর শট জালে জড়াতেই আনন্দে ভেসে যান তিনি। গ্যালারিতে আসা সমর্থকদের সঙ্গে উদযাপনে যোগ দেন তিনিও। সেরা দুু’দলের লড়াইয়ের পরতে পরতে ছিল উত্তেজনা। আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে জমে ওঠে ম্যাচটি। ম্যাচে প্রথমে লিড নেয় বসুন্ধরা। ৬৯ মিনিটে কলিনড্রেসের কাটব্যাকে বল পেয়ে যান মাহবুবুর রহমান সুফিল। বক্সের ভেতরে আলতো টোকায় মতিন মিয়াকে বল দেন তিনি। শুয়ে পড়ে বাঁকানো শটে গোল করেন মতিন (১-০)। ৮২ মিনিটে গোল পরিশোধ করে আকাশী-নীল জার্সিধারীরা। প্রায় মাঝমাঠ থেকে মাসিহর ক্রসে লাফিয়ে ওঠে হেড করে বল জালে জড়ান বেলফোর্ট (১-১)। বাকি সময়ে আর কোন দলই গোল পায়নি। শেষ পর্যন্ত টাইব্রেকারেই নিষ্পত্তি হয় ম্যাচের। আর তাতে প্রতিশোধ নিয়ে প্রথমবারের মতো ফাইনালে নাম লেখায় কিংসরা। বিদায় নেয় একবারের (১৯৯০) শিরোপাধারী আবাহনী।
×