ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পীযূষ কান্তি বড়ুয়া

নজরুল ইসলামের নদীপুরাণ

প্রকাশিত: ০৭:৩৯, ১ জুন ২০১৮

নজরুল ইসলামের নদীপুরাণ

নজরুল মানুষ হিসেবে বহুমাত্রিক। লেখক হিসেবে তো বটেই। নজরুল কারো কাছে ক্ষ্যাপা, কারো কাছে উদ্দাম। বাঁধহীন, শৃঙ্খলাহীন। নজরুল কারো কাছে বিরাট শিশু, কারো কাছে অমিত শক্তির তারুণ্যের প্রতীক। কারো কাছে নজরুল বিদ্রোহী, আবার কারো কাছে দেশপ্রেমিক। কারো কাছে নজরুল অসাম্প্রদায়িক তো কারো কাছে জাত-কূলহীন। নজরুলকে ভালোভাবে অধ্যয়ন করলে মনে হয় নজরুল প্রকৃত অর্থেই নদীর মতো। একজন সত্যিকারের কাজী নজরুল যেন এক সত্যিকারের প্রবহমান নদী। নজরুলের জীবনে তাই বুঝি নদী মিশে আছে বিভিন্নভাবে, বিভিন্নরূপে। কারও কাছে জীবন নদীর মতো। কেউ বলে মনই নদী। নদী আসলে চলমান তার আপন বেগ নিয়ে আপন গন্তব্যে। প্রবহমান জলরাশি যে নাদ বা কল্লোল সৃষ্টি করে নদী হলো মূলত তাই-ই। অর্থাৎ নাদ উৎপাদনকারী প্রবহমান জলরাশিই নদী। সেই অর্থে নজরুলের জীবন যেন এক হুবহু নদী। অমিত প্রতিভার সৃজনস্রোত কবি নজরুল বিপুল কল্লোলে বয়ে নিয়ে গেছেন সময়ের কাছে। তাই নজরুল একটি মানবীয় নদী। নদী হলো সমুদ্রকান্তা নজরুলও তাই : নদী ছুটে যায় তার আপন ক্ষুদ্র স্রোত নিয়ে সমুদ্রের বিপুল বক্ষে নিজেকে সঁপে দিতে। যেন সমুদ্র তার প্রেমিক, নদী তার প্রেমিকা। কান্ত দর্শনে ছুটে যায় কান্তা মোহনা-সঙ্গমে। নজরুলও আধ্যাত্মিকভাবে নিজেকে পরমের মাঝে মিলানোর অনুশীলনে মগ্ন ছিলেন কিছুকাল। বরদা চরণ মজুমদারকে গুরু ধরে তিনি ধ্যানের চর্চা করতে শিখেছিলেন। দক্ষতার সঙ্গে নজরুল ধ্যানের প্রাথমিক স্তর থেকে পরবর্তী স্তরে যাওয়ার উপায় রপ্ত করেছিলেন। পরমে বিলীনের মার্গ সন্ধানে নজরুলের এই মগ্নতা তার নির্বাক হওয়ার অল্প কিছুকাল আগের অভিভাষণগুলোতে প্রকটিত হয়ে উঠে। ‘যদি আর বাঁশি না বাজে’ অভিভাষণে নজরুলকে নদীর মতোই পরমের মাঝে বিলীনের ইঙ্গিত দিতে শোনা যায়। অসাম্প্রদায়িকতার এবং উদারতার সবচেয়ে বড় নিদর্শন নদী। নদীর সাম্যসাধন ক্ষমতা অপরিমেয়। নদীর বুকেই দুর্গা প্রতিমার নিরঞ্জন হয়, মনসার ভাসান হয়। নদীতে অযু সেরে নামাজে যায় মুসল্লি। গঙ্গার জলে ডুব দিয়ে শুচি হয় সনাতন। নদীর বুকেই মৃত গরুর শবে ভোজ হয় শকুনের। নদীর জোয়ারের জল কলসে ভরে শুরু হয় সনাতনী বিয়ের উৎসব। নদীতেই ভাসানো হয় বৈরাগীর শব। নদী তাই মহৎপ্রাণ। নদীর মতো নজরুলের জীবনেও এসে মিশেছে নানা স্রোত। শৈশব-কৈশোরে নজরুল তার গ্রামে পেয়েছেন সূফিবাদের ছোঁয়া। হাজী পাহলোয়ানের মাজার আর মসজিদে আযান দিয়ে, মিলাদ পড়িয়ে দিন কেটেছে তার। লেটোদলে ভিড়ে এবং কবিয়াল বাসুদেব সরকারের কাছে এসে পড়েছেন হিন্দু পুরাণ, রামায়ন ও মহাভারত। কৈশোরে খানসামার কাজ নিয়েছেন রেলের খ্রীস্টান গার্ডের বাড়িতে। আবার বাঙালী পল্টনে যোগ দিয়ে পার্সী মৌলভীর কাছে শিখেছেন অনেক কিছু। সাহিত্যিক হিসেবে নামডাক হওয়ার পরে বন্ধু বীরেন্দ্র কুমার সেনগুপ্তের বাড়িতে থেকেছেন দিনের পর দিন। বন্ধুর মা বীরজা সুন্দরী দেবীকে মা সম্বোধন করে সিক্ত হয়েছেন তাদের স্নেহের ফল্গুধারায়। আশালতা সেনগুপ্তাকে প্রমীলা করে গেঁথেছেন নিজের জীবনের মালায়। নিজের চার ছেলেকে কৃষ্ণ-মুহম্মদ, অরিন্দম খালেদ, কাজী সব্যসাচী ও কাজী অনিরুদ্ধ নামাঙ্কিত করে ফুটিয়ে তুলেছেন নদীর মতোই উদার ও অসাম্প্রদায়িকতার চিহ্ন। তাই নজরুল সত্যিকার অর্থেই এক মানবীয় নদী। অজয় পাড়ের নজর আলী : নজরুলের বেশ কয়েকটা বাল্য নাম। মায়ের কাছে ক্ষ্যাপা, কারো কাছে নূরু আর কবিয়াল বাসুদেব সরকারের কাছে ‘ব্যাঙাচি’। দুখু মিয়া নামের সঙ্গে সবাই পরিচিত হলেও নজর আলী নামটা বোধ হয় খুব বেশি একটা প্রচার পায়নি। নজরুলের চোখ দুটো ছিল আকর্ষণীয়। গাঢ় কাজল-কালো ভ্রƒ। তাই তাকে কেউ কেউ ডাকতো নজর আলী বলে। নজরুল ছিল অজয় পাড়ের নজর আলী। নজরুলের গ্রাম চুরুলিয়া হতে অজয় নদ খুব বেশি দূরে নয়। অজয়ের এক তীরে বীরভূম আর অন্য তীরে বর্ধমান। অজয় নদ দ্বারা কবি কুমুদ রঞ্জন মল্লিক ও কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত প্রভাবিত ছিলেন তাদের সাহিত্যকর্মে। অজয় নদকে নিয়েই আমরা দুটো অনবদ্য চরণ পাই, ‘বাড়ি আমার ভাঙন ধরা অজয় নদীর বাঁকে, জল যেখানে সোহাগ ভরে স্থলকে ঘিরে রাখে।’ কবি নজরুল এই অজয়ের জল-হাওয়ায় বেড়ে উঠেছেন নদীর মতো কলনাদ নিয়ে, নদীর মতোই উদার ও অসাম্প্রদায়িক হয়ে। অজয় পাড়ের নজর আলীই বন্ধুরূপে শৈলজারঞ্জন মুখোপাধ্যায়, শৈলজারঞ্জন ঘোষ ও কমরেড মুজাফ্ফর আহমদের মতো অসাম্প্রদায়িক মানুষদের পেয়ে ধীরে ধীরে পরিণত হয়ে উঠেন স্বয়ং মানব-নদী নজরুলরূপে। নজরুল সাহিত্যে নদীর আন্তর্জাতিকতাবাদ : নদীপ্রিয় নজরুল তার জীবনের মতোই তার সৃষ্টিকর্মেও নদীকে দূরে রাখেননি। তার লিখনিতে সিন্ধু, গঙ্গা, ভাগীরথী, নীলনদ, দজলা ও ফোরাতের মতো নদীগুলো উঠে এসেছে কবিতার পঙক্তিতে কল্ কল্ করে। বিদ্রোহী কবিতায় নজরুলকে আমরা বলতে শুনি, ‘আমি ব্যোমকেশ, ধরি বন্ধন-হারা ধারা গঙ্গোত্রীর, বল বীর- বল চির উন্নত মম শির।’ হিমালয়ে অবস্থিত এই গঙ্গোত্রী হিমবাহ হতেই মর্ত্যে নেমে এসেছে গঙ্গা যা বিজ্ঞানীদের মতে বিশুদ্ধতম নদী। প্রাকৃতিক কারণেই এখানে অনুজীবের উৎপত্তি হতে পারে না। কবির ‘কা-ারী হুঁশিয়ার’ কবিতায় গঙ্গা আবারও আলোচিত হয়েছে একটি পঙ্ক্তিতে- ‘ঐ গঙ্গায় ডুবিয়াছে হায়, ভারতের দিবাকর! উদিবে সে রবি আমাদেরি খুনে রাঙিয়া পুনর্বার।’ ‘চিরঞ্জীব জগলুল’ কবিতায় একদিকে এশিয়ার সিন্ধু আর অন্যদিকে আফ্রিকার নীলনদকে কবি মিলিয়ে দিয়েছেন বিশ্বজনীন চেতনায়। তার কণ্ঠেই আমরা বিলাপের মতো শুনি- ‘সিন্ধুর গলা জড়ায়ে কাঁদিতে দু’তীরে ললাট হানি ছুটিয়া চলেছে মরু-বকৌলি নীল দরিয়ার পানি।’ আফ্রিকার শ্বেত নীল আর নীলাভ নীলনদের প্রবাহে এশিয়ার সিন্ধুকে সমব্যথী করে কবি বিশ্ব মানবের জন্যে সত্যিকার অর্থেই ফুটিয়ে তুলেছেন কল্যাণমুখী আন্তর্জাতিকতাবাদ। তার এই ভাবনাকে সুদৃঢ় করার জন্যে একই কবিতায় বলেছেন, ‘হে বনি ইসরাইলের দেশের অগ্রনায়ক বীর অঞ্জলি দিনু নীলের সলিলে অশ্রু ভাগীরথীর।’ নদীতে নদীতে এভাবে বন্ধন রচনা করে কবি নজরুল একই মালায় গ্রন্থিত করতে চেয়েছেন বিশ্ব মানবতাকে। কবি নজরুলের ভাবনা হতে বাদ পড়েনি দজলা ও ফোরাত। তুরস্ক হতে উৎপন্ন দজলা ও ফোরাত যাদের অন্য নাম টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস। দুটো নদীই ইরাকের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে মিশে গেছে শাত আল আরব উপসাগরে। এই দুই নদীর অববাহিকাতেই গড়ে উঠেছে মেসোপটেমীয়, অ্যাসিরীয়, সুমেরীয় ও ব্যাবিলনীয় সভ্যতা। ‘খালেদ’ কবিতায় কবি বীর বন্দনা করতে গিয়ে বলেছেন- ‘কব্জা তাহার সব্জা হয়েছে তলওয়ার-মুঠ ডলে দুচোখ ঝালিয়া আশায় দজলা ফোরাত পড়িছে গলে।’ কবি নজরুল কেবল নদীর মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিকতাবাদকেই প্রতিষ্ঠিত করেননি, বরং পৃথিবীর সকল নদীর ধর্ম এক, কর্ম এক- সেকথাও প্রমাণ করতে সচেষ্ট ছিলেন। নজরুল-সাহিত্যে বাংলাদেশের নদ-নদী : কবি নজরুল তার কাব্য প্রতিভার পাশাপাশি রাজনীতিকেও বগলদাবা করেছিলেন বেশ ভালোভাবেই। কৃষক-শ্রমিক পার্টির কাজে তিনি কুষ্টিয়ায় এসে গড়াই নদের পাড়ে অবস্থান করেছিলেন বেশ কিছুদিন। একদিন গড়াই নদের ওপারে শিকারে গিয়ে তিনি ঘুঘু ও হরিয়াল মেরেছিলেন। নদীমাতৃক বাংলাদেশের নদীগুলো তাকে আকর্ষণ করেছিল বেশ। পদ্মার বুকের ওপর দিয়ে যাওয়ার সময় স্রোতস্বিনী পদ্মা দাগ কেটে যায় তার বুকে। তার গানে-কবিতায় পদ্মা অমর হয়ে যায়- ‘পদ্মার ঢেউ রে মোর শূন্য হৃদয়-পদ্ম নিয়ে যা, যারে!’ পদ্মার ওপর ভাসমান নৌকার ওপর বেদে নারীদের দেখে তিনি লিখেন-‘আমি পূরব দেশের পুরনারী’। তাতেও নজরুলের নদীপ্রীতি শেষ হয় না। ‘ওগো প্রিয় তব গান’ কবিতায় নজরুল আবারো বলেন- ‘ওরে ও সুরমা, পদ্মা, কর্ণফুলি তোদের ভাটির স্রোতে নিয়ে যা আমার না বলা কথাগুলি ধুয়ে মোর বুক হতে।’ কর্ণফুলি নদীর চেয়ে ‘কর্ণফুলি’ নামটিই যেন নজরুলের মনে তৈরি করে প্রেম, সৃজন করে আবেগ। নজরুল তাই কর্ণফুলি বন্দনায় মগ্ন হয়ে লেখেন- ‘ওগো ও কর্ণফুলি তোমার সলিলে পড়েছিল কবে কার কান-ফুল খুলি?’ কবির অমূল্য স্মৃতিধন্য দৌলতপুরের আটি নদী যা একসময় আটিগাঙ বা আটিখাল নামে পরিচিত ছিল। আলি আকবর খানের বোনের বাড়ি থাকাকালীন তিনি এই আটি নদীতে সাঁতরেছেন অনেকদিন। এমনকি নার্গিস আসার খানমের সঙ্গে তার বিবাহের বাসর রাতে তিনি এই আটি নদী পথেই নৌকাযোগে পালিয়ে কান্দির পাড় চলে আসেন বীরজা সুন্দরী দেবী ও তার পরিবার-পরিজন পরিবৃত হয়ে। নজরুলের মানস-নদী ও তার ভাবাবেগ : নদীর কথায় নজরুলের ভাবাবেগ বেড়ে যেত প্রবল। নজরুল মানসে নদীর স্রোত প্রতিমুহূর্তেই যেন কল্লোলিত হয়ে উঠতো। তার কবিতায় এই কারণে বার বার নদী জীবন্ত হয়ে উঠে। ‘ওগো প্রিয় তব গান’ কবিতায় কবি ভাবে বিহ্বল হয়ে বলেন- ‘ওগো প্রিয় তব গান আকাশ গাঙের জোয়ারে উজান বাহিয়া যায় মোর কথাগুলি কাঁদিছে বুকের মাঝারে পথ খুঁজে নাহি পায়।’ কবির ‘আমার সাম্পান যাত্রী না লয়’ গানটি গভীর ভাবের গান। এই গানেও কবি তার পরমকে পেতে মরিয়া। পরমের প্রেমে তিনি দেউলিয়া। তাই মজনু নজরুল অকপটে বলেন- ‘আমায় দেউলিয়া করেছে রে ভাই যে নদীর জল আমি ডুবে দেখতে এসেছি ভাই সে জলের তল।’ কিন্তু এই নদীর জলের তল কি আর কবি খুঁজে পান! কবি তাইতো তল না পেয়ে ভাসতে ভাসতে আবারো বলেন- ‘আমার গহীন জলের নদী আমি তোমার জলে রইলাম ভেসে জনম অবধি।’ হৃদয়ে তার অতল প্রেম। দুচোখে জলের নদী। প্রিয়ার বিরহ তাই কবির জলের নদীকে ছাপিয়ে যায় ভাদরের বান হয়ে- ‘তুমি চলে যাবে দূরে ভাদরের নদী দুকূল ছাপায়ে কাঁদে ছলছল সুরে।’ যার প্রেম অতল তার অভিমান অসীম। কবির অভিমান মায়ের সঙ্গে। কবির অভিমান তৃতীয় প্রেমে। কবি অভিমানী তার পরমাত্মার কাছেও। অভিমানভরা হৃদয়ে কবি বিক্ষত অনুভূতিতে বলেন- ‘পড়বে মনে সে কোন্ রাতে এক তরীতে ছিলেম সাথে এমনি গাঙে ছিল জোয়ার নদীর দুধার এমনি আঁধার।’ উদ্ভ্রান্ত তরুণের মতো হৈল্লা করে বেড়ানো নজরুলের কাছে নদী এক মননসখা। নদী তার জীবনের নান্দনিক এক প্রতিচ্ছবি। কবি যখন তার বাস্তব জীবনে একটি অর্জন করছেন তো আরেকটি হারাচ্ছেন, তখনই নদী তার আরো অনেক নিকট হয়ে যায় সখ্যে। কবি কখনো প্রিয়াহারা, কখনো অর্থহারা আর কখনোবা পুত্রহারা। নিজে বাকহারা হওয়ার আগে কবি ধীরে ধীরে হারিয়ে চলেছিলেন অফুরান জীবন-সুধা। হয়তো সেই হারানোর স্রোতে দিশহীন কবি লিখেছেন অকপটেÑ ‘একূল ভাঙ্গে ওকূল গড়ে এইতো নদীর খেলা (রে ভাই) এইতো বিধির খেলা। সকাল বেলার আমিররে ভাই ফকির সন্ধ্যাবেলা।’ কবি ছিল থেমে গোমতীর প্রেমে : মানব-নদী নজরুল প্রকৃতির অজস্র নদী পেরিয়ে এলেও কুমিল্লার গোমতী তাকে আটকেছে আষ্টেপৃষ্ঠে। গোমতী যেন কবির জন্যে নিয়ে বসেছিল প্রেমের সুধা। গোমতীর এপারে প্রমীলা আর ওপারে নার্গিস্। একজন আমৃত্যু এমনকি মৃত্যুর পরও যুগলবন্দী, আর অন্যজন বাসরেই বিচ্ছিন্ন। দুজনেই নজরুলের প্রেমের মূরতি। গোমতীতে সাঁতার না কাটলেও কবির মনে গোমতী কেটেছে সাঁতার। তাই কাছ থেকে দেখা গোমতীকে নিয়ে কবির উচ্ছ্বাস- ‘আজো মধুর বাঁশরী বাজে গোমতীর তীরে পাতার কুটিরে আজো সে পথে চাহে সাঁঝে।’ কবি যাকে ওপারে ছেড়ে এসেছেন, সে হয়তো আজ আর তার পথ চেয়ে নেই। সে হয়তো কালের নদীতে মিশে গেছে স্রোতে। তবুও অনুতপ্ত কবি গোমতীর তীরে গড়ে উঠা অবিকশিত প্রেমকে অঞ্জলি দিতে ‘পূজারিনী’র নৈবেদ্য নিয়ে অন্তরের গহীন হতে বলেন, ‘তবু তব চেনা-কণ্ঠে মম কণ্ঠ-সুর রেখে আমি চলে গেনু কবে কোন্ পল্লী-পথে দূর দুদিন যেতে না যেতে একি সেই পুণ্য গোমতীর কোলে প্রথম উঠিল কাঁদি অপরূপ ব্যথা-গন্ধ নাভি-পদ্মমূলে।’
×