ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

বদলে যাওয়া হাওড় 

প্রকাশিত: ২৩:৪১, ৯ মে ২০২৪

বদলে যাওয়া হাওড় 

আধুনিক যন্ত্রের সাহায্যে ধান কেটে মাড়াই করার পর বস্তাবন্দি করা হচ্ছে

কেউ ধান কাটছেন। কেউ মাড়াই দিচ্ছেন। আবার কেউ সিদ্ধ করে রোদে শুকাচ্ছেন। শিশু থেকে শুরু করে অশীতিপর বৃদ্ধ-বৃদ্ধা পর্যন্ত সবাই পার করছেন ব্যস্ত সময়। একটুখানি বসে থাকারও যেন ফুরসৎ নেই কারও। দিগন্তবিস্তৃত হাওড়াঞ্চলজুড়ে এখন চলছে বোরো ধান ঘরে তোলার মহোৎসব। তবে আধুনিক প্রযুক্তি ও নানান রকম অত্যাধুনিক কৃষিযন্ত্রের প্রসারের কারণে অনেকটাই সহজ হয়ে গেছে ধান কাটা-মাড়াই ও ঘরে তোলার কাজ। বাঁচছে সময়। অপেক্ষা করতে হচ্ছে না দূর-দূরান্তের শ্রমিক দলের। ঈষাণ কোণের মেঘ দেখে আর ছোটাছুটি করতে হচ্ছে না আগেকার দিনের মতো।
নেত্রকোনার খালিয়াজুরী, মদন, মোহনগঞ্জ এবং কলমাকান্দা ও আটপাড়া উপজেলার আংশিক এলাকা নিয়ে সুবিশাল হাওড়াঞ্চল গঠিত। এটি মূলত এক ফসলি এলাকা। অর্থাৎ বোরো ধান ব্যতীত আর কোনো ধান চাষ হয় না সেখানে। তাই এই একটি মাত্র ফসলের ওপরই নির্ভরশীল সেখানকার  লাখ লাখ বাসিন্দা। কিন্তু এই বোরো ধান ঘরে তুলতে গিয়ে অতীতের বিভিন্ন সময়ে তাদের পোহাতে হয়েছে নানান বিড়ম্বনা। বনাঞ্চলবিহীন অঞ্চলটিতে প্রায় বছর দেখা দিত খরা। শুকিয়ে চৌচির হতো জমি। পানি সেচ দিতে হতো সনাতন যন্ত্র দোন দিয়ে। আগাছা বাছাই করতে হতো হাতে। আবার হাতেই কাটতে হতো পাকা ধান। এক সঙ্গে হাজার হাজার হেক্টর জমির ধান পাকার কারণে প্রায় বছর দেখা দিত শ্রমিক সংকট। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আনতে হতো শ্রমিকদল। কেটে আনা ধান মাড়াই করা হতো গরু দিয়ে। চিটা বাছাই করতে হতো বাতাসে উড়িয়ে। আর এসব কাজ করতে গিয়ে অপেক্ষা করতে হতো রোদের। লাগতো পর্যাপ্ত সময়। আবার ঘরে তোলা ধান বেচতে হতো মাথায় করে দূরের হাটে নিয়ে। অথবা অপেক্ষায় থাকতে হতো বর্ষায় নৌচলাচলের।   
হাওড়ের কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রকৃতি অনুকূলে থাকলে হাওড়ের বোরো চাষাবাদ এখন অনেকটাই সহজ। যদিও খরচের পরিমাণ একটু বেশি। কিন্তু বিড়ম্বনা বা ধান নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা কম। এখন হাওড়াঞ্চলে জমি চাষ থেকে শুরু করে নতুন ধান বেচা পর্যন্ত সবই চলে যান্ত্রিক উপায়ে। অর্থাৎ নানা ধরনের কৃষিযন্ত্র হাওড়ের কৃষকজীবনকে আরও সহজ ও গতিশীল করে দিয়েছে। কমিয়েছে শ্রম-ঘাম ও ঝুঁকি। কৃষকরা জানান, হাওড়াঞ্চলে এখন আর সচরাচর গরু দিয়ে হালচাষ করা হয় না। ৯০ ভাগেরও বেশি কৃষক পাওয়ার টিলারে জমি চাষাবাদ করেন। অনেকে ধানের চারা রোপণ করেন হাতের বদল রাইস ট্রান্সপ্লান্টারে। পানি সেচ দেন দোনের বদল শ্যাালোইঞ্জিন বা বেদ্যুতিক মোটরচালিত গভীর নলকূপের সাহায্যে। জমির আগাছা বাছাই করেন উইডার মেশিন দিয়ে। আগে তা করতে হতো হাতে। এদিকে হাতে না ছিটিয়ে কীটনাশক প্রয়োগ করা হয় পাওয়ার স্প্রেয়ার বা হ্যান্ড স্প্রেয়ারের সাহায্যে। আবার ধান কাটার জন্য কৃষকরা সরকারি ভর্তুকি সাপেক্ষে কম খরচে পাচ্ছেন কম্বাইন্ড হারভেস্টার। এই যন্ত্রটি শুধু ধান কাটেই না, একই সঙ্গে করে মাড়াই, বাছাই ও বস্তাবন্দির কাজ। এমনকি জমিতে ভাঁজ করে বিছিয়ে দেয় খড়ও। এছাড়াও মাড়াই কল হিসেবে পাওয়ার থ্রেসার, প্যাডাল থ্রেসার, গুটি ইউরিয়া বপন যন্ত্র, ড্রাম সিডার, রাইস ড্রায়ার প্রভৃতি যন্ত্রপাতি এসেছে নাগালে। 
এদিকে গত দেড় দশকে হাওড়ের রাস্তাঘাটেরও ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। হাওড়ের বুকচিরে নির্মাণ করা হয়েছে অসংখ্য সাবমার্জিবল (ডুবো) সড়ক। যোগাযোগ ব্যবস্থার এই পরিবর্তনের কারণে এখন আর কৃষকদের মাথায় বহন করে ধান বাজারে নিয়ে যেতে হচ্ছে না। অপেক্ষা করতে হচ্ছে না নৌচলাচল উপযোগী বর্ষার। ধান কাটার খবর পেয়ে সরাসরি খেতের আইলে চলে আসছে ফড়িয়াদের পিকআপ। খেতের আইলে বসেই ওজন মেশিনে মাপা হচ্ছে শত শত মণ ধান। কৃষকের হাতে চলে আসছে ধান বিক্রির নগদ টাকা। সরেজমিনে খালিয়াজুরী, মোহনগঞ্জ ও মদন উপজেলার হাওড়াঞ্চল ঘুরে দেখা যাচ্ছে, হাওড়পাড়ে বসেই শত শত টন ধান কিনে পিকাআপ বোঝাই করে বড় বড় মোকামে নিয়ে যাচ্ছেন ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা। এতে ধানের দাম কিছুটা কম পেলেও খুব একটা অসুবিধা হচ্ছে না কৃষকদের। উপরন্তু রোদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ধান শুকানো ও ঘরে মজুত করার ঝুঁক্কি-ঝামেলা থেকে নিস্তার পাচ্ছেন তারা। এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধানে নির্মিত অসংখ্য ফসল রক্ষা বাঁধও হাওড়ের বোরো ফসলের নিরাপত্তা বাড়িয়েছে।  
মদন উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বলেন, সরকারি প্রণোদনা, আধুনিক যন্ত্রপাতি ও নতুন নতুন কৃষি প্রযুক্তির বদৌলতে হাওড়ের বোরো চাষাবাদ এখন আগের তুলনায় অনেকটাই সহজ। আগে বোরো ফসল নিয়ে কৃষকদের যতটা ঝুঁকির মধ্যে থাকতে হতো- এখন তা অনেকটাই কমে গেছে। এবার হাওড়ে পাহাড়ি ঢলের পানি আসার আগেই শতভাগ জমির ধান কাটা হয়ে গেছে। দেখা দেয়নি শ্রমিক সংকটও। কাজেই পাহাড়ি ঢল এলেও ফসলহানির আর কোনো ঝুঁকি নেই এবার। 
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ নূরুজ্জামান জানান, এ বছর নেত্রকোনার ১০ উপজেলায় ১ লাখ ৮৫ হাজার ৩২০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছিল। এর মধ্যে হাওড়াঞ্চলে আবাদ হয়েছিল ৪১ হাজার ৭০ হেক্টর। হাওড়াঞ্চলে ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ২ লাখ ৭৪ হাজার ৩৫৯ টন, যার বাজার মূল্য প্রায় সাড়ে ৭শ কোটি টাকা। তবে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও উৎপাদন বেশি হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। এ কর্মকর্তা আরও বলেন, হাওড়ের কৃষকরা এখন ঝুঁকিমুক্ত ধান চাষেও আগ্রহী হচ্ছেনÑ যা আরেকটি ইতিবাচক দিক। আগে তারা বেশি ফলনের আশায় দেরিতে ফলনশীল ধান বেশি চাষ করতেন। এ কারণে প্রায় বছর তারা আগামবন্যার ঝুঁকিতে পড়তেন। উপ-পরিচালক আরও জানান, এবার হাওড়াঞ্চলসহ সারা জেলায় প্রায় ৭৫০টি কম্বাইন্ড হারভেস্টারের সাহায্যে একযোগে ধান কাটা মাড়াই করা হচ্ছে। 
খালিয়াজুরীর খলাপাড়া গ্রামের কৃষক শেকুল মিয়া বলেন, বহুদিন পরে কোনোরকম ঝামেলা ছাড়াই বোরো ফসল ঘরে তুলতে পেরেছি। এমনকি গরু-বাছুরের জন্য পর্যাপ্ত খড়ও মজুত করতে পেরেছি। ধানের দামও মোটামুটি সন্তোষজনক। কাঁচা ধান বিক্রি হচ্ছে ৯শ থেকে ৯৫০ টাকা মণ দরে। তবে আরেকটু বেশি হলে ভালো হতো বলেও মন্তব্য করেন তিনি। শুধু শেকুল মিয়াই নন, হাওড়ের প্রত্যেকটি কৃষকই এবার নির্বিঘেœ শেষ করতে পারছেন তাদের কাক্সিক্ষত বৈশাখী নবান্ন।
সঞ্জয় সরকার, নেত্রকোনা

নেত্রকোনায় নতুন ধানের সুবাস, কৃষকের মুখে হাসি

হাওড়ে বৈশাখ আসে নতুন ফসলের সুবাসে, কৃষান-কৃষানির নির্মল হাসিতে। এবারও তা-ই হয়েছে। হাওড়ের পুবালি হাওয়ায় এখন সোনালি ধানের সুবাস। ধান পেকেছে। নতুন বছরে, নতুন আশা নিয়ে; সেই ধান কাটতে শুরু করেছেন কৃষকেরা। পুরো বৈশাখ হাওড়ে কাটে কৃষক পরিবারের লোকজনের। ধান কাটা, মাড়াই ও শুকানো-সবই চলে হাওড়ে। এ জন্য হাওড়ে উঁচু জায়গায় ‘খলা’ তৈরি করা হয়। আবার কোনো কোনো হাওড়পাড়ে অস্থায়ী ঘর তৈরি করে পুরো পরিবারসহ সেখানে স্থানান্তরিত হয়ে যান কেউ কেউ। আঞ্চলিক ভাষায় তাঁদের বলে ‘জিরাতি’। 
কিশোরগঞ্জের বড় বড় হাওড়ে জিরাতিরা থাকেন। হাওড় অধ্যুষিত মিঠামইন উপজেলার কামালপুর গ্রামের কৃষক মোস্তফা কামাল বলেন, ‘দিন ভালা, আমরা খুশি। এই ধানই আমরার সব। ধান পাইলে সুখী, না পাইলে ফকির’। তাঁর মতো আরও বেশ কয়েকজন কৃষক বলেন, সবসময় যে তারা এই ধান গোলায় তুলতে পারেন, এমন না। ২০১৭ সালের হাওড় বিপর্যয়ের সেই দুঃসহ স্মৃতি এখনো তাঁদের তাড়িয়ে বেড়ায়। সে বছর হাওড় থেকে একেবারে শূন্য হাতে ফিরতে হয়েছিল তাঁদের। গত বছর নির্বিঘেœ ধান গোলায় তুলেছেন। এর আগের বছর অন্তত ২০টি হাওড়ে ফসলহানি হয়েছিল। কিন্তু চলতি বছর হাওড়াঞ্চলে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ঝড়-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে ঘাম ঝরানো মাঠে পরিশ্রমের ফসল দেখতে পেয়ে কৃষকের মুখে ফুটেছে তৃপ্তির হাসি। তাদের ভাষ্যমতে, জিরাতিরা বাড়িঘর ফেলে খড়কুটো বা টিন দিয়ে কুঁড়েঘর করে হাওড়ের মাঝখানে বছরের প্রায় অর্ধেক সময় কাটান। তাঁদের পরিশ্রমেই কৃষকের গোলা ধানে ভরে ওঠে। এ বছর ধান কাটার সময় হাওড়ে পানি না আসায় তারা খুশি।
ইটনার ছিলনীসহ বিস্তীর্ণ হাওড়ে দেখা যায়, যেদিকে চোখ যায় শুধু পাকা ধান আর ধান। ক্ষেতের পর ক্ষেত ধানে ভরে গেছে। মৃদুমন্দ বাতাসে দুলছে লম্বা লম্বা পাকা ও আধাপাকা ধানের সোনালি শীষ। এসব হাওড়ে পুরোদমে পাকা ধান কাটার উৎসব শুরু হয়েছে। কৃষি শ্রমিকদের পাশাপাশি যন্ত্র দিয়ে দিন-রাত চলছে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ। কৃষকরা জানান, আগের চেয়ে কম হলেও এখনও শ্রমিক সংকট রয়েছে। তবে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে কিছুদিনের মধ্যেই হাওড়ের সব ধান কাটা শেষ হবে। সাধারণত বৈশাখ মাসকেই বোরো ধান কাটার সূচনা ধরা হয়ে থাকে। কিন্তু এ বছর হাওড়াঞ্চলে চৈত্রেই শুরু হয়েছে ধান কাটা। বিস্তীর্ণ হাওড়জুড়ে ফলে আছে সোনালি ধান। আর এই হাওড়ই দেশের অন্যতম খাদ্য ভা-ার বলে খ্যাত। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, কিশোরগঞ্জে এবার ১ লাখ ৬৭ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৬২৫ শত টন। এর মধ্যে হাওড়েই আবাদ হয়েছে ১ লাখ ৩ হাজার ৬২০ হেক্টর। জেলায় চাহিদা রয়েছে মাত্র সাড়ে ৩ লাখ টনের মতো। ধান কাটতে হাওড়াঞ্চলে কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার নামানো হয়েছে। 
করিমগঞ্জের নোয়াগাঁও উদারকান্দা হাওড়ে কৃষক ফজলু, হারিছ ও বুলবুল মিয়াসহ ১৬ শ্রমিক ধান কাটছেন। তাঁরা জানালেন, পার্শ্ববর্তী রৌহা গ্রামের সুমন মিয়ার জমির ব্রিধান-২৮ জাতের ধান কেটে দিচ্ছেন চুক্তিতে। এক বিঘা জমি কেটে দিলে পাবেন চার মণ ধান। আবার টাকায় কাটলে পেতেন চার হাজার টাকা। মিঠামইনের গোপদীঘি মাইঝের বন হাওড়ে কৃষক আব্দুল্লাহর এক একর জমিতে হাইব্রিড হীরা ধান করেছিলেন। কৃষিশ্রমিকরা সেই জমির ধান কেটে ঝাঁপিতে ভরে মাথায় চাপিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন রাস্তায়। সেখানে দাঁড়ানো আছে ট্রলি। তাতে করে আবার নিয়ে যাচ্ছেন খলায়। সেখানেই ‘বোমা মেশিনে’ মাড়াই শেষে শুকিয়ে ধান নিয়ে যাবেন বাড়িতে। পাশের বাঘাইয়া হাওড়ে কৃষক সামছুদ্দিনের ৫০ শতাংশ জমির ব্রিধান-৮৮ জাতের ধান কাটা হচ্ছে। 
কৃষকরা জানালেন, এবার সকল জাতের ধানেরই ফলন ভালো হয়েছে। বিশেষ করে হাইব্রিড হীরা এবং ব্রিধান-৯৮ ধানের ফলন বেশ ভালো হয়েছে। ডিঙ্গাপোতা হাওড়ে কৃষকরা মাঠেই ভিজা ধান প্রতি মণ ৯০০ টাকায় বিক্রি করছেন। নৌপথে বড় বড় বাল্কহেড ও ইঞ্জিনচালিত নৌকায় নতুন ধান করিমগঞ্জের চামটা নৌ-বন্দরের আড়তগুলোতে নিতে দেখা গেছে। আড়ত মালিক আলতাফ হোসেন জানান, এখন হীরা ৭৫০ ও ব্রি-২৮ ধান ৯০০ টাকা মণ দরে কিনছেন তারা। অবশ্য এতে গৃহস্থের লোকসান হচ্ছে জানিয়ে কৃষক জালাল উদ্দিন ও আক্কাস মিয়া বলেন, মৌসুমের শুরুতে ঋণের টাকা পরিশোধ ও শ্রমিকের খরচ মেটাতে অনেকেই ধান বিক্রি করতে বাধ্য হন। আড়ত মালিকরা এ সুযোগ নিয়ে দাম কম দেন। এক মণ ধান উৎপাদনে খরচই প্রায় হাজার টাকা। অথচ শুরুতে বিক্রি করতে হচ্ছে ৭০০ টাকা দরে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুস সাত্তার গণমাধ্যমকে জানান, এবার ধানের ফলন ভালো হয়েছে। তাছাড়া বন্যার আশঙ্কায় আগাম জাতের ধান আবাদের কারণে আগাম কাটা শুরু হয়েছে। বন্যার হাত থেকে ফসল রক্ষার লক্ষ্যে সরকার হাওড়ের চাষিদের জন্য ৭০ ভাগ ভর্তুকি মূল্যে ‘কম্বাইন হার্ভেস্টার’ দিয়েছে। শতকরা মাত্র ৩০ টাকা দিতে হয় কৃষককে। গত চার বছরে জেলার ১৩টি উপজেলায় মোট ৭৮০টি কম্বাইন হার্ভেস্টার দেওয়া হয়েছে। একটি হার্ভেস্টার দৈনিক ৭০ থেকে ৮০ শ্রমিকের সমান ধান কাটতে পারে। সেই কারণে আগাম বন্যার হাত থেকে ফসল রক্ষায় দ্রুত ধান কাটার জন্য কম্বাইন হার্ভেস্টার দেওয়া হয়েছে। এবার জেলায় মোট এক লাখ ৬৭ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে কেবল হাওড়েই আবাদ হয়েছে এক লাখ তিন হাজার ৬২০ হেক্টর।
মাজহার মান্না, কিশোরগঞ্জ

×