ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

সৌদি নারীরা সময়ের নির্ভীক পথে

প্রকাশিত: ০৭:৩৫, ১১ মে ২০১৮

সৌদি নারীরা সময়ের নির্ভীক পথে

সৌদি আরব রক্ষণশীল সমাজ-সংস্কারের বেড়াজালে আবদ্ধই শুধু নয়, সাবেকী আমলের চেতনাকে লালন করা একটি মুসলিম অধ্যুষিত জনগোষ্ঠীর দেশও। পুরো সমাজ যখন অজ্ঞানতার অন্ধকারে পথ চলতে থাকে সেখানে অসহায় এবং দুর্বল অংশ হিসেবে চিহ্নিত নারীরা হয় সব থেকে পিছিয়ে পড়া অংশ। কন্যা-সন্তান হিসেবে পিতামাতার কোলে লালিত হয়ে মেয়েরা আধুনিক শিক্ষা থেকে প্রায়ই বঞ্চিত থাকে। মৌলিক নাগরিক অধিকার কিংবা কোন সুযোগ সুবিধাও তাদের ভাগ্যে জোটে না। অন্যান্য পিছিয়ে পড়া দেশের মতো অতি বাল্যকাল থেকে শিশুরা বঞ্চনার শিকার হয়ে এক অপরিণত বিবাহ ঝুঁকিতে পড়তে বাধ্য হয়। আলোকিত জীবন থেকে প্রায়ই দূরে থাকা সৌদি মেয়েরা বেড়ে উঠতে থাকে স্বামীর ঘরে প্রবেশের তালিম নিয়েই। মেয়েদের তৈরি করা হয় সংসার ধর্ম পালনের আবশ্যকীয় কর্তব্য শেখানোর মধ্য দিয়ে। সমাজ-সংসারের নিয়ামক বিধি ধর্মীয় বোধও জাগতে থাকে একেবারে অল্প বয়স থেকে। সৌদি মেয়েরা তাদের এই বংশানুক্রমিক, প্রচলিত এবং ঐতিহ্যিক ধারাকে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় বিচেনায় নিষ্ঠার সঙ্গে মেনেও নেয়। কিন্তু আধুনিকতার নতুন জোয়ার পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো সৌদি আরবেও তার সময়োপযোগী আহ্বান সাধারণ মানুষের দরজায় পৌঁছে দিচ্ছে। নারীরাও সেই নতুন সময়ের অংশীদার হয়ে পেছন থেকে সামনে এগিয়ে আসছে। অবরোধবাসিনী শৃঙ্খলিত নারীরা নতুন যুগের নব অধ্যায়ে নিজেদের সম্পৃক্ত করতে সমাজের গুরুত্বপূর্ণ সূচকে তাদের জোরালো ভূমিকাকে প্রমাণ করছে। গাড়ি চালক হিসেবে মেয়েদের সামাজিক অধিকার কখনই স্বীকৃত ছিল না। এই স্বাধীনতা এক সময় পুরুষের একচেটিয়া ছিল। মেয়েদের ওপর থেকে অপসংস্কারের আবছায়ার পর্দা যতই স্পষ্ট হতে থাকে অর্ধাংশ এই গোষ্ঠী শিক্ষা থেকে আরম্ভ করে সব ধরনের নাগরিক দাবি অর্জনে সোচ্চারই হচ্ছে না আদায় কর নিতেও বদ্ধপরিকর। তা না হলে ভাবা যায় ধর্মাশ্রিত সৌদি রাষ্ট্রের নারীরা পর্দা প্রথাকে ছিন্ন করে পুরুষের সমানুবর্তী হয়ে দক্ষতার সঙ্গে বাইক চালাচ্ছে। সৌদি নারীদের জীবনও কর্মে এই নতুন অধ্যায়ের পথিকৃৎ হিসেবে যার নাম সবার আগে চলে আসে তিনি মরিয়ম আহমেদ আল-মোয়ানিমের উন্নয়নের বিভিন্ন সূচকে সম্পৃক্ত হতে গেলে নারীদের প্রচলিত পোশাকের কোন ব্যত্যয় ঘটে না। যেমন শিক্ষার্থী, সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে পেশাজীবী নারী থেকে শুরু করে বিভিন্ন কর্মসংস্থানে সৌদি নারীদের পোশাক পরিবর্তনের তেমন কোন প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু খোলা বাইকে বসে মাথায় হেলমেট কিংবা পায়ে বুট ছাড়া তার চেয়ে বেশি শরীরে আঁটসাট জিন্সের পোশাক জড়ানো ব্যতিরেকে চালকের আসনে নিজের অবস্থান প্রথমত আইনগতভাবেই সিদ্ধ হবে না। তারা পরেও নিজের স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করার ব্যাপারটিও সম্পৃক্ত হয়ে যায় প্রয়োজনের তাগিদেই। কারণ কঠোর অবরোধ প্রথায় নির্ভয়ে, নির্বিঘেœ সর্বোপরি বিধিসম্মত উপায়ে বাইক চালানো অসম্বব। এই নতুনতম জগতে পদচারণা করতে অবরুদ্ধ সৌদি নারীদের রীতিমতো প্রশিক্ষণ নিতে হয়েছে। সেখানেও তারা জয়ী হয়ে চালকের আসনে তাদের জায়গা করে নিয়েছে। বাইরাইন থেকে প্রশিক্ষিত হয়ে এখন আধুনিক সৌদি নারীরা যন্ত্র সভ্যতার উদ্যোম গতির সহযোগী হতে পেরেছে। কালো বোরখার আড়ালে ঢেকে থাকা সৌদি মহিলারা আজ সময়ের গতিতে তাল মিলিয়ে প্রচলিত আবরণকে ছিন্ন করে বের হয়ে আসতে পেরেছে। যুগের দাবি, সময়ের চাহিদা, কালের আবেদনকে অগ্রাহ্য করা নারীদের পক্ষে কোনমতেই আজ আর সম্ভব হচ্ছে না। তবে সংখ্যায় তারা নিতান্ত অপ্রতুল হয়েও এক সময় তা বেড়ে যেতে বিলম্ব হবে না। ধারণা করা যায় পাশ্চাত্য সভ্যতার অনুরক্ত সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান শিক্ষা, সংস্কৃতি, সংগ্রাম এমনকি প্রতিদিনের জীবন প্রবাহে আধুনিকতার জোয়ারের সঙ্গে নতুন সৌদি তৈরির যে মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন নারী জাতির এতদিনের শৃঙ্খল ভাঙ্গাও সেই আয়োজনের অনুষঙ্গ। এক অন্য রকম সৌদি আরব গড়তে বাজেট বরাদ্দকেও বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় আনা হয়েছে। শুধু তাই নয় নিজ দেশের নারীদের এই নবধারায় সংযুক্ত করেই ক্ষান্ত হয়নি সৌদি সরকার সেখানে কর্মরত প্রবাসী বাঙালী মেয়েদের সুরক্ষায় এক অনন্য কর্মসূচীও ঘোষণা করেছে। অসহায়, নির্যাতিত প্রবাসী বাঙালী নারীরা যাতে তাদের সমূহ বিপদকে সামলাতে পারে সে জন্য একটি অতিথি ভবন নির্মাণেরও প্রকল্প হাতে নিয়েছে। বিপন্ন, বিপর্যস্ত প্রবাসী কর্মজীবী নারীরা যে কোন সমস্যা মোকাবেলায় এই অতিথিশালায় ১৫ দিন বিনা অর্থে থাকা-খাওয়ার সুযোগ পাবে। শুধু তাই নয় দেশে ফিরতেও তাদের সহযোগিতা করা হবে। এমনকি সৌদি আরবেও এসব নিপীড়িত নারী তাদের মালিক বদলেরও অধিকার পাবে। ভাবাই যায় না এতবড় এক মহতী উদ্যোগ চেনা সৌদি আরবকে অনেকটাই ভিন্ন মাত্রায় এনে দাঁড় করাল। যে কোন ধর্ম আসলে নতুন সময়ের প্রতিবন্ধক হতে পারে না এমনকি হয়ও না। প্রতিটা ধর্মের শুরু প্রায়ই দেড় হাজার বছর আগে থেকে। ইসলাম ধর্মের আবির্ভাবই সবার শেষে। তাও প্রায় ৬ শতক থেকে ৭ শতকে। কিন্তু সময়ের দুর্বার মিছিলে ধর্ম নামক আধ্যাত্মিক ও ঐশ্বরিক বোধটি যুগে যুগে মানব সভ্যতার ক্রমবিকাশকে থামিয়ে দেয়নি। বরং এগিয়ে নিতে উদার মানবিক চেতনাকে প্রয়োগ করতেও দ্বিধা করেনি। তবে যে কোন প্রচলিত ব্যবস্থাকে ভেঙ্গে নতুন অবয়ব তৈরি করা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। মানব সমাজের ধারাবাহিক ইতিহাসে সময়টুকুই ব্যয়িত হয়েছে সুদীর্ঘকাল ধরে। বরং ধর্মের মানবিক, জাগতিক আর জীবনবোধের প্রত্যয় সভ্যতার সুবর্ণ সময়গুলোতে প্রয়োজনীয় ভূমিকা রাখতে চালিকাশক্তি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছে। অপরাজিতা প্রতিবেদক
×