ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

আফসোস বাড়ল মেসির!

প্রকাশিত: ০৭:০৮, ১৮ জুলাই ২০১৮

আফসোস বাড়ল মেসির!

মাহিয়ান দ্বীপ ॥ এবারও হলো না। শূন্য হাতেই রাশিয়া বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিলেন লিওনেল মেসি। এই নিয়ে টানা চতুর্থবারের মতো স্বপ্নভঙ্গের বেদনায় ডুবলেন বার্সিলোনার এই আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার। জার্মানি, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ব্রাজিলের পর রাশিয়াতেও উঠল না বিশ্বকাপের মহার্ঘ্য ট্রফি। আগের তিন বিশ্বকাপের মতো আর্জেন্টিনার ‘নাম্বার টেন’ নকআউট পর্বে গোল করতে ব্যর্থ হলেন এবারও। যদিও দলকে বিপন্মুক্ত করতে তার চেষ্টার কোন ত্রুটি ছিল না। গোল না পেলেও ফ্রান্সের বিপক্ষে ম্যাচে দুই গোলে এ্যাসিস্ট ছিল এলএম টেনের। একটু পেছনের দিকে ফিরে তাকালেই দেখা যায়, ২০০৬ সালে স্বাগতিক জার্মানির কাছে কোয়ার্টার ফাইনালে হেরে স্বপ্নভঙ্গ হয় আর্জেন্টিনার। একই দলের বিপক্ষে ৪-০ গোলে হেরে বিদায় ঘটে ২০১০ বিশ্বকাপ থেকে। ২০১৪ সালের বিশ্বকাপে আবারও একই দলের বিপক্ষে ফাইনাল ম্যাচে অতিরিক্ত সময়ের গোলে হেরে তীরে এসে তরী ডোবে মেসিদের। এবার অবশ্য আগেভাগেই বিদায় ঘটেছে। তরুণ ফরাসীদের কাছে শেষ ষোলোর ম্যাচে ৪-৩ গোলে হেরে ২০১৮ বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিয়েছে লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা। আবারও বিশ্বকাপে খেলতে হলে ৩৫ বছর বয়সে মাঠে নামতে হবে মেসিকে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় না আবারও এমন সুযোগ থাকছে তার সামনে। বিশ্বকাপ থেকে আর্জেন্টিনার বিদায়ের কারণ হিসেবে মেসিকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে অনেকে। লিওনেল মেসির ব্যর্থতাই নাকি আর্জেন্টিনার বিদায়ের মূল কারণ। তবে দলের বিদায়ের পর এখনো মেসি মুখ খোলেননি। সমালোচকদের কোন জবাব দেননি আর্জেন্টাইন তারকা। তবে এমন ব্যর্থতার কারণ কী? এ বিষয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এসেছে। যে তথ্য প্রমাণ করতে পারে, আসলে মেসির কোন দোষ নেই। দলের ব্যর্থতার সব দায় তার ওপর চাপানো যায় না। জানা গেছে, গোটা বিশ্বকাপে বিপক্ষ বক্সে সতীর্থদের থেকে মাত্র দুটো পাস পেয়েছেন মেসি। হ্যাঁ, মাত্র দুটো পাস। তার মধ্যে একটা ক্রোয়েশিয়ার বিরুদ্ধে। আরেকটা পাস তিনি পেয়েছেন আইসল্যান্ডের বিরুদ্ধে ম্যাচে। ক্রোয়েশিয়ার বিরুদ্ধে বক্সে পাওয়া বলে মেসি গোলে শট করেছিলেন। কিন্তু সেটা বিপক্ষ ডিফেন্ডাররা দারুণভাবে প্রতিরোধ করেন। তথ্য বলছে, মাঝমাঠ থেকে ফাইনাল থার্ডে ঠিকঠাক বল বাড়াতে ব্যর্থ ছিল আর্জেন্টিনার মিডফিল্ডাররা। যদিওবা শেষ দুই ম্যাচে এভার বানেগা দলে আসার পর ফাইনাল থার্ড অঞ্চলে কিছু পাসের সরবরাহ বেড়েছিল। কিন্তু সেই সংখ্যাটাও যথেষ্ট ছিল না। যদিও এসব কোনো কারণ হতে পারে না। কিন্তু এভাবে একজন গ্রেট খেলোয়াড়ের বিদায় মানতে পারছেন না তার অগণিত ভক্ত। এটা নতুন করে বলার কিছু নেই যে, শৈশবের ক্লাব বার্সিলোনার হয়ে ভূরি ভূরি শিরোপা আর রেকর্ডের ছড়াছড়ি রয়েছে মেসির। অথচ সেই মেসি জাতীয় দলের হয়ে একেবারেই রিক্তহস্ত! চারটি আন্তর্জাতিক ফাইনাল খেললেও জিততে পারেননি একটিতেও। আগামী ২০২২ কাতার বিশ্বকাপে আদৌ মেসি খেলবেন কিনা- তাতে বিস্তর সন্দেহ রয়েছে। কিন্তু ওই বিশ্বকাপের আগে আরও ৩টি সুযোগ পাবেন ফুটবল জাদুকর। শুরু করা যাক ২০১৯ সাল দিয়েই। আগামী বছর আর্জেন্টিনার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলে বসছে কোপা আমেরিকার আসর। আর্জেন্টিনা দলের যে অবস্থা, তাতে ব্রাজিল থেকে শিরোপা নিয়ে আসা দিবাস্বপ্নই বলা যেতে পারে। অন্যদিকে তিতের ব্রাজিল দুর্দান্ত খেলে যাচ্ছে গত কয়েক বছর ধরেই। ব্রাজিল আসরে যদি নাও হয়, তবে পরের বছর আরেকটি সুযোগ পাচ্ছেন ৩১ বছর বয়সী এই ভিনগ্রহের ফুটবলার। ২০২০ সালেও অনুষ্ঠিত হবে আরেকটি কোপা আমেরিকার আসর। যেমনটা হয়েছিল ২০১৫ এবং ২০১৬ সালে। এবার ২০২০ সালে কোপা আমেরিকার আয়োজক হবে ইকুয়েডর। বাছাইপর্বেও খেলায় এই ইকুয়েডরকেই হারিয়ে রাশিয়া বিশ্বকাপের মূলপর্বে উঠেছিল আর্জেন্টিনা। দুর্দান্ত হ্যাটট্রিক করে দলকে খাদের কিনারা থেকে একাই টেনে তুলেছিলেন মেসি। আগামী বিশ্বকাপের আগের বছর ২০২১ সালে কাতারে বসবে কনফেডারেশনস কাপের আসর। এই আসরে গিয়ে মেসিরা বিশ্বকাপ প্রস্তুতিটাও সেরে রাখতে পারবেন। এই তিনটি ছাড়া ২০২২ বিশ্বকাপ তো আছেই। ৩১ বছর বয়সী মেসির বয়স তখন হবে ৩৫। এই বয়সে খেলে যাওয়া বিরল কোনো ঘটনা নয়। মেসিও কদিন আগে বলেছেন, দেশকে শিরোপা উপহার না দিয়ে আর অবসরে যাবেন না তিনি। যদিওবা ব্যর্থতার চাপ কাঁধে নিয়ে এরই মধ্যে জাতীয় দল থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন মেসির সতীর্থ হাভিয়ের মাসচেরানো ও লুকাস বিগলিয়া। মেসিও যদি সেই তালিকায় যোগ দেন তাহলে অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না। কেননা, এর আগে ২০১৬ সালে কোপা আমেরিকার ফাইনাল হারের পর অবসরের ঘোষণা দিয়েছিলেন মেসি। সেবার তিনি বলেছিলেন, ‘আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। জাতীয় দলের জন্য শিরোপা জেতার চেষ্টা করেছি। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে, আমি সেটা পারিনি। আমার তাই মনে মনে হয়, এটাই বিদায় বলার সেরা সময়। আমি আমার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি।’ যদিও পরে কোচ-সতীর্থ-পরিবার আর সমর্থকদের চাপে অবসর ভাঙতে হয় তাকে। বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা সর্বশেষ ১৯৮৬ সালে শিরোপা জেতে দিয়াগো ম্যারাডোনার হাত দিয়ে। তারপর থেকেই চলছে শিরোপা-খরা, যে কারণে সবার চোখ ছিল মেসির দিকে। কিন্তু তিনিও ব্যর্থ হলেন। সর্বোচ্চ অর্জন বলতে গেলে আসরে মেসির অধীনে ফাইনাল খেলে আর্জেন্টিনা।
×