ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

সরকারী দলের ১০ প্রার্থী মাঠে

রংপুর সিটি নির্বাচনে প্রার্থী হতে দৌড়ঝাঁপ

প্রকাশিত: ০৬:২৪, ২৯ জুলাই ২০১৭

রংপুর সিটি নির্বাচনে প্রার্থী হতে দৌড়ঝাঁপ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের এখনও বাকি পাঁচ মাস। তবে নির্বাচনী হাওয়া বইছে মাঠ-ঘাট থেকে অন্দরমহলে। চায়ের কাপেও ঝড় কম বইছে না। নগরবাসীর মন কাড়তে বিভিন্ন দিবস উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানিয়ে পোস্টার সাঁটিয়েছেন নির্বাচনে আগ্রহী প্রার্থীরা। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীরাই বেশি। তারা বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সজীব ওয়াজেদ জয়ের ছবিসংবলিত রঙিন পোস্টার-ফেস্টুনে ভরিয়ে তুলেছেন নগরীর অলিগলি। আসছে নির্বাচনে নৌকার কান্ডারি কে হচ্ছেন তার স্পষ্ট কোন সংকেত না পেলেও নির্বাচনী মাঠে আছেন দলের ৭ থেকে ১০ জন প্রার্থী। প্রত্যেকেই দলের ও নিজের অবস্থান জানান দিচ্ছেন সভা-সমাবেশ থেকে শুরু করে পোস্টার-ফেস্টুনে। কেউ হাল ছাড়তে নারাজ। নৌকার কান্ডারি হতে কেন্দ্রে চলছে যোগাযোগ। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, রংপুর সিটি নির্বাচনে নৌকা পেতে জোর লবিং চালাচ্ছেন বর্তমান সিটি মেয়র শরফ উদ্দিন আহাম্মেদ ঝন্টু, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য চৌধুরী খালেকুজ্জামান, রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ও রংপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সাবেক সভাপতি আবুল কাশেম, রংপুর মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি রেজাউল ইসলাম মিলন, রংপুর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের জেলা কমান্ডার মোছাদ্দেক হোসেন বাবলু, আওয়ামী লীগ নেতা মুক্তিযোদ্ধা ইলিয়াছ আহাম্মেদ, রংপুর ৫ আসনের সংসদ সদস্য এইচ এম আশিকুর রহমানের ছেলে রাশেক রহমান, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি শাফিয়ার রহমান, সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি ম-ল। এ ছাড়া জাতীয় পার্টির নেতা সাবেক রংপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ মানিকও আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে দৌড়ঝাঁপ করছেন। রংপুর জেলা ও নগর আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র এবং সাধারণ নেতাকর্মীরা বলছেন, সুখে-দুঃখে পাশে পাওয়াসহ বিতর্কিত নন এবং ক্লিন ইমেজ আছে এমন কাউকে দলীয় প্রার্থী চান তারা। তারা মনে করেন, স্থানীয় এই সিটি নির্বাচন আগামী জাতীয় নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগের জন্য চ্যালেঞ্জ। সিটি নির্বাচনে জয়-পরাজয় প্রভাব ফেলবে আগামী সংসদ নির্বাচনে সদর আসনের ফলাফলে। কারণ হিসেবে বলছেন, এরশাদের লাঙ্গল ঘাঁটি ছিল রংপুরের ৬টি আসনই। এর মধ্যে চারটি আছে নৌকার দখলে। জাতীয় পার্টির আছে রংপুর সদর আর গংগাচড়া আসনটি। জাতীয় নির্বাচনে ওই চারটিসহ নতুন দুইটি দখলে নিতে রংপুর সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের যোগ্য প্রার্থী নির্বাচন করার কোনো বিকল্প নেই। রংপুর সিটি কর্পোরেশন ২০১২ সালের ২৮ জুন সিটি কর্পোরেশন হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এরপর প্রথম নির্বাচনে শরফুউদ্দিন আহাম্মেদ ঝন্টু ২৭ হাজার ভোটের ব্যবধানে জয়ী হন। তার নিকটতম প্রার্থী ছিলেন সাবেক সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। মোস্তফা-ঝন্টু ওই নির্বাচনে সরাসরি দলের হয়ে নির্বাচন না করলেও মোস্তফাকে পাঁচ মাস আগেই এবার সিটি মেয়র হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। আর ঝন্টু আছেন আওয়ামী লীগের নৌকার দিকে তাকিয়ে। তবে নৌকা পাবেন কি না সে অপেক্ষা না করে মেয়র ঝন্টু নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য। ঝন্টু সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি আশাবাদী দল আমাকে মনোনয়ন দেবে।’ তার দাবি, সরকারের সহযোগিতায় সিটির উল্লেখযোগ্য অনেক উন্নয়ন করেছেন তিনি। বাকি কাজ শেষ করতে তাকেই দলীয় মনোনয়ন দেয়া হবে। প্রচার চালাচ্ছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য চৌধুরী খালেকুজ্জামান। প্রচারণায় নেমে পড়েছেন তিনি। নগরবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে নগরীর অলি-গলিতে পোস্টার ফেস্টুন সাটিয়েছেন এই আওয়ামী লীগ নেতা। তিনিও সাংবাদিকদের বলেন, আমি আশাবাদী দল আমাকে মনোনীত করবে। রংপুর মেট্রোপলিটন চেম্বারের সভাপতি রেজাউল ইসলাম মিলনও আশা করেন দলের প্রাথী হবে। জোরেশোরে গণসংযোগ চালাচ্ছেন তিনি। ব্যবসায়ীদের নেতা হিসেবে তার ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। দল মনোনয়ন দিলে তিনি বিপুল ভোটে জয়ী হবেন এমন আশা প্রকাশ করেন তিনি। মনোনয়ন প্রত্যাশায় আছেন মুক্তিযোদ্ধা মোছাদ্দেক হোসেন বাবলু। দল মনোনয়ন দিলে নির্বাচন করবেন তিনি। সে কারণে চেষ্টার তদবিরে পিছিয়ে নেই এই বীর মুক্তিযোদ্ধা। দলীয় প্রার্থী নিয়ে হাইকমান্ডের সাথে যোগাযোগ আছে রংপুর-৫ আসনের সংসদ সদস্য এইচ এম আশিকুর রহমানের ছেলে রাশেক রহমানের। রংপুরকে একটি সুন্দর নগরী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে মেয়র পদে প্রার্থিতার প্রস্তুতির কথা সাংবাদিকদের জানান তিনি। নির্বাচনের প্রস্তুতি আছে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি শাফিয়ার রহমান, সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি ম-লেরও। তবে রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ৯ জন প্রার্থী নির্বাচনের মাঠে থাকলেও দলীয় নেতা-কর্মীদের অপেক্ষা করতে হচ্ছে দলের হাইকমান্ডের সিদ্ধান্ত পর্যন্ত। দলের পক্ষ থেকে একজনকে মনোনয়ন দেয়া হবে ঠিকই, কিন্তু সবাই দলের হয়ে কী কাজ করবেন কি না এমন প্রশ্নও দেখা দিয়েছে নেতাকর্মীদের মধ্যে। রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম রাজু জানান, সিটি কর্পোরেশনের মেয়র প্রার্থীর মনোনয়ন দেবে কেন্দ্রের মনোনয়র বোর্ড। স্থানীয়ভাবে কোন কিছু বলার নেই। আমরা চাই দলের প্রতি আনুগত্য আছে, বঙ্গবন্ধুর কন্যা দেশরতœ শেখ হাসিনার প্রতি অনুগত, নিষ্ঠাবান, জনপ্রিয়, সৎ-যোগ্য এবং নির্বাচন করলে বিজয়ী হবেন এমন লোককে মনোনয়ন দেবে কেন্দ্র।’
×