ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

নাজনীন বেগম

কীর্তিনাশার কবি

প্রকাশিত: ০৭:২৭, ১ ডিসেম্বর ২০১৭

কীর্তিনাশার কবি

মোহাম্মদ রফিক বাংলাদেশের একজন প্রতিভাবান, নন্দিত কবি। তাঁর কাব্য সম্ভারের সীমানা এত ব্যাপক আর গভীর যেখানে কোন নির্দিষ্ট পুরস্কার তাঁর শৈল্পিক চেতনা কিংবা কাব্যিকশৌর্য নির্মাণে বিশেষ কোন তাৎপর্য বহন করে না। তবুও বিভিন্ন আঙ্গিকে স্রষ্টা তাঁর সৃজনশীল নিবেদনে কোন একটি বিশেষ পর্যায়ে বিজ্ঞজনদের বিবেচনায় শ্রেষ্ঠতম হিসেবে অভিষিক্ত হন। এর আগে অনেক পুরস্কারে তাঁর সৃষ্টি কর্ম বিশেষ করে কবিতায় তাঁকে অনবদ্য হিসেবে সম্মানিত করা হয়েছে। জেমকন সাহিত্য পুরস্কার কবি হিসেবে প্রথম মোহাম্মদ রফিককে এই বিশেষ পদকটি প্রদান করে তাঁর বিখ্যাত কাব্যÑ ‘দু’টি গাথা কাব্য এ কোন বেহুলাক্স সে ছিল বেদেনি।’ ২০১৬ সালের ভাষার মাসে গ্রন্থটি প্রকাশ পায়। শৈল্পিক চৈতন্যে যাঁর মাটি আর মানুষ, নান্দনিক বোধে যিনি আবহমান বাংলার ঐতিহ্যিক ধারার ধারক সর্বোপরি আধুনিকতার নির্মোহ আবেগে বিশ্ব জননীতার অপার সম্ভাবনা যাঁকে অনুক্ষণ নিবিষ্ট রাখে সেই কবি জীবনব্যাপী শুধু সৃষ্টিশীলতায়ই মগ্ন থাকেননি সমাজ সংস্কারের আবর্তন, বিবর্তনেও যাঁর নির্ভীক ভূমিকা ছিল কেবল সময়ের দাবি মেটানোই নয় আরও বেশি করে রক্ষণশীল সমাজকে সাধারণ মানুষের বাসযোগ্য করার এক বলিষ্ঠ প্রত্যয়ে। কবির জীবনাচরণ, সংগ্রামী অভিযাত্রার সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত হয়ে আছে প্রতিভাদীপ্ত মননের এক অদ্ভুত সমীকরণ। সচেতন বিবেক আর বোধে সমাজ আর মানুষকে নিয়ে যা যা করার তাগিদ অনুভব করেছেন তাই তাই হয়েছে তার সৃজনযঞ্জের অনুষঙ্গ। যেখানে রাজনৈতিক সচেতনতা, সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে শুরু করে সাংস্কৃতিক আঙ্গিনাকেও বিশুদ্ধ আবহে ভরিয়ে তোলার যে নিমগ্নতা সেখানে কবিকে একজন নিবেদিত সাধক বললে বেশি বলা হবে না। যে বোধে অপরাজনীতি, বৈষম্যপীড়িত অর্থনীতি কিংবা সমাজ সংস্কারের বিপরীত স্রোত তাঁকে তাড়িত করে সেখান থেকেই তুলে আনেন তাঁর কবিতার আনুষঙ্গিক উপকরণ। সেই ঋদ্ধ চেতনায় আরও বেশি সম্পৃক্ত হয়ে থাকে মাতৃভাষা, মাতৃভূমি, আপন প্রকৃতির বেড়াজাল থেকে শুরু করে অসহায়, নির্বিত্ত সাধারণ জনগণও। ১৯৪৩ সালে জন্ম নেয়া কবির শৈশব-কৈশোর অতিক্রান্তের সময়কাল ছিল উত্তাল রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, সাম্প্রদায়িক দাবানলে উত্তপ্ত অবিভক্ত বাংলার বিভীষিকাময় পরিবেশ তার চেয়েও বেশি ছিল দেশ ভাগের এক অবর্ণনীয় নগ্ন থাবা। বাংলার তেভাগা আন্দোলনের চরম দুঃসময়ে পৃথিবীর আলো দেখা মোহাম্মদ রফিক মাত্র ৫ বছর বয়সে প্রত্যক্ষ করেন ’৪৭-এর বিক্ষুব্ধ সামাজিক অবয়ব। পিতামহ ছিলেন কংগ্রেসের একনিষ্ঠ কর্মী এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাহক। শিশু রফিকের স্মৃতির মিনারে চিরস্থায়ীভাবে জায়গা করে নেয় সেই দুঃসহ অভিজ্ঞতা। স্মৃতি হাতড়ে আজও মনে করেন দেশ বিভাগের দিনটিতে তথাকথিত আনন্দ মিছিলে যোগ না দেয়ার পিতামহের অনমনীয় দৃঢ়তা। বাগেরহাটের বৈটপুর গ্রামে কবির জন্ম, শৈশব-কৈশোর পার করার সুবর্ণ সময়। সে বেদনা আজও তাঁকে বিমর্ষ করে যে সময়ে বাগেরহাটে ছিল হিন্দু-মুসলমানের সম্মিলিত বসবাস, ঐক্য এবং ভ্রাতৃত্বের এক নিবিড় বন্ধন। সেই আত্মিক সৌহার্দ্য ছিন্ন-ভিন্ন হতেও সময় লাগেনি। ’৫২-এর ভাষা আন্দোলনের সময় তিনি মাত্র ৯ বছরের বালক। সেই স্মৃতিও অম্লান। ঢাকা শহরের সশস্ত্র আগুনের ফুলকি এসে লাগে সারা বাংলাদেশের আনাচে কানাচে। যে উত্তাপ পিরোজপুরের ক্ষুদ্র স্কুল বালক মোহাম্মদ রফিককেও জাতির দুঃসময়কে চেনাতে দেরি করেনি। এখনও মনে আছে মিছিলে অংশ নেয়ার সেই অনাবিল অনুভবের কথা। এসব সংগ্রামী অভিযাত্রা শৈশব থেকেই কবির হৃদয়ে গ্রথিত হয়ে যায়। তার ওপর গ্রামের স্রোতস্বিনী নদী, গাছপালা পরিবেষ্টিত সুবজের সমারোহের সঙ্গে সাধারণ মানুষের নিবিড় নৈকট্য তো আছেই। যা আজ অবধি তার সৃজনশীলতার একান্ত উপজীব্য। চারপাশের লড়াই বিগ্রহের বহমান স্রোতে তাঁর সার্বিক চেতনার উত্তরণ পর্বও সময়ের এক বিশিষ্ট বলয়ে আবর্তিত। তাঁর মতো প্রতিভাবান কবি সঙ্গত কারণেই রবীন্দ্রভক্ত হবেন এটারও কোন বিকল্প হয় না। সেই প্রথম রবীন্দ্রদর্শনের বর্ণনা আছে তাঁর বিভিন্ন লেখায়। পিরোজপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণীতে বিতর্ক প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান লাভ করে রবীন্দ্রনাথের ‘চোখের বালি’ উপন্যাসটি পুরস্কার পেয়েছিলেন। প্রথমে পরিবার থেকে এই বই পড়ার কোন অনুমতি মেলেনি। এক সময় নিজের অপরিসীম উৎসাহে চোখের বালি পড়ার সুযোগ হলো। শুধু সুযোগ হলো না অবাক আর মুগ্ধতায় ভিন্ন জগতের নতুন নিশানাও যেন পেলেন। সেই সুখস্বপ্ন কবিকে যেভাবে বিমোহিত করে সেটা তাঁর বর্ণনায়, ‘আমি যেন আর আমাতে রইলাম না, ছড়িয়ে গেলাম সর্বত্র। লিখতে বসলে দেখি একেকটা শব্দ, পুকুরের ঢেউ, নদীর মাছ, হাওয়ার শব্দ গাছের পাতার শির শির হয়ে ধরা দিচ্ছে আমার কলমে। সে এক অদ্ভুত অনুভবই বটে। আজও মুক্তি মিলল না সেই ঘোর থেকে’। সেই নিজেকে তৈরি করা শুরু। মাতৃভাষার প্রতি নিমগ্নতায় তাঁকে কখনও বিদেশী ভাষার প্রতি বিরূপ করে তোলেনি। বরং বিশ্ব পরিসরের জ্ঞান ভা-ারও তার প্রতিভাদীপ্ত মননের সহযোগী হয়েছে। কবিতা রচনার সূচনাকালও ছিল রবীন্দ্র অনুভবে নিজেকে বিলীন করে দেয়া। এখানেও সেই রবীন্দ্রনাথেরই সঞ্চয়িতা। ভাষা, ছন্দোবদ্ধ আবহ থেকে শুরু করে কবিতার নির্মাণশৈল, নান্দনিক দ্যোতনা রবীন্দ্র স্পর্শে জেগে উঠলেও নিজের কবিতায় নিজেই হয়েছেন একমাত্র নির্ণায়ক। তারপর কোনকিছু ভাবার অবকাশই হয়নি সৃষ্টিশীল তাড়নায়। ’৬০-এর দশকে বাঙালীর সার্বিক জীবন প্রবাহে পাকিস্তানী জঙ্গী গোষ্ঠীর যে আগ্রাসন মোহাম্মদ রফিক সেই অতলান্ত স্রোতের এক ভাসমান নাবিক। সেটাও সংগ্রামী অভিঘাতের এক দীপ্ত চেতনা। কলেজছাত্র কবির জীবন কখনও সুস্থির, নির্বিঘœ কিংবা নিরাপদ ছিল না। সে স্মৃতি কবিকে এখনও ভাবায়। নটরডেম কলেজে ভর্তি হয়ে রাজনৈতিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ কবি বামপন্থীদের পতাকায় যুক্ত হলে তাঁকে ঢাকা ছাড়তে হয়। পরবর্তীতে বগুড়া এবং সর্বশেষ ঠিকানা হয় রাজশাহী সরকারী কলেজে। ইতোমধ্যে হুলিয়া কিংবা কারাবরণের মতো অসহনীয় অভিজ্ঞতারও মুখোমুখি হতে হয় তাঁকে। যে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে জীবনের পথচলা সেই ১৯৬১ সালে রবীন্দ্র শতবর্ষতে উৎসব আয়োজনের পরিবর্তে সারাদেশে নির্দেশ জারি করা হয় রবীন্দ্র বর্জনের। সেই বিপরীত স্রোতকে সামলাতে গিয়ে রবীন্দ্র সঙ্গীতজ্ঞ ওয়াহিদুল হকের সঙ্গে পরিচয়, সখ্য এবং অচ্ছেদ্য বন্ধনে জড়িয়ে পড়া। সে স্মৃতি আজও কবিকে নানা মাত্রিকে পেছনের দিকে ফেরায়। গল্পে গল্পে ভরিয়ে তোলেন সে সব দিনের সুখময় নির্ভীক অভিযাত্রা যাতে কোনভাবেই রবীন্দ্রনাথকে আমাদের থেকে বিচ্ছিন্ন করা সম্ভব হয়নি। রাজশাহী কলেজে ছাত্রাবস্থায় আইয়ুব খানের গাড়ি বহরে ঢিল ছোড়া তখনকার রাজনৈতিক সময়ের এক বলিষ্ঠ প্রত্যয়। পাশাপাশি লেখালেখির জগতেও সদর্প পদার্পণ। সেই সব লেখায় নির্মোহ আবেগ আর অবক্ষয় রোধ কি দারুণভাবে কাজ করত যা এখনও কবিকে উদ্বুদ্ধ করে। ’৬০-এর দশকে প্রত্যেকটি লড়াই, সংগ্রামে কবির সচেতন অংশগ্রহণ যেভাবে তার আদর্শিক চেতনাকে শাণিত করেছে একইভাবে সৃজনশীল ভা-ারকে ও ভিন্নমাত্রায় এগিয়ে দিয়েছে। ফলে দেশ, মানুষ, প্রকৃতি, আবহমান বাংলর চিরায়ত ঐতিহ্য সবই তার কবিতার সমৃদ্ধ অবয়বের সবচেয়ে বড় নির্ণায়কের ভূমিকা পালন করেছে। এখান থেকে তিনি কখনও চ্যুত হননি, বাংলার মাটি, জল, বায়ু আর বড় শক্তি মানুষ আর মানবতা থেকে তার কাব্য সম্ভার বিন্দুমাত্র বঞ্চিত হয়নি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী সাহিত্যের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মোহাম্মদ রফিক বিশ্ব পরিসরের সার্বিক জ্ঞান ভা-ারের একজন নিবেদিত পাঠক হলেও মাতৃভাষার প্রতি তার দরদ অকুণ্ঠ এবং দৃঢ়। এমন দৃঢ়চেতা কবি আর এক সংগ্রামী সহযোদ্ধা কাজী নজরুল ইসলামকে শ্রদ্ধায় স্মরণ করেন তাঁর অতুলনীয় সঙ্গীত ভা-ার বাঙালীকে উপহার দেয়ার জন্য। প্রসঙ্গক্রমে এসেই গেল তিরিশের দশকে কাব্য জগতের এক সাহিত্যিক আন্দোলনের উন্মাদনা। রবীন্দ্রনাথকে পাশ কাটাতে গিয়ে পাশ্চাত্য সাহিত্য চর্চায় নিমগ্ন হওয়া যদিও সমর্থনযোগ্য নয় তবুও এই কল্লোল যুগের কবিদের কাব্যিক মূল্যায়নও যথার্থভাবে হওয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন। কারণ এদের বাদ দিয়ে বাংলা সাহিত্যের কবিতার ধারাকে কোনভাবে আনা যাবে না। সুতরাং তাদের সৃষ্টি দিয়েই এসব কবির সৃষ্টি সম্ভারকে অবশ্যই ভাবতে হবে। জীবনানন্দ দাশ তার অত্যন্ত নিকটতম এবং প্রিয় কবি। মুক্তিযুদ্ধকালীন কলকাতায় থাকা অবস্থায় কবি বিষ্ণু দের সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাত কবি আজও মুগ্ধতার সঙ্গে স্মরণ করেন। যে প্রতিক্ষণে বিষ্ণু দের ওপর অরুণ সেনের নজর কাড়া গঠনমূলক আলোচনা এক সময় তা বাংলাদেশের কবি হিসেবে প্রথম মোহাম্মদ রফিককে নিয়েই লেখা হয়েছে। সেই আলোচক অরুণ সেন এবং সেই সাময়িকীও প্রতিক্ষণ। ’৬০-এর দশকের উত্তাল আর বিক্ষুব্ধ সময়ই কবিকে তৈরি করে দিয়েছিল নিজের মতো করে দাঁড়ানোর দৃঢ় প্রত্যয়ে। ১৯৭০ সালে তার প্রথম কবিতার বই ‘বৈশাখী পূর্ণিমা’ বের হলেও সেটা কবির দৃষ্টিতে তার অপরিপক্ব হাতের অবোধ রচনা। যেখানে তিনি নিজেই নিজের মতো তৈরি হতে পারেননি। পরবর্তীতে ‘ধুলোর সংসারে মাটিতে’ কবি নিজের পায়ের তলার মাটি অনেকটাই শক্ত অবস্থায় নিয়ে এসেছেন। কারণ হিসেবে তিনি দেশ আর ব্যক্তি জীবনের হরেক রকম সঙ্কট, বিপর্যয় এবং টানাপোড়েনের এক দুঃসহ অভিব্যক্তি তুলে ধরেছেন। তার ওপর ’৭৫-এর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের এক অসহনীয় নির্মম পরিস্থিতি তো চৈতন্যের সাবলীলতাকে কিছুটা হলেও থামিয়ে দিয়েছিল। দৃঢ়চেতা এবং প্রত্যয়ী মোহাম্মদ রফিক নিজেকে সম্পূর্ণভাবে চেনান তার ‘কীর্তিনাশা’ কাব্যগ্রন্থে। সেই অবিচলিত বোধ আর উদ্যমে এখনও তাড়িত হন। তার বেড়ে ওঠা, শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়া পুরো দেশের নাড়ি নক্ষত্র দেখা সব মিলিয়েই তার কবিতার অঙ্গ সৌষ্ঠব। সারা বাংলাকে তোলপাড় করে দেয়া ‘খোলা কবিতা’ আজও লড়াইয়ে, বিপ্লবে, আন্দোলনে, চেতনায় ঝড় তোলে, এক বলিষ্ঠ প্রত্যয়ে। সবাই নতুন উদ্যমে জেগে ওঠে, বিপন্ন স্রোতকে সামাল দেয়ার শক্তি অর্জন করে। সাহিত্যিক বলয় হয় অনেক বেশি নির্মল আর জীবন ঘনিষ্ঠ। মানুষ আর প্রকৃতির অপূর্ব মেলবন্ধনে স্নিগ্ধ, সুশোভিত এমনকি লড়াকু বাংলাও তার কবিতায় নিজস্ব গতিপথ তৈরি করে, ছান্দিক আবেশে পঙ্্ক্তিমালার শৈল্পিক শৌর্য নির্ণীত হয় সর্বোপরি কবিতার নান্দনিক শৈলীতে পাঠক বিভোর হয়। মোহাম্মদ রফিকের সৃষ্টি মহিমায় নারী শক্তির যে দৃপ্ত চেতনা প্রতিভাত হয় তা উজ্জ্বল হয়ে আছে কপিলা, দুটি গাথা কাব্য এ কোন্ বেহুলাক্স সে ছিল বেদেনিতে। কপিলা, মহুয়া কিংবা বেহুলা চিরায়ত নারী শৌর্যের প্রতীক যারা যুগে যুগে নিজেকে বাঁচিয়েও সমাজ সংস্কারের সমস্ত অপকর্মকে ভেঙ্গে সুন্দর আর মঙ্গলের আবাহন করে। বাংলার লোকগাথা থেকে নেয়া এই নারী শক্তি ত্রয় কবির নারীর অধিকার, সচেতনতা, স্বাধীনতা শেষ অবধি নির্যাতন আর নিপীড়নকেও মূর্ত করার প্রয়াস পায়। নারীদের হীনম্মন্যতায় রেখে সমাজের সুস্থ এবং স্বাভাবিক বলয় কখনও নিরাপদ আর নির্বিঘœ হবে না। কবির উক্তিই তুলে ধরা হলোÑ ‘কপিলা, মহুয়া এবং বেহুলাÑ এই তিনটাকে নিয়ে আমি একটি জগত তৈরি করতে চাই। যে জগতে এই নারী শক্তির বিকাশকে আমি আমার জায়গা থেকে পূর্ণ মাত্রায় ভাবতে পারব।’ তাঁর সুদঢ় অভিমত নারী সামনের দিকে বিকাশমান ধারায় যতই এগিয়ে যাবে ঠিক সেই গতিতে সমাজও ভেতর থেকে শক্ত হয়ে পরিবর্তনের ধারায় বহমান হবে। ১৯৯৩ সালে তাঁর নির্বাচতি কবিতা বের হয় কলকাতা থেকে। তাঁর সৃষ্টিশীল ক্ষমতাকে এখনও তিনি নিরন্তর রেখেছেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর নতুন জনম পাওয়া মোহাম্মদ রফিকের অনবদ্য কাব্যসম্ভার বাংলা ও বাঙালীকে যে মাত্রায় পূর্ণ করেছে তার বেগবান ধারা নির্বিঘœ হবে সেই অপেক্ষায় অগণিত পাঠক।
×