ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রাজধানীর বর্জ্য পরিচ্ছন্নকর্মীরা

প্রকাশিত: ০৬:৪৭, ৪ আগস্ট ২০১৮

   মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রাজধানীর বর্জ্য  পরিচ্ছন্নকর্মীরা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জীবিকার তাগিদে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে রাজধানীর বর্জ্য অপসারণের কাজ করছেন পরিচ্ছন্নকর্মীরা। এ কাজ করতে গিয়ে গত এক যুগে মারা গেছেন ৮ শতাধিক কর্মী, যাদের সিংহভাগের মৃত্যুর কারণ ক্যান্সার, এ্যাজমা ও বক্ষব্যাধিসহ বিভিন্ন জটিল রোগ। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আরও উদ্যোগী হওয়ার তাগিদ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। ভয়াবহতা স্বীকার করে সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, পরিচ্ছন্নকর্মীদের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করছেন তারা। ময়লা-আবর্জনা আর দুর্গন্ধ। যা সবার কাছেই ঘৃণার, সবারই চরম অপ্রিয়। কিন্তু কিছু মানুষের জীবন কাটে এই ময়লা-আবর্জনার মাঝেই। পরিচ্ছন্নতা কর্মী। দুর্গন্ধ আর ঘৃণাকে হজম করে রাজধানী পরিচ্ছন্ন রাখতে রাত-দিন কাজ করছেন তারা। রাজধানীর দুই সিটির অধীনে কাজ করছেন প্রায় সাড়ে ৭ হাজার নিবন্ধিত পরিচ্ছন্নতাকর্মী। আর এলাকাভিত্তিক ব্যবস্থাপনায় কাজ করছেন আরও প্রায় ৪ হাজার কর্মী। এর বাইরেও প্লাস্টিকসহ বিভিন্ন দ্রব্য কুড়ানোর বিনিময়ে কাজ করেন বেশকিছু হতদরিদ্র মানুষ। বাসাবাড়ি থেকে ডাস্টবিন ও ডাস্টবিন থেকে মূল ভাগাড়ে আবর্জনা চলে যাচ্ছে এই মানুষগুলোর হাত হয়েই। নিবন্ধিতদের বেতন চলনসই হলেও স্বাস্থ্য ঝুঁকি বিবেচনায় তা নগণ্য। আর অবশিষ্টদের অবস্থা খুবই শোচনীয়। বেঁচে থাকার প্রয়োজনে এই কঠিন কাজে জড়িয়ে ধীরে ধীরে মৃত্যুকেই যেন আলিঙ্গন করছেন তারা। তথ্যমতে, গত এক যুগে রাজধানীতে মারা গেছেন ৮১৪ জন নিবন্ধিত পরিচ্ছন্নতাকর্মী। ২০০৬-১৬ সাল পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা প্রতিবছর ৫৩ থেকে ৭২ পর্যন্ত ওঠানামা করলেও ২০১৭ সালে এসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০৮ জনে। এদের মধ্যে এ্যাজমায় ২৭ শতাংশ, ক্যান্সারে ২২ শতাংশ, হৃদরোগে ১৮ শতাংশ, স্ট্রোক করে ৭ শতাংশ এবং বার্ধক্য ও দুর্ঘটনাজনিত কারণে মারা গেছেন ২৬ শতাংশ কর্মী। আর নিবন্ধনের বাইরে থাকা কর্মীদের ব্যাপারে এ সংক্রান্ত কোন তথ্যই কারও কাছে নেয়। সার্বিক বিষয় নিয়ে উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা। বাংলাদেশ মেডিক্যাল কমিউনিটি মেডিসিন অধ্যাপক ডাঃ শারমিন ইয়াসমিন বলেন, ‘এই শ্রেণীর দেখা গেছে আয়ুষ্কাল অনেক কম। অনেক আগেই হয়ত তারা মারা যাচ্ছেন। তাদের স্বাস্থ্যের প্রতি গুরুত্ব দেয়া দরকার।’ পরিচ্ছন্নকর্মীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও জীবনমান উন্নয়নে সিটি কর্পোরেশন গুরুত্বসহকারে কাজ করছে বলে জানালেন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা। ডিএসসিসি অতিরিক্ত প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা খন্দকার মিল্লাতুল ইসলাম বলেন, ‘এসব পরিচ্ছন্নকর্মীরা হঠাৎ করে স্ট্রোক করে মারা যায়। তাদের সেবার জন্য যথেষ্ট কেয়ার নেয়া হচ্ছে।’ উন্নয়ন কর্মীরা বলছেন, পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা দেয়া হলে পরিবর্তন আসতে পারে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের ময়লা জীবনের গল্পে।
×