সন্ধ্যার আবছা অন্ধকারে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া দুই বন্ধু গল্প করতে করতে হেঁটে যাচ্ছে। দুনিয়ার কোনকিছুর প্রতি তাদের কোন খেয়াল নেই। তারা তাদের গল্প নিয়েই মেতে আছে। ফাঁকা রাস্তায় হঠাৎ করেই তাদের সামনে চারজন লোক উপস্থিত হলো। কিছু বুঝে ওঠার আগেই দুই বন্ধুর হাত থেকে দামী মোবাইল সেট কেড়ে নিল। তারা চিৎকার দিতে গেলে ছিনতাইকারীদের একজন পকেট থেকে ধারালো ছুরি বের করে বলল, ‘চিৎকার করলে একদম জানে শেষ করে ফেলব। যা আছে সব বের করে ভালোয় ভালোয় দিয়ে দে। ‘নিরুপায় হয়ে বন্ধু দুজন তাদের সবকিছু দিয়ে দিতে বাধ্য হলো। ছিনতাইকারীরা কার্য সমাপ্ত করে অন্ধকারে মিলিয়ে গেল। কিন্তু দুই বন্ধুর বুকে তারা যে একটা দগদগে ক্ষত তৈরি করে গেল তার তীব্রতা কি আমরা অনুভব করতে পারি?
উপরে বর্ণিত ঘটনাটি আসলে কাল্পনিক। তবে ছিনতাইয়ের শিকার প্রতিটি মানুষের কষ্টের তীব্রতা একই। জীবনকে নিঃশেষ করে দিয়ে তিল তিল করে গড়ে তোলা সম্পদ যদি কেউ ছিনিয়ে নিয়ে যায় তাহলে তা সহ্য করা একটু কষ্টকরই বটে! এই তো কিছুদিন পূর্বে ঢাকা শহরে ছিনতাইকারীর আক্রমণে মায়ের কোল থেকে পড়ে গিয়ে মাত্র ছয় মাস বয়সী একটি শিশু মারা গেছে। কী দোষ ছিল নিষ্পাপ ওই শিশুটির যার জন্য তাকে জীবন দিতে হলো? আমরা কি একবারের জন্যও বুঝতে চেষ্টা করেছি সন্তানহারা ওই মায়ের কষ্টের তীব্রতা কতখানি?
দিন দিন আমাদের এই সমাজে ছিনতাই জঘন্য রূপ ধারণ করে চলেছে। মানুষ সর্বক্ষণ আতঙ্কে থাকে। শুধু রাতের আঁধারেই নয়, দিনের আলোতেও ছিনতাইকারীরা মহাসমারোহে ছিনতাইয়ের মতো জঘন্য ও সমাজবিরোধী কাজ করে চলেছে। এদের বিরুদ্ধে তেমন কোন ব্যবস্থা নেয়ার নজিরও চোখে পড়ে না। মাঝে মধ্যে দু-একজন অবশ্য ধরা পড়ে জনগণের হাতে পিটুনি খায়। এটা কিন্তু কোন সমাধান নয়। আমাদের বাস্তবসম্মত কোন সমাধানের পথে হাঁটতে হবে। এই সমাজকে কোনভাবেই ছিনতাইকারীদের হাতে ছেড়ে দেয়া যাবে না।
তাহলে এবার প্রশ্ন হতে পারে, এ সমস্যা সমাধানের উপায় কী? অবশ্যই এর সমাধান রয়েছে ছিনতাইকারীরা ভিনগ্রহের কোন প্রাণী নয়। তারা এই সমাজেরই মানুষ। তারা কেন ছিনতাইয়ের মতো এমন নিকৃষ্ট কাজ বেছে নিল সবার আগে সেটা জানা প্রয়োজন। যেসব ছিনতাইকারী পুলিশের হাতে ধরা পড়ে তাদের নিকট হতে এটা জানা যেতে পারে। সাধারণত ছিনতাইকারীদের ব্যাপারে পুলিশের একটা অনীহা দেখা যায়। এখন আর এমনটা করলে চলবে না। ছিনতাইকারীদের ব্যাপারে পুলিশকে শক্ত অবস্থানে যেতে হবে। খুঁজে খুঁজে এসব দুষ্কৃতকারীদের বের করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। সমাজে আইনের শাসন পরিপূর্ণভাবে প্রতিষ্ঠা করতে পারলে অন্যায়-অপরাধ বহুলাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব। সর্বোপরি জনগণকে ছিনতাইকারীর ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। প্রয়োজনে জনসাধারণেরর মাঝে এ বিষয়ে লিফলেট বিতরণ করা যেতে পারে। তবে যে কোন উপায়েই হোক সমাজ থেকে ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা পুরোপুরি নির্মূল করতে হবে। কারণ একটি সুস্থ ও স্থিতিশীল সমাজ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এগুলো বড় বাঁধা হয়ে দেখা দিতে পারে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী থেকে
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: