লেখালেখি আসলেই কঠিন কাজ। তার মধ্যে কবিতা লেখা আরও কঠিন। মানুষ জেনে বা বুঝে খুব সহজে কঠিন কাজ করতে চায় না। আবার কেউ কেউ আছেন, ইচ্ছে করেই কঠিন বেছে নেন। পৃথিবীতে অনেক মানুষ কবিতা লেখে। তাই বলে যারা কবিতা লেখে তারা সবাই কিন্তু কবি না। কেউ শখ করে কবিতা লেখে, কেউ নিজেকে কবি হিসেবে পরিচয় দেয়ার জন্য কবিতা লেখে, কেউ ক্ষোভ প্রকাশ করার জন্য কবিতা লেখে, কেউ ভাললাগা থেকে লেখে, কেউ শুধু লেখার জন্য লেখে। আবার কেউবা কবিতাকে প্রাণ ভেবে লিখে লিখে সারা জীবন পার করে দেয়। যার কলম মৃত্যু ছাড়া কেউ থামাতে পারে না।
অনেকে হয়ত কবিতার অনেক ধরনের সংজ্ঞা দিয়ে থাকতে পারেন। সত্যিকার অর্থে বিচার করতে গেলে কবিতার সুনির্দিষ্ট কোন সংজ্ঞা নেই। মূলত মানুষের সময়োপযোগী চিন্তা-চেতনা, বোধ, ভাললাগা, না-লাগা, সুখ-দুঃখগুলোকে গুছিয়ে সুন্দর ও সাবলীল ভাষায় নির্দিষ্ট কিছু আকার-আকৃতির মাধ্যমে প্রকাশ করাকেই কবিতা বলে। কবিতার কিছু ধরন আছে বা থাকে। যেমন- কিছু কবিতা পড়ে পাঠক হাসে আবার কিছু কবিতা পড়ে পাঠক কাঁদে। একটি কথা বোধ হয় আমরা জানি। সেটি হলোÑ যেসব ঘটনা আমাদেরকে হাসায় তা আমরা দ্রুত ভুলে যাই। যে ঘটনায় আমরা কাঁদি;বরং তা দীর্ঘদিন মনে রাখি। সুতরাং আমি বলব যে কবিতা আমাদেরকে কাঁদায় অথবা ভাবায় তাই মূলত কবিতা। অথবা ভেতরে ভেতরে অন্যরকম বোধের প্রকাশ ঘটায় তাই কবিতা। আমরা হয়ত অনেক সময় বুঝতেই পারি না কখন কিভাবে লিখতে শুরু করি।
আমার মা একদিন খুব সুন্দর এক জোড়া বালা পরেছিলেন হাতে। আমি ঘরের দরজায় মোড়া পেতে বসে আছি। মা রুটি বেলছিলেন। রুটি বেলার সময় হাতের বালা বেলুনের সাথে লেগে টুন টুন বেজে উঠছিল খানিক পর পর। সেসময় বারান্দায় হাঁটছিলেন বাবা। হাঁটার ছলে অপেক্ষা করছিলেন, কখন রুটি হবে? কখন খেয়ে বাবা বাজারে যাবেন। ততক্ষণে লেবু গাছের একটি কচি পাতায় আমার দৃষ্টি স্থির। লিখতে শুরু করি : আমি শূন্যতার ছবি আঁকি/বাতাবি লেবুর পাতায়, /বারান্দায় বাবার পায়চারি /মায়ের কাঁকন বাজে কানে /তবু শূন্যতা আঁকব আর /একটি একটি করে, /জীবনের পাতা ছিঁড়ে /টুকরো টুকরো করব...
কখনও আবার ইহকালের পরকালের ভাবনায় শূন্যে ভাসতে থাকি। কখনও উড়তে থাকি এক পলি ধোঁয়া হয়ে। আসলে উড়তে উড়তে ভেতর থেকে খসে যাওয়া কথারা এমনই হয়’
কেউ জানো ?
কবরে শুয়ে আছে যারা
আমাদের হয়ে উল্লাস করবে
তারাই প্রথম....
ভোর বেলায় ঘাসের ওপর খালি পায়ে একা হাঁটছিলাম যখন। দেখলাম, শিশির বিন্দুর ওপর সকালের সূর্য আলো ছড়াচ্ছিল। মনে হলো, এটা নতুন কোন পৃথিবী। কেমন হিম হয়ে আসছিল শরীর। অনুভব করছিলাম একটি গরম কাপড়ের। ধীরে ধীরে সূর্য যখন গোল হয়ে উঠল শীতে- শিশিরে তখন অস্পষ্ট ডানা গজায়। এরপর ওরা পাখি হয়ে উড়ে গেল। আমি হিম হতে চেয়েছিলাম, ঠক ঠক করে কাঁপতে চেয়েছিলাম আরেকবার অতপর “উড়ে উড়ে যাও শীত পাখি
মেঘ খসে অতীত আকাশে
গরু পথ বিছানো খড়ের
মৌনতায় বিধবা ফসল
যতেœ থেকো দুর্বা ঘাসে, ক্ষেতে
ভোরের কুয়াশা; রাজহাঁসের
শোপিসের মতো তীক্ষè চোখে
অভিমান কিছুতো থাকুক”
মাঝে মাঝে মনে হয় আমাদের প্রত্যেকের জীবন যেন একেকটি কবিতা। কবিতা আসলে কখন কিভাবে কোন ভাবনা বা ভাললাগা থেকে শুরু হয় সত্যিই বলা মুশকিল। হয়ত কবিতারা এমনই হয়। আশপাশে ছড়িয়ে থাকা সবকিছুকেই আমার কবিতা মনে হয়। কোনটা সহজে ধরা যায়, কোনটা সহজে ধরা যায় না।
টান
স্পষ্ট আর অস্পষ্ট শব্দ দুটিতে এক ধরনের আকস্মিকতা রয়েছে। তৃতীয় যুদ্ধের গন্ধ নেই, এদিকে চতুর্থ যুদ্ধের প্রস্তুতি। তোমাকে ভাবতে ভাবতে শরীরের মিহি ঘামে ¯্রােতের জন্ম হয়। ¯্রােতে ভেসে যাচ্ছে দোজখের একাংশ
অদ্ভুত! ঘামছি আমি,
গন্ধ বেরুচ্ছে বারুদের
ভয়ঙ্কর ক্ষুধা পেয়েছে
কিছু দিন গেলে পিপাসায় মরব
মৃত মানুষেরা
কেউ জানো?
কবরে শুয়ে আছে যারা
আমাদের হয়ে উল্লাস করবে
তারাই প্রথম...
ডেস্কের ওপর রাখা মোটা তিনখানা কিতাব।
হালকা দুলে দুলে প্রথম কিতাবটি
টাইলসের ওপর আছড়ে পড়ল
একই ভঙ্গিতে
পর পর আরও দু’খানা
চলো, এখন ম্যাজিক্যাল থ্রো বাদ দিয়ে জ্যান্ত একটি সাগর খাব। ডেস্কের দ্বিতীয় তাকে একটি পানির পট। বোতল গ্রীন কালার ছিপিটি ঠেসে দেয়া। পটের অর্ধেকটাতে জল। বাকি অংশে বিন্দু বিন্দু জল জমা
স্পষ্ট?
হ্যাঁ
যে স্থানে তুমি
সে স্থান আমিময়
অস্পষ্ট?
সামনে যে পানির পটটি রাখা। দেখো, ওপর হতে এক ফোঁটা জল অন্য জলবিন্দুগুলোকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে মিশে যাচ্ছে; সাগরে
পরিকল্পনা
আমরা ক’জন মিলে সেদিন রংধনুর সরু লেজ খুঁঁজতে উদ্দেশ্যহীন মিটিং-এ জড়িয়ে যাই। তখন কর্পোরেট রাস্তা তৈরি হওয়ার কথা ছিল না। অদৃশ্য পথে হাঁটতে গিয়ে অদৃশ্য হতে হতে দৃশ্যমান ছবি
এটি প্রাগৈতিহাসিক যুগের দ্বিতীয় প্লান। ভাবলাম ভাস্কর হব; একটি স্থাপত্য তৈরি করব, যা আমার সুখের রহস্য জেনে হত্যার সুপরিকল্পিত পর্ষদ সাজাবে দক্ষ হাতে। যার দৈব প্রাণ লুকিয়ে রয়েছে সোনালি রূপচাঁদার নাভীতে
তৃতীয় প্লান, একটি পোর্ট্রেট করব। যে আয়ুর পুরুত্ব বুঝবে সে প্রেমিকেশ্বর
খসড়া কথাবার্তা-১
রাতের পাতায় ছায়া আঁকি;
নিজেকে গুঁড়িয়ে দিই
স্কেচে সাজাই
আমাদের অর্ধদিন ঘুম
বাকিটা আরাধনা
পাঠ অবিশ্রান্ত চোখ
ফুরফুরে বাতাসে কেঁপে উঠে
বিশ্বাসের ডিঙি নৌকা
ফেরা
স্বচ্ছ কাচের ওপাড়ে ছায়া নড়ছে
এক’পা-দু’পা করে এগুচ্ছে
বাকরুদ্ধ হয়ে আসছে
পিনপিন নড়ছে কলিজা
যেভাবে নড়ে টিকটিকির লেজ
দাদুর অপহোয়াইট রঙের কোর্তার মতো
হুবহু ছায়াটি
আমার জন্মের কাহিনী মনে আছে-
দাদু যে মাসে ইরান বাণিজ্যে গিয়েছিল
সবাই ভেবেছিল ছেলে হব
দেশ-বিদেশে সওদাগর হয়ে বাণিজ্য করব
নাতিকে দিবেন বলে-
দাদু অতি যতেœ এনেছিলেন
ইরানি আতর
মায়ের সঙ্গে খুব রেগে ছিলেন
কন্যা সন্তান জন্ম দেয়ার অপরাধে
নাতির শোকে বছর ঘুরতেই
মারা গেলেন দাদু
খেলা-ঘরের টেবিলে আতর-বোতল
সাজিয়ে রাখা ১৮ বছর
অতি আনন্দে আজ
শরীরে মেখেছি একটুখানি
আতরের ঘ্রাণে
আবার ফিরে এসেছেন দাদু
আমি জানি! জানি আমি!
এটা ফেরা নয়, প্রতিশোধ
স্বচ্ছ কাচের ওপাড়ে ছায়া নড়ছে
এক’পা-দু’পা করে এগুচ্ছে
কেন
কেন এমন হয়ে যায়?
একপশলা বৃষ্টি
পাহাড়ি ঝর্ণা হয়ে আসে
একফোঁটা জল থাকে না সম্বল;
সে আসে অতি ধীরে দিলের নগরে
দমকা হাওয়ায় মিশে দূরে চলে যায়;
অসাড় শরীর শূন্যতায়
কেন এমন হয়ে যায়?
কেন এমন হয়ে যায়?