ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

বিমানবন্দর সড়কে দেশীয় প্রজাতির গাছ

প্রকাশিত: ০৬:৩৮, ১০ জুন ২০১৭

বিমানবন্দর সড়কে দেশীয় প্রজাতির গাছ

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আর বনসাই নয়, অবশেষে রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির গাছ লাগানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। এ জন্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শও নেবে তারা। দেশের প্রধান সড়কের পাশে চীন-জাপানের ঐতিহ্যময় বনসাই নয় দেশীয় গাছ লাগানোর কথা বলে আসছেন উদ্ভিদবিদরা। অনেক সমালোচনার মুখে অবশেষে আর বনসাই লাগানো হবে না এই মর্মে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। তবে ইতোমধ্যে যেসব বনসাই গাছ লাগানো হয়ে গেছে সেগুলো রাখার কোন যুক্তি নেই বলে মনে করছেন উদ্ভিদবিদরা। এর সঙ্গে একমত প্রাণিবিদরাও। তারা বলছেন, বনসাই সরিয়ে দেশী গাছ লাগানো হলে তার ফুল-ফলে জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ হবে। সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের তত্ত্বাবধানে ভিনাইল ওয়ার্ল্ড গ্রুপ নামের একটি কোম্পানি নিজস্ব অর্থায়নে বিমানবন্দর সড়কে সৌন্দর্যবর্ধনের অংশ হিসেবে প্রায় একশটি বনসাই লাগিয়েছে। সমালোচনা হওয়ায় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে আর বনসাই না লাগানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সওজ । সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের (সওজ) ঢাকা সড়ক সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সবুজ উদ্দিন খান বলেন, রাজধানীর বিমানবন্দর-বনানী সড়কে লাগানো বিদেশী বনসাই গাছগুলো থাকছে। তবে নতুন করে আর এ ধরনের গাছ লাগানো হবে না। সবুজ উদ্দিন খান জানান, সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য বিমানবন্দর-বনানী সড়কে সাড়ে পাঁচ লাখ গাছ লাগানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর মধ্যে চীন ও তাইওয়ান থেকে আমদানি করা ফাইকাস জাতীয় পাঁচ শ’ বিদেশী বনসাই লাগানো কথা ছিল। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ সড়কের পাশে বনসাই লাগানোয় বিভিন্ন মহল থেকে সমালোচনা শুরু হয়। পরে মন্ত্রণালয় থেকে ওই প্রকল্প এলাকায় বনসাই লাগানো বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেয়া হয়। বনসাই ছাড়াও প্রকল্প এলাকায় জারুল, ছাতিম, কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, শিমুল, কদম, বকুল, পবন ঝাউ, কাঠ বাদাম, তমাল, হিজল, সুপারি, সোনালু, স্বর্ণচাপা, বাগান বিলাস, মিনি টগর, টগর, চেরি, রঙ্গন, কামিনী, অপরাজিতা, পমলিয়া, ওয়াল কার্পেট, পানিকা, শেওড়া, কাঠগোলাপ, কাঞ্চনসহ বিভিন্ন প্রজাতির ফুল ও শোভাবর্ধক গাছ লাগিয়ে এ সড়কের দুই পাশে সবুজায়ন করা হবে। সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ করছে ঠিকাদারিপ্রতিষ্ঠান ভিনাইল ওয়ার্ল্ড গ্রুপ। বনসাই ইস্যুতে এ প্রতিষ্ঠানে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আবেদ মনসুর বলেন, ‘আসলে এটা বনসাই না। বনসাই হচ্ছে একটা গাছকে বিশেষ ব্যবস্থায় ছোট করে রাখা। আমরা যে গাছগুলো লাগিয়েছি, সেগুলো হচ্ছে ফাইকাস জাতীয় গাছ। ফাইকাস হচ্ছে গাছের একটি বিশেষ জাত। এরপরেও মন্ত্রী মহোদয় যখন নির্দেশ দিয়েছেন, আমরা আর এ গাছ লাগাচ্ছি না।’ তিনি বলেন, ‘বিদেশীরা এ গাছগুলোকে আউট ডোর বনসাই বলে থাকে। সংসদ ভবন ও আর্মি স্টেডিয়ামসহ ঢাকার অনেক সড়কে এ জাতীয় অন্তত এক লাখ গাছ রয়েছে।’ প্রকল্প পরিচালক আবেদ মনসুর জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত ৯০টি গাছ লাগানো হয়েছে। বাকিগুলো আর আমদানি করা হচ্ছে না। সৌন্দর্যবর্ধনের পুরো প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৯০ কোটি টাকা। গাছ লাগানো ছাড়াও এ প্রকল্পে ডিজিটাল যাত্রী ছাউনি, আধুনিক ডাস্টবিন, মিনি চা বাগান, সড়ক বাতি, গার্ডেন বেঞ্চ, এলইডি মনিটর, প্রতিবন্ধী ও বাচ্চাদের হ্যান্ড ট্রলি, ফ্রি ওয়াই-ফাই সংযোগ, আধুনিক টয়লেট, কৃত্রিম ঝরনা, চার কিলোমিটার সড়কে সাইকেল লেনসহ আরও আধুনিক সুযোগ সুবিধা থাকবে। নিরাপত্তার জন্য থাকবে ২৪০ জন নিরাপত্তা রক্ষী। যাত্রী ছাউনিগুলোতে ডিজিটাল পদ্ধতিতে আবহাওয়া বার্তা, সময় প্রদর্শন, গণপরিবহনের গতিপথের নির্দেশনাও থাকবে। এছাড়া বিদেশী ভিভিআইপি আগমনের সময় ডিজিটাল ছবি প্রদর্শনের মাধ্যমে অভ্যর্থনা ও সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন চিত্র প্রদর্শনের ব্যবস্থা থাকবে। প্রকল্পের পুরো ব্যয় বহন করবে ভিনাইল ওয়ার্ল্ড গ্রুপ। বিনিময়ে প্রতিষ্ঠানটি পুরো প্রকল্প এলাকায় বিজ্ঞাপন বোর্ড স্থাপন করে, তা ভাড়া দিয়ে খরচ তুলে নেবে। এ বিষয়ে সওজের সঙ্গে ঠিকাদারিপ্রতিষ্ঠানের ১০ বছর মেয়াদের চুক্তি হয়েছে। তবে রাজধানীর সড়কে বিলবোর্ড লাগাতে হলে সিটি কর্পোরেশনের পূর্ব অনুমতি লাগবে। প্রতিষ্ঠানটি এখনও সিটি কর্পোরেশনের কাছে কোন আবেদন করেনি। এ বিষয়ে সওজ ঢাকা সড়ক সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সবুজ উদ্দিন খান বলেন, ‘সিটি কর্পোরেশন তার নিজস্ব আইনে চলে। আর আমরা চলি আমাদের আইনে। সরকারী এ দুটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কোন বিষয়ে যদি দ্বিমত দেখা দেয়, তবে সে ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর একটি আদেশ রয়েছে। তখন প্রধানমন্ত্রীর দফতরের একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিষয়টির সমাধান দেবেন।’ প্রকল্প সূত্র জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে পাইলট প্রকল্প হিসেবে গত বছরের জুলাইয়ে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে বিমানবন্দর সড়কের আধুনিকায়নের কাজ শুরু হয়েছে। চলতি মাসে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা। প্রকল্প এলাকায় ১২টি আধুনিক যাত্রী ছাউনি থাকছে। এর মধ্যে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, কুড়িল, শেওড়া, কাওলা ও বিমানবন্দরের সামনের সড়কের দুইপাশে দুটি করে ১০টি এবং এমইএস বাসস্ট্যান্ড ও খিলক্ষেতে একটি করে যাত্রী ছাউনি থাকবে। এরই মধ্যে যাত্রী ছাউনিগুলোর নির্মাণকাজ প্রায় শেষ হয়েছে। প্রতিটি ছাউনিতে একটি করে অর্নামেন্টাল দৃষ্টিনন্দন ফোয়ারা ও সাত বীরশ্রেষ্ঠের জীবনী সম্বলিত খোদাই করা পাথরের ফলক থাকবে। এছাড়া প্রকল্প এলাকায় আটটি আধুনিক টয়লেট, ছয়টি বাসবে, নামাজের স্থান, এটিএম বুথ, মানি চেঞ্জার, ভেন্ডিং মেশিন, আধুনিক ডাস্টবিন, বিনামূল্যে বিশুদ্ধ খাবার পানি, পুলিশ বক্স, ইনফরমেশন বুথ, ব্রেস্ট ফিডিং স্থান থাকবে। ডিজিটাল বিলবোর্ডের মাধ্যমে বাস চলাচলের গন্তব্য নির্দেশনা দেয়ার ব্যবস্থা থাকবে। মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার তিনটি স্মৃতিস্তম্ভ, মোবাইল ফোন চার্জ ও ফ্লেক্সিলোডের ব্যবস্থাও থাকবে এ প্রকল্পে। এছাড়া থাকবে মিনি চা বাগান। পুরো এলাকা ৩৫০টি সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। আলোকসজ্জার জন্য আধুনিক বৈদ্যুতিক খুঁটিসহ ২৯০ সেট ডিজিটাল এলইডি বৈদ্যুতিক বাতি ও ৮০০ সেট গার্ডেন লাইট থাকবে। প্রকল্প সম্পর্কে সবুজ উদ্দিন খান বলেন, ‘আমাদের পুরো কাজ শেষ হলে প্রকল্পের ছয় কিলোমিটার রাস্তার দৃশ্য পাল্টে যাবে। আমরা সব ধরনের মানুষের পরামর্শ নিয়েই প্রকল্পের কাজ করছি। উত্তর সিটির মেয়রেরও পরামর্শ নেয়া হবে। এ সড়কটিই হবে দেশের একমাত্র আধুনিক ও নিরাপদ সড়ক।’
×