ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

চাঁপাইয়ে একটি ভবনের উদ্বোধনে পাল্টে গেছে বিচার পাবার ব্যবস্থা

প্রকাশিত: ০৬:১৬, ১১ মার্চ ২০১৭

চাঁপাইয়ে একটি ভবনের উদ্বোধনে পাল্টে গেছে বিচার পাবার ব্যবস্থা

ডি.এম তালেবুন নবী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ॥ জেলা শহর বা নগরীতে ছুটে আসা গ্রামীণ জনপদের মানুষ উর্ধশ্বাসে ছুটে আসলেও এতদিন মারাত্মকভাবে বঞ্চিত হয়ে আসছিল ন্যায়বিচার হতে। সেই অবস্থার অবসান হলো দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর। বিশেষ করে মাজদার মামলার রায়ের পর প্রশাসন থেকে বিচার বিভাগ পৃথক হবার পর থেকেই স্থানীয় বিচার বিভাগে দুর্ভোগের শুরু হয়। বিশেষ করে ছোট আদালত বলতে ম্যাজিস্ট্রেট, এডিএম, ডিএম আর বিশেষ আদালত নিয়ন্ত্রণ করে থাকত জেলা প্রশাসনের কোন না কোন কর্মকর্তা। তাদের ভবনে বা কালেক্টরেটে এসব ম্যাজিস্ট্রেট বিচারক বসায় স্থান সঙ্কুলানের কোন সমস্যা হতো না। কিন্তু বিচার বিভাগ পৃথক হয়ে যাবার পর পুরো নিয়ন্ত্রণ চলে যায় জেলা জজের কাছে। তাদের ছোটখাটো ভবনে ব্যাপক হারে বিচার বসার কোন কক্ষ ছিল না। তার পরে চীফ জুডিশিয়াল ও তার সহকারী ম্যাজিস্ট্রেটদের স্থান সংকুলান না হবার কারণে বিচারের আশায় গ্রাম থেকে ছুটে আসা মানুষ নানানভাবে হয়রানির শিকার হতে থাকে। এমনকি বিচার সংক্রান্ত নানান বিভাগের লোকজনের বসার কোন ব্যবস্থা ছিল না। জিপি, সহকারী জিপি, পিপিসহ একাধিক এপিপি নানানভাবে এখানে সেখানে ঘুরে বেড়াত। তাদের বসার নির্দিষ্ট রুম নিয়ে সমস্যা থাকায় বাদী, বিবাদী উভয়পক্ষ নানানভাবে এদিকে সেদিক ছোটাছুটি করে কোন প্রকারে মামলায় অংশগ্রহণ করে নতুন তারিখ নিয়ে বাসায় বা গ্রামে ফিরে যেত। এভাবে চলে আসছিল কোর্টের কার্যক্রম। বিষয়টি বিচার বিভাগের গোচরীভূত হবার পর কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় তড়িঘড়ি বরাদ্দ দিয়ে বেকার চীফ জুডিশিয়াল ভবন নির্মাণে মনোযোগী হয়। বর্তমান সরকারের এটি বড় সাফল্য বললেও ভুল হবে না। জেলা জজকোর্ট ভবনের ঠিক পেছনে চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ভবন তৈরির জন্য প্রায় ১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে কাজ শুরু করে। ১২ তলা ভিত্তির ওপর ৮ তলা পর্যন্ত নির্মাণ করা হবে। বর্তমানে চারতলা ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। নিচতলা বা গ্রাউন্ড ফ্লোর ১৭ হাজার ৩১৪ বর্গফুট, দ্বিতীয় তলা ১৬ হাজার পাঁচ শত ৭৯ বর্গফুট, তৃতীয় তলা ১৬ হাজার ৫৭৯ বর্গফুট ও ৪র্থ তলা একই মাপের হবার কারণে জনসাধারণ দারুণভাবে উপকৃত হবে। উপরে অনরূপভাবে আরও ৪ তলা (৫ম থেকে অষ্টম) নির্মাণ করার কাজ শুরু হয়েছে। যার মোট বরাদ্দ ৫১.২৩ কোটি টাকা। বর্তমান নির্মাণ সম্পন্ন হওয়া ভবনে ৯টি এজলাস, নিজস্ব বৈদ্যুতিক জেনারেটর (৪০০ কেভিএ বৈদ্যুতিক)। বিচারকদের জন্য আলাদা লিফট, লিগ্যাল এইড অফিস, রেকর্ড রুম, মহিলা ও পুরুষ হাজতখানা, মালখানা। একই সঙ্গে বিশাল কনফারেন্স রুম ও নামাজ পড়ার ঘর রয়েছে। এছাড়াও একটি মানসম্পন্ন কাফেটারিয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। পাশাপাশি এই ভবনের বিশাল বারান্দা বিচার প্রার্থীদের আনাগোনা যতই বেশি হোক না কেন তারা ঘোরাফেরা বা চলাফেরা করে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে। বিশাল এই ভবনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে মার্চের ২ তারিখ থেকে। আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আনিসুল হক বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) ভবনের উদ্বোধন করলে কার্যক্রম শুরু হয়। তিনি জানান, সরকার প্রথম পর্যায়ে এই ধরনের ভবন নির্মাণে ২ হাজার ৪শ’ কোটি টাকার বরাদ্দ দিয়েছে। ৪২ জেলায় তা নির্মাণ করা হচ্ছে। গণপূর্ত অধিদফতর এসব ভবন নির্মাণের দায়িত্ব পালন করছে। বর্তমান সরকারের গণমুখী কর্মকা-ের এই বহির্প্রকাশে নিশ্চিত করেছে সরকারের উদ্দেশ্য। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সমুন্নত রাখতেই এসব কাজ করছে। শীঘ্রই সারাদেশের আদালতে মামলা জট খুলে যাবে। মন্ত্রী আনিসুল হক চাঁপাইনবাবগঞ্জ চীফ জুডিশিয়াল ও ম্যাজিস্ট্রেট ভবন উদ্বোধন শেষে এক বিশাল সুধী সমাবেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেনÑ শোষণ ও বঞ্চনাহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা করার কাজ করছে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার। এ সরকারের অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে সমাজের দুঃখী, বঞ্চিত, নিপীড়িত মানুষের কল্যাণে কাজ করে সুবিচার নিশ্চিত করা। আইনের শাসণের মধ্যে লুকিয়ে আছে সুসমাজ প্রতিষ্ঠার সব ভিত্তি। আইনের শাসণ না থাকলে দেশে কোন শৃঙ্খলা থাকবে না। তাই বিচার বিভাগকে অধিক গতিশীল করতে ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে কাজ শুরু হয়েছে। আমরা বিচারকদের মেধা ও যোগ্যতাকে আরও তীক্ষè ও ধারালো করতে বিদেশে ট্রেনিং দেবার ব্যবস্থা করেছি। শীঘ্রই ৫৪০ বিচারককে অস্ট্রেলিয়ায় প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানো হবে। ইতোপূর্বে ব্রিটিশ থেকে শুরু করে পাকিস্তানী শাসকদেরও বিচারকদের প্রশিক্ষণের জন্য বিদেশ পাঠানোর নজির নেই। এর বাইরেও সরকার একেবারে নিরীহ, গরিব, অসহায় মানুষের আইনী সেবা দিতে তৎপর। তাদের লিগ্যাল এইডের মাধ্যমে আইনী সেবা সহযোগিতা দিচ্ছে। এক কথায় শোষণ ও বঞ্চনাহীন সমাজ প্রতিষ্ঠায় কাজ করে চলেছে আওয়ামী লীগ সরকার। বিশাল এই সমাবেশে জেলা ও দায়রা জজ এনামুল বারীর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন সদর এমপি আব্দুল ওদুদ বিশ্বাস, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব জহিরুল ইসলাম, একই মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোস্তাফিজুর রহমান, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মঈনুদ্দিন ম-ল, বার সভাপতি এ্যাডভোকেট মোসাদ্দেক হোসেন প্রমুখ। চীফ জুডিশিয়াল আদালত প্রাঙ্গণের বিশাল সমাবেশে জেলার সর্বস্তরের মানুষ উপস্থিত থেকে এই ধরনের কর্মকা-কে দারুণভাবে উৎসাহিত ও অভিনন্দিত করেছে। সর্বশেষ সুবিচার পেতে দীর্ঘ সময় ধরে জনসাধারণ যে দুর্ভোগ সহ্য করে এসেছে তা নিরসনে সরকারের এই মহান উদারতাকে দারুণভাবে অভিনন্দিত করেছে জেলা বারের নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ নেতা নজরুল ইসলাম।
×