ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

কে কথা কয়রে...

প্রকাশিত: ০৭:৩১, ২৬ অক্টোবর ২০১৮

কে কথা কয়রে...

বিশ্ববিখ্যাত মরমী সাধক ফকির লালন সাঁইজি আজ সারা বিশ্বে ব্যাপকভাবে সমাদৃত। লালন সঙ্গীতের সুর ও বাণীর সমন্বয়ে এ সঙ্গীত শ্রোতার কানের ভেতর দিয়ে তার মর্মে প্রবেশ করে। এই সঙ্গীতিক গুণে আজ লালন সঙ্গীত অনন্য উচ্চতায় উপনীত হয়েছে। লালন সঙ্গীত নিয়ে আজ দেশ বিদেশে নানামুখী গবেষণায় তাঁকে চিনবার, জানবার চেষ্টা করা হচ্ছে। একদিন যে সাধক বাউল কবি পথে পথে গাঁয়ের মেঠো পথ ধরে অনুসারীদের নিয়ে গানের সাধনায়, অধ্যাত্মিকতায় মগ্ন ছিলেন; আজ তাঁকে আমরা গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি। লালন সঙ্গীত আজ গবেষণার বিষয়। লালন সাঁইজির সাধনা আধ্যাত্মিকতায় মগ্নময় হলেও তিনি ছিলেন জীবনবাদী কবি। যদিও তার গানে আমরা তাত্ত্বিক বিষয়াদি গভীরভাবে উপলব্ধি করি। তাঁর গানে আধ্যাত্মিকতার সঙ্গে আদিরস পরিবেশিত হয়েছে নানাভাবে। তত্ত্বকথায় ভরপুর হলেও লালন-সঙ্গীত সাহিত্য-রস বর্জিত নয়। এ কারণেই শত শত বছর পরেও যেমন তাঁকে নিয়ে, তাঁর মরমী বাণী নিয়ে গবেষণা চলছে, হাজার বছর পরেও তা অব্যাহত থাকবে। লালনের বাউলতত্ত্ব, তাঁর গান বা লালনগীতি ও দর্শনের পরে সবচেয়ে বেশি বিতর্ক হয়েছে তাঁর জন্ম পরিচয় নিয়ে। লালন সাঁইজির জন্ম দিনক্ষণ নিয়ে নানা মুনির নানা মত রয়েছে। তবে এটা ঠিক প্রত্যেকেরই দেওয়া জন্ম তারিখ প্রায় কাছাকাছি হওয়ায় এটাই ধরে নেওয়া যায় যে, লালন সাঁই ১৭৭৪ সালে কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী থানার ভাঁড়ারা গ্রামে এক কায়স্থ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। (ড. আবুল আহসান চৌধুরী, লালন শাহ, বাংলা একাডেমি, ঢাকা, পুনর্মুদ্রণ ১৯৯২ পৃ.৩)। প্রায় ১১৬ বছর বয়সে ১৮৯০ সালের ১৭ অক্টোবর শুক্রবার ভোর ৫টায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ফকিরেরা একে বলেন, ‘গার্শির দিন’ অর্থাৎ কার্ত্তিক মাসের প্রত্যুষা, বাঙলা ১২৯৭ সাল। সে হিসেবে তাঁর জন্ম ইংরেজী ১৭৭৪ খ্রিস্টাব্দে। (সাঁইজির মৃত্যুর পর কুষ্টিয়া থেকে প্রকাশিত ‘হিতকরী’ নামে পত্রিকার সম্পাদকীয় থেকে এ তথ্য পাওয়া যায়। সাঁইজিকে ছোটবেলায় এক সম্প্রদায়ের ফকিরগণ সারঙ্গ কিংবা গোপীযন্ত্র নিয়ে গান গেয়ে ভিক্ষা করতে দেখতেন। সেখান থেকে তার মনে এই সম্প্রদায়ের লোকের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে সাঁইজির জীবনের করুণ আখ্যান শুনে বসন্তকুমার পাল (পরবর্তী সময়ে লালনের জীবনীকার) সেই শিশুকাল থেকেই সাঁইজির শিষ্য বনে যান। তার জবানীতে জানা যায় এসব তথ্য। ফকির লালন শাহের জন্ম ও বংশ পরিচয় সম্পর্কে আরও একটি অভিমত প্রচলিত আছে। মরমী কবি পাঞ্জু শাহ যিনি লালনের আখড়ায় সবসময় তাঁর সঙ্গে থাকতেন, তাঁর দেওয়া বয়ানের উদ্ধৃতি দিয়ে তাঁর দু’পুত্র এ মতের প্রবক্তা। তাঁদের মতে, ফকির লালন শাহের জন্ম যশোর জেলার হরিণাকু- থানার অধীন হরিশপুর গ্রামে একটি মুসলমান পরিবারে। তাঁর পিতার নাম দরিবুল্যা দেওয়ান। দরিবুল্যা দেওয়ানের তিনজন পুত্র সন্তান ছিল। তাঁরা হলেন আলম, কলম ও লালন। তাঁদের মধ্যে লালন সর্বকনিষ্ঠ। লালন শৈশবকালেই পিতৃমাতৃহীন হয়ে পড়েন। এরপর তিনি তাঁর ভাই ও ভাবীদের কাছে লালিত-পালিত হন। বড় ভাই আলম শ্রমিক হিসেবে কলকাতায় কাজ করতেন। আর মেজ ভাই কলম কৃষিজীবী ছিলেন। কিন্তু লালন বাল্যকাল থেকেই গানবাজনা ভালবাসতেন। তিনি তা নিয়েই ব্যস্ত থাকতেন। তাঁর গুরু ছিলেন তাদেরই হরিশপুর গ্রামের সিরাজ শাহ। তিনি ছিলেন পেশায় পালকিবাহক। লালনের গান শুনে তিনি অভিভূত হন। তাদের মধ্যে সখ্য বাড়ে, এক পর্যায়ে লালন তাঁর নিকট দীক্ষিত হয়ে সাধনার উচ্চমার্গে উপনীত হন। সিরাজ শাহ এর মৃত্যুর পর ফকির লালন শাহ ছেঁউড়িয়ায় কালীগাঙ্গের পাড়ে স্থায়ী আখড়া গড়ে তোলেন। তিনি সেই গ্রামের জোলা নামের এক মুসলমান মেয়েকে দ্বিতীয় বিবাহ করেন। তবে তাঁর জাত-ধর্মও জন্মসন তারিখ সঠিকভাবে আবিষ্কার করা সম্ভব না হলেও মৃত্যুর সন-তারিখ নানা তথ্যরাজি দ্বারা পরে প্রমাণিত হয়েছে। তবে লালন কোন জাতের ছেলে তা আজও চিহ্নিত হয়েছে বলে জানা যায়নি। এ দুই মতের অনুসারীরাই তাঁর এ জন্মস্থানের বিষয়টিকে বা জাতের বিষয়টিকে তেমন গুরুত্ব দেন না, তাদের ভাবনায় রয়েছে লালনের বাণী আর আধ্যাত্মিক চেতনা। কিন্তু তিনি কি বলেছেন, তাঁর কাছে কোন ধর্ম প্রাধান্য পেয়েছে? আমরা তাঁকে নিয়ে, তাঁর গান নিয়ে যদি বিচার বিশ্লেষণ করি, তবে তিনি হিন্দু-মুসলিম এই দুই ধর্মের বেড়াজালে আবদ্ধ না থেকে বেরিয়ে এসে মানবধর্মের ব্রতে নিজেকে সঁপে দেন। লালন বলেছেন, ‘লালন বলে হাতে পেলে জাত পোড়াতাম আগুন দিয়ে।’ জাত নিয়ে তিনি ঘোরতর বিরোধী ছিলেন। তাইতো তিনি গেয়েছেনÑ ‘সবাই শুধায় লালন ফকির কোন জাতের ছেলে। কারে বা কি বলব আমি দিশা না মেলে॥ হয় কেমনে জাতির প্রমাণ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীস্ট-যবন? ‘জাত’ বলিতে কি হয় বিধান শাস্ত্রে খুঁজিলে?’ লালন আবার তার জাত নিয়ে বলেছেন- ‘সবাই শুধায় লালন ফকির হিন্দু কি যবন কারে বা কি বলব আমি না জানি সন্ধান। বেদ পুরাণে করছে জারি যবনের সাঁই হিন্দুর হরি তাও তো আমি বুঝতে নারি দুইরূপ সৃষ্টি করলেন... তার কি প্রমাণ?’ লালন তাঁর বাউল দাস বংশের কোন এক প্রতিবেশীর সঙ্গে মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুরের নিকট গঙ্গাস্নানে যাত্রা করেন। তখন রেলপথ ছিল না। তীর্থযাত্রীরা নৌকায় যাতায়াত করতেন। সঙ্গীসহ গঙ্গাস্নান শেষে স্বগৃহে ফিরে আসার সময় লালন বসন্ত রোগে গুরুতর আক্রান্ত হন। এতে তিনি মৃতবৎ অসাড় হয়ে পড়েন। সঙ্গীরা তাকে মৃত মনে করে মুখাগ্নি দিয়ে গঙ্গায় ভাসিয়ে দেন। [তথ্যসূত্র: তন্ত্রাচার্য শিবচন্দ্র বিদ্যার্ণবÑবসন্ত কুমার পাল]। তার জন্ম তারিখ আন্দাজ করে ধরে নেওয়া হয়েছে বলে অনেক লালন গবেষকই মত পোষণ করেন। সেটি খুব বেশি বিবেচ্য বিষয় নয়; লালনের কর্মময় জীবনের সাধনা, মানব প্রেম আর মানুষকে সত্যান্বেষী করে একটি পথের দিশা দেওয়ার যে নিরন্তর সাধনা ছিল তারই নির্যাস লোকধর্মে লালন প্রোথিত করে গেছেন। মরমী চিন্তার ইতিহাস মানুষের ইতিহাসের সমসাময়িক। আর এই মরমী সাধক ফকির লালন সাঁইজির বাণী আজো মরমী সাধনার ব্রতী হয়ে জীবন্ত হয়ে মানব মনে প্রেমের সুবাতাস প্রবাহিত করে যাচ্ছে। লালনের কাছে কোন জাত-পাতের ভেদাভেদ স্থান পায়নি। তাঁর কাছে জাতি-ধর্ম এসব ছিল অর্থহীন। সাধনার মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল মানবপ্রেম, মানবধর্ম। আর এই মানবধর্মের প্রবক্তা হিসেবেই তিনি আজ বিশ্বমানবের হৃদয়ে স্থান জুড়ে আছেন। তিনি কেবলমাত্র বাঙালীর আন্ত্যজ চেতনার ধ্যানী-যোগী নন, তিনি বিশ্বমানবের সাধনার প্রতীক। লালন জাত-পাত বিচারে তাঁর বিশ্বাসের প্রতিফলন অনেক লালন গীতিতে বাঙ্ময় হয়ে উঠেছে। তাই তার গানে আমরা সেই বাণীর ধ্বনি প্রতিধ্বনি শুনতে পাই- লালন সবে বলে লালন ফকির হিন্দু কি যবন; লালন বলে, আমার আমি না জানি সন্ধান। এক ঘাটেতে আসা-যাওয়া একই পাটনী দিচ্ছে খেয়া তবে কেউ খায় না কারও ছোঁয়া। ভিন্ন জল কোথায় পাস? লালন ফকির কোথায় জন্মেছিলেন তা নিয়ে মতবিরোধ থাকলেও সবার পিছে, সবার নিচে, সবহারাদের মাঝে- যেথায় থাকে সবার অধম, দীনের দীনÑ সেখানে তিনি বাসাটা বেঁধেছিলেন। ছেঁউড়িয়াতে তাঁর চারপাশে যে-মানুষগুলো ছিল, তারা পেশায় কারিগর সম্প্রদায়ের, তাঁত বুনত, জাতে জোলা- নিম্নবর্গের মানুষ অন্ত্যজ। লালন সেখানে গিয়েই তাঁর আস্তানা গেড়েছিলেন। এ থেকেই আমরা ধরে নিতে পারি, লালনের ধ্যান-সাধন ছিল নিম্নবর্গের মানুষকে নিয়েই। নিম্নবর্গের কাছে সমুদ্রের বার্তা আনতে চেয়েছিলেন তিনি, গঙ্গার খবর আনতে চেয়েছিলেন তিনি। লোকধর্ম মানুষের একটা আশ্রয়, বাঁচার একটা প্রতীক, হিন্দু যাকে স্থান দেয়নি, মুসলমান যাকে স্থান দেয়নি, খ্রিস্টান যাকে স্থান দেয়নি, সে বাঁচবে কী নিয়ে? সে ‘মানুষ’ নিয়ে বাঁচবে এবং সেই বাঁচার নামই হচ্ছে লোকধর্মের জন্য বাঁচা, লোকায়ত জীবন। লালন হচ্ছেন সেই লোকায়ত জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রতীক, সর্বশেষ্ঠ মানুষ। কিন্তু তিনি একক নন এই জীবনে। ভুঁইফোঁড় নন এ জন্য যে, তাঁর আশপাশের সমকালের অনেক মানুষের নাম, অনেক ধর্ম-সম্প্রদায়ের নাম আমরা দেখতে পাই। তাঁদের গান আমরা পাই, সেই গানের মধ্যে আমরা প্রথমে মানবিক মহিমা পাই পঞ্চদশ শতাব্দীতে। লক্ষ্য করলে দেখা যায়, লালন ফকির থাকতেন জোলাদের মধ্যে, তাঁতীদের মধ্যে। গগন ছিলেন ডাকহরকরা, লালনের গুরু সিরাজ সাঁই ছিলেন পালকিবাহক, পাগলা কানাই ধুয়োজারি করে গান করে বেড়াতেন। পাগলা কানাই মারা গেলে এক মুসলমান মৌলভীকে ডাকা হয়েছিল তাঁকে জানাজা নামাজ পড়ানোর জন্য ও কবর দেওয়ার জন্য। উনি তা অস্বীকার করেছিলেন কারণ, পাগলা কানাই সেই অর্থে মুসলিম ধর্মাবলম্বী ছিলেন না, উনি নাকি ভ্রষ্ট, উনি ফকির! মৌলভী আসেননি, তবে অনেক মানুষ এসেছিলেন। যারা পাগলা কানাই এর গান ভালবাসতেন, তারা এসেছিলেন। পাগলা কানাই এর গান ভালবাসতেন সকলে। যশোর, নদীয়া, পাবনা সমস্ত জায়গা পাগলা কানাই এর নাম সেকালে মুখরিত ছিল। লালন ফকিরের তুল্যমূল্য বিখ্যাত গীতিকার ছিলেন পাগলা কানাই। তাঁর গান সংগৃহীত হয়েছেÑ কিন্তু তা আর গাওয়া হয় না; কারণ গাইবে কে? গায়ক সম্প্রদায় তো আর তৈরি হয়নি। আবার লালন লেখাপড়া জানতেন না। তাঁর গান সে সময় ভক্তদের মুখে মুখে ঘুরে ফিরতো। মুখস্থ করে রাখতো। এতে কিছু গানের কথা এলাকাভেদে কিছুটা ভিন্নরূপ পেয়ে যেতে পারে বলে অনেক গবেষক মত প্রকাশ করেছেন। তাপরেও তার সুর ও বাণীর কোন হেরফের হয়নি। পাগলা কানাই এর গান আর তেমন করে গাওয়া হয় না। তাহলে লোকধর্ম তাঁদেরই আশ্রয় করে এগিয়ে যাচ্ছে, যাঁরা দেবতার মূর্তি তৈরি করেনি, মন্দির তৈরি করেনি, মসজিদ তৈরি করেনি, শাস্ত্র তৈরি করেনি, কিন্তু তাঁরা গান তৈরি করেছেন। [সুধীর চক্রবর্তী, লালন শাহ : অভিজাত ও লোকায়েতের সেতুবন্ধন] লালন বাউল মতাবলম্বী ছিলেন। বাউল মতো বাঙালীর নিজস্ব। তা মানবতাবাদী ও শাস্ত্র নিরপেক্ষ। বাউলদের ধর্ম যদি থাকে তা হলে তা মানবধর্ম; যার মূল প্রতিপাদ্য মানবপ্রেম। সুফি-বৈষ্ণব ও নাথ-যোগী সবার সঙ্গে প্রভূত মিল তার। আবার যোগদর্শনের অনেক উপাদান তাদের চিন্তার রসদ জোগায়। তারা কোন বিশেষ ধর্মে-বর্ণে বিশ্বাসী নয়। লালন শাহ যে ধর্মে ধর্মে, মানুষে মানুষে কোন ভেদজ্ঞান করেননি, তা আমরা তাঁর গানের মধ্যেই জানতে পারিÑ সব লোকে কয় লালন কি জাত সংসারে লালন কয় জাতের কি রূপ দেখলাম না এই নজরে সুন্নত দিলে হয় মুসলমান নারীলোকের কী হয় বিধান বামুন চিনি পৈতে প্রমাণ বামনী চিনি কিসেরে কেউ মালা কেউ তসবি গলে তাইতে কি জাত ভিন্ন বলে যাওয়ার কিংবা আসার কালে জাতের চিহ্ন রয় কারে জগৎ জুড়ে জাতের কথা লোকে গল্প করে যথাতথা লালন বলে জাতের ফাতা ডুবিয়েছি সাধ বাজারে লালন নিরন্তর ‘মনের মানুষের’ সন্ধান বাইরে করেতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তিনি সেখানে পাননি। তাঁর ধারণা তাঁকে বাইরে পাওয়া যাবে না। ‘মনের মানুষ’ নিজের মধ্যেই বাস করে। কাজেই তিনি নিজের ভেতরেই অহর্নিশ তার সন্ধান করে ফিরেছেন। লালন বলেছেনÑ ক্ষ্যাপা তুই না জেনে তোর আপন খবর যাবি কোথায়? আপন ঘর না বুঝে বাইরে খুঁজে পড়বি ধাঁধায়। বাউল তত্ত্বের প্রধান বীজমন্ত্রই হলো মানুষকে খুঁজে বের করা। মানুষকে খুঁজে পেলে তবেই সিধ্যি-সাধন পুণ্যতা পাবে, বলেই লালন প্রকৃত মানুষের সন্ধানে মানুষের প্রেমে মজেছেন। মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি মানুষ ছাড়া ক্ষ্যাপারে তুই মূলহারাবি॥ দ্বিদলে মৃণালে সোনার মানুষ উজ্জ্ব¡লে মানুষ গুরুর কৃপা হলে জানতে পাবি। মানুষে মানুষ গাঁথা দেখ না যেমন আলেকলতা জেনেশুনে মুড়াও মাথা তুই যাতে তরবি। মানুষ ছাড়া মনরে আমার দেখবিরে সব শূন্যকার লালন বলে মানুষ আকার ভজলেতরবি॥ আধ্যাত্মিকতায় লালন ফকির শ্রেষ্ঠ এক সাধক। তাঁর গানের বাণী তারই ভেতর সেই ধ্বনি তুলে হৃদয়ে প্রশ্নের উদ্রেক করে। আমি কে? আমি কি আমার ভেতরের পাখিটারে বশ মানাতে পেরেছি? এই যে আধ্যাত্মিকতা তা কেবল একজন লালনই এর ভেদ ভেঙ্গে আমাদের ধ্যানমগ্ন করে তোলেন। আমরা আমাদের ভেতরের খাঁচার পাখিটাকে কি বশ করতে পারি? লালন সাঁইজির মনের গহীনে এভাবেই চিরন্তন কামনা ধ্বনিত হয়েছে।
×