ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

মিজানুর রহমান বেলাল

তরুণ লেখকদের সাহিত্য ভাবনা ॥ চর্যাপদ’র ভূমি ॥ কবিতা শাস্ত্রপাঠ্যের মতো

প্রকাশিত: ০৬:৩২, ৩১ মার্চ ২০১৭

তরুণ লেখকদের সাহিত্য ভাবনা ॥ চর্যাপদ’র ভূমি ॥ কবিতা শাস্ত্রপাঠ্যের মতো

কবিতা ভাবনা সব সময়ই স্বতঃস্ফূর্ত নিস্তব্ধতাÑআর আমার নিস্তব্ধতার সূত্রপাত প্রথম কবিতা লেখার মধ্য দিয়ে। ঝাঁকঝাঁক শব্দগুচ্ছের শস্যক্ষেতে অস্তগামী কিছু ভাবনা, প্রদেশের অন্ধকার থেকে দৃশ্যমান করেÑকবিতা। আর কবিতা শাস্ত্র্যপাঠ্যের মতো বারবার আবেগস্নাত মানুষের হৃদয়েÑদরদের কাঠামো গড়ে তুলে। আমাকেও তাই করেছে। আমার ভাবনাবলয়ের সঙ্গে পাঠকের কল্পনা সঙ্গতিপূর্ণ হয় বরাবরই। যদিও কবিতা বিজ্ঞান কিংবা গণিতের মতো বিষয় নয়। কবিতাÑমনকুঠিরে লালিত কিছু শব্দমালা। দরদ, আবেগ, রস আর চিত্রকল্প, উপমা, ছন্দই কবিতাকে সার্থক ও পূর্ণ করে। যার কারণে, মনপবনের জলবিছানায় স্বপ্ন-কল্পনা-অনুভূতির জয়যাত্রার পরিচর্যার নাম কবিতা। আমার কবিতার পা ুলিপির প্রতি পৃষ্ঠায় সমর্পিত হতো আবেগ। গাঢ় অনুভূতি অনুভবের স্বতন্ত্র পথ খুঁজে পেতাম কবিতার মধ্যে। এটা স্বপ্নের পথে শুধু ধাবিত করলো না, আমৃত্যু কাব্যসাধনায় জাগ্রত করলো। দ্বিধা-বিভক্তি ছেড়ে, কাব্যসাধনায় যথার্থ চেতনাকে বাস্তবতার দাসত্ব থেকে চিরমুক্তি দেবার চেষ্টায় কবিতাচর্চা করা। কবিতা সাহিত্যের মধ্যে সবচেয়ে রসসিক্ত বিষয়। যে কবিতা পাঠকদের আলোড়িত করে না; সে কবিতা বেশি দিন বাঁচে না। যুগ যুগ ধরে এটাই প্রমাণিত। পাঠকরা যেমন কবির জনপ্রিয়তা নির্ধারণ করে। আবার পাঠকদের মনে রাখা শ্রেয়Ñজনপ্রিয় কবি মানে সব কবিতা মানোত্তীর্ণ নয়। তবে আমি পাঠকদের জন্য কবিতা লিখি। পাঠকরা আমার কবিতার মেরুদ-। আসলে আধুনিক কবিতার বিষয়বৈচিত্র্য এবং ভাষার নির্মাণশৈলী এমনই অভূতপর্ব যে, আধুনিক কবিতাকে কোন একটি সংজ্ঞা বা বিশ্লেষণ দ্বারা চিহ্নিত করা যুক্তিযুক্ত নয়। এক্ষেত্রে কবিদের দায়িত্ব শতগুণ বেড়েই যায়, প্রগাঢ় বোধ, চেতনা, রুচি এমনকি ইমোশনাল বিষয়গুলো কবিতায় বহির্প্রকাশ করার। আমি সফলভাবেই তা সম্পূর্ণ করার চেষ্টা করেছি আজও। এরই পাশাপাশি চিরচলিঞ্চু জীবনের নানান খ খ ঘটনাবলী, স্মৃতিচারণ, হাসি-কান্না, আনন্দ-কল্পনা, প্রাত্যহিকতা এই সব মিলেই তো আমাদের জীবন। আর এই জীবনের জলছবি যদি কবিতায় স্পষ্টভাবে ভেসে না ওঠে, তাহলে কবিতার অপূর্ণতা থেকে যায়। এই আধুনিক কবিতায় বুদ্ধিবৃত্তির প্রয়োগ প্রয়োজন। পাঠক, কবি জীবনানন্দ দাশকে আবিষ্কার করেছেন তাঁর কবিতার মধ্য দিয়ে। আমি কবিতা লেখার আগে ভাবি, পাঠ্যচেতনা ও অভিজ্ঞতার শুদ্ধচিন্তার রোমান্টিক উপলব্ধি প্রয়োগে কবিতা স্বার্থক হয়ে ওঠে। প্রাচীন কলা শাস্ত্রে বলেছেÑ‘বাক্যং রসাতœক কাব্যম্’। আমি বিশ্বাস করি, রসতত্ত ছাড়া কবিতা রুগ্ন আপাতসাদৃশ্য মাত্র। জগৎ সংসারে দৃশ্যমানের মাধ্যমে কবিতার মুক্তিলাভ। যা কিনা শাস্ত্রপাঠ্যের মতো, বারবার আবেগস্নাত মানুষের হৃদয়ে কড়ানাড়ে। আমার ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে। আমি মনে করিÑকবিতা রুগ্ন আপাতসাদৃশ্য মাত্র নয়। কবিতা জীবন নিংড়ানো অনুভূতি। এ কারণে কবি ও কবিতা একই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ। সরল-সহজ-প্রাণবন্ত শব্দ ও বাক্য কবিতাকে বাঁচিয়ে রাখে যুগযুগ। সেই সঙ্গেÑ কবির প্রয়াস কাব্য সাধনা। সাধনাই কবিতার জন্ম হয়। আমার কাছে একটি মানোত্তীর্ণ কবিতাÑ বালিকার ঠোঁট থেকে উড়ে আসা ঘাসফড়িং। আমি এমনটা বুকে লালন করেই কাব্যভূমিতে জেগে আছি আজও...
×