ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

হাঁসের পালক

প্রকাশিত: ০৪:৩৬, ১২ মে ২০১৮

হাঁসের পালক

সত্য যে, হাঁসের পালকও রফতানি হয়। অপ্রচলিত এ পণ্যের বেশ কদর বিদেশে। বাংলা কবিতায় তার অবস্থান বেশ সৃদৃঢ়। বাঙালী কবিরা তাকে নিয়ে, তার পালক নিয়ে কাব্য রচনা করেছেন। গানও বাধা হয়েছে হাঁসের পালক দিয়ে কলমের কাজ চালানো নিয়েÑ ‘হংস পাখা দিয়ে লিখেছি তোমার নাম।’ গত শতকেও হাঁসের পালক কালিতে চুবিয়ে লেখার কাজ হতো। পালকের তখন বেশ কদর ছিল শিক্ষা ক্ষেত্রে। ‘মোরা আর জনমে হংস মিথুন ছিলাম’ বলে কবি নজরুলও বেঁধেছিলেন গান। হাঁস এসেছে জীবনানন্দ দাশসহ আরও কবির কবিতায়। হাঁস বা হংস যে নামেই ডাকা হোক, মূলত জলচর পাখি। গ্রামবাংলায় মুরগির পাশাপাশি হাঁস পালন করা হয় প্রাচীনকাল হতেই। হাঁসের পালক বা ডানাজোড়া সাধারণত লম্বা ও আগা চোখা। যা দীর্ঘক্ষণ ওড়ার পক্ষে সহায়ক। হাঁসের নানাজাত, রাজহাঁস পাতিহাঁস, ভাসাহাঁস, খুন্তেহাঁস, লালশির, বালিহাঁস, গেছোহাঁস, মরালি, সরালি, বুঁচাহাস, বাদিহাঁস, বুনোহাঁস, ভূতিহাঁস ও ডুবুরি হাঁস ইত্যাদি। হাঁসের ডিমে দাগ থাকে না। সদ্যপ্রসূত হাঁসের ছানার দেহ কোমল পালক বা ছোট ছোট পালকে ঢাকা থাকে। হংসী নিজ বুক থেকে কোমল পালক টেনে তুলে বাসার কিনারা সবসময় কোমল পালকে সাজিয়ে রাখে। এ সময় এরা ডানা থেকে উড়াল পালক নির্মোচন করে। ফলে মাস খানেক বা পরবর্তী প্রজননকালে পর্যন্ত ওড়তে পারে না। প্রায় সব হাঁসের পালক বা পাখনায় পাখনা মুকুর আছে। যা উজ্জ্বল শুভ্রবর্ণ মুকুর ফালির মতো দেখায়। হাঁসের মাংস সুস্বাদু খাবার হিসেবে বাঙালীর রসনার তালিকায় রয়েছে। হাঁসের ডিমও খাদ্য তালিকায় রয়েছে। কিন্তু হাঁসের পালক ও লেজ বর্জ্য হিসেবে ফেলে দেয়া হয়। কিন্তু এর যে বিদেশে বাজার রয়েছে, তা জানা ছিল না তেমন কারও। অথচ বর্তমানে অপ্রচলিত হাঁসের পালক যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ভারত, চীনসহ উন্নত রাষ্ট্রে রফতানি করা হচ্ছে। মাঠ পর্যায়ের ভোক্তাদের কাছ থেকে রফতানিকারক একটি প্রতিষ্ঠান তার নিয়োগ করা লোকবলের মাধ্যমে হাঁসের লেজ ও পালক সংগ্রহ করে। তারপর কিছু প্রসেসিং এর মাধ্যমে মানসম্পন্ন করার পর প্রতি মাসে প্রায় দশ টন করে পালক দেশ-বিদেশের বিভিন্ন নামী প্রতিষ্ঠানের কাছে রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে আসছে। যা জাতীয় উন্নয়নে চুপিসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। গ্রামীণ মহিলারাও হাঁসের পালক সংগ্রহ ও তা বিক্রি করে সংসারে বিকল্প আয়ের ব্যবস্থা করছে। নওগাঁর রানীনগরের একটি প্রতিষ্ঠান এক্ষেত্রে পথপ্রদর্শক। ব্রিটিশ যুগে ভারত, পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশে হাঁস-মুরগি চালান করার সুবাদে এই উপজেলায় জনৈক ব্যক্তি হাঁসের লেজ ও পালক রফতানির ক্ষেত্র তৈরি করেন। পালকের ব্যবসায় লাভ হওয়ার কারণে হাঁস-মুরগির ব্যবসা ছাড়িয়ে পুরোদমে পালক ব্যবসা শুরু করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার বেশকিছু পর আবার চালু হয় রফতানি। দেশীয় প্রযুক্তির মাধ্যমে গ্রামীণ জনপদ থেকে সংগ্রহ করা হাঁসের পরিত্যক্ত পালক, যা লম্বা ৪ থেকে ৬ ইঞ্চির মতো পাঁচটি দেশে নিয়মিত রফতানি করে আসছেন। কিন্তু প্রযুক্তির আধুনিকতার ছোঁয়ার কাছে টিকে থাকা অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। তারপরও রফতানি থেমে নেই। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অপ্রচলিত পণ্য তালিকায় হাঁসের পালক না থাকায় পৃষ্ঠপোষকতাও মেলে না। অথচ পরিকল্পিতভাবে এ খাতে পদক্ষেপ নেয়া হলে সারাদেশ থেকে পালক সংগ্রহ করে তা রফতানি করা যেত। আয় হতো প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা। দেশে প্রচুর হাঁসের খামার রয়েছে, যা থেকে পালক সংগ্রহ সম্ভব। মন্ত্রণালয় উদ্যোগ নিলে হাঁসের পালকও হয়ে উঠবে মহার্ঘ পণ্য। বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয় পর্যালোচনা করে পদক্ষেপ নেয়ার মধ্যে বৈদেশিক মুদ্রা আয় যেমন হবে, তেমনি কর্মসংস্থানও হবে বহুজনের। সরকার এ খাতে এগিয়ে আসবেন বলে প্রত্যাশা করা যায়।
×