ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান

প্রকাশিত: ২২:৪৩, ৯ মে ২০২৪

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

কয়েক দিনের বৃষ্টিতে ভিজে কিছুটা শীতল শান্ত হয়েছে ঢাকার প্রকৃতি পরিবেশ। বৃহস্পতিবার চারুকলার বকুলতলা

একটা শীত শীত ভাব চলে এসেছে, তাই না? বৈদ্যুতিক পাখা আগের মতো ঘুরছে না। ঘুরতে হচ্ছে না। গোস্বা কমেছে গ্রীষ্মের। কিছুটা আড়াল নিয়েছে সূর্য। তার চেয়ে বড় কথা, বৃষ্টি হচ্ছে। গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে শীতল শান্ত হয়েছে রাজধানীর প্রকৃতি পরিবেশ। অথচ দিন আগেও দুর্বিষহ অবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে! বিগত দিনের গরমের রেকর্ড ভেঙে খান খান হয়ে যাচ্ছিল। গত ৩০ এপ্রিল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪৩. ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগের দিন ২৯ এপ্রিল ঢাকায় চলতি বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়, যা ছিল ৪০. ডিগ্রি সেলসিয়াস। অবস্থায় বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করা হচ্ছিল প্রতিদিন এবং অতঃপর সেই বৃষ্টির দেখা মিলেছে। বৃহস্পতিবারও বৃষ্টি হয়েছে ঢাকায়। নিয়মিত বৃষ্টির কারণে শান্ত শীতল একটা অনুভূতি হচ্ছে। কেউ কেউ তো রাতে হাল্কা কাঁথাও জড়িয়ে নিচ্ছেন গায়ে। প্রকৃতির খেলা বটে! এই খেলা গত কিছুদিনের কষ্ট সত্যি ভুলিয়ে দিয়েছে। রাজধানীর প্রতিদিনের জীবনে ফিরিয়ে দিয়েছে স্বস্তি। অবশ্য গ্রীষ্মের চরিত্র একেবারে ভুলে গেলে চলবে না। সময় গরমটাই মুখ্য। গরমকে তাই একেবারে অস্বীকার না করে আসুন কিছুটা অভ্যস্ত হওয়ারও চেষ্টা করি।       

রবির আলোয় উদ্ভাসিত চারদিক রবির আলোয় চারদিক কী দারুণ উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছে! পঁচিশে বৈশাখ বুধবার ছিল বাঙালিরপ্রাণের মানুষরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মবার্ষিকী। প্রতিবারের মতো এবারও বেশ জাঁকজমকের সঙ্গে দিবসটি উদ্যাপন করা হয়েছে। প্রথম দিন রাজধানী ঢাকায় যে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছিল তা আজ তৃতীয় দিনে এসেও এতটুকু ম্লান হয়নি। দ্বিতীয় দিনের আয়োজনে বৃহস্পতিবার মুখরিত ছিল ছায়ানট। খ্যাতিমান শিল্পীদের একক সংগীত, সম্মেলক নৃত্য উপভোগ করেন মিলনায়তনভর্তি শ্রোতা-দর্শক। একই দিন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে সূচনা করা হয় তিন দিনব্যাপী উৎসবের। আয়োজক বাংলাদেশ রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সংস্থা। সংস্থার নির্বাহী সভাপতি আমিনা আহমেদসহ নবীন-প্রবীণ বহু শিল্পী উৎসব সফল করতে কাজ করছিলেন। সন্ধ্যা ৭টার দিকে মূল আয়োজন শুরু হয়। একক সম্মেলক কণ্ঠে গান, কবিতা, নাচÑ কী যে ভালো লাগছিল! একই রকম আয়োজনে মুখর এখন শিল্পকলা একাডেমি। একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় গত বুধবার শুরু হওয়া রবীন্দ্রজয়ন্তীর অনুষ্ঠান চলছে এখনও। সংগীত আবৃত্তি নৃত্যশালা মিলনায়তনেও উৎসব। কবিগুরুর গান-নাচসহ সৃষ্টির বিচিত্র সম্ভার তুলে ধরছেন শিল্পীরা।

তবে অস্বস্তির বিষয় এই যে, এখানেও রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সংস্থার নামে উৎসব আয়োজন করা হয়েছে। হ্যাঁ, সংস্থার শিল্পীদের মধ্যে যে বিভাজন দেখা যাচ্ছে তারই ফলে দুটি পৃথক মঞ্চ। আলাদা দুটি উৎসব। উৎসব বেশি বেশি হওয়া দোষের নয়। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ যাদের মর্মে, কর্মে চেনতায় তাদের মধ্যে বিভক্তি যারপরনাই বেদনার। কয়েক বছর তো হয়ে গেল, আর কত? এই বেদনার শেষ কোথায়? কবে? কীভাবে? সংশ্লিষ্টদের এখনই বিষয়টি নিয়ে ভাবা উচিত। কাজ করা উচিত। মনে রাখা উচিত আবারও মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে ধর্মীয় মৌলবাদ। উগ্র মৌলবাদীরা কবিগুরু সম্পর্কে অপতথ্য প্রচার করছে। বাংলা ভাষা সাহিত্য সংগীতকে বিপুলভাবে সমৃদ্ধ করা রবীন্দ্রনাথকে নিশানা করার ক্ষেত্রে দুবার ভাবছে না কূপমন্ডূকরা।   অবস্থায় রবীন্দ্রসংগীতের শিল্পী এবং সংগঠকদের ঐক্য আরও জরুরি। তারা যত দ্রুত বিষয়টি উপলব্ধিতে নেবেন ততই সবার মঙ্গল।

×