ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

সালেহা চৌধুরী

ধূর্ত শেয়ালের সন্ধি প্রস্তাব

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ৪ মার্চ ২০১৭

ধূর্ত শেয়ালের সন্ধি প্রস্তাব

মনের আনন্দে এক মোরগ বনে ঘুরছে আর গান গাইছে। গান গাইতে গাইতে দেখতে পেল একটি বিশাল, দীর্ঘ, সুন্দর, সবুজ রেনট্র্।ি রোদ আলোতে বেশ লাগছে গাছটিকে। মোরগ গাছের ডাল বেয়ে উঠে গেল অনেক দূরে। গায়ে আলোমেখে গান গাইতে শুরু করল মনের আনন্দে। গলার সুর অনেক উঁচুতে তুলে। একটি ডাল থেকে আর একটি ডাল আর একটি ডাল থেকে তারপরের ডাল। এই করতে করতে মোরগটি উঠে গেল সেই বিশাল রেনট্রির সবচাইতে উঁচু ডালে। আর সেখানে উঠেই মনের আনন্দে গলা ছেড়ে গান আরম্ভ করল। মোরগের গান শুনে এক ধূর্ত শেয়াল এসে দাঁড়াল গাছের নিচে। তাকিয়ে দেখল সেই টসটসে মোরগ অনেক উঁচুতে উঠে গান গাইছে। ইচ্ছে থাকলেও ওই মোরগকে ধরা মোটেই সহজ নয়। তাই এবার ধূর্ত শেয়াল এক বুদ্ধি আটলো মনে মনে। বেশ একটু বন্ধুর মতো গলায় বলে সুপ্রভাত মোরগ ভাই। আজ তুমি খবরের কাগজ পড়েছো? গান থামিয়ে মোরগ বলে, এখনও পড়া হয়নি। কোন বিশেষ খবর আছে নাকি? সেই কথাই তো বলছি। বলে শেয়াল হেসে। খবর এই জাতিসংঘে এক মজার প্রস্তাব পাস হয়ে গেছে। কি প্রস্তাব? কেমনতর প্রস্তাব? নিচের দিকে তাকিয়ে সেই মোরগ বলে। এখন থেকে কোন পশুই তার চাইতে দুর্বল পশুকে আক্রমণ করতে পারবে না। বলছ কি! বলে সেই মোরগ। তুমি নিচে এসো আমি পুরো ব্যাপারটি তোমাকে বলছি। অত দূরে তুমি। চিৎকার করে কতক্ষণ কথা বলা যায়। এখানে এলে পুরো ব্যাপারটি নিয়ে দীর্ঘসময় আলোচনা করা যেত। মোরগ শেয়ালের মতো ধূর্ত নয় এ তো সবাই জানে। তাই বলে সে বোকাও নয়। সে বুঝতে পারল মিষ্টার শেয়ালের এই সব খবরের মানে। গাছে উঠতে পারছে না, ওকে ধরতে পারছে না। কি আর করা। এমনি এক মহান গল্প বলে যদি সেই তরুণ সুন্দর মোরগকে গাছ থেকে নামাতে পারে। আর গাছ থেকে নামলেই কপ। একেবারে হাড়গোড় শুদ্ধ পেটের ভেতর চালান। সেখানে বসে বসে সন্ধি প্রস্তাবের গল্প শুনতে মোটেই রাজি নয় মোরগ। সে মনে মনে বুদ্ধি ঠিক করে। কিন্তু মুখে কিছু বলে না। গান থামিয়ে সে অনেকক্ষণ দূরে তাকিয়ে কি যেন দেখছে। ও মোরগ ভাই কি দেখছো তুমি? মোরগ প্রথমে উত্তর করে না। কেবল তাকিয়েই থাকে। খানিক পরে শেয়াল আবার প্রশ্ন করেÑ কি ব্যাপার মোরগ ভাই তুমি দূরে তাকিয়ে কি দেখছো? মোরগ বলে বেশ গম্ভির স্বরেÑ আমি দেখছি একপাল কুকুর ভয়ঙ্কর চেহারা নিয়ে এদিকে এগিয়ে আসছে। বেশ বড় আর হিংস্র মনে হয়। এই কথা শুনে শেয়াল চলে যাবে বলে ঠিক করে। আরে মিষ্টার শেয়াল চললে কোথায়। বলে সেই মোরগ মুচকি হেসে। চললাম। কারণ ওই সব হিংস্র কুকুর আমাকে মোটেই পছন্দ করবে না। ওমা তুমিই ৃতো বললে জাতিসংঘে শান্তি প্রস্তাব পাস হওয়ার কথা। কোন পশুই আর অন্য কোন পশুকে আক্রমণ করবে না। শেয়াল লেজ গুটিয়ে পালিয়ে যেতে যেতে বলেÑ আমার মনে হয় ওই সব কুকুর এখনও শান্তি প্রস্তাবের খবর জানে না। তুমি জান। ওরা জানবে না কেন? বলে মোরগ। তুমিও তো জান না। সকলে কি সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে আমার মতো খবরের কাগজ পড়ে। হয়তো ওরা পড়েছে। তুমি একটু পরীক্ষা করে দেখই না। শেয়াল মোরগের এই কথা শুনে কোন প্রকার উত্তর না দিয়ে প্রাণ ভয়ে পালিয়ে যায়। হিংস্র কুকুর কখনই শেয়ালকে পছন্দ করে না। এ কথা সেই ধূর্ত শেয়াল খুব ভাল করেই জানে। মোরগ আপন মনে হাসে। হঠাৎ বন্ধুত্বের প্রস্তাবে সাড়া না দিয়ে ব্যাপারটি যে ভালমতো বুঝতে পেরেছে ভেবে ভীষণ ভাল লাগে। মাথার লাল ঝুঁটি নাচিয়ে সে আবার গান শুরু করে। উঁচু ডালে। আপন আনন্দে। আসলে আমাদের সকলেরই জানতে হবে হঠাৎ কোন বন্ধুত্বের প্রস্তাব মোটেই সবসময় নিঃস্বার্থ হয় না। আর তা ছাড়া যাকে আমরা চিরকাল জানি শত্রু হিসেবে, মতলববাজ হিসেবে, সে রাতারাতি বদলে গেল? কারণ কি? আর শেয়াল ভেবেছে মোরগ মানেই বোকা। কিন্তু মোরগ ওর বুদ্ধিতে জেনে নিতে চেয়েছিল আসল সত্য। আসলে একজনকে বোকা ভাবা ঠিক নয়। অলঙ্করণ : আইয়ুব আল আমিন
×