ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

লিটন আব্বাস

স্পেশাল ওয়ার্ল্ড অলিম্পিক মাতালেন মিষ্টি

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ১২ এপ্রিল ২০১৭

স্পেশাল ওয়ার্ল্ড অলিম্পিক মাতালেন মিষ্টি

খুব সাধারণ পরিবারের একটি মেয়ে। বাবা খন্দকার আক্তারুজ্জামান সামান্য গাড়িচালক হলেও মায়ের দুর্বার ইচ্ছেশক্তি ও প্রেরণার জোরে মেয়েটি ছোটবেলা থেকে সংগ্রামী ও প্রতিশ্রুতিশীল হতে শুরু করেছে। ২০১৪ সালে বিকেএসপিতে ৭ম শ্রেণীতে ভর্তি হয়ে এ্যাথলেটিকসে ১০০, ২০০ এবং পরে ৪০০ মিটার খেলে। জাতীয় পর্যায়ে ৪০০ মিটার রিলে রেসে স্বর্ণপদক পায় ২০১৫ সালে। এ্যাথলেটিক্সে ২০১৬ সালে অনুর্ধ ১৬ বিভাগে দ্বিতীয় স্থান অধিকার ও রিলে রেসে প্রথম স্থান অধিকার করে। লড়াকু এই মেয়েটির নাম আইভি আক্তার অরিন। যাকে সবাই মিষ্টি নামেই ডাকে। সম্প্রতি মিষ্টির নেতৃত্বে স্পেশাল অলিম্পিকস ওয়ার্ল্ড উইন্টার গেমস অনুর্ধ ১৬ হকিতে চোখ ধাঁধানো পারফরমেন্স প্রদর্শন করেছে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া দলটি। অস্ট্রিয়াতে হওয়া আসরে নিজেদের গ্রুপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ। অস্ট্রিয়াতে হওয়ায় অনুর্ধ ১৬ হকি দলের এই আসরের জন্য এ্যাথলেটিক্স জুনিয়র থেকে সাহসী ও লড়াকু মেয়েদের বাছাই করে ১৩ সদস্যের একটি দল গঠন করা হয়। এই দলের নেতৃত্ব পায় আইভি আক্তার অরিন (মিষ্টি)। মিষ্টি আর সব মেয়েদের থেকে আরও একটু বেশি সাহসী, দৃঢ়প্রত্যয়ী ও সংগ্রামী। কুষ্টিয়ার কুমারখালীর আইভি আক্তার মিষ্টির নেতৃত্বে অস্ট্রিয়াতে স্পেশাল ওয়ার্ল্ড অলিম্পিক গেমসে অংশগ্রহণ করে স্বর্ণপদক জয় করেছে তার দল। গত ১৬ মার্চ থেকে অস্ট্রিয়াতে স্পেশাল অলিম্পিকস ওয়ার্ল্ড উইন্টার গেমস ২০১৭-তে ১১৭টি দেশে অংশগ্রহণ করে। ১৪ হাজার খেলোয়াড়দের মধ্যে ৭ হাজার নারী ৭ হাজার পুরুষ। এর মধ্যে বাংলাদেশের অনুর্ধ নারী দলের ১৩ জন বিজয়ী হয়ে দেশে ফিরে এসেছে। আইভি আক্তার মিষ্টি এই দলের অধিনায়ক। ১০ নম্বর জার্সি পড়ে অস্ট্রিয়ার মাটি কাঁপিয়ে এসেছে এ লড়াকু মেয়ে। মিষ্টির এ সাফল্যে তার বাবা-মা ও পরিবার ভীষণ খুশি। মিষ্টি জানান, দুটি গ্রুপে খেলা হয়। নিজেদের গ্রুপে প্রতিটি ম্যাচেই জয় পায় বাংলাদেশ। মূলত এ্যাথলেটিক্স খেলোয়াড় হলেও ভালবাসার টানে হকিতে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। সুযোগ পেলে হকিতে নিয়মিত হওয়ারও আশা তার। মিষ্টির মা জলি মেয়ের সাফল্যে ভীষণ খুশি। তিনি বলেন, আমার মেয়ে দেশের সুনাম অর্জন করেছে এতে আমি ভীষণ খুশি। ছোটবেলা থেকে খেলাধুলার প্রতি ভীষণ ঝোঁক। ২০১১ সালে ইন্টার স্কুল এ্যাথলেটিক্সে খুলনা বিভাগ চ্যাম্পিয়ন হয়। ২০১২ সালে কুষ্টিয়া স্টেডিয়ামে আয়োজিত অলিম্পিক গেমসে ৩ কিলোমিটার দৌড়ে প্রথম স্থান অধিকার করে। এরপর থেকে মিষ্টির উত্থান শুরু। মেয়েকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পৌঁছানোর জন্য এই সংগ্রামী মা জলি খাতুন দিনকে রাত করে মেয়ের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে চলেছেন। শুধু তাই নয় এ সংগ্রাম মা তার ছোট মেয়ে রিনভি আক্তার তৃপ্তিকেও বিকেএসপিতে ভর্তি করেছেন। তৃপ্তি লং টেনিসে ২০১৭ সালের ৯ জানুয়ারি অনুর্ধ ১৬-তে থাইল্যান্ড খেলেছে। এই সংগ্রামী মার স্বপ্ন দুই মেয়ে ও সবার ছোট ছেলেটিও খেলাধুলা করে দেশের সুনাম বয়ে আনুক এতেই তিনি তৃপ্ত। মেয়ে দুটিকে খেলোয়াড় বানানোর স্বপ্নে তিনি ২৫ হাজার টাকায় জমিও কট দিয়ে রেখেছেন। এখনও সে জমিন ছাড়াতে পারেনি। তবুও তার আক্ষেপ নেই সন্তানদের ক্রীড়াঙ্গনের প্রতিষ্ঠা পাওয়ায় তার একমাত্র লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। ২০১৪ সালে বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিকেএসপিতে ৭ম শ্রেণীতে ভর্তি হয়ে এ্যাথলেটিক্সে ১০০, ২০০ এবং পরে ৪০০ মিটার খেলে। জাতীয় পর্যায়ে ৪০০ মিটার রিলে রেসে স্বর্ণপদকও জয় করে ২০১৫ সালে। এ্যাথলেটিক্সে ২০১৬ সালে অনুর্ধ ১৬ বিভাগে দ্বিতীয় স্থান অধিকার ও রিলে রেসে প্রথম স্থান অধিকার করে। সম্ভাবনাময় এই মেয়ে তার প্রতিভার দ্যুতি ছড়িয়ে দেয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। মিষ্টির সাফল্যে কুমারখালীর ক্রীড়াঙ্গনে হৈচৈ পড়েছে। আগামীর এই তারকার পথচলা এগিয়ে নিতে সহায়তা করছেন অনেকেই। এর মধ্যে আছেন কুমারখালীর ক্রীড়া সংগঠক গোলাম মুর্শিদ মিলন। সার্বিকভাবে অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করেছেন কুমারখালীর সাংসদ আবদুর রউফ, সাবেক জেলা পরিষদ প্রশাসক জাহিদ হোসেন জাফর, কুমারখালীর মেয়র সামছুজ্জামান অরুন, কুমারখালীর সাবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাহেলা আক্তার ও কুমারখালী ক্রীড়া সংস্থা। পড়াশুনায়ও মিষ্টি ভাল ফলাফল করছে। বিকেএসপি থেকে যখন মায়ের কাছে চিঠি আসে আপনার মেয়ে খেলাধুলা ও পড়াশুনায় কৃতিত্ব অর্জন করছে। তখন তিনি আনন্দ অশ্রু ঝরান নীরবেই। মিষ্টির সাফল্যে কুমারখালীর ক্রীড়া সংগঠক গোলাম মুর্শিদ মিলন বলেন, মিষ্টি আমাদের গৌরব। ও যা করেছে তাতে আমরা সবাই গর্বিত। কুমারখালী পাইলট বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রী আইভি আক্তার মিষ্টি। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর এমন সাফল্যে গর্বিত সেখানকার শিক্ষক, ছাত্রীরা। ৮ এপ্রিল বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে সংবর্ধনা দেয়া হয় মিষ্টিকে। মিষ্টিকে মিষ্টি দিয়ে বরণ করেন ঐতিহ্যবাহী কুমারখালী পাইলট বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেম। সর্বস্তরের ফুলেল শোভায় ধন্য হন স্বর্ণপদক জয় কন্যা মিষ্টি। বিদ্যালয়ের শত শত শিক্ষার্থীদের উঞ্চ অভ্যর্থনায় মুহুর্মুহু করতালিতে মুখরিত হন কুমারখালীর মেয়ে মিষ্টি।
×