ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

আইনী পরামর্শ

প্রকাশিত: ০৬:০৪, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৭

আইনী পরামর্শ

প্রশ্ন : আমাদের বাড়ির পাশে যে বাড়িটি রয়েছে কারণে অকারণে বাড়ির সীমানা নিয়ে যে কোন রকম অজুহাতে তারা ঝগড়া করতে আসে। সেদিনও গতানুগতিক ঘটনা ঘটল। আমগাছের ডালপালা বিস্তারের মতো সামান্য ঘটনা নিয়ে বিবাদের সূত্রপাত। এক দুই কথা থেকে বিষয়টি বড় আকারের ঝগড়ায় রূপ নেয় এবং পরে তা মারামারি পর্যন্ত গড়ায়। আমার ভাইয়া ঢাকাতে লেখাপড়া করে। গত ক’দিন হলো বাড়িতে এসেছে। ঝগড়ার এক পর্যায়ে পাশের বাড়ির বড় ছেলে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। আমার ভাইয়া তাকে জিজ্ঞাসা করে যে, সে এ রকম ভাবে গালিগালাজ করছে কেন। এই কথার জের ধরে ওই বাড়ির ছেলে ভাইয়াকে উত্তেজিত হয়ে মারতে আসে একপর্যায়ে ভাইয়া রেগে গেলে উভয়ের মধ্যে হাতাহাতি হয়। উভয়ই কিল-ঘুষির মতো আঘাতে জখম হয়। এমন সময় ওই বাড়ির বড় ছেলে ভাইয়াকে বাঁশ দিয়ে আঘাত করতে এলে ভাইয়া বাঁশ হাত দিয়ে ঠেকিয়ে দিয়ে ধাক্কা দেয়। ধাক্কায় পাশের বাড়ির ছেলেটি পিচলা ইটের রাস্তায় হোঁচট খেয়ে এমনভাবে পড়ে যান, যার ফলে তার বাঁ হাত ভেঙ্গে যায়। এখন তারা বিষয়টি এলাহি কা-ে রূপ দিচ্ছে। তাদের বোঝানো সত্ত্বেও থানায় মামলা করেছে। আমার ভাইয়ার সামনে পরীক্ষা। এমতাবস্থায় মামলা মোকদ্দমায় জড়িয়ে পড়লে আমার ভাইয়ার জীবনের ওপর খারাপ প্রভাব পড়বে। বিষয়টি নিয়ে আব্বু, আম্মু খুবই চিন্তিত। আমরা কি করব, বুঝে উঠতে পারছি না। কিভাবে এর থেকে পরিত্রাণ পাব, জানাবেন কী? ফারহানা গাজী, নরসিংদী উত্তর : আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছে, এটা একটা অনিচ্ছার মারামারি। যেহেতু আপনার পাশের বাড়ির ছেলেটি থানায় এজাহার দায়ের করেছেন, সুতরাং থানা থেকে পুলিশ কর্মকর্তা ঘটনা ও পরিস্থিতি তদন্ত করার উদ্দেশ্যে অথবা এজাহার অনুসারে অপরাধী ব্যক্তিকে গ্রেফতারের জন্য হয় তিনি নিজে আসবেন অথবা থানার অন্য কোন অফিসারকে আসার জন্য নির্দেশ দেবেন। তখন বিষয়টি তাদের পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে জানাবেন এবং আপনাদের পক্ষে দু’-একজন সাক্ষীও রাখবেন। থানায়ই এর মীমাংসা করার চেষ্টা করবেন। যদি সম্ভব না হয়, বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়, তাহলে প্রথমে একজন এ্যাডভোকেটের শরণাপন্ন হতে হবে এবং এটা প্রমাণ করতে হবে যে, আপনার ভাই ইচ্ছাকৃতভাবে এ আঘাত ঘটাননি। বিষয়টি ঞযব চবহধষ ঈড়ফব ১৮৫০ এর ৩১৯ অনুসারে আঘাতের ব্যাখ্যার সঙ্গে মিলে যায় এবং ধারা ৩২০ অনুসারে এটি গুরুতর আঘাতের পর্যায়ে পড়ে। আবার ধারা ৩৩৫ এর উত্তেজনাবশত স্বেচ্ছাকৃতভাবে গুরুতর আঘাত প্রদান করা সংক্রান্ত বিষয়ে বলা হয়েছে। কিন্তু আপনার কথা থেকে বোঝা যাচ্ছে যে, এ আঘাত ইচ্ছাকৃত নয় বরং উত্তেজনাবশত সে যে ইটের পিচলা রাস্তায় হোঁচট খেয়ে পড়ে গিয়ে হাত ভাঙতে পারে, এ বিষয় আপনার ভাইয়া পূর্বের থেকে অবগত ছিলেন না। হাত ভাঙ্গার বিষয়টি বিরোধী পক্ষের গালিগালাজের যে চরম পরিণতি, এটাও স্পষ্ট। ধারা ৯৬-এ বলা হয়েছে যে, ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষা অধিকার প্রয়োগকালে কোনকিছু করা অপরাধ নয়। আত্মরক্ষার অধিকার সম্পর্কে ধারা ৯৬তে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে। সুতরাং ধারা ৯৬ অনুসারে, আপনার ভাইয়া বাঁশের গুরুতর জখম থেকে নিজেকে রক্ষার জন্য সে প্রতিঘাত করেছেন তার ফলাফল সম্পর্কে নিজে অবগত ছিলেন না। এটা বিচার প্রক্রিয়ার সাক্ষীর মাধ্যমে প্রমাণ করতে হবে। এটা একটা দীর্ঘমেয়াদী পথ। সব থেকে ভাল হয়, আপনারা যদি আপোস মীমাংসা করতে পারেন।
×