ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

সুমাইয়া সামিয়া

আপনার সন্তান দায়িত্বও আপনার

প্রকাশিত: ০৫:০১, ৫ জুন ২০১৭

আপনার সন্তান দায়িত্বও আপনার

কামাল ক্লাস টুতে পড়ে। বাবা-মা দুজনই সরকারি পদস্থ কর্মকর্তা। কর্মক্ষেত্রে দুজনই সফলতা পেলেও কোনভাবেই তাদের সন্তান কামালকে সামলে উঠতে পারছেন না। কথায় কথায় মিথ্যা বলা, বাড়ির বড়দের মূলত কাজের বুয়ার গায়ে হাত তোলা, বড়দের অসম্মান করা, কখনও কখনও স্কুল থেকে মারামারি করে আসা এগুলো ইদানীং তার নিত্যনৈমেত্তিক ব্যাপার। তার বাবা-মা বেশ ভাল করেই জানেন মারধর করে কামালকে পথে আনা যাবে না। বাবা-মা তাই যতœ করে তাকে প্রতিদিন বোঝাতে থাকেন কিন্তু দিনশেষে তাদের হতাশ করে দিয়ে একমাত্র সন্তানের আচরণের কোন পরিবর্তন হয় না। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আদৌ কি আচরণ শেখানোর এটাই সঠিক পথ? নাকি আমাদের ভাবনার গোঁড়াতেই রয়েছে গলদ? প্রতিটি পিতামাতাই চান তার সন্তান হবে আদর্শ সন্তান। কিন্তু আমরা আদর্শ সন্তান গড়ার যে পথ বেছে নিয়েছি সেখানেই রয়ে গেছে আমাদের ভুল ধারণা। সন্তানকে আমরা বোঝানোর চেষ্টা করি কিন্তু আপনি কি জানেন দুই থেকে আট বছরের বাচ্চারা কখনোই বড়দের মতো সবকিছু বুঝে যাবে না। বরং ধীরে ধীরে তার কাছে আপনার কথার গ্রহণযোগ্যতা হারিয়ে যাবে। একটি মানুষের দুই থেকে আট বয়সের এই সময়টিকে বলা হয় শিশুকাল। সাধারণত এই বয়সী বাচ্চারা কাছের মানুষকে অনেক বেশি লক্ষ্য করে। এই লক্ষ্য করার মাধ্যমে শিশুরা জীবনের শিক্ষা অর্জন করে। শিশু তার কাছের মানুষকেই জীবনের আদর্শ মনে করে। শিশুটি তখন তার কাছের মানুষের মতো হতে চায়। আর বাবা-মা একটি শিশুর সব থেকে আপন ও কাছের মানুষ। সে কখনও বাবাকে অনুকরণ করে কখনও আবার মাকে। সেই বাবা-মাকেই যখন সে ঝগড়া করতে দেখে তখন শিশুটির অবচেতন মন ধরেই নেই সেও বাবা-মার মতো সবার সঙ্গে ঝগড়া করতে পারবে। মাকে যখন সে বাড়ির কাজের বুয়ার সঙ্গে খারাপ আচরণ-মারধর করতে দেখে তখন তার কাছে এটাকেই সঠিক মনে হয়। বাবা-মা হয়ত তাকে মিথ্যা কথা বলতে নিষেধ করছে আবার একটু পরেই যখন বাবা-মাকে মিথ্যা বলতে দেখছে তখন সে মিথ্যা বলাটাকেই সঠিক মনে করছে। আপনি হয়ত বাসায় থেকেও বলছেন রাস্তায় জ্যামে আটকে আছি অথবা সুস্থ থেকেও বলছেন অসুস্থ আছি। আপনার কাছে হয়ত এটা খুব ছোট মিথ্যা এবং খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। আপনি খেয়াল না করলেও আপনার সন্তান কিন্তু সেটা মনোযোগ দিয়ে লক্ষ্য করছে। তখন তার মনের মধ্যে এক ধরনের দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাজ করে। বাবা-মা তাকে যেটা করতে নিষেধ করছে নিজেরা ঠিক সেই কাজটি অনবরত করে যাচ্ছে। মনের মধ্যে চাপা ক্ষোভ নিয়ে সে বাবা-মার করা অন্যায়কেই ন্যায় মনে করছে। নিজেকে একটি শিশুর স্থানে ভেবে দেখুন আপনার যেমন দুই ধরনের কথা বলে এমন মানুষ পছন্দ নয় তেমনি একটি শিশুর অপছন্দ হওয়াটাই কি স্বাভাবিক নয়। তাই সন্তানকে আচরণগত শিক্ষা দেয়ার ব্যাপারে বাবা-মাকে হতে হবে আরও সচেতন এবং যতœবান। শিক্ষা হতে হবে সন্তানের বয়স উপযোগী। দুই থেকে আট বছরের শিশুদের আচরণগত শিক্ষা পদ্ধতিকে রসরঃধঃবফ ষবধৎহরহম বা অনুকরণমূলক শিক্ষা বলে। অর্থাৎ যদি শিশুকে কিছু শেখাতে চান তাহলে সেই আচরণকে আগে নিজের মধ্যে গ্রহণ করুন। আপনি সবসময় সত্য কথা বললে আপনার সন্তানও সত্যবাদী হয়ে উঠবে। ছোট মিথ্যাগুলোকেও কখন প্রশ্রয় দেয়া যাবে না। শিশুর সামনে পারিবারিক কলহ যত দূরে রাখা যায় ততই মঙ্গল। নিজের মাঝে ভাল আচরণ আয়ত্ত করার চেষ্টা করুন। দিন শেষে দেখবেন আপনার সন্তানও তা রপ্ত করে ফেলেছে। আপনার সন্তানের বর্তমানের দায়িত্ব যেমন আপনার তেমনি ভবিষ্যতের দায়িত্বও আপনার। আপনার একটু প্রচেষ্টায় আপনার সন্তানের ভবিষ্যত হতে পারে আরও সুন্দর। আজকের শিশুই আগামীর কর্ণধার তাই শিশুকে দিন সঠিক শিক্ষা।
×