ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

অস্তিত্ববাদী মাইকেল মধুসূদন দত্ত

প্রকাশিত: ০৬:৫৭, ২০ জানুয়ারি ২০১৭

অস্তিত্ববাদী মাইকেল মধুসূদন দত্ত

জন্মদিনে প্রতিবছর কবির নামের একাডেমি যশোর থেকে স¥ারক সংকলন প্রকাশিত হয়ে আসছে। এ ধারাবাহিকতা অদূর ভবিষ্যতেও চলতে থাকবে। কবিকে নিয়ে গবেষণা থামবে না কোনদিন। এ আমার একান্ত আত্মবিশ্বাস। কবিকে নিয়ে লেখার শুরুতেই তাঁর (কবির নিজের) প্রশ্নের সম্মুখীন। তিনি তাঁর এক কবিতায় লিখেছেন- ‘কে-কবি কবে কে মোরে! ঘটকালি করি শবদে শবদে বিয়া দেয় যেই জন সেই কি সে জন দমী? তার শিরোপরি শোভে কি অক্ষয় শোভা যশের রতন? সেই কবি মোর মতে কল্পনা সুন্দরী যার মন:কমলেতে পাতেন আসন।’ আসলে কবি শনাক্ত করা বড় কঠিন।এক্ষেত্রে স্বয়ং কবিই প্রশ্নের সম্মুখীন। প্রশ্নের যথার্থ উত্তর দিয়েছেন এই বলে; ‘সেই কবি মোর মতে কল্পনা সুন্দরী/ যার মন:কমলেতে পাতে আসন।’ কবি জীবনানন্দ দাশ কবি শনাক্ত করতে গিয়ে বলেছেন; ‘সবাই কবি নয়, কেউ কেউ কবি।’ আসলে কবি নির্ণয়ের কোন পরিমাপক প্রযুক্তি আবিষ্কার হয়নি। বাস্তবে কবি অভিধায় অভিসিক্ত হওয়ার অভিপ্রায়ে পাল্লা দৌড়ে তথা কথিত কবিরা মাঠে নেমেছি। দৌড়ের মাঠে দমে কতজন টিকে থাকবে তা নির্ধারণ করা কঠিন। এ সনদপত্র দিতে পারে একমাত্র সময়। কবিতা এক ধরনের শিল্প। কবি বা শিল্পীর সৃষ্ট শিল্প কতটা শিল্পোতীর্ণ তা’ যথার্থই বিবেচনার দাবি রাখে। যদি শিল্পীর সৃষ্টি শিল্পকর্ম সময় ও কালের বিচারের মাপকাঠিতে ধোপে টিকে থাকে, তবে সেই শিল্পীর শিরোপরি শোভা পাবে যশের রতন। মোদ্দা কথা সৃষ্টিশীল শিল্প শিল্পীকে যশশ্বী করবে।এখানে আরেক কবির সেই কথামালা প্রযোজ্য। ‘নীরবে ঝিনুকে মুক্তা ফলে।’ যার প্রকৃষ্ট উদাহরণ মরমী শিল্পী লালন শাহ। তিনি আজ নেই। তাঁর সৃষ্টিকর্ম গবেষণার মোক্ষম বিষয়ে পরিণত হয়েছেন। তাঁকে নিয়ে ব্যাপক গবেষণার অন্ত নেই। শিল্পোতীর্ণ শিল্পের পরিমাণ অপ্রতুল। শিল্পের সাধনায় মুক্তা ফলাতে পারলে তার কদর চিরকালীন।ঐতিহ্য রক্ষায় গৌরাম্বিত হতে কেউ পিছু হটবে না। কবির নামের প্রথমাংশের আধেক উচ্চারিত হলে পরেরটুকু বুঝে ফেলে পাঠক। বাংলা সাহিত্যে এমন কবি অভিধায় অভিসিক্ত কবির সংখ্যা ক’জন আছে। অদ্বিতীয় সেই একজন যার সঙ্গে আর কারও তুলনা হয় না। কবিতার উদ্ধৃতিতে পাঠক এতক্ষণে বুঝতে সক্ষম হয়েছেন। আলোচিত কবি ব্যক্তি অবিস্মরণীয় প্রতিভাধর। ক্ষুরধার মেধাবী একমেবাদ্বিতীয়ম। কবি নামের ‘মাই’ শব্দ মুখে উচ্চারিত হলে চুম্বকার্ষনে সে সঙ্গে ‘কেল’ যুক্ত হয়ে পুরোটা ‘মাইকেল’ হয়। তারপর আর ‘মধুসুদন দত্ত’ বলার অপেক্ষা রাখে না। আজ থেকে প্রায় দু’শ বছর (১৮২৪-১৮৭৩) আগে তৎকালীন পরাধীন ভারতে উপনিবেশিক শাসনের অদৃশ্য কারাগারে এ বাংলায় যশোর জেলার সাগরদাড়ির অভিজাত জমিদার পিতা রাজনারয়ণ দত্তের ঘরে মাতা জাহ্নবী দেবীর গর্ভে সোনার চামুচ মুখে জন্মেছিলেন মধুসুদন দত্ত। বড় দুঃখের-পরিতাপের ও বেদনাদায়ক যে তিনি ছিলেন স্বল্পায়ুর। বেঁচে ছিলেন মাত্র উনপঞ্চাষ বছর। তুখোর মেধার এমন একজন কবিকে হারিয়ে বাংলাসাহিত্য বঞ্চিত। এই অপূর্ণতা আর কাউকে দিয়ে পূরণ হবার নয়। তিনি যেটুকু অবদান রেখে গেছেন তাতেও আমরা সাহিত্যসহ জাতীয় পরিচয়ে গৌরবের শীর্ষাসনে অলঙ্কৃত। বাংলা সাহিত্যে মাইকেল মধুসুদন দত্ত সাহিত্যের ধারা পরিবর্তনের প্রবর্তক। প্রথম আধুনিক কবি যা সর্বজন স্বীকৃত। বাংলায় তিনি পয়ার ছন্দে সনেটের আবিষ্কারক। মান্ধাতা আমলের জঙ্গমতা অতিক্রম করে আধুনিক সভ্যতার আলোকবর্তিকা জ্বালিয়ে সাহিত্যের নবদিশারি হয়েছেন। উত্তরণের পথে কয়েক ধাপ এগিয়েছিলেন। তিনি সে সময়ের বাংলা সাহিত্যে একমাত্র আধুনিক কবি ব্যক্তিত্ব। ইউরোপীয় সাহিত্য চর্চা তাঁর চেতনার রুদ্ধদ্বার উন্মোচন করেছিল। বাঙলা সাহিত্যকে বিশ্ব সাহিত্যের দরবারে অধিষ্ঠিত করার প্রয়াসে সচেষ্ট ছিলেন। তাঁর সাধনা পরবর্তীতে শাপেবর হয়েছিল যা বলাইবাহুল্য। মাইকেলের সাহিত্য সম্ভার নিয়ে এখানে আলোচনার সুযোগ সীমিত। বিধায় সেদিকে দৃষ্টি দেয়ার অবকাশ কম। তাঁর কবিতা, প্রবন্ধ, নাটক, উপন্যাস ধরে ধরে আলোচনা এ লেখায় বিবেচ্য নয়। কারণ মাইকেলের সাহিত্যে ঢুকে পড়লে সেখান থেকে বেরুনো অসম্ভব হয়ে পড়বে। মাইকেলকে নিয়ে ডজন ডজন বই লিখলেও তাঁর আলোচনার শেষ হবে না। অশেষ মধু কবির ভা-ার যত নাড়া যাবে অঝরে ততই মধু ঝরবে। রসাস্বাদনে সে ভা-ারের রস ফুরাবে না কখনো কোনদিন। মধু কবির রচনা মধুময় রবে চিরদিন অনন্তকাল। ইউরোপীয় ইংরেজী সাহিত্যচর্চা করে তিনি বড় ইংরেজ কবি হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। সেজন্য প্রচুর পরিশ্রম ত্যাগ স্বীকার করে বিভিন্ন ভাষার সাহিত্য পড়াশোনা করে নিজেকে প্রস্তুত করেছিলেন। বিদেশী সাহিত্য পাঠের মধ্যদিয়ে বহুবিধ রসদ সংগ্রহ করে নিজের ভিত পোক্ত করেছেন। শেষাবধি ইংরেজী ভাষার কবি খ্যাতি অর্জনে ব্যর্থ হলেও তাঁর শিল্পীসত্তা জানিয়েছে এ তাঁর ভ্রম। ইংরেজদের বিদ্বেষে ইংরেজ কবি খ্যাতি অর্জনে সক্ষম না হলেও ইউরোপীয় সাহিত্যচর্চা তাঁর বৃথা যায়নি বরং সহায়ক হয়ে নিয়ামকে পরিণত হয়েছে। কবি তাঁকে হতেই হবে। জেদের বশবর্তী হয়ে তিনি হয়েছেন আগুনে পোড়া খাঁটি সোনা। মহাকাব্য রচনা করে বাঙালী ও বাংলা সাহিত্যের মহাকবি অভিধায় স্বর্ণ শিখরে আহোরণ করে নিজে হয়েছেন মহাকবি। সেই সঙ্গে বাঙালী জাতিকে করেছেন গর্বিত। তিনি মহাকাব্য রচনার রসদ যোগাড় করেছিলেন ইউরোপীয় সাহিত্য ভা-ার চষে। তাঁর সে অনুপ্রেরণার আদর্শ ছিলেন স্বয়ং হোমার। ‘মেঘনাদবধ’ লেখার ধারণা পেয়েছিলেন হোমারের ‘হেকটরবধ’ থেকে। তাছাড়া ‘মেঘনাদবধ’ হোমারের ইলিয়ডের প্রভাব মুক্ত নয়। এ ব্যতীত মাইকেলের আদর্শ ছিলেন ইংরেজী সাহিত্যের অনন্য এক কবি প্রতিভা মিল্টন। ইংরেজী সাহিত্যের একমাত্র মহাকবি মিল্টনের সফল মহাকাব্য ‘প্যারাডাইস লস্ট’ হতে গৃহীত অনুপ্রেরণা কবিকে মহাকাব্য রচনার প্রণোদনার শক্তি জুগিয়েছে। মাইকেলের নাটকে শেক্সপিয়ারের ও সনেটে পেত্রার্কের প্রভাব রয়েছে। সমসাময়িক বাংলা ভাষার মহাকাব্য রচয়িতা মণীষা ব্যক্তিদের মধ্যে হেমচন্দ্র বন্দ্যোপধ্যায়, নবীণ চন্দ্র সেন, কায়কোবাদ, ইসমাইল হোসেন সিরাজী এঁরা কেউ মাইকেলের সফলতাকে স্পর্শ করতে পারেনি। তিনি ধর্মান্তরিত হলেও তাঁর রচনায় ধর্মীয় শাস্ত্রের চরিত্রের প্রতিফলন লক্ষণীয়। বিশেষ করে ‘মেঘনাদবধ’ মহাকাব্যে তা স্পটত দেখা যায়। উপনিষদ, রামায়ণ এর চরিত্রের উপস্থিতি টের পাওয়া এ কাব্যে মোটেও দুরূহ নয়। যা কিনা তাঁর ব্যক্তি চরিত্রের সঙ্গে স্ববিরোধী। শুধু কি ধর্মীয় শাস্ত্রাদি? এ বাংলার প্রকৃতি পরিবেশ বাংলার আদি রূপ ভাষা তৎসম-তদ্ভব শব্দ ও মিথের অনুপ্রবেশ বাংলা ভাষার ভা-ারকে সমৃদ্ধ করেছে। পিতা তাঁকে ত্যাজ্য করলেও তিনি পিতা-মাতা থেকে বিচ্ছিন্ন হতে পারেননি। তাঁর কবিতায় ঠাঁই পেয়েছেন বাবা-মা- আত্মীয় স্বজনরা। তাঁদের প্রতি তাঁর মমত্ববোধ ও মানবতা উদ্ভাসিত হয়েছে। এক্ষেত্রে তিনি স্বদেশ প্রেম, মানব প্রেমে উজ্জীবিত। সত্যিকার অর্থে একজন মানবতাবাদী কবি। সেই সুবাদে তিনি অসাম্প্রদায়িক বটে। অলোচনা সাপেক্ষে তাঁর রচিত কবিতার উদ্ধৃতি তুলে ধরছি। ‘জনক-জননী-ভগ্নী আছে মোর ¯েœহ পরকাশি তারা মোরে ভালবাসে আমি তাদের ভালবাসি তবু ঝরে অশ্রু বেগে, হেমন্তের শিশিরের সম, কাঁদিতে দ্বীপ তরে, যেন সেই জন্মভূমি মম।’ ‘দাঁড়াও পথিক বর, জন্ম যদি তব বঙ্গে! তিষ্ট ক্ষণকাল!এ সমাধি স্থলে যশোরে সাগরদাড়ি কবতাক্ষ তীরে জন্মভূমি জন্মদাতা দত্ত মহামতি রাজনারায়ণ নামে, জননী জাহ্নবী।’ ‘জন্মভূমি রক্ষা হেতু কে ডরে মরিতে যে ডরে, ভীরু সে মূঢ়,শতধিক তারে।’ ‘যে সবে বঙ্গেতে জন্মি হিংসে বঙ্গবাণী সে সব কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি রেখো মা দাসেরে মনে, এ মিনতি করি পদে।’ এ কথা অস্বীকার করা যায় না মাইকেলের কবিতা কল্পনা বিলাসিতার বিপরীতে অবস্থিত। মাইকেলের কবিতায় তদ্ভব-তদ্ভব শব্দ ও মিথ এর বাহুল্য প্রচুর রয়েছে। সেই সঙ্গে পা-িত্যের সংশ্লেষণ অস্বীকার করার উপায় নেই। এ জন্য তাঁর কবিতা পাঠকের মনকে সহজে আকৃষ্ট করে না। অনেক সমালোচক তাঁর বিরুদ্ধে দুর্বোধ্যতার অভিযোগ এনেছেন। তথাপি চিন্তা জগতে সুক্ষ্ম অভিঘাত করে। তাঁর কবিতা কোনভাবে আকস্মিক ঘটনা কিংবাা তাৎক্ষণিক অনুভূতির তরল প্রকাশ নয়। তার বিকাশ পূর্বপরিকল্পিত যাতে প্রতিটি কবিতায় পূর্বপরিকল্পনা বা নকশার সূক্ষ্ম অস্তিত্ব অনুভব করি। বস্তুত অপ্রস্তুত পাঠকের পক্ষে তাঁর কবিতার রসাস্বাদন অনায়াসসাধ্য নয়। মধু কবির মধুরস আস্বাদনে পাঠকের অবস্থান বিমুখ প্রান্তরে। সবকিছু ছাপিয়ে বাংলা সাহিত্য ও সাংস্কৃতি ভুবনে মাইকেল মধুসুদন দত্ত মধ্যাহ্ন সূর্য। অতুলনীয় সারস্বত প্রতিভাধর অদম্য মেধাবী এ শিল্পীকে আমি বলি আইকন। তাঁর মেধাকুল উছলানো নদীর ঢল। বাঁধা মানে না কুল ছাপিয়ে নিরন্তর বয়ে চলে। সূর্য কিরণের আলোক রশ্মি অলোকিত করেছে সমগ্র সাহিত্য ভুবন। অমূল্য সে সম্পদ ভরে তুলেছে সাহিত্য ভা-ার। এমন সম্পদ পাওয়া বাঙালী জাতির জন্য অত্যন্ত গৌরবের। শিল্প স্রষ্টা যে কোন খ্যাতিমানের প্রতি সাধারণ মানুষের শ্রদ্ধা ভক্তি সম্মান বর্তায় শিল্প প্রেম ও ভালবাসা থেকে। আবার তাঁর বাহির-ভেতর সম্পর্কে জানার উৎসাহ মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। তাঁর সামাজিক অবস্থান পেশা আদর্শ ধর্ম ব্যক্তিগত জীবনযাপন উপার্জন খুঁটিনাটি সবকিছুতে পাঠকের সমান আগ্রহ পরিলক্ষিত হয়। এ হলো মানুষের মনস্তাত্ত্বিক বিষয়।সামাজিক ক্ষেত্রে মাইকেল বিদ্বেষ স্পষ্টত দেখা যায়। তিনি অভিজাত পরিবারে জন্ম নেয়ার কারণে শ্রেণী বিচারে উচ্চবিত্ত। অসামান্য প্রতিভাধর মেধাবী একজেদী অহমিকাপূর্ণ দাম্ভিক অহঙ্কারী মর্যদাবান উচ্চশিক্ষিত তুখোর ব্যক্তিত্বসম্পন্ন একজন হওয়া সত্ত্বেও সামাজিক অবস্থানে ছিলেন বিচ্ছিন্ন। তাঁর চরিত্রের সঙ্গে সংঘাত বাস্তবে বেমানান। এ সত্য কবির পক্ষে প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল। স্বধর্ম ত্যাগ করে পিতা-মাতা অত্মীয়-স্বজনের কাছে বিরাগভাজন ও ধিকৃত হওয়ায় পারিবারিক সম্পর্কের অবনতিতে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। বিলাসিতা ও অমিতব্যায়িতা সারা জীবনের সঙ্গী হওয়ায় অর্থ কষ্ট তাঁর পিছু ছাড়েনি। এ ভোগান্তি মনোকষ্ট ও মনোব্যথায় হয়েছিলেন জর্জরিত। শ্বেতাঙ্গিনীকে বিবাহের কারণে ইংরেজসহ বিদেশীদের বর্ণ বিদ্বেষের শিকারে পরিণত হন। সবকিছুই ছিল তাঁর জীবন চলার পথে অন্তরায়। বিষয়ভিত্তিক আলোচনায় প্রবন্ধের বিস্তৃতি বাড়বে। সেদিকে এগুনো পরিহার করতে বাধ্য না হয়ে উপায় নেই। মাইকেল জীবনের প্রতিকূলতা উত্তরণে প্রতিষ্ঠা লাভের আশায় সংগ্রাম করেছেন। সফলতা অর্জনে বিফল হয়ে মুখ থুবরে পড়লেও তিনি ব্যক্তিত্ব মর্যাদা ও আভিজাত্য রক্ষায় ছিলেন অক্ষুণœ অটল অব্যর্থ। সাহিত্য চর্চায় তিনি শিরোপাজয়ী মধ্য গগনের আলো ছড়ানো সূর্য সৈনিক হয়েও জীবন যুদ্ধে পরাজিত। ব্যক্তিত্বশীল মাইকেল নিজের মর্যাদা রক্ষার খাতিরে শির উঁচু করে চ্যালেঞ্জ নিয়ে একাকী চলেছেন তবু আত্মসর্মপণ বা মাথা নত করেননি কারও কাছে। তৎকালীন সমাজে মাইকেল কবি হিসাবে কতিপয় ব্যক্তি বিশেষের কাছে মর্যাদাবান বলে গ্রহনীয় হলেও সংখ্যা গরিষ্ঠের কাছে ছিলেন অগ্রহণীয় ও বর্জনীয়। সামাজিক প্রবিন্ধকতা ও প্রতিকূলতায় মাইকেল বিপরীত অবস্থানে পতিত হওয়ায় আত্মকেদ্রিক হয়ে পড়েন। আত্মমুখিনতা তাঁর মাঝে প্রাধান্য বিস্তার করে। আত্মবিশ্বাসের প্রতি একনিষ্ঠ কবি নিজ অস্তিত বজায় রাখতে ব্রতী নিয়ে সক্ষম হন। অস্তিত্বে আস্থাশীলতায় তাঁকে অস্তিত্ববাদীতে পরিণত করেছে। কবি সমালোচকদের দৃষ্টিতে তিনি সাহিত্যে যেমন স্বর্ণ শিখরে অধিষ্ঠিত ব্যক্তি। যাপিত জীবনে এক পরাজিত মানুষ। মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণে ফ্রয়েডীয় দর্শনের নিরিখে মাইকেল উপভোগী বা ভোগবাদী জীবনের প্রতি আকৃষ্ট। ব্যক্তি চিন্তা-চেতনায় মাইকেল পাশ্চাত্যের ধ্যান-ধারণায় পরিপুষ্ট হয়ে জীবন অধ্যায়ের বেশি সময় নিবেদিত ছিলেন মাতৃ ভাষার সাহিত্য চর্চায়। এ জন্য তিনি ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যে উজ্জ্বল। বিরল ব্যক্তিত্বের অধিকারী এক অস্তিত্বশীল ব্যক্তি। ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যে বিশ্বাসী বলেই তিনি অস্তিত্ববাদী এক মহাকবি প্রাণ।
×