ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

থাপড়ানো  রুটি

প্রকাশিত: ২৩:৪৩, ৯ মে ২০২৪

থাপড়ানো  রুটি

.

মানিকগঞ্জ জেলার একটি ঐতিহ্যবাহী হাট হলো সাটুরিয়ার হাট। এই হাটটি প্রায় চারশ বছরের পুরনো একটি প্রাচীন হাট। সপ্তাহের প্রতি বৃহস্পতিবার এই হাট বসে। আর এই হাটের ঐতিহ্যবাহী একটি খাবার হলো ময়দা দিয়ে তৈরি বড় আকারের থাপড়ানো রুটি। যা আশপাশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে আগত লোকজন হাটের বেচা-বিক্রি শেষ করে বাড়ি ফেরার পথে যান হাতে থাপড়ানো এই রুটির দোকানে। কেউ রুটির দোকানে বসে রুটি খাচ্ছেন, আবার কেউ পরিবারের জন্য কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। 
সাটুরিয়া হাটের পুরনো এই থাপড়ানো রুটির ঐতিহ্য ধরে রাখতে এখনো ব্যবসা ধরে রেখেছেন কিছু দোকান মালিক। আগে এই রুটির দোকানের সংখ্যা অনেক বেশি থাকলেও এখন এর সংখ্যা অনেকটা কমে গেছে। তবে রুটির দোকানের সংখ্যা কমলেও থাপড়ানো এই রুটির চাহিদা আর সুনাম রয়েছে আগের মতোই। বাপ-দাদার কাল থেকে চলে আসা এই ব্যবসাকে ধরে রেখেছেন তারা। নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার কারণে থাপড়ানো রুটি বিক্রি করে আগের মতো লাভ না হলেও বাপ-দাদার শত বছরের ব্যবসাকে ধরে রেখেছেন হাটের এসব দোকান মালিক। 
সরেজমিনে দেখা যায়, বৃহস্পতিবার হাটের দিন ভোরবেলা থেকেই শুরু হয় এই থাপড়ানো রুটি তৈরির দোকানের কার্যক্রম। রুটি তৈরির কারিগররা রুটি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন আর দোকানের কর্মচারীরা ক্রেতাদের চাহিদামতো রুটি সাপ্লাই করছেন। অনেকে দোকানে বসেই রুটি-মিষ্টি খাচ্ছেন আবার কেউ কেউ পরিবারের সদস্যদের জন্য কেজি দরে রুটি কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। দোকানের কারিগররা রুটির সঙ্গে সঙ্গে জিলাপিও তৈরি করছেন। 
সপ্তাহে শুধু বৃহস্পতিবার হাটের দিনই এই দোকান বসে তাই এই থাপড়ানো রুটির চাহিদা অনেক বেশি থাকে। এইদিন প্রতিটি দোকান মালিক ২৫০-৩০০ কেজি করে থাপড়ানো রুটি বিক্রি করে থাকেন বলে জানান দোকানিরা। 
ঢাকা জেলার ধামরাই উপজেলার কুশুরা ইউনিয়নের পাড়াগ্রাম এলাকা থেকে হাটে ধান বিক্রি করতে আসা সিরাজুল ইসলাম বলেন, প্রতি বৃহস্পতিবার সাটুরিয়ার হাটে ধান না হয় অন্য কোনো ফসল বিক্রি করতে আসি। হাটে বেচা-কেনা শেষে বাড়ি ফেরার পথে থাপড়ানো রুটি খাই এবং বাড়ির অন্যান্য সদস্যদের জন্য নিয়া যাই। এই রুটি খাইতে অনেক মজা লাগে আমার। এ ছাড়াও আমার স্ত্রী এবং সন্তানরাও এই থাপড়ানো রুটি পছন্দ করে। তাই ওদের জন্য ৮০ টাকা কেজি দরে তিন কেজি থাপড়ানো রুটি কিনলাম। 
ঐতিহ্যবাহী থাপড়ানো রুটি তৈরির কারিগর আব্দুল হামিদ বলেন, তিনি ৩০ বছর ধরে এ ব্যবসায় জড়িত রয়েছেন। এ ব্যবসা তার বাপ-দাদার আমলের ব্যবসা বলে জানান তিনি। তিনি জানান, থাপড়ানো এই রুটি খাইতে যেমন স্বাদ, তেমন মানেও ভালো। 
সাটুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন পিন্টু বলেন, শত বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী সাটুরিয়ার এই হাট। সারা দেশেই এই হাটের সুনাম ছড়িয়ে রয়েছে। আমরা এই হাটকে নিয়া গর্ব করি। তার অন্যতম উপসঙ্গ হলো ধান, সোনালি ফসল পাট, গম, সরিষা এবং হাটের ঐতিহ্য থাপড়ানো রুটি। এই হাটের থাপড়ানো রুটির ঐতিহ্য এখনো আগের মতোই রয়েছে। দূর-দূরান্ত থেকে অনেক লোকজন এই হাটে থাপড়ানো রুটি আর মিষ্টি খেতে আসেন। 
মাহবুবুর রহমান রানা, সাটুরিয়া, মানিকগঞ্জ 

 

 

 

×