আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে বৃহস্পতিবার রবীন্দ্র উৎসবে সংগীত পরিবেশনা
বাঙালির মনের মানুষ, প্রাণের মানুষ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিন ছিল বুধবার। সেই সুবাদে মননের দিশারী কবিগুরুর প্রতি অনুরাগ প্রকাশে অনুষ্ঠিত হয়েছে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে নানা আয়োজন। কবিগুরুর ঐশ্বর্যময় সৃষ্টির আলোকে নিবেদিত হয়েছে শ্রদ্ধাঞ্জলি। রবীন্দ্রনাথের প্রতি ভালোবাসা নিবেদনের সেই স্রোতধারায় বৃহস্পতিবারও রঙিন ছিল রাজধানীর সংস্কৃতি ভুবন। রবীন্দ্রজয়ন্তী উদ্যাপনে এদিন থেকে রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে শুরু হলো তিনদিনব্যাপী জাতীয় রবীন্দ্র উৎসব। ‘বাজুক প্রাণে বজ্রভেরী/অকূল প্রাণের সে উৎসবে’ স্লোগানে ৩৫তম আসরটির আয়োজক বাংলাদেশ রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সংস্থা। এদিকে একই দিনে শিল্পকলা একাডেমির সংগীত ও নৃত্যকলা মিলনায়তনে ‘বিমল আনন্দে জাগো’ প্রতিপাদ্যে রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সংস্থার আরেক অংশের তিনদিনের রবীন্দ্র উৎসবের সূচনা হয়।
বৈশাখী সন্ধ্যায় মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে নাচ-গান ও কবিতায় সজ্জিত সুন্দরের প্রতিচ্ছবিময় উৎসবের সূচনা হয়। কবিতার ছন্দ, গানের সুর ও নাচের নান্দনিকতা মুগ্ধতা ছড়ায় শ্রোতা-দর্শকের মননে। বিস্তৃত পরিসরের এ উৎসবের সঙ্গে মিশে রয়েছেন বরেণ্য দুই রবীন্দ্রসংগীত শিল্পীর নাম। উৎসবটি উৎসর্গ করা হয়েছে অকাল প্রয়াত শিল্পী সাদি মহম্মদকে। অন্যদিকে উৎসবের মাধ্যমে উদ্যাপিত হয় কলিম শরাফীর শততম জন্মদিন। এবারের আয়োজনে অংশ নিচ্ছেন ঢাকাসহ দেশের নানা প্রান্তের দেড় শতাধিক শিল্পী। চারটি অধিবেশনে সাজানো হয়েছে গোটা আয়োজন। যেখানে বরেণ্য শিল্পীদের সমান্তরালে অংশ নিচ্ছেন সংস্থার নিয়মিত শিল্পীরা। হৃদয়ে প্রশান্তির অনুভব বিস্তারী সেসব পরিবেশনায় রয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিভিন্ন পর্যায়ের গান ও কবিতা। আছে দলীয় নৃত্য। রয়েছে জনপ্রিয় বাচিকশিল্পীদের উপস্থাপিত কবিতার দোলায়িত ছন্দের পরিবেশনা।
ইনস্টিটিউটের লবিতে উদ্বোধনী নৃত্য পরিবেশনার উৎসবের সূচনা হয়। শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিচালনায় নৃত্যানন্দের শিল্পীরা পরিবেশন করে বৃন্দ নৃত্য। সে নাচের সহযোগে ভেসে বেড়িয়েছে সংস্থার শিল্পীদের পরিবেশিত ‘বিপুল তরঙ্গ রে’ ও ‘আকাশ ভরা সূর্য তারা’ গানের সুর। এরপর আয়োজনটি চলে যায় মিলনায়তনে। সেখানে উৎসব উদ্বোধন করেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। বিশেষ অতিথি ছিলেন নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার। তারা দুজন কলিম শরাফী ও সাদি মহম্মদকে নিবেদিত কথনে অংশ নেন। এ ছাড়া আলোচনা করেন উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সহ-সভাপতি মাহমুদ সেলিম এবং লেখক ও আলোকচিত্রী এম এ তাহের। স্বাগত কথনে অংশ নেন সংস্থার সাধারণ সম্পাদক পীযুষ বড়ুয়া। উৎসব সম্পর্কে চুম্বকীয় অংশ তুলে ধরেন সংস্থার নির্বাহী সভাপতি আমিনা আহমেদ। উদ্বোধনী পর্বে একুশে পদকজয়ী নৃত্য শিল্পী শিবলী মহম্মদের নেতৃত্বে নৃত্যাঞ্চলের শিল্পীরা সাদি মহম্মদের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
মিলনায়তনের বাইরে বৃন্দ নাচ ও গান শেষে মূল মঞ্চে পরিবেশন করা হয় জাতীয় সংগীত। এরপর অতিথিরা মঙ্গলপ্রদীপ প্রজ্বালন করেন। এ সময় সম্মেলক কণ্ঠে পরিবেশিত হয় ‘আনন্দালোকে মঙ্গলালোকে বিরাজ সত্যসুন্দর’ ও ‘হে নূতন দেখা দিক আর-বার’ শীর্ষক সংগীত। আলোচনা শেষে শুরু হয় প্রথম দিনের পরিবেশনা পর্ব। এ পর্বে একক কণ্ঠে গান শোনান রফিকুল আলম, চঞ্চল খান, জাফর আহমেদ, অনন্ত বাঁধন, লিটন চন্দ্র বৈদ্য, মিলন দেব, সত্যম দেবনাথ, কুশল রায়, গায়ত্রী আচার্য্য, রবিউল হাসান, সুদীপ্ত চক্রবর্তী, শর্মিলা চক্রবর্তী, বিলু সিদ্দিকী, ফারহানা খান পুরবী, মৌমিতা মমী, নেহরীন হুদা, রায়ান খালিদ স্যান্দ্রা, রিদওয়ানা আফরিন সুমি, স্মৃতি কণা পাল, তাসনিতা মাহবুব নরিন, উৎপলা দাস পম্পা, শর্বরী মজুমদার, ড. বর্ণালী চক্রবর্তী, সুস্মিত শফি ইসলাম, ফারহানা রহমান কান্তাসহ অনেকে।
আজ শুক্রবার উৎসবের দ্বিতীয় দিন কাল সাড়ে ৯টা থেকে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত দলীয় পরিবেশনায় অংশ নেবে সুরের ধারা, রবিরাগ, সংগীত ভবন, বাফা, বৈতালিক, সুরতীর্থ ও বিশ্ববীণার শিল্পীরা। বিকেলে তৃতীয় অধিবেশনের সূচনা হবে সম্মেলক সংগীতের আশ্রয়ে। শনিবার বিকাল ৫টায় সমাপনী আয়োজন শুরু হবে।
এদিকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির সংগীত ও নৃত্যকলা মিলনায়তনে শিল্পী সংস্থার আরেক অংশ আয়োজিত জাতীয় রবীন্দ্র উৎসবে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। সভাপতিত্ব করেন সংস্থার সভাপতি সাজেদ আকবর। স্বাগত বক্তব্য বক্তব্য দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ড. মকবুল হোসেন। আলোচনা শেষে একক ও দলীয় কণ্ঠের সংগীত এবং আবৃত্তি পরিবেশনা। আজ শুক্রবার দ্বিতীয় দিনের আয়োজনে ইফ্ফাত আরা দেওয়ানকে রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সংস্থা সম্মাননা প্রদান করা হবে। এরপর থাকবে সংগীত ও আবৃত্তি পরিবেশনা।