ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

এ্যাসিডিটি থাকবে নিয়ন্ত্রণে

প্রকাশিত: ০৭:০১, ১৯ নভেম্বর ২০১৮

 এ্যাসিডিটি থাকবে নিয়ন্ত্রণে

ভোজন রসিক মানুষ মানেই কবজি ডুবিয়ে খেতে ভালবাসেন। কিন্তু টানে ভাজাপোড়া আর তেল মসলার খাবার খেয়ে পেট বাবাজীর কী দশা হচ্ছে সেদিকে খেয়াল থাকছে না কারোরই, যার ফলশ্রুতিতে বাড়ছে এ্যাসিডিটির প্রবণতা। বর্তমানে এ্যাসিডিটির (Acidity) সমস্যা একটি সাধারণ সমস্যা। যাকে আমরা পেটে গ্যাসের সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করি। তাই ভোজনবিলাসীদের সুবিধার্থে আজ আমি এ্যাসিডিটি থেকে বাঁচার কয়েকটি উপায় বলে দেব যাতে করে যে কোন উৎসব বা প্রতিদিনের জীবনেও মজার খাবারগুলো শুধু চোখে নয়, চেখে দেখার সুযোগ মেলে নিশ্চিন্তে। এ্যাসিডিটির জন্য দামী-দামী ওষুধ কেনার কোন দরকার নেই, দরকার কিছু সাধারণ উপাদান যা আমাদের রান্না ঘরেই পাওয়া যায়। চলুন এবার দেখে নেই উপাদানগুলো কী কী! তুলসী : হাজারো গুণে গুণান্বিত তুলসী পাতা। এ্যাসিডিটি দূর করতে ঘরোয়া পদ্ধতিগুলোর মধ্যে এটি খুবই অন্যতম ভূমিকা পালন করে। গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ৫-৬টি তুলসী পাতা চিবিয়ে খেলে দেখবেন এ্যাসিডিটি কমে গেছে। এমনকি তুলসী পাতা প্রতিদিন ব্লেন্ড করে পানি দিয়ে খেলে তার এ্যাসিডিটি হওয়ার প্রবণতা একেবারেই কমে যাবে। জিরা : গবেষকরা বলেন, হজমে গ গোল হলে জিরা পানি বা জিরা চা খেয়ে দেখতে পারেন, উপকার পাবেন। জিরাতে যে তেল জাতীয় পদার্থ থাকে তা বদহজম ও পেট ফাপা ভাব দূর করতে সাহায্য করে। দারুচিনি : এ্যাসিডিটি নিয়ন্ত্রণে দারুচিনি খুবই ভাল, এটি প্রাকৃতিক এ্যান্টাসিড (Natural Antacid) যা পেটের গ্যাস দূর করে। এক কাপ পানিতে আধা চা চামচ দারুচিনি গুঁড়া দিয়ে ফুটিয়ে নিয়ে দিনে ২/৩ বার এটা খেতে পারেন। চাইলে সুপ/সালাদে দিয়েও খেতে পারেন। এছাড়া অন্ত্রের কোন ইনফেকশন থেকে থাকলে তা ঠিক করতে এবং কিছুটা আরাম দিতে এর জুরি নেই। গুড় : কখনো ভেবে দেখেছেন কি যে মুরুব্বিরা অনেক সময় খাবারের শেষে কেন একটু গুড় মুখে দেন? কারণ এতে আছে অনেক উচ্চ মাত্রার ম্যাগনেসিয়াম (Magnesium) যা পাকস্থলীর অতিরিক্ত অম্লভাব কমিয়ে পরিপাকে সাহায্য করে ও পেটকে ঠান্ডা রাখে। আদা : আদা এমন একটি ভেষজ উপাদান যা আমাদের অনেক কাজে লাগে। প্রতিবার খাদ্য গ্রহণের আধা ঘণ্টা আগে ছোট এক টুকরো আদা খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা চলে যাবে। কিন্তু সবসময় হয়ত হাতের কাছে আদা নাও পেতে পারেন, সেক্ষেত্রে আগে থেকে আদা পাতলা করে কেটে রোদে শুকিয়ে নিতে পারেন। তারপর তা ছোট্ট বোতলে করে পকেটে বা ভ্যানিটি ব্যাগে করে সহজেই ক্যারি করতে পারবেন। ঠান্ডা দুধ : দুধও এ্যাসিডিটি কমাতে সাহায্য করে। কারণ দুধে আছে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম (Calcium), যা পাকস্থলীর এ্যাসিড কমাতে সাহায্য করে। রাতে একগ্লাস দুধ ফ্রিজে রেখে দিয়ে পরদিন সকালে খালি পেটে খেলে সারাদিন এ্যাসিডিটি থেকে মুক্ত থাকা যায়। তবে কারও পেট দুধের প্রতি অতিসংবেদনশীল হলে তাদের দুধ না খাওয়াই ভাল। লং বা লবঙ্গ : হজমজনিত সমস্যা দূর করতে চিনা আয়ুর্বেদ-এ লবঙ্গ বহু বছর ধরেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে। লবঙ্গ পেটে গ্যাস ফর্ম হতে বাধা দেয়। এটি গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ভাল কাজ দেয়। দুটি লবঙ্গ মুখে নিয়ে চাবালে এর রসটা আপনার এ্যাসিডিটি দূর করতে সাহায্য করবে। এ্যাপেল সাইডার ভিনেগার : এর ক্ষারধর্মী প্রভাব পাকস্থলীর এ্যাসিডিটির সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। ১-২ চা চামচ এ্যাপেল সাইডার ভিনেগার এক কাপ পানিতে মিশিয়ে খাবার আগে বা দিনে এক বা দুইবার খেতে পারেন। গরম পানি, লেবু ও লবণ : লেবুর কথা শুনে হয়ত অনেকে ভাবতে পারেন যে এটা আমি কী বলছি! একে তো এ্যাসিডিটি, তার ওপর লেবু খাবেন? জ্বি হ্যাঁ, এ্যাসিডিটির সমস্যা হলে বা বুক জ্বলাপোড়া করলে এক কাপ গরম পানিতে এক থেকে দেড় চা চামচ লেবুর রস আর সামান্য একটু লবণ দিয়ে মিশিয়ে খেয়ে দেখুন। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই বুক জ্বালাপোড়া ভাব কমে যাবে। তবে মনে রাখবেন, ঠান্ডা পানি নয় অবশ্যই হালকা গরম পানি নেবেন। এছাড়াও কিছু বদঅভ্যাস পরিবর্তন করে খুব সহজেই আমরা এ্যাসিডিটি থেকে দূরে থাকতে পারি। যেমন আমজনতার একটি বড় বদঅভ্যাস হলো, খাওয়ার সময় তারা সামনে গ্যালন গ্যালন পানি নিয়ে বসেন। পানি ছাড়া অনেকেরই ভাত গলা দিয়ে নামতে চায় না।
×