ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

প্রশ্নবিদ্ধ জয়ে বাঁচল রহমতগঞ্জ, সর্বনাশ ফরাশগঞ্জের

প্রকাশিত: ০৬:১৭, ১৪ জানুয়ারি ২০১৮

প্রশ্নবিদ্ধ জয়ে বাঁচল রহমতগঞ্জ, সর্বনাশ ফরাশগঞ্জের

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ রেফারি সুজিত ব্যানার্জি চন্দন খেলা শেষের বাঁশি বাজাতেই মাঠে ঢুকে পড়লো এক দঙ্গল দর্শক। তারা অভিনন্দন জানাতে ছুটে গেল রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস সোসাইটির ফুটবলারদের। তারা তখন পরস্পরের সঙ্গে অনেকটা ঈদের দিনের মতোই কোলাকুলিতে ব্যস্ত। প্রতিপক্ষ সাইফ স্পোর্টিং ক্লাবের ফুটবলাররা তখন নীরবে এবং দ্রুত হাঁটা দিয়েছেন ড্রেসিংরুমের দিকে। হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন ম্যাচটায় রহমতগঞ্জই জিতেছে ২-০ গোলে। আগেরদিনই স্টেডিয়াম পাড়ায় গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ ফুটবলে শনিবার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত দিনের প্রথম ম্যাচ নিশ্চিতভাবেই পাতানো হতে যাচ্ছে। আর এই পাতানো খেলার মঞ্চ নাটকে অভিনয় করবে সাইফ-রহমতগঞ্জ। রহমতগঞ্জ যদি ড্র করে বা হারে, তাহলে তারা অবনমিত হবে সেক্ষেত্রে বেঁচে যাবে আরেক ‘গঞ্জ’ ফরাশগঞ্জ। আর যদি রহমতগঞ্জ জিতে তিন পয়েন্ট অর্জন করতে পারে তাহলে কপাল পুড়বে ফরাশগঞ্জের। শনিবার সেটাই হয়েছে। জিতেছে ‘আইলো’, ‘ডাইলপট্টি’ এবং ‘জায়ান্ট কিলার’ খ্যাত রহমতগঞ্জই। তবে গ্যালারিতে উপস্থিত ফুটবলপ্রেমীরা সবাই সমস্বরে অভিযোগ করেছেন, রহমতগঞ্জের এই জয় ছিল প্রশ্নবিদ্ধ, যাতে মূল সর্বনাশটা হয়েছে ‘লালকুঠি’ খ্যাত ফরাশগঞ্জের। যদিও আগেরদিনই তাদের বিরুদ্ধে পাতানো খেলার অভিযোগ উঠেছিল। নিজেদের চেয়ে শক্তির বিচারে অনেক এগিয়ে থাকা শেখ জামাল ধানম-িকে ৩-১ গোলে হারানোতেই এই অভিযোগ। মজার ব্যাপারÑ ফরাশগঞ্জ বনাম জামাল ম্যাচটি ‘প্রকাশ্য ও ন্যক্কারজনক’ পাতানো হয়েছে বলে একটি প্রতিবাদ-বিবৃতিপত্র স্টেডিয়ামের প্রেসবক্সে উপস্থিত ক্রীড়া সাংবাদিকদের মধ্যে বিলি করা হয়। সেখানে লেখকের জায়গায় ‘ফুটবলপ্রেমী দর্শকবৃন্দ’ লেখা থাকলেও অনেকের মতে রহমতগঞ্জ ক্লাবই এই প্রতিবাদপত্রের রচয়িতা। প্রতিবাদপত্রে আরও উল্লেখ করা হয়, এই লীগে বিজেএমসির সঙ্গেও পাতানো ম্যাচ খেলেছে ফরাশগঞ্জ। ফরাশগঞ্জের কোচ বাফুফে এবং এএফসি কর্তৃক পাতানো ম্যাচের দায়ে ইতোপূর্বে এক বছরের জন্য শাস্তিপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। অথচ ভাগ্যের কি পরিহাস, শনিবার ম্যাচটি খেলার পর এখন উল্টো রহমতগঞ্জের বিরুদ্ধে উঠেছে ম্যাচ পাতানোর অভিযোগ। এর স্বপক্ষে সবচেয়ে বড় যুক্তিÑ কামাল বাবু রহমতগঞ্জের হেড কোচ হওয়ার পাশাপাশি সাইফ স্পোর্টিংয়ের যুব দলেরও উপদেষ্টা কোচ। ম্যাচ শেষে তাকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি পাতানো খেলার অভিযোগ অস্বীকার করেন। তবে স্বীকার করে বলে জানান চাঞ্চল্যকর একটি তথ্য, ‘আমরা ম্যাচটি ছেড়ে দেয়ার জন্য এবং তিন পয়েন্ট দেয়ার জন্য সাইফকে প্রস্তাব দিয়েছিলাম। কিন্তু সাইফ তা প্রত্যাখ্যান করে। তারা বলেছে, আমরা নতুন ক্লাব। তাছাড়া নীতিগতভাবে পাতানো খেলার ঘোর বিরোধী। কাজেই তোমরা পারলে মাঠে জেনুইন ফুটবল খেলে আমাদের হারিয়ে তিন পয়েন্ট নাও। আমি খুশি যে আমরা সেটাই করতে পেরেছি।’ তারপরও প্রশ্ন উঠেছে, এই ম্যাচে সাইফ তাদের একজনও বিদেশী ফুটবলার (ওয়েডসন, শেরিংহাম ও ভ্যালেন্সিয়া) খেলায়নি। দশদিন পরই সাইফের এএফসির ম্যাচ। সে কারণেই হয়তো তাদের চাঙ্গা রাখতেই খেলানো হয়নি। এছাড়া কার্ড সমস্যার জন্য মাঠে ছিলেন না ডিফেন্ডার তপু বর্মণও। কিন্তু শাকিল আহমেদ, জামাল ভুঁইয়া, জুয়েল রানা, হেমন্ত ভিনসেন্ট বিশ্বাস, মোহাম্মদ ইব্রাহিম, মতিন মিয়ারা তো ছিলেন। তাদের নিয়েও দল ০-২ গোলে হারাটা তাই বিস্ময়, রহস্য এবং প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। পেশাদার লীগে অন্তত চতুর্থ স্থান আগেই নিশ্চিত হয়ে গেছে সাইফের। ফলে তারা সুযোগ পেয়েছে এএফসি কাপে খেলার। শেষ ম্যাচে জয় পেলে তারা তৃতীয় হয়ে লীগ শেষ করতে পারতো। কিন্তু সেটা করতে পারেনি তারা। যখনই নিচের সারির ক্লাবগুলো রেলিগেশনের শঙ্কায়, তখনই রহস্যজনকভাবে শক্তিধর ক্লাবগুলোকে বড় ব্যবধানে হারিয়ে দিচ্ছে পয়েন্টে তলানির দলগুলো। পুরো মৌসুমে যারা জ্বলে উঠতে ব্যর্থ হয়েছে তারাই কিনা লীগের শেষ রাউন্ডে এসে শক্তিধর দলে পরিণত হচ্ছে। ম্যাচের ২ মিনিটেই গোল আদায় করে নেয় রহমতগঞ্জ। বাঁপ্রান্ত থেকে রহমতগঞ্জের একটি আক্রমণ ফিস্ট করেন সাইফ গোলরক্ষক পাপ্পু হোসেন। কিছুটা এগিয়েও আসেন। বাঁপ্রান্ত থেকে দলীয় অধিনায়ক মিডফিল্ডার নাইমুর রহমান শাহেদ উড়ন্ত অবস্থায় বাঁপায়ের ভলি করেন। বল থামাতে কোন উদ্যোগই নিতে দেখা যায়নি পাপ্পুকে (১-০)। ৩৪ মিনিটে আবারও নাটক। বাঁপ্রান্ত থেকে সাদমান হোসেন এ্যানির থ্রো হেড করে ফিরিয়ে দেন সাইফের এক ডিফেন্ডার। ফিরতি বলে মিডফিল্ডার সোহেল যখন বাঁপায়ে ভলি করেন বক্সে উপস্থিত সাইফের একাধিক ডিফেন্ডার প্রতিরোধের কোন চেষ্টাই করেননি, গোল (২-০)। প্রতি ম্যাচেই দল গোল করতে না পারলে ডাগআউটে বেশ উত্তেজিত দেখা যায় সাইফের কোচ রায়ান নর্থমোরকে। কিন্তু শনিবারের দুই গোল হজমের পরও তাকে বিস্ময়করভাবে দেখা গেছে বেশ শান্ত মেজাজে, যেন তার দলই লিড নিয়েছে। দ্বিতীয়ার্ধে যেন গোল করার চেয়ে সময়ক্ষেপণেই বেশি আগ্রহী ছিল দুই ক্লাব। সাইফের এই হারে কপাল পুড়লো ফরাশগঞ্জের। কারণ পয়েন্ট টেবিলে সর্বনি¤œ ১৭ পয়েন্ট নিয়ে তারা অবনমিত হয়ে নেমে গেল চ্যাম্পিয়নশিপ লীগে। আর ২২ ম্যাচে ১৮ পয়েন্ট নিয়ে দশম স্থানে থেকে পেশাদার লীগে টিকে থাকল রহমতগঞ্জ। আর চার নম্বরে থাকা সাইফের পয়েন্ট ৪১।
×