ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

বিকল্প খাদ্য সাদা ভুট্টা

প্রকাশিত: ০৪:৫৭, ২০ মার্চ ২০১৭

বিকল্প খাদ্য সাদা ভুট্টা

ভাত বাঙালীর প্রধান খাদ্য হলেও কালে কালে ভাতের পাশাপাশি রুটিও অংশত একটি প্রধান খাদ্য হয়ে উঠেছে। ভাতের ওপর চাপ কমাতে আলু খাওয়ার বিষয়টি জোরেশোরে উচ্চারিত হলেও ভাত ও রুটির মতো অন্যতম প্রধান খাদ্য হিসেবে সেটি বাঙালীর পছন্দের খাবার হয়ে ওঠেনি। প্রধান খাদ্য ভাতের উৎস চাল। আর রুটির উৎস গম। এ দুটি খাদ্যপণ্যের ওপর চাপও বেশি। চাহিদা অনুযায়ী কৃষকও মরিয়া ধান ও গম উৎপাদনে। অথচ প্রতিনিয়তই কমছে দেশের আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ। কিন্তু জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে বাড়ছে খাদ্য চাহিদা। তবে বর্ধিত জনসংখ্যার চাল ও গমের ওপর চাপ কমাতে পারে সাদা ভুট্টা। বিজ্ঞানীরা দেশের মাটিতে সাদা ভুট্টার ওপর গবেষণা চালিয়ে সফলও হয়েছেন। গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে প্রতি হেক্টরে যেখানে ধানের ফলন পাঁচ টন ও গমের ফলন তিন টন, সেখানে ভুট্টার ফলন হতে পারে সাত টনের বেশি। বর্তমানে দেশে হলুদ রঙের ভুট্টার চাষাবাদ করা হয়। এগুলো পশু-পাখির খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তবে উন্নত বিশ্বে সাদা রঙের ভুট্টা মানব খাদ্য হিসেবে প্রচলিত। সাদা দানার ভুট্টার স্বাদ চাল ও গমের অনেকটা মাঝামাঝি। এর আটা মিহি। চাল ও গম হতে যে সকল খাবার তৈরি করা হয়, সাদা ভুট্টার আটা হতেও সে সকল খাবার তৈরি করা সম্ভব। গমের মেশিনে সাদা ভুট্টার আটা ভাঙ্গানো যায়। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশে বর্তমানে তিন লাখ হেক্টর জমিতে ২২ লাখ টন হলুদ ভুট্টা উৎপাদিত হয়। এ ভুট্টায় অধিক মাত্রায় ক্যারোটিন থাকায় সিংহভাগই ব্যবহৃত হয় মুরগি ও মাছের খাবার হিসেবে। ক্যারোটিন শরীরে অধিক পুষ্টি চাহিদা মেটালেও তা খাদ্যদ্রব্যের স্বাদ কমিয়ে দেয়। তাই সারা বিশ্বে মানুষের খাদ্য হিসেবে হলুদ ভুট্টার চেয়ে সাদা ভুট্টার কদর বেশি। সরকার বেশ কয়েক বছর আগেই কৃষিতে বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা প্রদানের মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণ করে। প্রণোদনা প্রদানের ধারাবাহিকতা রক্ষা সম্ভব হয়েছে মূলত কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর দূরদর্শিতা ও আন্তরিকতার কারণেই। আউশ ধান আবাদের জন্য উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রান্তিক চাষীকে কোটি কোটি টাকার প্রণোদনা-সুবিধা দেয়ার কার্যক্রম চালু হয় ২০১২ সালে। এরপর থেকে প্রতি বছর এ খাতে অর্থ বরাদ্দ যেমন বাড়ছে, তেমনি অধিক সংখ্যক চাষীকে প্রণোদনার আওতায় আনা হচ্ছে। বলাবাহুল্য, এটি কৃষিপ্রধান দেশের জন্য কার্যকর একটি উদ্যোগ। বর্তমান সরকার কৃষিবান্ধব বলেই প্রণোদনা কার্যক্রম উত্তরোত্তর জোরদার হচ্ছে। খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন সহজ নয়। তবে আংশিকভাবে অভ্যাস পরিবর্তন করা যায় সদিচ্ছা থাকলে। বিশেষ করে নগরে বসবাসকারী নতুন প্রজন্মের কাছে নতুন খাদ্য যুক্তি ও গ্রহণযোগ্যতা বিবেচনায় তুলে ধরা হলে সেটি তারা গ্রহণে আগ্রহী হবে বলে ধারণা করা যায়। সাদা ভুট্টা প্রক্রিয়াজাত করে উপাদেয় নানা খাবার তৈরির পথও ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসবে। এখন পর্যন্ত দেশে চালের ঘাটতি নেই। ফলন বাড়ারও একটি সীমা রয়েছে। জমির পরিমাণ কমলে এবং জনসংখ্যা বাড়লে এক সময়ে দেশে চালের ঘাটতি হওয়া মোটেই অবাস্তব নয়। তাই বিকল্প খাদ্যের সন্ধান ও সে অনুযায়ী খাদ্যাভ্যাসে কিছু পরিবর্তনের সূচনা হলে সেটি দেশের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য শুভ ফলই বয়ে আনবে।
×