বেঁচে থাকা
অজামিল বণিক
যে মানুষ উড়তে জানে পাখির মতোন
উড়তে উড়তে ছুঁয়ে ফেলে একদা আকাশ
অতঃপর একদিন নিজেই নক্ষত্র হয়ে যায়
আকাশের,
তাকেই বেঁচে থাকা বলে।
মানুষ কি উড়তে জানে?
জানে বটে, যার আছে ঝিলমিল প্রজাপতি-রঙিন পাখা কল্পনার;
এ পাখায় ভর করে শুধুমাত্র মানুষই
বেঁচে থাকতে জানে।
অন্যেরা সব টিকে থাকে মাটি আঁকড়ে
সহায়-সম্পদে,
বেঁচে-থাকা হয় না তাদের।
** সিন্ধুতে বিন্দু
সৈয়দ রফিকুল আলম
সায়র তটে একলা আমি মগ্ন মোহে দেখি-ঊর্মি দোলাদোল
লবণ জল আছড়ে পড়ে বজ্রাঘাতের সিংহ-নাদ বেয়ে
তটিনী ঢেউ নৃত্যপটের সিম্ফনিতে ভাসে অস্তকূলে
সমুদ্রের মৈনাক ঢেউ ঘূর্ণিচক্রে কপোত-কোতি ডুব সাঁতারের নেয়ে।
বিশালাক্ষীর প্রাণ-প্রবাহি কোটি বছর এক ধারাতে চলে
নোনতা পানি ফোয়ারা ছুটে বিশ্বময় ঘুরে
ভূমিস্থলী আমরা দেখি মগ্নবিভায় ঘুরে
আঁধার কালো জড়ায়-খরা, মেঘ বিম্ব হতে দূরে।
ডিমভাঙ্গা কুসুম বৃত্তলয়ে মন্মোহনী টানে
মিহিন রোদে গৈরিক ঘেরা গোলবৃত্ত পিংকি শাড়ি ওড়ে
সওদাগরী জাহাজ চলে ভেঁপুর স্বরে ধ্রুপদ লয় তানে
কালো ঘোড়ার লাগাম টেনে অতল জলে ডুব অস্তে ডুবে।
** পড়া
জাহিদ হায়দার
একবার পড়ি বাংলা-নিয়মে,
পরের ক্ষণেই আরবী,
মুহূর্ত পরে প্রাচীনরীতিতে চীনা
রাতদিন পড়ি, তোমাকেই পড়ি, বিকল্প নেই।
বাম দিক থেকে মনোযোগ দিয়ে
যেন শুধু ধ্যান, সাধনা-প্রধান, ছাত্র সুবোধ।
একটি পর্ব শেষ না হতেই
দোয়েল-কণ্ঠে শব্দেরা বলে,
‘আঙুলের গতি যথা মাত্রায় রাখতে শেখ।’
রেখেছি যখন, পদ্মামেজাজে অক্ষর বলে,
‘শিখবে কখন? হচ্ছে না কিছু,
যতœ কোথায়? ঠোঁটে নেই ঢেউ।
এবার পঠন শুরু“করো তুমি ডান দিক থেকে।’
কিছু দূর গেছি। অক্ষর হাসে।
আনন্দ হবে। হচ্ছি সফল?
ক্ষিপ্ত হঠাৎ। শব্দেরা সব খেজুরের লাল।
গ্রিবার নদীতে মরুভূমি জ্বলে।
‘চৈনিক করো পাঠের নিয়ম।’
উপরের থেকে যতেœ যখন
খুব সতর্ক নিরীহ পা-া যাচ্ছি নেমে
মাঝপথে গেছি,
বিহ্বলতায় বুজেছিল চোখ লিপির আনন।
আবার শাসন, বিরক্তি স্বর,
‘হচ্ছে না কিছু। আকাট মূর্খ।’
রাতদিন পড়ি
ছাত্র আজও বালকপ্রতিম।
** জীবন সুন্দর
শামসুন্নাহার রশিদ
মানুষ সুন্দর হয়ে ওঠে
যখন সে হাসে
মানুষ সুন্দর হয়ে ওঠে
যখন সে কাঁদে
অপরূপ হয়ে ওঠে
যখন বৃষ্টি নামে
এবং তাদের হৃৎপি-গুলো ভিজতে থাকে
ভিজতে থাকে।
গাঢ় থকথকে কোন এক সুগন্ধি বিকেলে।
জগতে আর কিই বা আছে পাবার মতো
কিই বা আছে দেবার মতো
গন্ধরাজের গন্ধ বহুল উষ্ণ সেরাত
রিক্ত প্রেমের সিক্ত বসন অন্তরাঘাত
কিই বা আছে নেইকো জানা।