ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

এফসি কাপ জয় দিয়ে শেষ করতে চায় ঢাকার জায়ান্টরা

ঢাকায় আবাহনী-মোহনবাগান লড়াই আজ

প্রকাশিত: ০৬:৪২, ৩১ মে ২০১৭

ঢাকায় আবাহনী-মোহনবাগান লড়াই আজ

রুমেল খান ॥ ঢাকা আবাহনী লিমিটেড এবং মোহনবাগান এ্যাথলেটিক ক্লাব। বাংলাদেশের ঢাকার এবং ভারতের কলকাতার এই দুটি ফুটবল ক্লাবের মধ্যে বেশ কিছু বিষয়ে মিল আছে। নিজ নিজ দেশে দুটি ফুটবল ক্লাবই ঐতিহ্যের অধিকারী, স্বনামধন্য এবং দর্শক সমর্থনপুষ্ট। শুধু তাই নয়, দুই দলই ফেডারেশন কাপের ফাইনাল খেলেছে, প্রিমিআর লীগের অন্যতম শীর্ষ দল হিসেবে এএফসি কাপের গ্রুপ পর্বে অংশ নিয়েছে এবং ‘ই’ গ্রুপে চার দলের মধ্যে সবচেয়ে কম পয়েন্ট পেয়ে ইতোমধ্যেই বিদায় নিয়েছে। তবে বিদায়ঘণ্টা বেজে গেলেও আরও একবার মাঠে নামতে হবে তাদের, গ্রুপ পর্বের শেষ ও নিয়মরক্ষার ম্যাচটি খেলতে। আজ বুধবার রাত পৌনে ৮টায় উভয় দল মুখোমুখি হচ্ছে। ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিতব্য এই খেলায় মোহনবাগানকে আতিথ্য দেবে ঢাকা আবাহনী। এ পর্যন্ত ‘ই’ গ্রুপে নিজেদের ৫টি ম্যাচের মধ্যে ৪টিতেই হেরেছে আবাহনী। জিতেছে ১টিতে। পয়েন্ট ৩। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ চ্যাম্পিয়নরা এই গ্রুপে আছে চার দলের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে। পক্ষান্তরে ‘দ্য স্কাই ব্লু ব্রিগেড’ খ্যাত আবাহনীর একধাপ ওপরে আছে ‘দ্য মেরিনার্স’ খ্যাত মোহনবাগান। সমান ম্যাচে তাদের সংগ্রহ ৬ পয়েন্ট। তারা জিতেছে ২ ম্যাচে, হেরেছে তিনটিতে। ১২ পয়েন্ট শীর্ষে থাকা মালদ্বীপের মাজিয়া স্পোর্টস এ্যান্ড রিক্রিয়েশন ক্লাব ইতোমধ্যেই পরবর্তী পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জনের পথে এগিয়ে গেছে এক ধাপ। ৯ পয়েন্ট নিয়ে তাদের পরের অবস্থান ভারতের আরেক ক্লাব বেঙ্গালুরু এফসির। আজ একই সময়ে মাজিয়া-বেঙ্গালুরুও মুখোমুখি হবে, বেঙ্গালুরুর শ্রী কান্তিরাভা স্টেডিয়ামে। এ ম্যাচে ড্র করলেই মাজিয়া চলে যাবে চূড়ান্ত পর্বে। তবে বেঙ্গালুরু জিতলে উভয় দলের পয়েন্ট সমান হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে পরের পর্বের টিকেট পেতে হলে বেঙ্গালুরুকে জিততে হবে কমপক্ষে আট গোলের ব্যবধানে। দু’দলের প্রথম সাক্ষাতে অবশ্য ১-০ গোলে জিতেছিল বেঙ্গালুরুই। আবাহনী তাদের গ্রুপ পর্বে হেরেছে মাজিয়ার কাছে ০-২ গোলে (দু’বারই), মোহনবাগানের কাছে ১-৩ এবং বেঙ্গালুরুর কাছে ০-২ গোলে। একমাত্র জয়টি বেঙ্গালুরুর বিপক্ষেই, হোম ম্যাচে। গত ৩ মে তারা ২-০ গোলে জিতেছিল, দশজন নিয়ে! আর মোহনবাগান তাদের গ্রুপ ম্যাচে হারে বেঙ্গালুরুর কাছে ১-২, মাজিয়ার কাছে ০-১ এবং ২-৫ গোলে। হারায় ঢাকা আবাহনীকে ৩-১ (হোম ম্যাচে) এবং বেঙ্গালুরুকে একই ব্যবধানে (হোম ম্যাচ)। গোল করা এবং গোল হজম করার ক্ষেত্রে আবাহনীর চেয়ে ভাল অবস্থানে মোহনবাগান। তারা গোল করেছে ৯টি, খেয়েছে ১০টি (গোল পার্থক্য -১)। আবাহনী খেয়েছে ৩টি, খেয়েছে ৯টি (গোল পার্থক্য -৬)। আবাহনী-মোহনবাগান ম্যাচ উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় মঙ্গলবার দুপুরে, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন ভবনের সম্মেলন কক্ষে। তাতে উপস্থিত ছিলেন দুই দলের কোচ, অধিনায়ক এবং খেলোয়াড়। আবাহনীর ক্রোয়েশিয়ার কোচ দ্রাগো মামিচ বলেন, ‘মোহনবাগান হচ্ছে ইন্ডিয়ান জায়ান্ট। এই আসরে ওদের কাছে ওদের মাঠে আমরা হেরেছিলাম। এবার আমাদের মাঠে খেলা। স্বাগতিক হিসেবে মাঠ, পরিবেশ এবং দর্শক সবই আমাদের অনুকূলে। আমরা চেষ্টা করব ম্যাচটি জিততে।’ মামিচ আরও যোগ করেন, ‘এটা আন্তর্জাতিক ম্যাচ। আমরা টুর্নামেন্ট থেকে আগেই ছিটকে পড়েছি। তারপরও চাইব দলের খেলোয়াড়রা যেন উজ্জীবিত হয়ে এই ম্যাচে খেলে।’ মোহনবাগানের খেলোয়াড় তালিকায় আছে সনি নর্দের নাম। কিন্তু ভিসা জটিলতার কারণে দলের সঙ্গে ঢাকায় আসতে পারেননি বাংলাদেশের শেখ রাসেল এবং শেখ জামালের হয়ে ২০১২ ও ১৩ মৌসুমে দুর্দান্ত খেলে যাওয়া এই হাইতিয়ান মিডফিল্ডার। এ প্রসঙ্গে মামিচের ভাষ্য, ‘সনি এই ম্যাচে না খেললে আবাহনী বাড়তি সুবিধা পাবে, এমনটা ভাবার কোন কারণ নেই। কেননা মোহনবাগান সনিনির্ভর দল নয়। তাদের আরও ভাল খেলোয়াড় আছে।’ আজকের ম্যাচ খেলে মাত্র একদিন বিরতি পাবে আবাহনী। তারপরই ২ জুন তাদের ফেডারেশন কাপের সেমিফাইনালে খেলতে হবে (প্রতিপক্ষ শেখ জামাল ধানম-ি)। সেক্ষেত্রে দল তো বেশি বিশ্রাম পাবে না। মামিচ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘হ্যাঁ, এটা আমাদের জন্য ভাল খবর নয়। কিন্তু আমি ফেডারেশন কাপের সেমিফাইনাল নিয়ে এখন মাথা ঘামাচ্ছি না। আমি প্রাধান্য দিচ্ছি এএফসি কাপের ম্যাচ নিয়ে। কারণ এটা আন্তর্জাতিক ক্লাব ম্যাচ এবং আবাহনী প্রতিনিধিত্ব করবে বাংলাদেশের।’ আবাহনীর অধিনায়ক-ডিফেন্ডার মামুন মিয়া বলেন, ‘আমাদের দলটি আগের চেয়ে ব্যালান্সড। এ আসরে শেষ ম্যাচে আমরা দুর্দান্ত খেলে জিতেছিলাম। আশা করি মোহনবাগানের বিরুদ্ধেও আমরা ভাল কিছু করতে পারব। এই আসরে যেহেতু এটাই আমাদের শেষ ম্যাচ, কাজেই অধিনায়ক হিসেবে চাইব শেষ ম্যাচে জয় দিয়েই শেষ করতে।’ এছাড়া মামুন জানান, দলের কিছু ফুটবলার হাল্কা ইনজুরিতে আছেন। তবে তেমন গুরুতর কিছু নয়। ৫৬ বছর বয়সী ভারতীয় বাঙালী কোচ সঞ্জয় সেন মোহনবাগানের কোচ হিসেবে আছেন ২০১৪ সালের ৮ ডিসেম্বর থেকে। এই সময়ে তিনি দলকে জিতিয়েছেন আই-লিগ এবং ফেডারেশন কাপের শিরোপা। আজকের ম্যাচ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে এই ম্যাচের কোন গুরুত্ব নেই। জিতলেও আমরা কোয়ালিফাই করতে পারব না। তারপরও দলের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে এই ম্যাচে জিততে চাই। আশা করি দর্শকরা এই ম্যাচটি উপভোগ করবে।’ একই কথা বললেন দলের অন্যতম জাপানী মিডফিল্ডার কাতসুসি ইউসা (মোহনবাগানের হয়ে ১২০ ম্যাচে করেছেন ২৭ গোল)। সঞ্জয় সেন আরও যোগ করেন, ‘শক্তিশালী তকমা নিয়ে কোন দলই মাঠে নামে না। আমরা যে ম্যাচে বেঙ্গালুরুকে হারাই, সে ম্যাচে সনিকে খেলাইনি। গোল খেয়ে যদি কোন দল গোল শোধ করে সে ম্যাচে জিততে পারে, তাহলে সেটা কৃতিত্বের মধ্যে পড়ে। আমরা তেমনটাই খেলতে চাই। তবে আবাহনীকে আমরা যথেষ্ট সমীহ করছি।’ অপর এক প্রশ্নের জবাবে সঞ্জয় বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য ছিল এই গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন হওয়া। কিন্তু ক্লাবের কিছু টেকনিক্যাল সমস্যায় সে লক্ষ্য অর্জিত হয়নি। এ মৌসুমে আমাদের মোট ৩৩টি ম্যাচ খেলতে হয়েছে। কটি ম্যাচে জিতেছি, সেটা মনে নেই। তবে হেরেছি আই-লীগে ২, ফেডারেশন কাপে ১ এবং এএফসি কাপের প্রস্তুতি ম্যাচসহ ৪ ম্যাচে। এমনও হয়েছেÑ সাত দিনের মধ্যে আমাদের ৫টি ম্যাচ খেলতে হয়েছে। ভারতের কোন ক্লাবের ক্ষেত্রে এমনটা হয়েছে কি না সন্দেহ। ফলে খেলোয়াড়রা ক্লান্ত, তাদের কাছে স্বভাবতই আমি সেরাটা পাইনি। তারপরও আবাহনীর সঙ্গে যথাসাধ্য সেরা খেলাটা খেলারই চেষ্টা করব।’ আজকের ম্যাচে যদি বৃষ্টি হয়? ‘বৃষ্টি হলে সমস্যা নেই, বরং খেলতে মজাই হবে।’ সঞ্জয়ের রসিকতা।
×