ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগ, বার্নাব্যুতে দারুণ জয়ে কোয়ার্টার ফাইনালের পথে বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা, তিন বদলে বাজিমাত জিনেদিন জিদানের, রেফারিকে দোষারোপ উনাই এমেরির, সাডিও মানের হ্যাটট্রিকে শেষ আটে এক পা লিভারপুলের, রিয়াল মাদ্রিদ ৩-১ প্যারিস ;###;সেইন্ট জার্মেইন, এ

চার মিনিটের ঝড়ে রিয়ালে বিধ্বস্ত পিএসজি

প্রকাশিত: ০৪:৩৯, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

চার মিনিটের ঝড়ে রিয়ালে বিধ্বস্ত পিএসজি

জাহিদুল আলম জয় ॥ চ্যাম্পিয়ন্স লীগটা যে রিয়াল মাদ্রিদের বাড়িঘর, এটা আপনাকে মানতেই হবে। বিষয়টি এমন যে ওরা চাইলেই চ্যাম্পিয়ন হতে পারে। অন্য কোন দলের জন্য যেখানে একবার ট্রফিটা ছুঁয়ে দেখা সৌভাগ্যের সেখানে বারবার এই অসাধ্য সাধন করে চলেছে গ্যালাক্টিকোরা। গত মৌসুমে তো ইতিহাসে প্রথমবারের মতো টানা দ্বিতীয়বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। অথচ সেই দলটি এবারের মৌসুম অনেকটা অচেনা। কিন্তু বড় আসরে যে তারা সবসময় দুর্বার সে প্রমাণ আরেকবার রেখেছে। বুধবার রাতে চ্যাম্পিয়ন্স লীগের শেষ ষোলোর প্রথম লেগে ফরাসী জায়ান্ট প্যারিস সেইন্ট জার্মেইনের (পিএসজি) মুখোমুখি হয় রিয়াল। নিজেদের ভেন্যু সান্টিয়াগো বার্নাব্যুতে পিছিয়ে পড়েও ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর জাদুতে ভর করে ৩-১ গোলে জিতেছে স্প্যানিশ পরাশক্তিরা। মূলত ৮৩ থেকে ৮৬Ñ এই চার মিনিটের ঝড়ে বিধ্বস্ত হয়েছে পিএসজি। আর দারুণ এই জয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার দৌড়েও এগিয়ে গেছে জিনেদিন জিদানের দল। দু’দলের ফিরতি লেগ হবে আগামী ৬ মার্চ প্যারিসে। একই রাতে শেষ ষোলোর আরেক ম্যাচে স্বাগতিক পর্তুগালের ক্লাব এফসি পোর্তোকে ৫-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে শেষ আট প্রায় নিশ্চিত করে ফেলেছে ইংলিশ জায়ান্ট লিভারপুল। দ্য রেডসদের হয়ে হ্যাটট্রিক করেন সাডিও মানে। একটি করে গোল করেন মোহামেদ সালাহ ও রবার্টো ফিরমিনো। গত মৌসুমেও বার্সিলোনার কাছে ৬-১ গোলে বিধ্বস্ত হয়ে ঠিক এই স্টেজ থেকে বিদায় নিয়েছিল পিএসজি। এবারও যেন একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে যাচ্ছে। ওই সময় বার্সিলোনার হয়ে খেলেছিলেন নেইমার। ব্রাজিলিয়ান সুপারস্টার এবার পিএসজিতে থাকলেও দলের জন্য কোন পার্থক্য গড়ে দিতে পারেননি। অথচ তার ওপরেই দলের আক্রমণভাগ পুরোপুরি নির্ভরশীল। ঘরোয়াভাবে রিয়ালের একের পর এক হতাশাজনক পারফর্মেন্সে এই জয়টা খুব বেশি জরুরী ছিল রিয়ালের। মার্কো এ্যাসেনসিও বদলি বেঞ্চ থেকে উঠে এসে জয়সূচক দুটি গোলের পেছনে অবদান রেখেছেন। ১-১ গোলে সমতা থাকাবস্থায় ম্যাচটি যখন শেষ হতে যাচ্ছিল তখন রিয়াল কোচ জিনেদিন জিদানের তিনটি বদলই সব হিসেব পাল্টে দেয়। বেনজেমা, কাসেমিরো ও ইস্কোর বদলে গ্যারেথ বেল, লুকাস ভাসকুয়েজ ও এ্যাসেনসিওকে মাঠে নামান রিয়াল বস। এরপর দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে দুই গোল আদায় করে জয় তুলে নেয় চ্যাম্পিয়নরা। গত চারটি চ্যাম্পিয়ন্স লীগের তিনটিতের বিজয়ী রিয়াল মাদ্রিদের অন্যতম সদস্য বেলকে বাইরে রেখেই একাদশ সাজান জিদান। পরে অবশ্য বদলি হিসেবে মাঠে নামেন। অন্যদিকে পিএসজি কোচ উনাই এমেরি অধিনায়ক থিয়াগো সিলভাকে দলের বাইরে রেখে ২২ বছর বয়সী প্রেসনেল ক্লিমপেবেকে রক্ষণভাগের মূল স্থানে জায়গা করে দেন। স্বাগতিকরা শুরুটা ভাল করলেও নেইমার নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। ১৫ মিনিটে নাচোকে ফাউলের অপরাধে হলুদ কার্ড দেখেন তিনি। মার্সেলোর সহায়তায় রোনাল্ডোর একটি দারুণ শট পিএসজি গোলরক্ষক আলফোনসে আরেয়োলা রুখে দেন। ৩৩ মিনিটে কাইলিয়ান এমবাপের লো ক্রস থেকে আদ্রিয়েন র‌্যাবিওট পিএসজিকে এগিয়ে দেন। এ্যাওয়ে গোলের সুবিধায় পিএসজি যখন আত্মবিশ্বাসে ভরপুর ছিল ঠিক তখনই টনি ক্রুসকে ডি বক্সে ফাউল করলে গিওভানি লো সেলসোর বিপক্ষে পেনাল্টির নির্দেশ দেন রেফারি। স্পট কিক থেকে রিয়ালের পক্ষে সমতা ফেরান রোনাল্ডো। দ্বিতীয়ার্ধে সফরকারীরা আবারও এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পায়। কিন্তু এমবাপের শট আটকে দেন গোলরক্ষক কেইলর নাভাস। এরপর হঠাৎ করেই এডিনসন কাভানিকে বসিয়ে তার স্থানে থমাস মেনিয়ারকে রাইট-ব্যাক হিসেবে নামান এমেরি। কিন্তু কার্যত এ্যাসেনসিওকে মাঠে নামানোর সিদ্ধান্তে জিদান সফল হন। তিন মিনিটের মধ্যে রিয়ালের দুই গোলে অবদান রাখেন তিনি। ৮৩ মিনিটে এ্যাসেনসিওর ক্রস আরেয়োলা রুখে দিলে ফিরতি বলে রোনাল্ডো কোন ভুল করেননি। এরপর এ্যাসেনসিওর দারুণ এক পাসে মার্সেলো ৮৬ মিনিটে রিয়ালের জয় নিশ্চিত করেন। ম্যাচ শেষে রিয়াল অধিনায়ক সার্জিও রামোস বলেন, এই দিনগুলো অবশ্যই সবাই মনে রাখবে। পিছিয়ে থেকে যেভাবে আমরা ফিরে এসেছি তা প্রশংসার দাবিদার। চ্যাম্পিয়ন্স লীগের শিরোপা ধরে রাখতে হলে আমাদের এভাবেই খেলা চালিয়ে যেতে হবে। রিয়াল মাদ্রিদকে কেউ মৃত মনে করলে ভুল করবে। অপ্রত্যাশিত হারে অজুহাত খুঁজে পেয়েছেন পিএসজি কোচ উনাই এমেরি। বাজে রেফারিংই নাকি তাদের হারের কারণ। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রেফারির সিদ্ধান্তগুলো বিতর্কিত ছিল। আমরা যখন ভাল খেলছিলাম তখনই প্রশ্নবিদ্ধ এক সিদ্ধান্তে (পেনাল্টি) থেকে ওরা ম্যাচে ফেরার শক্তি খুঁজে পেল। রেফারি আমাদের কোন সাহায্যই করেনি। যখন ম্যাচ আবার আমাদের নিয়ন্ত্রণে তখন ওরা ২-১ করে ফেলল। কিন্তু সম্ভবত একটা ফাউল হয়েছিল গোলের আগে। এরপর তৃতীয় গোল। এমেরি অবশ্য শুধু রিয়ালের গোলই নয়, পিএসজির একটি পেনাল্টি না পাওয়া নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। বলেন, আমরা ভাল খেলেছি। এ ফল আমাদের প্রাপ্য নয়। রামোসের হাতে একবার বলও লেগেছিল।
×