ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

আবারও ফিরছে বাংলার মসলিন

প্রকাশিত: ০৩:৫০, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৭

আবারও ফিরছে বাংলার মসলিন

হারিয়ে যাওয়া মসলিন পুনরুদ্ধারে নতুন আশার আলো দেখা দিয়েছে। ফলে আবারও স্বমহিমায় ফিরছে বাংলার সেই হারানো ঐতিহ্য মসলিন কাপড়। আদি, অকৃত্রিম সেই মসলিন হয়তো নয়, তবে তার কাছাকাছি এক ধরনের মসলিনকে আবারও ফিরিয়ে আনতে গবেষণা করছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন গবেষক। সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় দেড় বছরের গবেষণায় ইতোমধ্যে তারা পেয়েছেন ফুটি কার্পাস তুলা গাছের সন্ধান। যার সুতা থেকে তৈরি হতো মসলিন। আগামী তিন বছরের মধ্যে মসলিনকে ফিরিয়ে আনার সেই সুখবরটা দেওয়া যাবে বলে আশাবাদী গবেষকরা। সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী মসলিন কাপড় ফিরিয়ে আনতে গবেষণা শুরু হয়েছে। এ নিয়ে কাজ শুরু করছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) তিন শিক্ষকসহ ১০ সদস্যের বিশেষজ্ঞ দল। ইতোমধ্যে বিশেষজ্ঞ দলের সদস্যরা মসলিনের প্রধান উৎস ফুটি কার্পাস তুলার সন্ধানে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল পরিদর্শন করে কিছু নমুনা সংগ্রহ করেছেন। এগুলোর বৈশিষ্ট্য ফুটি কার্পাস তুলার কাছাকাছি বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। ইতিহাস ঘেটে জানা যায়, ঐতিহ্যবাহী মসলিন কাপড় এতই সূক্ষ্ম ছিল- একটি শাড়ি একটি দিয়াশলাই বাক্সে রাখা যেত। যদিও এর সপক্ষে কোন প্রমাণ মেলে না। দিয়াশলাইয়ের বাক্সে রাখা সম্ভব কিনা বিতর্ক থাকলেও মসলিনের কাপড়ের সূক্ষ্মতা, হালকা ও আরামদায়ক ভাব নিয়ে কোন বিতর্ক নেই। মসলিন শাড়ি বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে বহুল প্রচলিত। এই মসলিন কাপড় পুনরুদ্ধার প্রকল্পের আওতায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বায়োলজিক্যাল সায়েন্সের পরিচালক ও বায়োটেকনোলজি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. মনজুর হোসেনের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ দল গঠন করে দেওয়া হয়েছে। দলের অন্য সদস্যরা হলেন, রাবির এ্যাগ্রোনমি এ্যান্ড এ্যাগ্রিকালচারাল এক্সটেনশন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মোস্তাফিজুর রহমান, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এম ফিরোজ আলম, টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের বুটেক্সের ডিন আলীমুজ্জামান, তুলা উন্নয়ন বোর্ডের একজন ও তাঁত বোর্ডের দু’জন কর্মকর্তা। এ ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে প্রয়োজনে আরও তিনজন সদস্য এ বিশেষজ্ঞ দলে কাজ করছেন। সম্প্রতি অধ্যাপক ড. মনজুর হোসেন জানান, মসলিন বিলুপ্ত হয়েছে অন্তত তিনশ বছর আগে। বিলুপ্ত সোনালি ঐতিহ্যের সেই মসলিন আবার ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৪ সালে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় পরিদর্শনকালে সোনালি ঐতিহ্যের মসলিন তৈরির ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। এরপর সরকার থেকে ৩৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এ টাকা দিয়েই মূলত গবেষণা শুরু হয়। পরবর্তীতে এ বিষয়ে একটি প্রস্তাব সংশ্লিষ্ট পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। প্রকল্পটির নাম দেওয়া হয় ‘বাংলাদেশের সোনালি ঐতিহ্য মসলিনের সুতা তৈরির প্রযুক্তি ও মসলিন কাপড় পুনরুদ্ধার’ (প্রথম পর্যায়)। প্রস্তাবিত প্রকল্পের প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ কোটি ১০ লাখ টাকা। আগামী ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মেয়াদকালে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করবে। প্রকল্পটি ইতোমধ্যে পাস হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এ প্রকল্পটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। প্রথম পর্যায়ে চলতি বছর থেকে থেকে আগামী ২০১৯ এই তিন বছর ধরে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হবে। এখানে সাফল্য পাওয়া গেলে দ্বিতীয় পর্যায়ে আবারও তিন বছরের প্রকল্প নিয়ে কাজ শুরু হবে। তাঁত বোর্ড সূত্র জানায়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত টিম বাংলাদেশের যেসব এলাকায় মসলিনের সুতা তৈরির উপযোগী ফুটি কার্পাস তুলা উৎপাদন হয় তা খুঁজে বের করবে। আর বাংলাদেশে এ ধরনের তুলা এখন না পাওয়া গেলে বিদেশ থেকে সমজাতীয় তুলা এনে মসলিন সুতা তৈরির ডিএনএ প্রোফাইল তৈরি করা হবে। মসলিন কাপড় নিয়ে গবেষণা কাজে নিয়োজিত গবেষণা টিমের সদস্য রাবির এগ্রোনমি এ্যান্ড এগ্রিকালচারাল এক্সটেনশন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আমরা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে দুষ্প্রাপ্য রেশম সংগ্রহ করেছি। সেগুলো থেকে উৎপন্ন সুতা থেকে মসলিনের কাছাকাছি কিছু পাওয়া যায় কিনা সেটা নিয়ে কাজ করেছি। তবে এখনও বলার মতো কোন অগ্রগতি হয়নি। তিনি বলেন, গবেষণার জন্য সরকারী যে বরাদ্দ সেটি এ বছরের জুলাই মাসে পাশ হয়েছে। এর আগ পর্যন্ত আমরা গবেষণার স্ট্র্যাটেজি ঠিক করেছি। আমাদের গবেষণা দলের প্রধানসহ তিন সদস্যের একটি টিম ইতোমধ্যে ইংল্যান্ড সফর করেছেন। তারা মসলিন নিয়ে ইংল্যান্ডের গবেষকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। পাশাপাশি সেখানকার জাদুঘরে সংরক্ষিত মসলিন কাপড় এবং আমাদের জাদুঘরে সংরক্ষিত মসলিনের কাপড় নিয়ে কাজ করবেন। এখন গবেষণা কার্যক্রম পুরোদমে শুরু হয়েছে। -মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী থেকে
×